সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯ ২০:৪৬ Asia/Dhaka

পবিত্র কুরআনের সুরা আবাসার পরের সুরাটির নাম সুরা তাকভির। কুরআনের ৮১তম এই সুরায় রয়েছে ২৯ আয়াত।

বর্তমান বিশ্বজগতের সমাপ্তির সময় ব্যাপক মাত্রায় নানা ধরনের বিশাল পরিবর্তন, পবিত্র কুরআনের উচ্চতর মহত্ত্ব এবং মানুষের মন ও প্রাণের ওপর এর প্রভাব এই সুরার প্রধান আলোচ্য বিষয়। তাকভির শব্দের অর্থ এলোমেলো হয়ে যাওয়া ও অন্ধকার হওয়া। সুরাটির প্রথম বাক্য থেকে নেয়া হয়েছে এই  নাম। এ বাক্যে বর্তমান বিশ্বজগতের সমাপ্তির সময় সূর্যের ওলট-পালট ও অন্ধকার হয়ে যাওয়া, তারকারাজির নিষ্প্রভ হয়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের ভয়ানক নিদর্শনের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ সময় মানুষ এত বেশি ভীত-সন্ত্রস্ত হবে যে নিজের সবচেয়ে প্রিয় সম্পদগুলোর কথাও ভুলে যাবে। হিংস্র জীব-জানোয়াররা স্বাভাবিক সময়ে পরস্পরের কাছ থেকে দূরে থাকলেও এবং একে-অপরের কাছ থেকে পালিয়ে গেলেও কিয়ামত বা মহাপ্রলয়ের সময়ে পরস্পরের কাছে জড় হবে ও সব কিছু ভুলে যাবে। এভাবে জড় হয়ে তারা যেন ভয় ও ত্রাস কমানোর চেষ্টা করবে।

 

জাহেলি যুগে সাধারণ আরবদের মধ্যে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়ার মত বর্বরোচিত প্রথার প্রচলন ছিল। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই তারা একটি কবর খুঁড়ে রাখত। যদি দেখত যে কন্যা সন্তান জন্ম নিয়েছে তখনই সেই নবজাতক কন্যাকে এনে জীবন্ত কবর দিত। আর পুত্র সন্তান জন্ম নিলে তাকে জীবন্ত রাখত। দারিদ্র ও অজ্ঞতা এবং বিশেষ করে নারীর মর্যাদা সম্পর্কে হীন ধারণা ও কুসংস্কারের কারণেই তারা এমন অপরাধ করত। তারা মনে করত কন্যা সন্তান জন্ম নেয়াটা কলঙ্কজনক।

সুরা তাকভিরের ৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ শপথ নিয়ে বলেছেন যে এই মহাঅপরাধের জন্য কিয়ামতের দিন তথা বিচার-দিবসে কৈফিয়ত চাওয়া হবে এবং বলা হবে যে কোন্ অপরাধে তাদের হত্যা করা হয়েছিল? এটা এমনই এক পৈশাচিক মহা-অপরাধ যে সেদিন অন্য সব কিছুর বিচারের আগে এই পাশবিক মহাঅপরাধের বিচার করা হবে বলে পবিত্র কুরআনে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। নব-জাতক কন্যার জীবন্ত কবরস্থ হওয়ার মত ঘটনা সবচেয়ে বড় অসহায়ত্ব তথা মজলুম হওয়ার প্রতীক। কিয়ামতের দিন তথা বিচার-দিবসে প্রতিটি অধিকার লঙ্ঘনের জন্য কৈফিয়ত চাওয়া হবে। গর্ভপাত ঘটানোও এক ধরনের জীবন্ত প্রাণের বিনাশ। তাই তা-ও জীবন্ত কবর দেয়ার সমতুল্য অপরাধ।

সুরা তাকভিরের ১৫ থেকে ১৮ নম্বর আয়াতে পবিত্র কুরআনের মহত্ত্ব ও গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য চারটি শপথ নেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলছেন:

আমি শপথ করি সেসব নক্ষত্রের যেগুলো পেছনে সরে যায় এবং চলমান ও অদৃশ্য  হয়।-

আকাশে তারকারাজির উদয় ও অস্ত সুনির্দিষ্ট সময়ে ঘটে। এইসব তারা যে সচল তা আমরা অনেক দূরে থাকার কারণে সরাসরি দেখতে বা অনুভব করতে পারি না। পৃথিবী তার অক্ষের চারদিকে ঘুরে বলে সূর্যের উদয় ও অস্তের সময় আমরা তারাগুলোর গতিশীলতা তথা উদয় ও অস্ত হওয়ার বিষয়টা দেখতে পারি।

এরপর সুরা তাকভিরে মহান আল্লাহ বলছেন: শপথ নিশাবসান ও প্রভাত আগমন কালের। নিশ্চয়ই কুরআন সম্মানিত রসূলের আনীত বাণী।

এখানে বলা হচ্ছে যে পবিত্র কুরআন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই পাঠানো হয়েছে মহানবীর (সা) কাছে। মহান আল্লাহর বিশেষ ও বিশ্বস্ত ফেরেশতা হযরত জিবরাইল আমিন মহানবীর (সা) কাছে মহাগ্রন্থ কুরআনের বাণী বয়ে আনতেন বা পড়ে শোনাতেন। এক্ষেত্রে মহান আল্লাহর বাণী ছাড়া অন্য কারো কথা যুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। তাই মহানবীকে (সা) পাগল বলা বা তাঁকে কবি ও গণক ভাবার কোনো যুক্তি নেই (নাউজুবিল্লাহ)। কারণ কুরআন মাজিদ নাজিল শুরু হওয়ার আগে তিনি মক্কার কুরাইশদের মধ্যে ৪০ বছর ধরে জীবন-যাপন করেছেন একজন বিচক্ষণ ও বিশ্বস্ত এবং খ্যাতিমান ন্যায়পরায়ন ব্যক্তি হিসেবে। তাই এটা স্পষ্ট যে তিনি জিবরাইলের কাছ থেকে আল্লাহর বাণী বা কুরআনের বাক্য গ্রহণের সময় ভুল করেননি বা পরে কোনো অংশ ভুলে যাননি কিংবা কম-বেশি করেননি। #