সুস্থ পরিবার (পর্ব-১৮) : ভ্রমণ ও পর্যটন
একটি সুস্থ পরিবারের জন্য অবকাশ যাপন বা ছুটির অবসরকে কাজে লাগানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মানসিক প্রশান্তি ও শারীরিক সুস্থতার ওপর এই ভ্রমণের ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে এইসব পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনোকিছুই চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।

সন্তানদের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে তাদের আগ্রহের প্রতি নজর রেখেই অবসর কাটানোর রুটিন তৈরি করতে হবে। তাহলে আনন্দের পাশাপাশি সন্তানদের সৃজনশীলতাও বৃদ্ধি পাবে।মানুষের আত্মিক চাহিদা মেটানোর স্বার্থে এই ভ্রমণ এবং বিনোদন খুবই প্রয়োজনীয় বিষয়। কিন্তু যে বিষয়টি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো একটি পরিবারের কর্মসূচি বা বিনোদনের পরিকল্পনায় পিতা-মাতার পক্ষ থেকে যে সব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে তার স্বরূপ নির্ধারণ করা। কী ধরনের বিনোদন সেটা তা দেখতে হবে।বিনোদনের নামে অসুস্থ কোনো কিছু চর্চার মাধ্যমে সন্তানদের সাংস্কৃতিক রুচিবোধ বিকৃত করে ফেলা না হয়-সে বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি।
মজা করা কিংবা বিনোদন মানুষের স্বাভাবিক একটি চাহিদা। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই বিনোদনের প্রভাব পড়ে। একঘেঁয়ে জীবন কারুরই ভালো লাগে না। তাই দৈনন্দিন জীবনে বয়স এবং অবস্থানভেদে বৈচিত্র্য আনার প্রয়োজন পড়ে। খেলাধুলা করা, ভ্রমণে যাওয়া, বেড়াতে যাওয়া, আতিথ্য বরণ করা বিশেষ করে আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজখবর নিতে যাওয়া ইত্যাদি দৈনন্দিন জীবনে বৈচিত্র্য আনার উপায় হতে পারে। বিনোদন চিত্তবিনোদনের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে রাসূলে খোদা বলেছেন: "বিনোদন করো, খেলাধুলা করো! কেননা তোমাদের ধর্মে সহিংসতার অস্তিত্ব দেখতে চাই না"। কয়েক দিনের কর্মক্লান্তির পর কোনো পার্ক কিংবা সবুজ বনানীময় প্রকৃতিতে উপস্থিতি, নদীতীর কিংবা সমুদ্র সৈকতে যাওয়া আত্মিক ও মানসিক প্রশান্তির সর্বোত্তম উপায়।
পরিবারের সদস্যরা একদিনের ছুটিতেও এরকমম কোনো প্রাকৃতিক পরিবেশে গিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাহীন সময় কাটাতে পারে। এর ফলে আর যাই হোক পরিবারের সদস্যদের মাঝে পারস্পরিক আন্তরিকতা ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। এরকম সংক্ষিপ্ত ভ্রমণের জন্য পরিবারগুলো এমনসব আকর্ষণীয় উদ্যোগ নিতে পারে বা নিয়ে থাকে যা খুব একটা ব্যয়বহুলও নয়। প্রকৃতির কোলে বসে খাবার খাওয়া, চকোলেট কিংবা কফি খাওয়ার মজাই আলাদা। পরিবারের সদস্যরা খেলাধুলার সামগ্রী নিয়ে যেতে পারে পার্কে। সেখানে পরস্পরে খেলাধুলা করতে পারে। এরকম ছোট ছোট ভ্রমণগুলো এতো মজার হয়ে উঠতে পারে যে জীবনের স্মরণীয় অধ্যায়ে পরিণত হয়ে উঠতে পারে। বাবা-মা, সন্তানদের মাঝে হাসি-কৌতুক বিনিময় খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ একটি পরিবেশের সৃষ্টি করতে পারে। যার ফলে সন্তানের স্মৃতিতে বাবা-মায়ের ছবি চিরভাস্বর হয়ে থাকতে পারে।
একঘেঁয়ে জীবন পরিবারে অসুস্থ ও বিরক্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করে। তাই ছুটির দিনগুলোতে পরিবারের সদস্যরা পবিত্র স্থানগুলো জিয়ারত করতেও ভ্রমণে যেতে পারে। ভ্রমণের আনন্দের পাশাপাশি পবিত্র ও আধ্যাত্মিক পরিবেশে অবস্থানের ফলে আত্মিক ও মানসিক প্রশান্তি আসে। যে-কোনো ভ্রমণে যাবার আগে বিশেষ করে যেসব শহরে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকে সেসব শহরে যাবার আগে থাকার জায়গা, কতদিন থাকা হবে কিংবা কী কী খাবার খাওয়া হবে সবকিছুর ব্যাপারেই সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকা উচিত। যারা এখনও যুবক তাদের শারীরিক ও মানসিক উদ্যম অনেক বেশী। তারা ছোট্ট কোনো ছুটির অবসরেও ভ্রমণে যেতে পারে। এমনকি অজানা অচেনা কোনো অঞ্চলেও চলে যেতে পারে। পার্বত্য পাদদেশ, নৃতাত্ত্বিক বা ঐতিহাসিক কোনো স্থান, বাগ-বাগিচা, হ্রদ, প্রাসাদ, কেল্লা এমনকি মরু এলাকাতেও যাওয়া যেতে পারে। আনন্দ বিনোদনমূলক এগুলোর স্মৃতি অম্লান থাকে দীর্ঘদিন।

আনন্দময় জীবন এবং প্রশান্তিপূর্ণ জীবনের জন্য ভ্রমণ খুবই প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। ভ্রমণের খরচের বাহুল্য নিয়ে ভাবলে চলবে না।সামর্থ্য অনুযায়ী সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে যেখানে যাওয়া যেতে পারে সেই স্পট বেছে নেওয়াই যুক্তিযুক্ত।ভ্রমণ করলে যে বিষয়টি অর্জিত হবে তা হলো মানসিক প্রশান্তি এবং বিচিত্র কষ্টক্লেশ ও চাপ থেকে মুক্তি লাভ।ভ্রমণ ক্লান্তি দূর করে। জীবনে বৈচিত্র্য এনে দেয়। ভ্রমণ যত ছোটোই হোক না কেন একঘেঁয়ে জীবনের দুর্বিষহ ও দম বন্ধ হয়ে আসা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। যার ফলে প্রচুর অ্যানার্জি পাওয়া যায়। এই শক্তি আমাদেরকে মনোদৈহিক ক্লান্তি থেকে সুরক্ষা দেয়।
ভ্রমণ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের উপহার দেয়। তা হলো পরিবারের সদস্য ও স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটানোর সুযোগ সৃষ্টি করে। সফরের একটা প্রয়োজনীয় দিক হলো ধৈর্যধারণ করা এবং পারিভাষিকভাবে বলা যেতে পারে "শুভ যাত্রা" যেন হয়। ভ্রমণ সুন্দর ও শুভ হলে এবং চারিত্রিক সৌন্দর্য, মাধুর্য্য থাকলে যে-কোনো ভ্রমণকারী ব্যক্তি ছোট্ট কোনো ভ্রমণ থেকেও রিফ্রেশ হয়ে উঠতে পারে, ইতিবাচক মানসিক শক্তিতে পূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এরকম সুন্দর ভ্রমণ পরিবেশ সৃষ্টি হলে সেই ভ্রমণ হয়ে উঠবে সহযাত্রীদের জন্যও মহা আনন্দের এবং যথেষ্ট উপভোগ্য।
হাটাহাটি কিংবা যৌথভাবে খেলা যায় এরকম কোনো খেলা, গল্প-গুজব করা,সহযাত্রীদের নিয়ে একত্রে বসা,খাবার তৈরিতে পারস্পরিক সাহায্য সহযোগিতা করা ইত্যাদি চমৎকার স্মৃতির জন্ম দেয়। এইসব স্মৃতি আরও বেশি সচিত্র ও প্রামাণ্য হয়ে উঠবে যখন কোনো সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য কিংবা ঐতিহাসিক কোনো স্থানে ছবি তুলে রাখা যায়। সুতরাং সফরকালে সুন্দর ও ঐতিহাসিক কোনো স্থানের ছবি তুলতে ভুল যেন না হয়। যারা ভ্রমণ করে তারা বিচিত্র এলাকার সংস্কৃতি,প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য,বিভিন্ন জাতি ও গোত্রের নতুন নতুন চিন্তাদর্শ, আচার-প্রথা ইত্যাদি সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ পায়। ভ্রমণকারীর চিন্তাচেতনা ও অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধতর হবার ক্ষেত্রে সফরের ব্যাপক ইতিবাচক ভূমিকা ও প্রভাব পড়ে। হাদিসে এসেছে:"সফরে হয়তো কোনোরকম অর্থ অর্জিত হবে না,তবে চিন্তা ও বিশ্বাস অনেক বৃদ্ধি পাবে"।#
পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ১১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।