ইরানি পণ্য সামগ্রী: বিশ্ব বাজার ও ইরানের মৎস্য চাষ শিল্প
ইরানে অ্যাকুরিয়াম ফিশ শিল্প বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠায় এই শিল্পে কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে এই মাছ শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণও ক্রমশ বাড়ছে।
শিল্পটি বিদেশি মুদ্রা আহরণের অন্যতম একটি মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। সুতরাং মৎস্য শিল্পের বিকাশ ইরানে যে যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যাই হোক আমরা আজকের আসরে খামারের মাছ নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো এবং এই শিল্পেও যে ব্যাপক বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে ইরানে, সে বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার চেষ্টা করবো।
বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রয়োজন দেখা দেয় এবং স্বাভাবিকভাবেই খাদ্য সামগ্রী এবং সেই খাবারের গুণগত মান রক্ষারও প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হলো প্রোটিন। প্রোটিন মাংসেও রয়েছে আবার মাছেও রয়েছে। মাছের প্রোটিনের মান অনেক বেশি উপযোগী ও স্বাস্থ্যবান্ধব হবার কারণে বিশ্বব্যাপী এর চাহিদা বেড়ে গেছে। কেননা মাছের প্রোটিন কার্ডিওভাসকুলার এবং ধমনী ও শিরাসহ হার্টের সুস্থতার জন্য খুবই ইতিবাচক। সেইসঙ্গে শিশুদের মেধা, বুদ্ধি ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও মাছের প্রোটিন খুবই কার্যকর। কেবল শিশুদেরই নয় বয়স্কদের স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি করার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যগত শক্তিও বৃদ্ধি করে মাছের প্রোটিন। এইসব কারণে মাছের চাহিদা বেড়ে গেছে।
সমুদ্রে বা নদীতে মাছ শিকারের পরিমাণ ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় মৎস্য সম্পদের প্রাকৃতিক সম্ভার হ্রাস পেতে পেতে বহু প্রজাতির মাছ এখন দুর্লভ হয়ে গেছে। কোনো কোনো মাছ তো প্রায় বিলুপ্তির পথে এখন। মৎস্য হ্রাসের এই হুমকি মোকাবেলা করার লক্ষ্যে বিশ্বের অনেক দেশই এখন চেষ্টা চালাচ্ছে সমুদ্রে মাছ শিকারের পাশাপাশি বায়ো-টেকনোলজি কাজে লাগিয়ে কৃত্রিমভাবে মাছের চাষ করতে। তারা মাছের পোনা পুকুর বা খামারের জলে ছেড়ে দিয়ে লালন পালন করে সমুদ্রের মৎস্য সম্ভারকে পুনর্গঠন করার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মানুষের প্রোটিন চাহিদা নিশ্চিত করতে শ্রম দিয়ে যাচ্ছে।

ইরান দেশটি বেশ বড়। ইরানের দক্ষিণ এবং উত্তরে রয়েছে দেশটির প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটার সমুদ্র উপকূল। সুতরাং বলার অপেক্ষাই রাখে না যে মৎস্য সম্পদের জন্য ইরান অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি দেশ। যেসব দেশে মৎস্য চাষে বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে এবং এই শিল্পটিকে বাণিজ্যিকভাবে যথেষ্ট অর্থকরী বলে গ্রহণ করা হয়েছে ইরান সেসব দেশের অন্যতম। এ ক্ষেত্রে ইরানের তৎপরতার ইতিহাস শতাধিক বছরের। ক্যাভিয়ার মাছ চাষের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এই তৎপরতা। বর্তমানে সমগ্র ইরানে শত শত মৎস্য খামার গড়ে উঠেছে। এর মধ্য দিয়ে ইরানের মৎস্য চাষ শিল্প বিশ্ব দরবারে অন্যতম প্রধান জায়গা করে নিয়েছে। ইরানের খামারে উৎপাদিত মাছের বার্ষিক পরিমাণ এখন কয়েক লাখ টন। এসব মাছের একটা বিরাট অংশ দেশের বাইরেও রপ্তানি করা হয়।
ক্যাভিয়ার দিয়ে শুরু হলেও খামারগুলোতে এখন বিচিত্র ধরনের মাছ চাষ হয়। ঠাণ্ডা, গরম, মিষ্টি আর নোনা পানির বিচিত্র মাছের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি চাষ হয় অর্থকরী চিংড়ি মাছ। মৎস্যবিদ বা খামার বিশেষজ্ঞরা যেখানে যে মাছের জন্য যেরকম তাপমাত্রা আর পানির প্রয়োজন কিংবা যেরকম খাবারের প্রয়োজন পড়ে সেরকম খাবারের যোগান দিয়ে থাকেন। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে খামারে যথাযথভাবে মাছগুলো বেড়ে ওঠে এবং পুষ্ট হয়ে ওঠে। পানির তাপমাত্রা কোন মাছের জন্য কতটুকু হওয়া উচিত সেটা নির্ধারণ করা বিশেষজ্ঞদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ইরানের মৎস্যবিদরা এ ক্ষেত্রে ব্যাপক নৈপুণ্যের পরিচয় দিয়ে এই শিল্পটির চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন সাধনে সক্ষম হয়েছে।
পানি কতোটা গরম হওয়া উচিত সে বিষয়টি মাছ চাষের ব্যাপারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছি আমরা। খামারের মাছ সাধারণত বিশ থেকে ত্রিশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ভালোভাবেই বেড়ে ওঠে। তাপমাত্রা তেত্রিশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি হলে মাছের জন্য সমস্যা হয়ে যায়, শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। আবার তাপমাত্রা তের ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কম হলে মাছ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আট ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় মাছেরা শীতকালীন দীর্ঘ নিদ্রায় চলে যায়। কিছু কিছু মাছ আছে পরিষ্কার ও স্বচ্ছ জলে তাদের প্রয়োজনীয় মাইক্রোঅর্গানিজমের অভাবে তাদের বৃদ্ধি ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এই শ্রেণীর মাছ অস্বচ্ছ ও ঘোলা জলেই বেড়ে ওঠে। গরম পানির এই মাছের মধ্যে রয়েছে কার্ফু মাছ। ইরানে চার রকমের কার্ফু মাছের চাষ করা হয়। মাছগুলোর রঙও ভিন্ন ভিন্ন রকমের। এই শ্রেণীর মাছ পুকুরের শ্যাওলা খেয়ে অভ্যস্থ হওয়ায় মৃৎ-পুকুরেও এগুলোর ভালোই চাষ হয়।#
পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ১৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।