কথাবার্তা: করোনায় ভয় বাড়াচ্ছে হাসপাতাল,রোগী পালাচ্ছে,টেস্টের লাইনও ঝুঁকিপূর্ণ
সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: ১৬ মে শনিবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশের শিরোনাম:
- মৃত্যুর মিছিলে আরও ১৬ জন, প্রাণহানি ৩০০ ছাড়াল -দৈনিক যুগান্তর
- করোনায় হিমশিম বাজেট ও সেবায় নড়বড়ে স্বাস্থ্য খাত-দৈনিক প্রথম আলো
- টেস্টের জন্য লাইন ঝুঁকিপূর্ণ-দৈনিক মানবজমিন
- কুতুপালংয়ে ৫ হাজার রোহিঙ্গা লকডাউনে-দৈনিক সমকাল
- ভার্চুয়াল আদালতের জামিনে বন্দির চাপ কমছে কারাগারে-দৈনিক ইত্তেফাক
- ভয় ছড়াচ্ছে হাসপাতাল!-বাংলাদেশ প্রতিদিন
- আগামী বাজেটে ভ্যাট বাড়ালে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়বে-কালের কণ্ঠ
ভারতের শিরোনাম:
- করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় চীনকে টপকে গেল ভারত,২৪ ঘন্টায় আক্রানা্ত ৪ হাজার-দৈনিক আজকাল
- করোনা মোকাবিলায় ভারতকে ভেন্টিলেটর দেবে আমেরিকা, ঘোষণা ট্রাম্পের-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা
- সরাসরি গরিবের হাতে টাকা দিন' দাবি রাহুল গান্ধীর -দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন
পাঠক/শ্রোতা! এবারে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাব।
কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:
১. বাংলাদেশের চট্টগ্রামে জাকাত বিতরণ নিয়ে মারামারি, গুলিতে নিহত ১ জন। এটি মানবজমিনের খবর। কী বলবেন আপনি?
২. ইসরাইলকে ইঙ্গিত করে ইরান বলেছে, আমেরিকা একটি বর্ণবাদী সরকারকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব নিয়েছে। আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর:
বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি:
মৃত্যুর মিছিলে আরও ১৬ জন, প্রাণহানি ৩০০ ছাড়াল।এটি দৈনিক যুগান্তরের খবর।
করোনায় হিমশিম বাজেট ও সেবায় নড়বড়ে স্বাস্থ্য খাত-দৈনিক প্রথম আলো

বিশ্বে স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে কম বিনিয়োগের দেশের একটি বাংলাদেশ। এখানে মানুষ নিজের পকেট থেকেই চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে। নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সুবিধা, আমদানি করা যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে, কেনাকাটায় চলে বড় দুর্নীতি। খাতটির স্বল্প বাজেট, সেবা-সুবিধার ঘাটতি, অদক্ষতা আর জনবলসংকটের কারণেই নতুন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে দেশ।
করোনা চিকিৎসায় আগ্রহ নেই বেসরকারি হাসপাতালের, সংকটেও বাণিজ্য মুখ্য-দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার এ প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে-প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর ব্যবসায়িক মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে -অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান * জাতির এ সংকটে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে -অধ্যাপক কামরুল হাসান খান * সব হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজন নেই -ডা. এবিএম হারুন
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় এগিয়ে আসেনি দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতাল। রোগীর চাপ সামলাতে সরকারি হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে অধিকাংশ হাসপাতাল হাত গুটিয়ে আছে। বেশকিছু হাসপাতাল-ক্লিনিক অঘোষিত আধা-লকডাউন করে রাখা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে চারটি বেসরকারি হাসপাতাল এগিয়ে এসেছে বটে। তবে তারা সরকারের সঙ্গে দেনা-পাওনা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে চলেছে। একটির কর্তৃপক্ষ ২শ’ শয্যার জন্য বিভিন্ন খাতে সরকারের কাছে মাসে ১৭ কোটি টাকার বেশি দাবি করেছে। অপর একটি চেয়েছে ডাক্তার ও স্টাফদের থাকা-খাওয়ার খরচও। অন্যরাও প্রায় একই ধরনের প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে। দরদামে বনিবনা না হওয়া পর্যন্ত প্রায় কেউই সেবা দিতে রাজি হচ্ছে না। রফা হলেই তারা কাজে নামছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর এ ধরনের কর্মকাণ্ডে তাদের বাণিজ্যিক মনোভাবের বহির্প্রকাশ বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।
টেস্টের জন্য লাইন ঝুঁকিপূর্ণ- দৈনিক মানবজমিনের এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, দেশে করোনা পরীক্ষা যথেষ্ট পরিমাণে হচ্ছে না বলে মনে করেন করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির উপদেষ্টা ডা. এবিএম আবদুল্লাহ। যে পরিবেশে পরীক্ষা হচ্ছে তাও ঝুঁকিপূর্ণ বলে মত প্রখ্যাত এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞের। করোনা টেস্টের হার নিয়ে মানবজমিনকে তিনি বলেন, আসলে টেস্ট প্রথমে একটি মাত্র সেন্টারে হয়েছে। এখন কিন্তু ৩৭টি সেন্টারে পরীক্ষা হচ্ছে এটা আরো বাড়াতে হবে। এসব সেন্টারে অনেক ভিড়। গাদাগাদি। লম্বা লাইন। মানুষ একেবারে গায়ের উপর গা ঘেষে দাঁড়াচ্ছে। এটাও ঝুঁকিপূর্ণ। একজন গায়ে গা ঠেকিয়ে দাঁড়াচ্ছে। তার শরীরে ভাইরাস থাকলে আমি সুস্থ অবস্থায় থাকলেও আমার মধ্যে ছড়াতে পারে। সুতরাং খুব ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে যারা ছোট বাচ্চা, বয়স্ক মানুষ, নারী, রোগী তাদের জন্য এই লাইনে দাঁড়িয়ে টেস্ট করাটা খুব কষ্টদায়ক। এটা যথেষ্ট না। পরীক্ষার জন্য আরো বুথ বাড়াতে হবে। সেন্টার বাড়াতে হবে। জেলায় জেলায় পরীক্ষা কেন্দ্র করা উচিত। যেন মানুষের ভোগান্তি কম হয়। অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, করোনার যেহেতু কোনো ভ্যাকসিন নেই। প্রতিকার এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
ভয় ছড়াচ্ছে হাসপাতাল-সাধারণ রোগে ভর্তি হয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন করোনায়, সেবা না পেয়ে পালাচ্ছেন করোনা রোগী-দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন। ২৭ এপ্রিল অসুস্থতা বোধ করলে তাঁকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতালে। তাঁর হার্ট, কিডনি, ফুসফুস, উচ্চ রক্তচাপ, পারকিনসন ডিজিজসহ নানা শারীরিক জটিলতা ছিল। এ হাসপাতাল থেকে পরে তাঁকে সিএমএইচে নেওয়া হয়। সেখানে ১০ মে তাঁর নমুনা নিয়ে করোনা পরীক্ষা করা হয়। তখন করোনা নেগেটিভ এসেছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার ৪টা ৫৫ মিনিটে মৃত্যুর পর নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হলে তাঁর শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। শুধু অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ক্ষেত্রেই নয়, এর আগে সাবেক এক বিমান বাহিনী কর্মকর্তাও হাসপাতালে গিয়ে আক্রান্ত হন করোনাভাইরাসে। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির দিন তাঁর করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ আসে। তিন দিন পর তাঁর মৃত্যুর পর ফল আসে পজিটিভ। অবশ্য এর মধ্যে হাসপাতাল পরিবর্তন করা হয়েছিল।
হাসপাতালে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর সেখান থেকে চলে আসার ঘটনাও বাড়ছে। খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে, তিন দিনে ৬৬ জন করোনা রোগী হাসপাতাল থেকে চলে গেছেন। সুস্থ হওয়ার আগেই তারা হাসপাতাল থেকে চলে গেছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভয়ভীতি-আতঙ্কে রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। কেউ মনে করেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে অনেকে আস্থা পাচ্ছেন না। যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়াদের পলাতক হিসেবে দেখানো হচ্ছে। ঢাকার চারটি সরকারি হাসপাতাল থেকেই এভাবে করোনা রোগী চলে যাওয়া ও পালানোর তথ্য পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হাসপাতালগুলোয় সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ঝুঁকি তো আছেই।
বিশ্ব করোনা পরিস্থিতি: করোনায় বিশ্বে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সারা বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে- ৩,০৮,৮৪৫ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা- ৪৬,৪১,৩২৮ জন। দৈনিক যুগান্তরে ছাপা হয়েছে। দৈনিকটির অন্য একটি খবরে লেখা হয়েছে, করোনায় দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষতি ২২ হাজার কোটি ডলার।
লকডাউন শিথিলের মধ্যে টেক্সাসে একদিনে রেকর্ড মৃত্যু-দৈনিক মানবজমিন
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে লকডাউন শিথিল করে সব কিছু সবেমাত্র খুলে দেয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সেখানে নতুন করে কারোনা ভাইরাসে ৫৮ জন মারা গেছেন। এটাই সেখানে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এদিকে করোনা: শতভাগ সফল এন্টিবডি আবিষ্কারের দাবি মার্কিন কোম্পানির-একই দৈনিকে পরিবেশিত হয়েছে খবরটি। এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, করোনারোধে বিজ্ঞানী ও গবেষকরা বেপরোয়া গতিতে কাজ করছ।
এবার ভারতের কয়েকটি খবর তুলে ধরছি
সংক্রমণে চিনকেও টপকে গেল ভারত, ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত প্রায় ৪ হাজার-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে,
করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় চিনকে টপকে গেল ভারত। সেই সঙ্গে সংক্রমণের তালিকায় উঠে এল বিশ্বের মধ্যে ১১তম স্থানে। জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, চিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৪ হাজার ৩৮ জন। শনিবারই সেই সংখ্যাকে ছাপিয়ে গেল ভারত। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এই মুহূর্তে ৮৫ হাজার ৯৪০। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১০৩ জনের। ফলে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৭৫২। তবে ভারতের করোনায় মৃত্যুর হার চিনের তুলনায় কম।
দৈনিক আজকালের শিরোনাম-ফের সড়ক দুর্ঘটনা, উত্তরপ্রদেশে দুই লরির সংঘর্ষে মৃত ২৪ অভিবাসী শ্রমিক
বিস্তারিত খবরে লেখা হয়েছে, ফের সড়ক দুর্ঘটনায় উত্তরপ্রদেশের অরাইয়াতে মৃত্যু হল ২৪ জন অভিবাসী শ্রমিকের। আহত হয়েছেন আরও ২২ জন। শনিবার ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ দু’টি লরির মুখোমুখি ধাক্কায় অভিবাসী শ্রমিকদের ঐ হতাহতের ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক। জানা গেছে, লরিতে করে ফেরার সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়া ওই শ্রমিকরা বিহার, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। রাজস্থান থেকে তাঁরা নিজেদের বাড়ি ফিরছিলেন।
এদিকে, মধ্যপ্রদেশে অপর এক সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাকে চড়ে বাড়ি ফেরার পথ ধরে ট্রাকটি উলটে গিয়ে আরও ৫ অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হলো আহত অপর ১৭ জন। সড়ক দুর্ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইটে শ্রমিক পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ ও সমবেদনা জানিয়েছেন।
সরাসরি গরিবের হাতে টাকা দিন’, ২০ লক্ষ কোটির প্যাকেজ নিয়ে দাবি রাহুলের-দৈনিক সংসবাদ প্রতিদিনের এ খবরে লেখা হয়েছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও নিজের মারণ ক্ষমতা বাড়িয়েই চলেছে নোভেল করোনা ভাইরাস। ভারতসহ বিশ্বের একাধিক দেশে মৃত্যুমিছিল অব্যাহত। আর্থিক প্যাকেজ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী র দাবি-প্রধানমন্ত্রী ২০ লক্ষ কোটি টাকা প্যাকেজ পুনর্বিন্যাস করুন, সরাসরি গরিব মানুষের হাতে টাকা দিন। খিদে পেটে মানুষ ঋণ চান না, হাতে টাকা চান। সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল গান্ধী এ দাবি করেন।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৬