মে ০৮, ২০২০ ১৫:৫৩ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: ৮ মে শুক্রবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি।

বাংলাদেশের শিরোনাম :

  • বিধিনিষেধ শিথিলে বেপরোয়া নগরবাসী স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা নেই -দৈনিক ইত্তেফাক
  • লকডাউন খুলে দিয়ে সরকার মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে: রিজভী-দৈনিক মানবজমিন
  • লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াই করোনা পরীক্ষা-দৈনিক যুগান্তর
  • করোনায় রপ্তানি আয়ে ধস, এপ্রিলেই কমল ৮৩%–কালের কণ্ঠ
  • ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি সম্পাদক পরিষদের-বাংলাদেশ প্রতিদিন
  • করোনায় আফ্রিকায় ১ লাখ ৯০ হাজার মৃত্যুর আশঙ্কা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার-দৈনিক সমকাল
  • আমেরিকার অর্থনীতির মৃত্যুযাত্রা-দৈনিক প্রথম আলো

ভারতের শিরোনাম:

  • ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়াল ৫৬ হাজার-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা
  • মহারাষ্ট্রে মালগাড়ি পিষে দিল ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিককে -দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন
  • একবছর আগেই পরিবেশগত বৈধ ছাড়পত্র ছিল না, স্বীকার এলজি পলিমার্সের-দৈনিক আজকাল

পাঠক/শ্রোতা! এবারে চলুন, বাছাইকৃত কয়েকটি খবরের বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

করোনাভাইরাসের প্রভাব বিশ্বজুড়ে সবকিছুতে

মহামারি করোনায় বিশ্বের সবকিছু থমকে গেছে। আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিশ্বজুড়ে।করোনা প্রতিরোধে চলছে লকডাউন, কোয়ারেন্টিন, আইসোলেন, ও শাটডাউন। একইসাথে প্রতিষেধক তৈরির সর্বোচ্চ চেষ্টা। বাংলাদেশ ভারতসহ বিশ্বমিডিয়ার প্রধান খবর করোনা পরিস্থিতি। প্রতিদিন আপডেট খবরে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়ে যাচ্ছে। ওয়ার্ল্ডওমিটার ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী বিশ্বের ২১২ টি দেশ ও অঞ্চল করোনা আক্রান্তের শিকার। বিশ্বব্যাপী মোট মৃতের সংখ্যা ২,৭০,৮৮০  জন ও আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯,৩০,৭৮৪   জন এবং জন ৩,৪৮,৪৮৮ সুস্থ্য হয়েছেন । করোনার প্রভাব পড়েছে বিশ্বের সবকিছুতে। 

করোনায় পুরো বিশ্বটাই যেন মৃত্যুপুরী

একনজরে বিশ্ব করোনার খবর: দৈনিক যুগান্তরসহ বেশ কয়েকটি দৈনিকের খবরে লেখা হয়েছে, বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছেই। লাশের সারি বাড়তে বাড়তে বিশ্বটাই যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যে ২ লাখ ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।একদিনেই যুক্তরাষ্ট্রে ২৪৪৮ জনের মৃত্যু-দৈনিক যুগান্তরের এ খবরে লেখা হয়েছে, করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত যুক্তরাষ্ট্র। প্রথম দিকে মহামারীকে গুরুত্ব না দেয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার এখন কোভিড-১৯ মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছেন। মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিয়েছেন দেশটির ৭৬ হাজারের বেশি মানুষ। আক্রান্ত ও মৃত্যু কোনোটিতেই যুক্তরাষ্ট্রের ধারেকাছেও নেই কোনো দেশ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে করোনায়।দৈনিক সমকালের খবর-বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আশঙ্কা –আফ্রিকায় অন্তত ১ লাখ ৯০ হাজার মানুষ মারা যেতে পারে।

করোনা সম্পর্কিত বাংলাদেশের খবর:

বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্ত বাড়ছে

দৈনিক প্রথম আলোসহ প্রায় সব দৈনিকের খবর-দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২০৬ জনে।

এই সময়ের মধ্যে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭০৯ জন। এ নিয়ে সর্বমোট আক্রান্ত ১৩ হাজার ১৩৪ জন। এছাড়া নতুন করে ১৯১ জনসহ মোট ২ হাজার ১০১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। আজ বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এদিকে, ঢিলেঢালা ‘লকডাউন’ আরও শিথিল করায় দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার-এমনটি মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বিধিনিষেধ শিথিলে বেপরোয়া নগরবাসী স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা নেই- এমন খবর দিয়েছে দৈনিক ইত্তেফাক। দৈনিকটি আরও লিখেছে, করোনা কি প্রকৃতির প্রতিশোধ?

পোশাককর্মীদের করোনা সংক্রমণ বাড়ছে

দৈনিক মানবজমিনের খবরে লেখা হয়েছে, সংক্রমণ বাড়ছে পোশাক কর্মীদের। দৈনিকটি আরও লিখেছে, পুলিশ, চিকিৎসক ও নার্স এবং গণমাধ্যমকর্মী এই তিন পেশায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এ পর্যন্ত পুলিশে ১২৮৫ জন, চিকিৎসক ও নার্স ১০২৪ জন এবং গণমাধ্যমের ৬৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এদিকে, দৈনিক প্রথম আলোর একটি খবরে লেখা হয়েছে, ২০ লাখ পরিবারকে মাসে ২ হাজার টাকা করে দেবে সরকার।

করোনায় অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রসঙ্গে দৈনিক কালের কণ্ঠের শিরোনাম এরকম- করোনায় রপ্তানি আয়ে ধস, এপ্রিলেই কমল ৮৩%।দৈনিকটির সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, সব মিলিয়ে গত দুই মাসেই করোনার প্রভাবে সরকারি ছয় ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার 'করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রস্তুতি ও সম্ভাব্য ক্ষতি নিরূপণ ও প্যাকেজ বাস্তবায়নে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা নিরসনে সুপারিশমালা প্রণয়ন’ শীর্ষক এক ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। কনফারেন্সে অংশ নেওয়া পাঁচ সরকারি ব্যাংকের এমডি এ ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন।

কোভিড ১৯ পরীক্ষা

লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াই পরীক্ষা-করোনা মোকাবেলায় প্রত্যক্ষ সার্ভিলেন্স পদ্ধতি জরুরি-দৈনিক যুগান্তরের এ প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মৃত্যুর সংখ্যা এখন ২০৬ জন। তবে গত কয়েক সপ্তাহে করোনার লক্ষণ নিয়ে আরও বেশ ক’জনের মৃত্যু হওয়ায় ধারণা করা যায়, পর্যাপ্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বড় হতো। দুর্ভাগ্যজনক, করোনার নমুনা পরীক্ষা এবং এ রোগে সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে এখনও মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

শুরুতে একটিমাত্র স্থানে পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল। বর্তমানে সে সুযোগ বাড়লেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই নমুনা পরীক্ষা থেকে শুরু করে চিকিৎসা পর্যন্ত দুর্ভোগের সীমা নেই। সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য নমুনা পরীক্ষা করা এখনও দেশে কঠিন কাজগুলোর একটি। বস্তুত দেশে যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা চলছে, তাতে করোনা মোকাবেলায় দ্রুত সাফল্য অর্জন করা কঠিন হবে। বর্তমানে কেবল তারাই পরীক্ষা করাতে আসছেন, যাদের করোনা উপসর্গ রয়েছে। যাদের উপসর্গ নেই, তারা পরীক্ষা করানোর কথা ভাবছেনই না। অথচ বিষেশজ্ঞরা বলছেন, করোনায় আক্রান্ত ৮০ শতাংশ মানুষেরই কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না।

পরীক্ষা না করানোর কারণে এই ৮০ শতাংশ মানুষকে পৃথক করা বা চিকিৎসার আওতায় আনা হয় না। ফলে তাদের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। কাজেই করোনা পরীক্ষার এই প্যাসিভ (পরোক্ষ) সার্ভিলেন্স পদ্ধতি থেকে সরে আসা প্রয়োজন। আমাদের চেষ্টা হওয়া উচিত অ্যাক্টিভ (প্রত্যক্ষ) সার্ভিলেন্স পদ্ধতিতে যাওয়ার।

এ পদ্ধতির আওতায় এলাকা ধরে ধরে সবার পরীক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। এর মাধ্যমে যারা করোনা শনাক্ত হবেন, তাদের আলাদা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় লকডাউন করতে হবে কঠোরভাবে। উল্লেখ্য, এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে করোনা মোকাবেলায় সফল হয়েছে ভারতের কেরালা রাজ্য, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদেরও এ পদ্ধতিতে যাওয়া উচিত। তাদের মতে, এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি কাজ হল লক্ষ্য নির্ধারণ করে অর্থাৎ প্রত্যক্ষভাবে পরীক্ষা চালানো।

প্রকৃতপক্ষে যত বেশি মানুষকে পরীক্ষার আওতায় আনা যাবে, দেশের করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে তত বেশি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে এবং সে অনুযায়ী করণীয় নির্ধারণ করা সহজ হবে।

এবার ভারতের কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

ভারতে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর নতুন রেকর্ড

ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়াল ৫৬ হাজার, মৃত্যুর নতুন রেকর্ড-দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন ও আনন্দবাজার পত্রিকাসহ প্রায় সব দৈনিকের অনলাইন সংস্করণের খবর। এ খবরে লেখা হয়েছে, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। বৃহস্পতিবারই আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়েছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজার ৩৯০ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন এই রোগে। তার ফলে দেশে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৫৬ হাজার ৩৪২। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস প্রাণ কেড়েছে ১০৩ জনের। এই নিয়ে এখনও অবধি দেশে মোট এক হাজার ৮৮৬ জনের মৃত্যু হল কোভিড-১৯-এর থাবায়।

মহারাষ্ট্রে মালগাড়ি পিষে দিল ১৬জন পরিযায়ী শ্রমিককে-দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন, আজকালসহ প্রায় সব দৈনিকের খবর। বিস্তারিত খবরে লেখা হয়েছে, লকডাউনের মাঝে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। হেঁটে মহারাষ্ট্র থেকে মধ্যপ্রদেশের বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করেছিলেন শ্রমিকদের একটি দল। দীর্ঘ পথ হাঁটার পর ক্লান্তির জেরে ভোরের দিকে রেলট্র্যাকের উপরেই তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েন। সেসময়ই ঘটে গেল বিপত্তি। ঔরঙ্গাবাদের কাছে একটি মালগাড়ির ধাক্কায় অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হল ঘটনাস্থলে। জখম অন্তত ৫ জন। ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে যান রেল আধিকারিকরা। দেওয়া হয়েছে তদন্তের নির্দেশ।

দৈনিক আজকালের একটি খবরের শিরোনাম-একবছর আগেই পরিবেশগত বৈধ ছাড়পত্র ছিল না, স্বীকার এলজি পলিমার্সের। এ খবরে লেখা হয়েছে, পরিবেশগত বৈধ ছাড়পত্রের সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছিল ২০১৯–এর ১০ মে–তেই। একথা স্বীকার করে নিয়েছে বিশাখাপত্তনমের পেট্রোকেমিক্যাল কারখানা এলজি পলিমার্স। তারপরও পরিবেশগত ছাড়ের সীমা অতিক্রম করে উৎপাদন বাড়ানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার ভোররাতে কারখানা থেকে বিষাক্ত স্টাইরিন গ্যাস নির্গত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১১জনের। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি কমপক্ষে ৫০০জন।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/‌৮