সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৯ ১৭:৪১ Asia/Dhaka

সুরা ইনফিতার পবিত্র কুরআনের ৮২ তম সুরা। মক্কি এই সুরা নাজিল হয়েছিল মদিনায় মহানবীর (সা) হিজরতের প্রাক্কালে। ইনফিতার শব্দের আভিধানিক অর্থ হল কোনো কিছুতে এমন পরিবর্তন ঘটা যে তাতে তার প্রাথমিক অবস্থাগুলো বদলে গিয়ে নতুন অবস্থা সৃষ্টি হয়।

কিয়ামত বা পুনরুত্থানের প্রাক্কালে আকাশমণ্ডলে যে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দেবে সে সম্পর্কে এ সুরার প্রথমেই বক্তব্য রয়েছে। আর এ জন্যই এ সুরার নাম হয়েছে ইনফিতার। এ সুরার আয়াত সংখ্যা ১৯। কিয়ামত বা বর্তমান জগতের অবসানের সময় যেসব বড় ধরনের পরিবর্তনের ঘটনা ঘটবে সে বিষয়, মানুষের জন্য আল্লাহর নানা অনুগ্রহ, মানুষের তৎপরতা ফেরেশতাদের মাধ্যমে রেকর্ড করা এবং বিচার-দিবসে নেককার তথা সৎকর্মশীল ও পাপী মানুষদের পরিণতি এই সুরার কয়েকটি আলোচ্য বিষয়।

বিচার-দিবসে মানুষের তৎপরতার সূক্ষ্মতম ও নিখুঁত বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে। মৃত্যুর পরও মানুষের অতীতের কোনো তৎপরতার কারণে কেউ সুপথ পেয়েছে বা বিভ্রান্ত হয়েছে কিনা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ও লাভবান হয়েছে কিনা তাও তার আমলনামায় থাকবে। আকাশের প্রচলিত অবস্থা ও রীতি বা সিস্টেমগুলো যে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে তা সুরা ইনফিতারের প্রথম দিকেই উল্লেখ করা হয়েছে।

বড় বড় বিস্ফোরণে গ্রহ-নক্ষত্রগুলো কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হবে এবং ধ্বংস হয়ে যাবে পরস্পরের সংঘর্ষে । এভাবে বর্তমান বিশ্ব-জগত ধ্বংস হয়ে পরকালীন নতুন জগতের উন্মেশ ঘটবে। বিচার দিবসে মানুষের সব তৎপরতার খবর তার কাছে তুলে ধরা সম্পর্কে সুরা ইনফিতারের ৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, তখন প্রত্যেকে জেনে নিবে সে কি আগে পাঠিয়েছে এবং কি পেছনে ছেড়ে এসেছে।

পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াতেই বলা হয়েছে যে বিচার দিবস বা কিয়ামতের দিন রহস্যের অনেক পর্দা উঠে যাবে এবং অনেক বাস্তবতা স্পষ্ট হবে। এ সময় মানুষ তার সব তৎপরতার রেকর্ড দেখতে পাবে এবং ভালো ও মন্দ যা যা করেছে সেসবই স্পষ্ট হয়ে যাবে।  এটাও দেখা যাবে যে মৃত্যুর পরও তার কোন্ কোন্ কাজ মানুষের জন্য কল্যাণ বা অকল্যাণ বয়ে আনছে। তার দান-খয়রাত ও মসজিদ বা এতিমখানা নির্মাণ কি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ছিল না মানুষের বাহবা কুড়ানোর জন্য ছিল তাও স্পষ্ট হবে। যে কোনো মানুষের রেখে যাওয়া কাজগুলো  সুপ্রথা না  কুপ্রথা ছিল তাও তার কাছে বিচার-দিবসে স্পষ্ট করা হবে প্রমাণসহ।  তার লেখালেখি ও বই রচনা সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য।

সুরা ইনফিতারের ষষ্ঠ আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন,

'হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল?' –

এ আয়াতে মহান আল্লাহ মানুষের বিবেক ও চেতনাকে জাগানোর জন্য বলছেন ,--   যে মহামহিম, করুণাময় ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ মানুষকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আনা থেকে শুরু করে তাকে অসংখ্য অনুগ্রহ দিয়ে যাচ্ছেন এবং বহু ধরনের বস্তুগত ও আত্মিক করুণায় তাকে সিক্ত করেছেন সেই আল্লাহর প্রতি দুর্বিনীত হওয়ার বা বিদ্রোহী হওয়ার স্পর্ধা ও রুচি কিভাবে হতে পারে দুর্বল মানুষের?

সৃষ্টি জগতের নানা পর্যায়ের কথা তুলে ধরে মহান আল্লাহ কুরআনের নানা অংশে মানুষের অহংকারী হওয়া, নানা বাস্তবতা ভুলে যাওয়া ও অকৃতজ্ঞ হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ মানুষ যদি মাতৃগর্ভে নিজের অস্তিত্বের সূচনা-লাভ থেকে শুরু করে জন্মের পর নানা পর্যায়ে মহান আল্লাহর অসংখ্য নতুন নতুন অনুগ্রহের কথা চিন্তা করে তাহলে তারা প্রতিটি পদক্ষেপে ও প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর অনেক নেয়ামত ও অনুগ্রহের বিষয় অনুভব করতে পারবে। মানুষ যে আল্লাহর অশেষ নেয়ামত ও অনুগ্রহ ভোগ করছে বিনামূল্যে সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে তাদের উচিত অহংকার ও উদাসীনতা ঝেড়ে ফেলা এবং মহান আল্লাহর একান্ত অনুগত, একনিষ্ঠ ও কৃতজ্ঞ দাস হওয়া।

সুরা ইনফিতারের একাংশে মানুষের উদাসীনতার নানা কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এসব কারণের মধ্যে মহান আল্লাহর কৌশলময় সৃষ্টিশীলতা ও কিয়ামত বা বিচার-দিবসের প্রতি মনোযোগহীনতা অন্যতম। এরপর ফেরেশতাদের মাধ্যমে মানুষের তৎপরতার রেকর্ড রাখার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে, কিয়ামত বা পুনরুত্থানের পর বিচার-প্রক্রিয়ার সুবাদে মানুষ সৎকর্মশীল ও পাপী এই দুই ভাগে বিভক্ত হবে। ফলে একদল যাবে বেহেশতে ও অন্য দল যাবে জাহান্নামে। এই সুরার শেষাংশে বলা হয়েছে, কিয়ামতের দিন কেবল মহান আল্লাহর নির্দেশই বাস্তবায়ন করা হবে এবং তিনি নিখুঁতভাবে সবার বিচার করবেন। কাউকেই ঠকানো হবে না।

সুরা ইনফিতারের সর্বশেষ আয়াতে পুনরুত্থান বা বিচার দিবসের আরও একটি বৈশিষ্ট তুলে ধরে মহান আল্লাহ বলছেন, সেদিন কেউ কারও কোন উপকার করতে পারবে না এবং সেদিন সব কর্তৃত্ব হবে আল্লাহর। অবশ্য এটাও মনে রাখা দরকার যে বিচার-দিবস ছাড়াও অন্য সময়ে তথা সব সময়েই সব কিছুর কর্তৃত্ব আল্লাহরই হাতে রয়েছে। বর্তমান দুনিয়ায় এখনও সবাই মহান আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল এবং আল্লাহর হুকুম ছাড়া বা আল্লাহর দেয়া ক্ষমতা কিংবা খোদা-প্রদত্ত স্বাধীনতার আওতার বাইরে কেউই কিছু করতে পারে না। কিন্তু দুনিয়ার জীবনে  মানুষের যে  বাহ্যিক বা অপ্রকৃত ক্ষমতা ও নির্ভরশীল-সীমিত-সার্বভৌমত্ব কিংবা মালিকানা রয়েছে  বিচার-দিবসে তাও থাকবে না। সেদিন মহান আল্লাহর চরম কর্তৃত্ব ও সার্বভৌমত্ব প্রকাশ হবে।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/  ১৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।