ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা ‘ইতিহাসের ভাগাড়
সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: রেডিও তেহরানের প্রাত্যহিক আয়োজন কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আজ ২৯ জানুয়ারি বুধবারের কথাবার্তার আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি।
বাংলাদেশের শিরোনাম:
- তাপসের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা-দৈনিক ইত্তেফাক
- জেরুজালেম বাদ দিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হতে পারে না: আব্বাস-দৈনিক যুগান্তর
- ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা পুরোটাই ইসরায়েলের পক্ষে-দৈনিক প্রথম আলো
- আপনি ভোট দিতে আসছেন তো?-দৈনিক মানবজমিন
- করোনাভাইরাসে তটস্ত পৃথিবী-বাংলাদেশ প্রতিদিন
ভারতের শিরোনাম:
- আরও মজবুত ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক, মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি নরেন্দ্র মোদি-দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন
- ফাঁসি হচ্ছেই, মুকেশের শেষ আর্জি খারিজ সুপ্রিম কোর্টে-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা
- ‘গুলি করা হবে না তো কি বিরিয়ানি খাওয়ানো হবে?’, ফের শাহিনবাগকে হুমকি বিজেপি মন্ত্রীর, বিতর্ক তুঙ্গে-দৈনিক আজকাল
পাঠক/শ্রোতা ! এবারে চলুন, বাছাইকৃত কয়েকটি খবরের বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক। প্রথমেই বাংলাদেশের কয়েকটি খবরের দিকে নজর দেব।
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা পুরোটাই ইসরায়েলের পক্ষে-দৈনিক প্রথম আলো
দীর্ঘ বিলম্বের পর অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। পরিকল্পনার প্রায় পুরোটাই ইসরায়েলের পক্ষে। পরিকল্পনাটিকে তিনি ‘নতুন ভোর’–এর প্রতিশ্রুতি হিসেবে উল্লেখ করলেও ফিলিস্তিনিরা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা এটাকে একপেশে এবং ‘ইতিহাসের ভাগাড়’ বলে মন্তব্য করেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পাশে নিয়ে ট্রাম্প এই মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। তাঁর মতে, সেখানে দশকের পর দশক ধরে মার্কিন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও তাঁর এই পরিকল্পনা সফল হতে পারে।
উৎসাহী দর্শকদের সামনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন ভোর আনতে পারব।’ দর্শক সারিতে ইসরায়েলি ও ইহুদি আমেরিকান অতিথি ছিলেন। কোনো ফিলিস্তিন প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি। ইসরায়েলের জন্য বেশি সুবিধা থাকা ওই পরিকল্পনাকে তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশেষ করে জেরুজালেম নিয়ে বিরাজমান সংকট এতে মেটেনি। ফিলিস্তিনিরা জেরুজালেমকে পবিত্র নগরী বলে মনে করে, তারা নগরটিকে তাদের ভবিষ্যৎ রাজধানীও বলে থাকে। তবে মার্কিন পরিকল্পনায় এই জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ভাগাভাগির পরিবর্তে ‘অবিভক্ত’ রাজধানী হিসেবে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা বলেছে। পরিকল্পনায় পশ্চিম তীরে গড়ে তোলা পত্তনগুলো ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ট্রাম্প ‘শান্তির পথে বড় পদক্ষেপ’ নেওয়ায় ইসরায়েলের প্রশংসা করেন। পরিকল্পনাটিতে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য একের পর কঠিন শর্ত পালনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সামরিক মুক্ত থাকতে হবে বলেও উল্লেখ রয়েছে পরিকল্পনায়। পাশাপাশি ইসরায়েলে অধিকৃত অঞ্চলের পত্তনগুলোতে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।
ভবিষ্যতের এই চিত্রের জন্য ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার কথা বলেছেন ট্রাম্প, যা তাঁর মতে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা দূর করতে পারবে। সেই সঙ্গে তিনি ইসরায়েল যেন কখনো নিজেদের নিরাপত্তার সঙ্গে সমঝোতা না করে সেটার ওপরও জোর দিয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে আগের মার্কিন কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলোকে অসার উল্লেখ করে সমালোচনা করেন। ট্রাম্প জানান, তাঁর এই পরিকল্পনাটি ৮০ পৃষ্ঠার এবং এতে প্রস্তাবিত ভবিষ্যৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর জন্য মানচিত্র অঙ্কিত রয়েছে।
এই পরিকল্পনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনিরা। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, ‘এই ষড়যন্ত্রের চুক্তি কখনো বাস্তবায়িত হবে না। আমাদের জনগণ এটাকে ইতিহাসের আবর্জনায় ফেলে দেবে।’
জেরুজালেম বাদ দিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হতে পারে না: আব্বাস-দৈনিক যুগান্তর
ফিলিস্তিনিদের প্রবল বিরোধিতা উপেক্ষা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংকট সমাধানের লক্ষ্যে কথিত শান্তি পরিকল্পনা ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ উপস্থাপন করেছেন।তথাকথিত এ মার্কিন শান্তি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ছাড়া তিনি কখনই এ পরিকল্পনা মানবেন না।
আপনি ভোট দিতে আসছেন তো?-দৈনিক মানবজমিন
আমি ভোটার। কবে যে ভোটার হয়েছিলাম তাও মনে নেই। প্রতিবারই ভোট কেন্দ্রে যাই। কখনও ভোট দেই, কখনও দেই না। ভোট না দিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। বলা হয়, আমার ভোট নাকি দেয়া হয়ে গেছে। তারপরও আমার মধ্যে ভোটের কৌতূহল, আকুতি। একধরনের আনন্দ কাজ করে।
নিকট অতীতে ভোট দিতে গিয়ে শুনলাম রাতেই নাকি হয়ে গেছে। একদল লোক কেন্দ্রের সামনে জটলা করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এরা নাকি ভোট দেয়ার জন্য লড়াই করছে। বাস্তবে তা কিন্তু নয়। এটা এক ধরনের কৌশল। ভিন্নমতাবলম্বী ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারে, এটা সে কৌশলেরই অংশ। সব কৌশলের শেষ কথা হচ্ছে ভোটারকে কেন্দ্রমুখী হতে না দেয়া। আগের রাতে এজেন্টকে ভয়ভীতি, কিংবা গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো পুরনো কৌশল।
এখন কৌশল হচ্ছে এজেন্টদের মাইক্রোবাসে তুলে ৬৫ কিলোমিটার দূরে ফেলে আসা। আইনের লোকেরা এই কাজটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করছে। কেউ প্রতিবাদ জানায়, কেউ জানায় না। বলে, এটাও নাকি আধুনিক ভোটের অংশ। এসব জেনেও আমি ভোট দিতে যাবো। এবারতো মেশিনে ভোট। যদিও আমি জানি না কীভাবে ভোট দেবো? এখানেও নাকি গায়েবি ভোটের সুযোগ আছে। তা কী করে সম্ভব! দু’বার বোতাম টিপতে হয়। একবার টিপলে ছবি আসবে। তখন সটান দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি বলবে, আপনার ভোট হয়ে গেছে। ভোটার যেই ঘুরে দাঁড়ালেন তখনই ভোট গেল এক নির্দিষ্ট মার্কায়। এটা নাকি মেশিনের কেরামতি। এ নিয়ে দেশজুড়েই সরস আলোচনা। এই রাজধানীতে নানা গুঞ্জন, মেশিনও কি তাদের দমাতে পারবে না? যারা গায়েবি ভোটে বাজিমাত করতে চায়।
অনেকে বলেন, ওসব বাজে কথা। দেশে দেশে এ মেশিন বাতিল হয়ে গেছে। পাশের দেশে চালু থাকলেও জালিয়াতির পথ বন্ধ করেছে। আমাদের এখানে বাতিল মাল চালু করার জন্য কী যে প্রাণান্তকর চেষ্টা। নির্বাচন কমিশনতো মরিয়া। তাদের মরিয়া হতে হবে দু’ কারণে। এক. উপরওয়ালারা চায় তাই এটা চালু করতে হবে। অন্য কারণ বলবো না। বলে নিজের বিপদ ডেকে আনবো নাকি? বাংলাদেশে যারা এ মেশিনের জনক তারা নীরব কেন? বুঝতে পারি না। বুঝার কী দরকার। না বুঝলেও চলে। বেশি বুঝতে গেলেইতো বিপদ। রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। কৌতূহলবশত পঞ্চাশোর্ধ এক ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা ভাই আপনি কি ভোট দিতে যাবেন? তার জবাব শুনে একদম আক্কেল গুড়ুম। ভোট দিতে হয় নাকি! আপনি কেন্দ্রে না গেলেও ভোট হয়ে যায়। ফলাফলতো আগেই জানা যায়। বললাম ভাই, এবারতো যন্ত্রে ভোট হচ্ছে। হেঁসে দিয়ে বললেন, তাহলেতো ষোলকলা পূর্ণই হয়ে গেল। টকশো শুনেতো তাই মনে হচ্ছে।
বেশিরভাগ টকশোপ্লেয়ার নানা ছলচাতুরি আর অনিয়মের কথা বলছেন। কী রকম সেটা? সেদিন শুনলাম, ভোট গণনার সময় নাকি মেশিন একমুখী হয়ে যায়। কম্পিউটারে নাকি প্রোগ্রামিং করা থাকে। এজন্য কিছু অস্থায়ী স্টাফ নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণ চলছে। চোখ কান খোলা রাখলেই জানতে পারবেন। ভোটের পরিবেশ আপাতত ভালো। ২৪ ঘণ্টা পার হলেই অন্য এক পরিবেশ দেখা যাবে। সেটা আবার কী? পুরনো মামলার সুবাধে চলবে ব্যাপক অভিযান। এর ফলে মামলাহীন লোকেরাও পালাবে। এতোসবের কী দরকার। আরে ভাই এসব না করলে শান্তি বিরাজ করবে, ভোটাররা কেন্দ্রমুখী হবে।
আর কেন্দ্রমুখী হলেই সব হিসাব নিকাশ যাবে ওলটপালট হয়ে। তাহলে ভোটের দরকার কি? সিলেকশন পদ্ধতিতে গেলেই তো সব সমস্যার সমাধান। কাড়িকাড়ি টাকা বাঁচবে। খুনখারাবি হবে না। পরিবেশও দূষণ হবে না। শুধু সমস্যা হবে কাগজওয়ালাদের। ওরা তখন কী লিখবে? ভিডিও ফুটেজতো ইশারায় হাওয়া করে দেয়া যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেতো প্রতিদিনই চমকপ্রদ খবর আসে। তাতে কি? মানুষতো ওসব বিশ্বাস করে না। এতোকিছুর পরও আমি ভোট দিতে যাবো। আমাকে ভোট দিতেই হবে। আসুন সবাই মিলে কেন্দ্রে যাই। নিজের ভোট নিজে দিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠা করি। আপনি আসছেন তো?
তাপসের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা-দৈনিক ইত্তেফাক
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীন মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস পাঁচ পরিকল্পনায় নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
আজ বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। তার নির্বাচনী পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্যের ঢাকা, সচল ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা ও উন্নত ঢাকা।
করোনায় তটস্থ পৃথিবী-দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন
বাদুড়ের দেহে কসরৎ, সাপের দেহে প্ল্যানিং, ঠিক তারপরেই আক্রমণ, মানুষে। এটাই কি সন্ত্রাসের পথ-মানচিত্র বিশ্বত্রাস করোনা ভাইরাসের? করোনার এপিসেন্টার নাকি চীনের উহান প্রদেশে সি-ফুডের দোকানের সাপের মাংস। তাই বছরের শুরুর দিন থেকেই দোকানের ঝাঁপি বন্ধ করতে আদেশ। আগে ভাবনা ছিল বাদুড় থেকে কোনোভাবে মানুষের দেহে প্রবেশ করেছে এই ২০১৯-এনসিওভি ভাইরাস।
হ্যাঁ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দিষ্ট এই নামেই বিজ্ঞানীরা আজকের ঘাতক ভাইরাসটিকে চেনেন। এখন তো জানা যাচ্ছে, বাদুড় থেকে সাপ হয়ে মানুষে। চীনা কালাচ ও কোবরা সম্ভবত করোনা ভাইরাসের আধার হিসেবে কাজ করছে। ভাইরাসেরা নামতার মতো লাফ দেয়। এক-একটা লাফে বহু গুণ শক্তি বাড়িয়ে নব কলেবরে হাজির হয়। সারস (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম) এবং মার্স (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম) এই দুটোই করোনা ভাইরাস প্রকাশের পরিচিত রূপ।
মূলত নিঃশ্বাসের কষ্ট দিয়ে শুরু করে ঘাতক হয়ে ওঠা এই ২০১৯-এনসিওভির বর্তমানে কোনো টিকা নেই। ১৯ জন আক্রান্তর দেহ থেকে ভাইরাস পরীক্ষা করে ওয়াশিংটনের বিজ্ঞানী ট্রেভর বেডফোর্ড দেখালেন, নিতান্ত বৈচিত্রহীনতায় ভুগছে ভাইরাসগুলো। মানে? সম্ভবত ২০১৯-এর শেষ দুমাসেই নবজন্ম। আমেরিকার বিজ্ঞানীদের আঙুল সেই ‘সি ফুডের’ দোকানে। তা বলে সাপ!
কিছুতেই মানতে রাজি নন গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড রবার্টসন। তার মতে, সাপ হয়ে মানুষে প্রবেশ এত দ্রুত হতে পারে না। কিন্তু ভাইরাসকে বুঝে ওঠার সমস্যা তো শতাব্দীর শুরুতেই।। জীব বিজ্ঞানের প্রতিটি পরিবর্তনের অদৃশ্য সুতো বিবর্তনের লাটাইতে বাঁধা। বুঝতে ঘাড় ঘোরাতেই হবে। ঘাড় ঘোরালেই সামনে গ্রিক মহাকাব্যের রহস্যময়ী রাক্ষসী মেডুসা। সঙ্গে বিস্ময়কর ক্ষমতা মানুষকে প্রস্তরে রূপান্তরিত করার। এই ধরনের কথা মহাকাব্যের পাতায় আর সীমাবদ্ধ থাকছে না।
২০১৯-এ জাপানের উষ্ণপ্রস্রবণ থেকে আবিষ্কার হল এক অজানা ভাইরাস। পরীক্ষাগারে দেখা গেল, বেচারি প্রোটোজোয়া ভাইরাসের ভয়েই পাথর। নেই কোনো নড়ন-চড়ন। বিজ্ঞানীরা সেই ভাইরাসের নাম দিলেন মেডুসা ভাইরাস। পুরনো ডিএনএ কে ছাঁচ হিসেবে ব্যবহার করে নতুন ডিএনএ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচকও রয়েছে এদের দেহে। আমাদের দেহেরও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই উৎসেচকটি সম্ভবত তাদেরই উপহার। শিম্পাঞ্জি থেকে মানুষ হওয়ার যে পথ, তাতে ৩০ শতাংশের বেশি প্রোটিনের মনুষ্যমুখী অভিযোজনে ভাইরাসের সরাসরি ভূমিকা দেখা গেছে।
২০১৫ সালে সাইবেরিয়ায় ৩০ হাজার বছরের পুরনো পার্মাফ্রস্ট থেকে বের হলো ঘুমন্ত মলিভাইরাস। আকারে বিশাল এই ভাইরাসগুলো বিবর্তনের রহস্যময়তাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর উত্তর রয়েছে জীবের জিনোমে। মলিভাইরাসের জিনসংখ্যা ৫০০, পিথোভাইরাসের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৪৬৭, কিন্তু প্যান্ডোরা ভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রায় তিন গুণ থেকে পাঁচ গুণ। আর আমাদের পরিচিত হিউম্যান ইমিউনো ডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস (এইচআইভি)-র জিনসংখ্যা কিনা মাত্র নয়। বৃহত্তম আরএনএ ভাইরাস, করোনার প্রোটিন তো মূলত চার প্রকার। গবেষণায় দেখা গেলো প্যান্ডোরা ভাইরাস নতুন নতুন কার্যক্ষম জিন (কোডিং রিজিয়ন) তৈরি করতে সক্ষম পূর্বের নন-কোডিং রিজিয়ন থেকে।
আসলে কোনো জীবের গোটা জিনোম বা জেনেটিক পদার্থের যে অংশটি সেন্ট্রাল ডগমা পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে প্রোটিন তৈরি করে সেগুলিই জিনের কোডিং রিজিয়ন। যে অংশগুলো সরাসরি এই পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করে না, সেগুলো নন-কোডিং রিজিয়ন। অর্থাৎ শুধু কার্যক্ষম জিন থেকে নয়, অন্য অংশ থেকেও ফের নতুন জিন তৈরিও করছে ভাইরাস। ফলে ভাইরাসের জিন ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। এই ঘটনাকেই বলা হয় মাইক্রোইভোলিউশন, যা কাজে লাগিয়ে এরা নিজেদের ক্রমশ অচেনা করে তুলেছে। পিথোভাইরাসের রকমসকম কিছুটা পক্স ভাইরাসের মতো। মলি ভাইরাস আবার পরিচিত হারপিসের মতো। অজানা এই শত্রুর আক্রমণের কোনো উত্তর নেই আমাদের কাছে। তবে কি আমাদেরও পাথর হওয়ার পালা? যদিও বিজ্ঞানীরা একটু ধৈর্যশীল হতে বলছেন।
ভাইরাস কি? জীবনই বা কি? প্রাণের পুরাণে ভাইরাসের ভূমিকা বেশ ধূসর। এক দল বিজ্ঞানী মনে করেন, কোষের বিবর্তনে ভাইরাস অপরিহার্য। ভাইরাসের হাত ধরেই কোষে ডিএনএর আগমন। কোষের শুরুতে ডিএনএ দিয়ে স্থিরতা আসার আগে আরএনএর উপর নির্ভরশীল ছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীতে তামাক গাছের পাতায় ভাইরাস আবিষ্কারের সঙ্গেই বিজ্ঞানের নতুন এক শাখার শুরু। একটা সময় পর্যন্ত ধারণা ছিল, সমুদ্র বোধ হয় ভাইরাস-মুক্ত। কিন্তু সেটা যে কতটা ভুল, তার প্রমাণ মিলল মাত্র ৫০ বছর আগেই। সংখ্যাটা চমকে দেওয়ার মতো। অঙ্কের হিসেবে ১-এর পিঠে ৩০টা শূন্য।
ভাইরাসের বেঁচেবর্তে থাকাটাই পোষকের কোষকে হাইজ্যাক করে। ভাইরাসের বিবর্তনের অনেক মতবাদ রয়েছে। এক দলের মতে, পোষক কোষকে হাইজ্যাক করে এরা নিজেদের প্রয়োজন মতো বদলে ফেলে। কিন্তু সেটা বোধহয় সম্পূর্ণ ব্যাখা নয়। ভাইরাসের ঘাতক হয়ে ওঠার পেছনে তাদের বংশলতিকার জটিল পরিবর্তনটা আবশ্যিক ছিল।
বেশ কিছু সাংঘাতিক ঝাঁপ, যার ফলে এইচআইভি, বার্ড ফ্লু, ইবোলা জ্বর চূড়ান্ত বিপর্যয় ডেকে নিয়ে এলো। ডেঙ্গির বানরের দেহ থেকে মরিয়া একটা লাফে আমাদের দেহে মৃত্যুদূত। একটি প্রাণীর দেহ থেকে সম্পর্কহীন নতুন প্রাণীর দেহে ঝাঁপ। ঠিক এই কারণেই ভাইরাসের শুরুটা ঠিক কোথায় বুঝে ফেলা যাবে না। প্রাণীকূলের বিবর্তনের ধারা ভাইরাস অনুসরণ করলে তারা এতটা জটিল হয়ে উঠত না। যেমন, আমাদের আর শিম্পাঞ্জির দেহে পাওয়া যাওয়া ‘হেপাটাইসিস বি’ ভাইরাস জিনে বেশ অমিল হলেও শুরুতে একটি ভাইরাসই ছিল। এখন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন বেশভূষা। ২০০৩ সাল থেকে বিশালাকার ভাইরাস সম্পর্কে জানতে শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। বেশ বড়সড় জিনোম তাদের রহস্যময় করে তুলেছে। এদের অবস্থান আরও ধূসর, এরা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে।
কিছু বিজ্ঞানীর মতে, বিবর্তনের সূচনাতে এরা হয়তো স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল, সময়ের সঙ্গে স্বাধীন প্রজননের ক্ষমতা হারিয়েছে।
বর্তমানে ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলা উষ্ণতা ভাইরাস-সমস্যাকে হাতের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। পার্মাফ্রস্ট গলে যাওয়ার জন্য সুমেরু অঞ্চলে কয়েকশো মিথেন গহবর হাঁ করেছে, বেড়িয়ে পড়ছে শত শতাব্দী প্রাচীন ভাইরাসেরা। শুধু তা-ই নয়, এখন তো বনাঞ্চল থেকেও পাওয়া যাচ্ছে বিশাকার ভাইরাসগুলো। জীবনের গঠন কি তবে ত্রিভুজ থেকে চতুর্ভুজ হতে চলেছে? প্রোক্যারিয়োটিক, ইউক্যারিয়োটিক আর আর্কিয়ার সঙ্গে কি ভাইরাসও যোগ দেবে? চিরতরে জড়ত্বর মুক্তি ঘটিয়ে প্রাণসন্ধানী ভাইরাসের আর কতটা পথ বাকি? জীবনের সংজ্ঞা ধূসর হচ্ছে আরও।
এবার ভারতের কয়েকটি খবর তুলে ধরছি
ফাঁসি হচ্ছেই, মুকেশের শেষ আর্জি খারিজ সুপ্রিম কোর্টে-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা
নির্ভয়া-কাণ্ডের অন্যতম দণ্ডিত মুকেশ সিংহের আবেদন ফেরাল সুপ্রিম কোর্ট। এর ফলে মুকেশের জন্য ফাঁসি এড়ানোর কোনও পথই আর খোলা রইল না।
রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মুকেশের প্রাণভিক্ষার আর্জি বুধবার খারিজ করে বিচারপতি আর ভানুমতী, বিচারপতি অশোকভূষণ, বিচারপতি এস বোপানার বেঞ্চ। তাঁদের তরফে জানানো হয়, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কোনও তাড়াহুড়ো করা হয়নি। রাষ্ট্রপতি সমস্ত নথি খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফাঁসির বাকি মাত্র তিন দিন। তার আগে প্রাণ বাঁচানোর সব রকম চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে নির্ভয়া কাণ্ডের চার দণ্ডিত।
জলঙ্গিতে সিএএ-বিরোধী বন্ধে গুলি, মৃত ২, অভিযুক্ত তৃণমূল-দৈনিক আনন্দবাজার
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-র প্রতিবাদে ডাকা স্থানীয় বন্ধকে কেন্দ্র করে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি। তৃণমূল এবং বন্ধ সমর্থনকারীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে বুধবার মৃত্যু হল দু’জনের।
‘গুলি করা হবে না তো কি বিরিয়ানি খাওয়ানো হবে?’, ফের শাহিনবাগকে হুমকি বিজেপি মন্ত্রীর, বিতর্ক তুঙ্গে-দৈনিক আজকাল
দেশদ্রোহিদের গুলি করা হবে না তো কি বিরিয়ানি খাওয়ানো হবে? কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের বিতর্কিত মন্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে ঠিক একথাই বললেন বিজেপি শাসিত কর্নাটকের মন্ত্রী সিটি রবি। সোমবার দিল্লিতে নির্বাচনী প্রচারে এসে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আন্দোলকারীদের কড়া হুঁশিয়ারি দেন অনুরাগ ঠাকুর৷ অনুরাগ ঠাকুর বলেন, ‘দেশদ্রোহিদের গুলি করে মারা উচিত৷’ অনুরাগের সেই বক্তব্যকেই এবার সমর্থন কর্নাটকের বিজেপি নেতার৷
আরও মজবুত ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক, মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি নমো-দৈনিক আজকাল
ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব আরও মজবুত করে আগামী মার্চ মাসে বাংলাদেশে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগামী ১৭ মার্চ ঢাকায় শুরু হতে চলেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকীর বর্ষব্যাপী উদযাপন। এই উপলক্ষ্যে সেদিন এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আর সেখানেই প্রাধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা। অনুষ্ঠানের একদিন আগেই ঢাকা পৌঁছবেন মোদি। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ থেকে শুরু করে একাধিক বিষয়ে আলোচনা চালাবেন তিনি।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৯