এপ্রিল ১২, ২০২০ ১৭:০৬ Asia/Dhaka

ইরানের কাশানের গোলাপজল বিশ্বব্যাপী সমাদৃতি পেয়েছে। এই কাশানের গোলাপজল দিয়েই মক্কায় আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবা শরিফের দেয়াল ধোয়া হয়।

সবুজ জিরা পার্সলে গোত্রের একটি উদ্ভিদ। ওষুধি গুণ এবং খাদ্যমান থাকার কারণে এই জিরার অসম্ভব গুরুত্ব রয়েছে।

সবুজ জিরার অনেক ওষুধি গুণের কথাও বলেছি আমরা। ইকোলজিক্যাল বিশেষ বৈশিষ্ট্যময় আবহাওয়া ছাড়া জিরা উৎপাদন সম্ভব নয়। সে কারণে বিশ্বের সর্বত্র জিরার চাষ হয় না। ইরানে জিরা চাষের অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করার কারণে ব্যাপক চাষ হচ্ছে। বিশ্বের যত দেশে বহুল পরিমাণে জিরা চাষ হয় এবং রপ্তানি করা হয় ইরান সেসব দেশের অন্যতম। বিশ্বের অন্তত চল্লিশ ভাগ জিরা ইরানেই উৎপাদিত হয়। ইরানে এই জিরার উৎপাদন হয় দুইভাবে। প্রথমত চাষ করার মাধ্যমে এবং দ্বিতীয়ত নিজে নিজেই হয়। ইরানের বেশ কিছু এলাকায় জিরার চাষ হয়। এসব এলাকার মধ্যে রয়েছে খোরাসান প্রদেশ, কেরমান প্রদেশ, সেমনান প্রদেশ, পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশ ইত্যাদি এলাকায় ব্যাপক জিরা চাষ হয়। সবুজ জিরাসহ আরও কিছু উদ্ভিদ নিয়ে আমরা কথা বলবো আজকের আসরে।

ইরানের সবুজ জিরার মান বেশ ভালো। এ কারণে বিশ্ব বাজারে অন্যান্য দেশের সবুজ জিরার মূল্যের তুলনায় ইরানের জিরার মূল্য শতকরা পাঁচ থেকে দশ ভাগ বেশি বৈকি। উন্নত গুণমানের কারণে ইরানের সবুজ জিরা থেকে যে অ্যাসেন্স তৈরি করা হয় সমগ্র পৃথিবীতেই তার তুলনা মেলা ভার। সে কারণেই এশিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের জিরার বাজারে ইরানি জিরার চাহিদা অসম্ভব বেশি। ইরানের সবুজ জিরা তাই প্রায় সারা বছরই বিদেশে রপ্তানি হয়। বিশেষ করে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো তো রয়েছেই এর বাইরেও যেসব দেশে ইরানি সবুজ জিরা রপ্তানি করা হয় সেসব দেশের মধ্যে রয়েছে: জাপান, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, ফ্রান্স, হল্যান্ড, হাঙ্গেরি, বেলজিয়াম, ব্রিটেন, ইউক্রেন এবং রাশিয়া।

জিরা নিয়ে অনেক কথা হলো। এবার যাওয়া যাক গোলাপের ভুবনে। ফার্সিতে গুলে মুহাম্মাদি নামে যে ফুলটি পরিচিত বাংলাদেশে সে ফুলটি লাল গোলাপ নামেই সবাই চেনে। তবে এই গোলাপটি গোলাপি রঙেরও হয়। রৌজ নামেও পরিচিত এই গোলাপ। যাই হোক যে নামেই চিনি না কেন তার সুগন্ধি আর বৈশিষ্ট্যে কোনো পার্থক্য নেই। গোলাপেরও রয়েছে ওষুধি গুণ। ইরানে ব্যাপকহারে গোলাপের চাষ হয়ে থাকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সমগ্র পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি গোলাপের চাষ হয় ইরানে। বছরে প্রায় ত্রিশ হাজার টন গোলাপের চাষ করে ইরান গোলাপ উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। লাল গোলাপ থেকে পাপড়ি, ফুলের কলি, অ্যাসেন্স এবং গোলাব জল উৎপাদন করা হয় ইরানে। ইরানে গোলাপ ফুল থেকে গোলাপ জল তৈরি করার প্রয়োজনীয় সকল সরঞ্জাম ও উপাদানই সহজলভ্য। সে কারণেই গোলাপজল উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বে ইরানের অবস্থান শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে। 

গোলাপজল উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বে ইরানের অবস্থান শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে। বছরে প্রায় বাইশ হাজার টন গোলাপজল উৎপাদিত হয় ইরানে। বিশাল পরিমাণের এই গোলাপজলের শতকরা চল্লিশ ভাগ ব্যবহার হয় ইরানের অভ্যন্তরে। বাকি ষাট ভাগই রপ্তানি করা হয় বাইরের বিভিন্ন দেশে। লাল গোলাপের আতরও বেশ প্রসিদ্ধি লাভ করেছে ইরানসহ বাইরের অনেক দেশে। উপযুক্ত আবহাওয়ার কারণে ইরানি গোলাপ থেকে তৈরি আতরের এই কদর। আর ইরানের গোলাপজলও পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো ছাড়াও লেবানন, বুলগেরিয়া, জার্মানি, ইতালি এবং আমেরিকাতেও রপ্তানি করা হয়। বিখ্যাত উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের অনেকেই গোলাপ ফুলের ব্যাপক ওষুধি গুণের কথা বলেছেন। গোলাপের আতর কানের সমস্যা, পেটের সমস্যা, হাড় এবং চামড়ার বিভিন্ন রোগের উপশম করে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। গোলাপ ফুলের মোরব্বারও ওষুধি গুণের কথা বলে গেছেন বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনে সিনা তাঁর লেখা বইতে। বিশেষ করে যক্ষ্মা রোগের ক্ষেত্রে দারুণ উপকারী গোলাপ ফুলের মোরব্বা।

গোলাপ ফুল অকাল বার্ধক্য থেকে রক্ষা করে এমনকি ডায়াবেটিস রোগের জন্যও উপকারী। গোলাপ ফুল অতিরিক্ত হৃদকম্পন দূর করে, ফুসফুস এবং কিডনির জন্যও ভালো কাজ করে। স্নায়ুকে ঠাণ্ডা রাখে এবং ঘুমের সমস্যা মানে অনিদ্রা দূর করে। শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও গোলাপের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কার্যকারিতা। দাঁত এবং মুখের ক্ষত দূর করতেও গোলাপের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় হার্বাল চিকিৎসায়। গোলাপ ফুল চাষে খুব বেশি পানির প্রয়োজন পড়ে না। সে কারণে ইরানের আবহাওয়া এই ফুলের বিকাশের জন্য ইতিবাচক। উঁচু পার্বত্য এলাকাও এই ফুল চাষের উপযোগী। এসব কারণেই ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে গোলাপের নির্যাস তৈরি এবং আতর বানানোর ফ্যাক্টরি যেমন গড়ে উঠেছে প্রচুর তেমনি বিশাল এলাকা জুড়ে গোলাপের চাষ হয়ে আসছে। ইরানের প্রায় বিশটি প্রদেশে চৌদ্দ হাজারের বেশি জায়গাজুড়ে চাষ হচ্ছে গোলাপের।

ইরানের ফার্স প্রদেশ, কেরমান ও ইস্ফাহান প্রদেশ, চহর মাহল ভা বাখতিয়রি প্রদেশ, হামেদান, সেমনান এবং ইয়াজদ প্রদেশেও গোলাপের চাষ হয়। অন্তত আঠারো প্রকারের গোলাপ ফুলের চাষ হয় ইরানে। এগুলো থেকে নেয়া নির্যাস মানে গোলাপজলের মধ্যেও একটি থেকে অন্যটির পার্থক্য রয়েছে। তবে সবচেয়ে ভালো মানের গোলাপজল হয় কাশানে। কাশানের গোলাপজল বিশ্বব্যাপী সমাদৃতি পেয়েছে। এই কাশানের গোলাপজল দিয়েই মক্কায় আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবা শরিফের দেয়াল ধোয়া হয়। কাশানের কামসারে গড়ে উঠেছে গোলাপজল তৈরির অসংখ্য কারখানা। গোলাপফুল তোলার উৎসব হয় কাশানে। শুধু কাশানই নয় যেসব এলাকায় গোলাপ চাষ হয় প্রায় সব এলাকাতেই এই উৎসব হয়। এই উৎসব দেখার জন্য উপভোগ করার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তো বটেই বাইরে থেকেও বহু লোকজন এসে জড়ো হয়।

যারা এই চমৎকার উৎসবটি দেখতে চান ফার্সি উর্দিবেহেশত মাসের শুরুর দিকে মানে এপ্রিলের শেষের দিকে সফর করবেন। এই সফর নি:সন্দেহে আপনার জীবনের এক ঐতিহাসিক স্মৃতি হয়ে থাকবে। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ১২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ