ডিসেম্বর ২২, ২০১৯ ১৯:৩১ Asia/Dhaka

রাসূলুল্লাহ (সা.)’র আহলে বায়তের মহান ইমামগণ কুফর ও নিফাকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে তৌহিদ বা একত্ববাদের পতাকাকে সমুন্নত রেখেছিলেন।

নৈতিক দিক দিয়ে তাঁরা দরবারি ইসলামের বিপরীতে খাঁটি মুহাম্মাদি ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করেন। সামাজিক দিক দিয়ে তাঁরা জনগণের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেন। রাজনৈতিক দিক দিয়ে ইমামগণ মুসলিম উম্মাহর ওপর বলপূর্বক চেপে বসা শাসকশ্রেণির জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং কখনো কখনো গণবিদ্রোহে সমর্থন দান করেন। রাজনীতি ও ধর্ম যে আলাদা কোনো বিষয় নয় সেকথা মহান ইমামগণই প্রথম নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দেন। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তাঁরা শ্রেণিবৈষম্য, পুঁজিবাদ এবং বিলাসী ও আয়েশী জীবনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন এবং বঞ্চিত মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে যান।

কোনো ইমামই তাঁদের জীবদ্দশায় নিজেদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম না হলেও তাঁরা দুরদর্শিতার মাধ্যমে সমাজের মানুষ ও ভবিষ্যত প্রজন্মগুলোর জন্য উপযুক্ত ও সঠিক কর্মপরিকল্পনা রেখে যেতে সক্ষম হন। অবশ্য বৈষম্যহীন ও ন্যায়বিচারে পরিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণের যে কাঙ্ক্ষিত পরিকল্পনা ইমামগণের ছিল তার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটবে ইমাম মাহদি (আ.)’র আবির্ভাবের মাধ্যমে।  এ কারণে রাসূলে আকরাম (সা.) থেকে শুরু করে সব ইমাম হযরত মাহদি (আ.) সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন।

আবু সাঈদ খুদরি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি: “মাহদি হবে আমার আহলে বাইতের সদস্য। শেষ জামানায় তার নেতৃত্বে এক মহাবিপ্লব সংঘটিত হবে। তার সময়কালে আসমান থেকে সব বরকত নাজিল হবে এবং জমিনের ভেতরে থাকা সব সম্পদ মানব কল্যাণে বের হয়ে আসবে। মাহদি আল্লাহর জমিনে ন্যায়বিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করবে এবং বিপন্ন মানবতাকে সব ধরনের জুলুম ও অত্যাচার থেকে মুক্তি দেবে।  

হাদিসে যে শুধু ইমাম মাহদি (আ.)’র বিপ্লব ও তখনকার ঘটনাবলী বর্ণিত হয়েছে তা নয় বরং ইমামের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এমনকি তাঁর চেহারা মুবারক কেমন হবে তাও বর্ণনা করা হয়েছে। মানুষ যেন হযরত মাহদি সম্পর্কে দ্বিধাদ্বন্দ্বে না ভোগে সেজন্য তার চেহার মুবারকের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন: সুদর্শন, উন্নত ললাট ও খাড়া নাসিকার অধিকারী এক যুবক- যে হবে আমার আহলে বায়তের সদস্য সে শেষ জামানায় বিপ্লব করবে এবং জুলুম অত্যাচারের নিপাত ঘটিয়ে আল্লাহর জমিনে সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে।

হাদিসের বর্ণনা মতে, যেহেতু ইমাম মাহদি (আ.)’র আবির্ভাবের সময় পৃথিবী জুলুম অত্যাচারে পরিপূর্ণ থাকবে তাই কেউ কেউ একথা ভাবতে পারেন যে, সমাজে কি হচ্ছে সে সম্পর্কে মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন আমাদের নেই। আমরা আমাদের মতো করে জীবনযাপন করি। অথবা আমরা সমাজে প্রচলিত অনাচারের গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেই যাতে ইমামের আবির্ভাবের সময় ত্বরান্বিত হয়। কারণ, আমরা যদি সমাজে প্রচলিত অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ করার চেষ্টা করি তাহলে তো ইমাম মাহদির আবির্ভাবের ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে না?! কিন্তু রাসূলের হাদিস ও ইমামগণের বক্তব্য সম্পূর্ণ এই চিন্তাধারার পরিপন্থি।

যারা জুলুম-অত্যাচার দেখেও নির্যাতিত ব্যক্তির সাহায্যে এগিয়ে আসে না আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ভর্ৎসনা করেছেন। সূরা নিসার ৭৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: “আর তোমাদের কি হলো যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও।”

এই আয়াতে নির্যাতিত মানুষের পক্ষে লড়াই করার যে আহ্বান জানানো হয়েছে তা থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ তায়ালার কাছে মানুষের মনুষ্যত্বের দাম সবচেয়ে বেশি এবং পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তেই যে কেউ নির্যাতিত হোক না কেন তার ফরিয়াদে সাড়া দিতে হবে। কেউ যদি তা না করে তাহলে তার মধ্যে মনুষ্যত্বের লেশমাত্র নেই। এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন: যে কেউ মুসলিম উম্মাহর সমস্যা ও সংকট সমাধানে প্রচেষ্টা চালাবে না অথবা বিশ্ব মজলুমের ডাকে সাড়া দেবে না সে মুসলমান নয়। হযরত আলী (আ.) শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করার আগে জীবনের শেষ মুহূর্তে নিজ সন্তানদের বলে যান: “তোমরা অত্যাচারীদের শত্রু  এবং নির্যাতিতদের বন্ধু হবে।”

এখানে কারো কারো মনে এই প্রশ্ন জাগতে পারে যে, আমরাই যদি কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী নির্যাতিত মানবতার মুক্তির জন্য লড়াই করি তাহলে ইমাম মাহদি (আ.)’র আবির্ভাবের কি প্রয়োজন? কারণ, তিনি যে কাজ করতে বিপ্লব করবেন তা তো আমাদের দ্বারা হচ্ছেই। এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, আমরা যতই নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর পক্ষ অবলম্বন করি না কেন আমাদের প্রচেষ্টা একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ থাকবে এবং আমাদের পক্ষে গোটা বিশ্ব থেকে জুলুম-অত্যাচার নির্মূল করা সম্ভব হবে না। কিন্তু ইমাম মাহদি সারা বিশ্বব্যাপী এই মহান কাজটি করতে সক্ষম হবেন। তাঁর জামানায় বিশ্বের কোথাও একজন মানুষও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে না।#

পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ / ২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ