পাপের কারণে নুহের জাতি বন্যার পানিতে ডুবে ধ্বংস হয়
সুরা নুহের সপ্তম আয়াতের ভাষ্য অনুযায়ী সত্যের সঙ্গে কাফিরদের শত্রুতার কারণ হল দম্ভ ও অহংকার। অহংকার ও দম্ভ মানুষকে সত্যের কাছে পৌঁছাতে বাধা দেয়। কাফিরদের দম্ভ ও অহংকার সত্ত্বেও হযরত নুহ (আ) দীর্ঘকাল ধরে মানুষের কাছে মহান আল্লাহর দাওয়াত পৌঁছাতে থাকেন।
তিনি এ ব্যাপারে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। তিনি বলেছেন:
এরপর আমি তাদেরকে প্রকাশ্যে দাওয়াত দিয়েছি,এরপর আমি ঘোষণা সহকারে প্রচার করেছি এবং গোপনে চুপিসারে বলেছি। তারপর বলেছিঃ তোমরা ক্ষমা চাও তোমাদের পালনকর্তার কাছে। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন,তোমাদের জন্যে উদ্যান বানাবেন এবং তোমাদের জন্যে বইয়ে দিবেন নদীনালা।

অর্থাৎ হযরত নুহ নবী গোপনে ও প্রকাশ্যে তার জাতির লোকদের কাছে এক খোদার ইবাদতের দাওয়াত দিতে থাকেন।
তাঁর প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার এ পদ্ধতি ছিল যে,জনসাধারণের বাড়িতে গিয়ে উচ্চস্বরে বলতেন,‘হে ভ্রাতৃবৃন্দ! তোমরা বল,আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই,যাতে তোমরা সফল হও।’ আর গোপনে দাওয়াত দেওয়ার পন্থা এই ছিল যে,যখনই তিনি কাউকে একাকী পেতেন তখন নিজ মুখ তার কানের কাছে নিয়ে গিয়ে ঈমান গ্রহণ করার কথা বলতেন। এটাও এক প্রকার পদ্ধতি ছিল। অন্য কথায় তিনি শিক্ষা ও উপদেশের কোনো পথ অবশিষ্ট রাখেননি। ফলে যখন লোকজন তাঁর সম্মুখ দিয়ে যেত তখন কাপড় দ্বারা নিজেকে ঢেকে নিত,যাতে এমন না হয় যে,তিনি কিছু বলেন।
কিন্তু নুহ নবীর এইসব দাওয়াত তাদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলেনি। গোড়ামি ও পথভ্রষ্টতা তাদের মধ্যে বদ্ধমূল হয়ে পড়েছিল। এখানে এটা স্পষ্ট যে নুহ নবী অত্যন্ত ধৈর্য নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে একত্ববাদের দাওয়াতি কাজ চালিয়ে গেছেন। বলা হয় তিনি ৯৫০ বছর ধরে জনগণের কাছে ইসলাম ও ঈমানের দাওয়াত দিয়েছেন। কিন্তু অতি অল্প ক’জন ব্যক্তি ঈমান এনেছিল। তিনি তাদের এই সুসংবাদ দিয়েও মন জয় করতে চেয়েছিলেন যে তোমরা যদি পাপাচার,শির্ক ও কুফরি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও তাহলে তিনি ক্ষমা তো করবেনই একইসঙ্গে তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তানি-সন্ততিসহ অজস্র নেয়ামত দেবেন এবং আল্লাহর রহমতের দরজা তাদের জন্য খুলে দেবেন।
হযরত নুহ (আ) মহান আল্লাহর নানা মহত্ত্ব তুলে ধরেন এবং তিনি বিস্মিত হন এই ভেবে যে মহান আল্লাহর এতসব প্রকাশ্য নিদর্শন দেখা সত্ত্বেও কেনো জনগণ গোড়ামি অব্যাহত রেখে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করছে!

হযরত নুহ নবী বলছেন: 'তোমাদের কি হল যে,তোমরা আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বকে ভয় করছ না। অথচ তিনি তোমাদেরকে বিভিন্ন রকমে বা পর্যায়ে (বীর্য থেকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ) সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে,আল্লাহ কিভাবে সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন? এবং সেখানে চন্দ্রকে রেখেছেন আলোরূপে এবং সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপরূপে। আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে উদ্ভিদের মতই মৃত্তিকা থেকে উদগত করেছেন। এরপর তাতে ফিরিয়ে নেবেন এবং পুনরুত্থিত করবেন। আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্যে ভূমিকে করেছেন বিছানা। যাতে তোমরা চলাফেরা কর প্রশস্ত পথে।'
মহাকাশে রয়েছে কোটি কোটি গ্রহ-নক্ষত্র। এসবের মধ্যে অনেক গ্রহ-নক্ষত্র সূর্য ও চাঁদের চেয়েও বেশি আলোকোজ্জ্বল। আমাদের জীবনে চাঁদ ও সুর্যের উপস্থিতির কল্যাণ অত্যন্ত ব্যাপক। আলোর চাহিদাসহ নানা ক্ষেত্রে চাঁদ ও সূর্যের কল্যাণ মহান আল্লাহরই এক বড় অনুগ্রহ। চাদের নিজস্ব আলো নেই। তা সূর্য থেকে আলো গ্রহণ করে। আয়না যেমন আলোর প্রতিফলন ঘটায় চাঁদের অবস্থাও সেরূপ।
পৃথিবীর ভূমিকে মানুষের জন্য করা হয়েছে প্রাকৃতিক কার্পেট। এই ভূমি আমাদের অনেক চাহিদা পূরণের মাধ্যম। পাহাড়-পর্বত ও উপত্যকা এবং এসবের মাঝে অবস্থিত নানা গিরিপথ বা খাদ মানুষের জন্য যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর এসবই যে মহান আল্লাহর এক একটি বড় নেয়ামত তা সুরা নুহের এইসব বাক্যে তুলে ধরা হয়েছে।
হযরত নুহ নবী তার জাতিকে রক্ষার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালানো সত্ত্বেও তারা মুক্তির পথ ধরতে অস্বীকার করায় এই মহান নবী তাদেরকে সুপথ দেখানোর ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েন। ফলে তিনি তাদেরকে শাস্তি দিতে মহান আল্লাহর কাছে আবেদন জানান। হযরত নুহ নবী বলেছেন:
নূহ বললঃ হে আমার পালনকর্তা,আমার সম্প্রদায় আমাকে অমান্য করেছে আর অনুসরণ করছে এমন লোককে,যার ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কেবল তার ক্ষতিই বৃদ্ধি করছে। আর তারা তথা ওই জাতির নেতারা ভয়ানক চক্রান্ত করছে।
তারা বলছেঃ তোমরা তোমাদের উপাস্যদেরকে ত্যাগ করো না ....। অথচ তারা অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে। অতএব আপনি জালেমদের পথভ্রষ্টতাই বাড়িয়ে দিন।
তাদের গোনাহগুলোর কারণে তাদেরকে নিমজ্জিত করা হয়েছে,এরপর দাখিল করা হয়েছে জাহান্নামে। অতঃপর তারা আল্লাহ তা’আলা ছাড়া কাউকে সাহায্যকারী পায়নি।
অবশেষে পাপ ও নানা ভুলের কারণে নুহের জাতি বন্যার পানিতে ডুবে ধ্বংস হয় এবং তারা হয় জাহান্নামের খোরাক।
সুরা নুহ শেষ হয়েছে হযরত নুহ (আ)'র একটি দোয়া দিয়ে। এ দোয়ায় তিনি বলেছেন:
হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে,আমার পিতা-মাতাকে,যারা মুমিন হয়ে আমার ঘরে প্রবেশ করে-তাদেরকে এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে ক্ষমা করুন এবং যালেমদের কেবল ধ্বংসই বাড়িয়ে দিন। #
পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ২