আগস্ট ১৫, ২০১৯ ১৬:২৯ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা ইরানের জলীয় সম্পদ বিশেষ করে মৎস্য জাতীয় খাদ্যপণ্যে দেশটি যে কতোটা সমৃদ্ধ তা নিয়ে বলার চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে ইরানের জলীয় সম্পদ চিংড়ি নিয়ে কিছু কথা বলেছি আমরা।

আজকের আসরেও এই মৎস সম্পদ নিয়ে আলোচনা করবো। তবে এই মৎস্য রঙীন এবং রকমারি শোভাময় মাছ। যেসব মাছ অ্যাকুরিয়াম থেকে শুরু করে ঘর বাড়ি অফিস আদালতের শোভা বৃদ্ধি করে। বিশ্বব্যাপীই এই মাছ শিল্পের প্রচলন এখন রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ দেশেই এই শোভাময় মাছ শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। ইরানও এই শোভাময় মাছ শিল্পের ক্ষেত্রে অনেক অগ্রসরমান। বিশেষ করে পানির উৎস বেশ সমৃদ্ধ হবার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই শিল্প বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ কারণে এখন এই শোভাময় মাছ শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়ে গেছে।

সমগ্র বিশ্বজুড়েই শোভাময় রঙ বেরঙের মাছের প্রতি মানুষের ভালোবাসা রয়েছে। গৃহের অভ্যন্তরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পালিত প্রিয় প্রাণীর অন্যতম হলো শোভাময় মাছ। এগুলোকে অ্যাকুরিয়াম ফিশও বলা হয়। এই মাছগুলোর রঙ ও আঙ্গিক বৈচিত্র্যের কারণে মানুষের দৃষ্টি ও ভালোবাসা দিনের পর দিন বেশি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মানুষের অন্তরাত্মার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে প্রকৃতির সান্নিধ্যে গেলে মানুষের ব্রেইন শান্তি ও প্রশান্তিতে পূর্ণ হয়ে যায়। মনোবিজ্ঞানীদের অনেকেই মনে করেন ১৫ মিনিট অ্যাকুরিয়াম দেখলে ব্যক্তিমনে সেই আনন্দের প্রভাব ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বজায় থাকে। অ্যাকুরিয়াম ফিশগুলোর সৌন্দর্য, রঙ বৈচিত্র্য, মাছগুলোর গায়ের নয়নাভিরাম নকশা ইত্যাদি পানিতে বসবাসকারী অন্যান্য মাছ বা মাছ জাতীয় প্রাণীগুলোর মধ্যে এই শোভাময় মাছকে অনন্য ও স্বতন্ত্র মর্যাদা দিয়েছে।

পরিবেশ বৈচিত্র্য বজায় রাখার পাশাপাশি এই মাছগুলোকে আনন্দ-বিনোদনের জন্য, সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্যও সংরক্ষণ করা হয়। বিশ্বের অসংখ্য দেশেই আজকাল এই অ্যাকুরিয়াম ফিশের ব্যবসার প্রচলন রয়েছে। বলাই বাহুল্য যে এই ব্যবসায় লেনদেনের পরিমাণ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। এই অ্যাকুরিয়াম ফিশ বা শোভাময় মাছগুলোকে তাদের বসবাসের পরিবেশগত দিক থেকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটা হলো নোনাজলের মাছ এবং অপরটি মিষ্টি পানি বা ফ্রেশ ওয়াটারের মাছ। এই দুই শ্রেণীর মাছকেই আবার দুইটি বিভাগে বিভক্ত করা হয়। একটি হলো ট্রফিক্যাল বা নিরক্ষীয় উষ্ণ এলাকার মাছ অপরটি হলো ঠাণ্ডা এলাকার জলজ মাছ। বিশ্বের বেশিরভাগ শোভাময় মাছই নিরক্ষীয় এলাকার মাছ। এ নিয়ে আমরা আলোচনায় ফিরছি একটু পরেই মিউজিক বিরতি শেষে। সঙ্গেই থাকুন।

শোভাময় মাছ বা অ্যাকুরিয়াম ফিশের প্রকারভেদ নিয়ে বলছিলাম আমরা। খাদ্য খাবারের দিক থেকে শোভাময় মাছগুলোকে আবার তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। এক শ্রেণী হলো উদ্ভিদখোর মাছ, আরেক শ্রেণী মাংসাসি শোভাময় মাছ এবং তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে সর্বভুক শোভাময় মাছ। প্যান্জিও কোহলি জাতীয় বেশিরভাগ শোভাময় মাছ তাদের আচরণগত দিক থেকে প্রশান্ত এবং শান্তিকামী। এগুলো কালো এবং রঙীন ডোরাকাটা হয়। দেখতে সাপ বা বান মাছের মতো। আবার মাথা উঁচু সোনালি-রূপালি বিচিত্র রঙের বড় মাছও রয়েছে যেগুলোকে স্প্যাথোদুস মার্লিয়েরি বলা হয় এই শ্রেণীর মাছগুলো আগ্রাসী মাছ হিসেবেই পরিচিত। বিভিন্ন রঙের তেলাপিয়া শ্রেণীর মাছও এই শ্রেণীভুক্ত।

মাছগুলোর উৎপাদন কৌশলের বৈচিত্র্যের দিক থেকেও আরো কয়েকটি শ্রেণী বিভাজন রয়েছে। তবে শোভাময় মাছের শতকরা নব্বুই ভাগই বর্তমানে মিষ্টি মানে ফ্রেশ পানিতে বাস করে আর শতকরা দশ ভাগ মাছ বাস করে নোনাজলে। আজকাল অবশ্য বিশ্বব্যাপী মাত্র দশ শতাংশ মিষ্টি জলের শোভাময় মাছ শিকার করার মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। বাকি নব্বুই শতাংশ মাছই কৃত্রিম চাষ থেকে আসছে। তবে নোনাজলের মাছের ব্যাপারটি মিষ্টি জলের মাছের ঠিক বিপরীত। এগুলোর শতকরা নব্বুই ভাগই সমুদ্র থেকে জেলেরা আহরণ করে আর মাত্র দশ শতাংশ মাছ কৃত্রিম চাষের মাধ্যমে উৎপাদন করা হয়।

একটা উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো এইসব শোভাময় মাছের অস্তিত্ব ইরানে সেই প্রাচীনকাল থেকেই ছিল। সবচেয়ে বেশি যে মাছগুলো ইরানে সনাক্ত করা হয়েছে বা পাওয়া যায় তা হলো গোল্ডেন ফিশ মানে সোনালি কিংবা লাল রঙের মাছ। প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেক ইরানির বাসাতেই এই গোল্ড ফিশ ছিল এবং এখনও থাকে। একটা জারের ভেতর পানি দিয়ে কয়েকটা গোল্ড ফিশ অনেকেই বাসায় রেখে দেয়। এই মাছগুলো বেশ চঞ্চল প্রকৃতির। বছরের শুরুতে বিশেষ করে বর্ষবরণকালে এই মাছ শোভা বর্ধন করার পাশাপাশি প্রাণচাঞ্চল্যের প্রতীক হিসেবেও ইরানিরা বাসায় রেখে আসছে। নওরোজে যে হাফত-সিন সাজানোর সংস্কৃতি ইরানের ঐতিহ্যের অংশ, সেই হাফত-সিনের টেবিলে এই মাছ রাখা একটা প্রাচীন প্রথা।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।