জুন ২৭, ২০২০ ১৭:০০ Asia/Dhaka
  • কথাবার্তা: লাদাখ সীমান্তে ফের উত্তেজনা: তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের আশঙ্কা!

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: ২৭ জুন শনিবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • বাংলাদেশে করোনায় আরো ৩৪ জনের মৃত্যু, শানাক্ত ৩৫০৪
  • করোনা নিয়ে  গুরুতর সমস্যায় যুক্তরাষ্ট্র-দৈনিক সমকাল
  • ঢাকা ছাড়ছেন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা-দৈনিক ইত্তেফাক
  • চীনকে ঘিরে নেপাল-ভারত সম্পর্কে আরো মেঘ জমেছে!-দৈনিক মানবজমিন
  • করোনা সংক্রমণ চূড়ান্তের কাছে , সেপ্টেম্বরে কমতে পারে-করিগরি বিশেষজ্ঞ দল-দৈনিক প্রথম আলো
  • ব্যাপক আকারে নতুন সংক্রমণের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ-দৈনিক কালের কণ্ঠ
  • তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের আশঙ্কা! জেনে নিন যা যা ঘটতে পারে...-বাংলাদেশ প্রতিদিন

ভারতের শিরোনাম:    

  • লাদাখের পি পি ১৪’র কাছে ফের ভারতীয় এলাকা দখল করল চীন-আনন্দবাজার পত্রিকা
  • ভারতে ফের করোনা সংক্রমণে রেকর্ড বৃদ্ধি, মোট আক্রান্ত ৫ লাখ পেরল-দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন 
  • ভারতে অর্থনৈতিক সংকট দিনে দিনে গভীরতর হচ্ছে জানাল এস অ্যান্ড পি-দৈনিক আজকাল 

পাঠক/শ্রোতা! এবারে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাব। 

কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:

১) দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার আজকের একটি মর্মস্পর্শী শিরোনাম হচ্ছে,’ দোষ তাহলে মধ্যবিত্তেরই।’ এ শিরোনামে মধ্যবিত্তের জীবনে একটা কঠিন চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনি কি বলবেন?

২) ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস বলেছে, ইহুদিবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর এবং জর্দান উপত্যকা সংযুক্ত করার যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাইছে তা রুখে দেয়ার সবচেয়ে কার্যকরী পথ হচ্ছে অস্ত্রের লড়াই। আপনার মন্তব্য কী?

বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর:

বিশ্বে প্রায় কোটি ছুঁইছুঁই করছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা

বিশ্ব করোনা পরিস্থিতি: বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা প্রায় কোটি ছুঁইছুঁই করছে। মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ইত্তেফাকের খবরে লেখা হয়েছে, করোনায় গভীর সমস্যায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ফাউচি। এদিকে যুগান্তরের খবরে লেখা হয়েছে, চীনে নতুন করে গত ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটেছে। অন্যদিকে বিশ্ব  স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছৈ, ভ্যাকসিন উদ্ভাভনের প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে এগিয়ে অক্সফোর্ড।

বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি:

বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৩৪  জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৬৯৫ জন। নতুন আক্রান্ত ৩৫০৪  জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৭৮ জন। দৈনিক প্রথম আলো ও সমকালসহ প্রায় সব দৈনিকে খবরটি পরিবেশিত হয়েছে। বাংলাদেশে-করোনা সংক্রমণ চূড়ান্তের কাছে , সেপ্টেম্বরে কমতে পারে বলে জানিয়েছেন একটি করিগরি বিশেষজ্ঞ দল। এটি দৈনিক প্রথম আলোর খবর। আর দৈনিক কালের কণ্ঠ লিখেছে, ব্যাপক আকারে নতুন সংক্রমণের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। অন্যান্য দৈনিক লিখেছে, মধ্যব্ত্তি ও নিম্মবিত্তের মানুষেরা চরম সঙ্কটে পড়েছে।

চীনকে ঘিরে নেপাল–ভারত সম্পর্কে আরো মেঘ জমছে!-দৈনিক মানবজমিন

নেপাল–ভারত সম্পর্কে আরো মেঘ জমছে!

গালওয়ান উপত্যকার রক্তপাতের পরে দুটি নতুন খবরে কান খাড়া করেছে ভারত। তিব্বত–নেপাল সীমান্ত সংলগ্ন ১০টি এলাকার ৩৩ হেক্টর কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে চীনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, নেপাল মানচিত্র বিরোধের পর বিহার দিল্লিতে নালিশ জানিয়েছে, নদী শাসন কাজে তারা নেপালীদের দ্বারা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। উল্টো নেপালি মিডিয়া বলছে, তারা ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্যে বাধা পাচ্ছে।

সব মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, করোনাকালে বাংলাদেশের আশেপাশে কৌশলগত সীমান্ত উত্তেজনা কমছে না। বরং চীন ও পাকিস্তানের মতোই অনেকটা কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে ভারত–নেপাল সম্পর্কও। এর ফলে মানবজাতির এক অস্তিত্বের সংকটে উপমহাদেশে মানচিত্র বিরোধে জড়িয়ে পড়ার রেশ মিলিয়ে যাচ্ছে না। বরং জমাট হচ্ছে।

বর্তমান বিতর্ক হচ্ছে কালাপানি, লিপুলেখ এবং লিম্পিয়া ধাউরা নিয়ে।

নেপালের উত্তর-পশ্চিম অংশে এগুলো অবস্থিত - যার দক্ষিণে ভারতের কুমায়ুন এবং উত্তরে চীনের তিব্বত। এই ভূখণ্ডটি ভারত, নেপাল ও চীন - তিন দেশের একটি সংযোগস্থল। যাকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।

২৬ জুন বিহার থেকে নতুন উদ্বেগ পৌছালো দিল্লিতে। নেপাল-ভারত সীমান্তে নদীভাঙন এবং নদীর চরে ক্ষয়রোধের কাজ দু’দেশ ভালোভাবেই এগিয়ে নিচ্ছিল। এমনকি মানচিত্র সংকটের পরেও। এখন বলা হচ্ছে, কিছুদিন আগে বিহারের পূর্ব চম্পারন জেলায় এই কাজে কাঠমান্ডু বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিহার সরকার।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা চেক পয়েন্ট থেকে নেপালের কাকরভিটার দূরত্ব মাত্র ৯০ কিমি। এখন নেপালি মিডিয়া বলল, পশ্চিমবঙ্গের কাকরভিটা চেক পয়েন্ট থেকে নেপালে পণ্যবাহী লরি ঢুকতে বাধা পাচ্ছে। অবশ্য নেপালি মিডিয়া রিপোর্ট নস্যাৎ করে উদ্বিগ্ন সাউথ ব্লক মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিলকুল ঠিকঠাক চলছে। দু’দেশের স্থলবাণিজ্য করোনা-কালেও থেমে নেই। ওদিকে চীনের নেপাল সীমান্ত সংলগ্ন তিব্বতকে লক্ষ্য রেখে রাস্তা এবং পরিকাঠামো নির্মাণ বাড়াতে নেপালের ১০টি এলাকার ৩৩ হেক্টর জমির দখল নিয়েছে চীন— কাঠমান্ডু থেকে এমন রিপোর্টও সাউথ ব্লকে এসেছে বলেও ভারতীয় মিডিয়া দাবি করছে। 

চীনকে কোণঠাসা করতে ভারতেকে যেভাবে সাহায্য করবে আমেরিকা-দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন

ভারত-চীন সীমান্ত সংঘাতকে কেন্দ্র করে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যাওয়া বিচিত্র নয়। চীনের অনমনীয় আগ্রাসন নীতির কারণে ঘটনার গতিপ্রকৃতি কিন্তু সেদিকেই এগোচ্ছে। পূর্ব লাদাখে ভারত-চীন দু’পক্ষই সেনা বাড়ানোয় এমনিতেই উত্তেজনা চরমে রয়েছে। এরপর যদি আমেরিকা ভারতের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে অবধারিতভাবেই কিন্তু তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যাবে।গালওয়ান সংঘাত পরবর্তী পরিস্থিতিতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের যে সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে, তা বিশ্বের অন্যান্য শক্তিধর দেশগুলোও বুঝছে। কিন্তু, কেউ-ই প্রকাশ্যে চীনকে তার আগ্রাসন নিয়ে কিছু বলছে না। রাশিয়া এখনও পর্যন্ত মুখ বন্ধই রেখেখেছে। 

গালওয়ান সংঘাতের পর ভারত-চীন দু’পক্ষকে নিয়ে বসার চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে যায় রাশিয়া। কারণ, না ভারত, না চীন কেউই তৃতীয়পক্ষের হস্তক্ষেপে রাজি হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়া কাকে শেষ পর্যন্ত সমর্থন করবে, কার পাশে গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছে গোটা বিশ্ব। অন্যদিকে, চীনের সঙ্গেও রাশিয়ার সম্পর্ক এখন ভাল। তাই রাশিয়া পুরনো মিত্র নাকি নয়া মিত্রের পাশে দাঁড়াবে তা এখনও ঠিক করে উঠতে পারেনি।

ভারতের পাশে আমেরিকা দাঁড়ালে সেক্ষেত্রে পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়া দাঁড়াবে চীনের পিছনে। ভারত-চীন যুদ্ধ যদি শেষ পর্যন্ত বেধেই যায় সেক্ষেত্রে শুধু আমেরিকা নয়, জাপান, অস্ট্রেলিয়াও ভারতের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে নেমে পড়বে। এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে ভারত-চীন যুদ্ধ এড়ানো কিন্তু এবার মুশকিল। কৃটনৈতিক ও সামরিক স্তরে আলোচনার মাধ্যমে ভারত মীমাংসায় আগ্রহ দেখালেও চীন কিন্তু ভারতের জমি আঁকড়ে বসে রয়েছে। গলওয়ান উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে তারা ৮০০ মিটার দূরে রয়েছে বলে দাবি করলেও উপগ্রহ চিত্র কিন্তু সে কথা বলছে না। ভারতীয় ভূ-খণ্ডের যে অংশ চীন অবৈধভাবে দখল করে স্থায়ী কাঠোমো গড়ে তুলেছে, সেখান থেকে সরার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

ভারত যে চীনের এই দখলদারি এবার মানবে না, তা লাদাখ সীমান্তে যুদ্ধের প্রস্তুতিতেই পরিষ্কার। শুধু গলওয়ানের জমি নয়, লাদাখ থেকে কেড়ে নেওয়া আকসাই চীনের জমিও ভারত এবার বুঝে নিতে চায়।

তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের আশঙ্কা! 

এই সময়ের একটি বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন। এতে বলা হয়েছে,একদিকে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার আবহ। অন্যদিকে, উত্তর কোরিয়া বনাম আমেরিকা-দক্ষিণ কোরিয়া জোট। 

ইরান-ইসরায়েল আশঙ্কাও কোনও অংশে কমেনি। নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে আমেরিকা-তুরস্ক অশান্তিও। আর সবকিছুর ওপরে বিশ্বকে ভাবাচ্ছে মার্কিন-চীন সম্পর্কের অবনতিও। এই সব মিলিয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল দুটি শব্দ- তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। নেটপাড়ার বক্তব্য, ২০২০-২১ এই সূচনা হতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের। অশনি সংকেত যে নেই, তা বলা যাবে না। তবে অধুনা দেশগুলোর শক্তির বিচার করলে বিশ্বযুদ্ধ কি সত্যিই সম্ভব? তুলে ধরা হল বিশ্বযুদ্ধ পরিস্থিতির সঠিক পর্যালোচনা:-

অতীতের ভবিষ্যৎ বাণী!

ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়েই বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করবেন। এমনই চাঞ্চল্যকর ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন ক্লেয়ারভয়ান্ট হোরাসিও ভিলেগাস নামেক এক স্বঘোষিত ভবিষ্যৎ বক্তা। 

ভিলেগাসের দাবি ছিল, সিরিয়ার রাসায়নিক হামলা নিয়ে ক্ষমতাশালী দেশগুলো লড়াইয়ে মাতবে। সেই লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়বে রাশিয়া, চীন এবং উত্তর কোরিয়া। এই যুদ্ধে ভয়ঙ্কর ক্ষতি এবং প্রচুর মানুষের মৃত্যু হবে। হোরাসিওর বার্তা অনুযায়ীই সিরিয়াকে কেন্দ্র করে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে চাপানউতোর চলছিল ঠিকই। একই সময়ে আমেরিকাকে পরমাণু হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উনও। তবে টানাপোড়েনের আবহ বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হয়নি। তবে বিশ্ব থেকে মুছে যায়নি যুদ্ধ-পরিস্থিতি। বরং বিশ্বের বিভিন্ন অংশে, রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে চলতে থাকা চাপা উত্তেজনা ক্রমশই বাড়ছে।

ভারত-চীন

ডোকলাম সংকটে ইঙ্গিত মিলেছিল। চলতি বছরে পূর্ব লাদাখের গলওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনা বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর বাস্তবেই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল দুই প্রতিবেশির মধ্যে। পৃথিবীর কঠিনতম রণক্ষেত্রের মধ্যে অন্যতম ভারত-চীনের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনা সমাবেশ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিয়েছিল দুইদেশই। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্য এশিয়াতে মার্কিন উপস্থিতি চীনের আশঙ্কার বড় কারণ। আর সেই সঙ্গে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যত বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগিতামূলক হচ্ছে, ততই ভারত সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে উঠছে বেইজিং। যার মূল কারণ, দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের শক্তিবৃদ্ধিতে প্রধান বাধা ভারতই। আর এই কারণেই ধীরে ধীরে ভারতীয় সীমান্তে রণকৌশলে গুরুত্ব দিয়েছে চীন। 

এদিকে, দুই শক্তিধর রাষ্ট্রের সম্পর্কের ছায়া পড়েছে অন্য প্রতিবেশিদের ওপরও, যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে নেপালের সঙ্গে চীনের বন্ধুত্বে। চীন সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং সম্প্রতি ভুটানের সঙ্গেও।

ভারত-পাকিস্তান (কাশ্মীর)

গত ১০ বছরে ক্রমশই খারাপ হয়েছে ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতার পরবর্তী থেকেই অশান্তি LoC-তে। প্রতিবেশি এই দেশের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় ধরে সীমান্ত সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব নয়াদিল্লি। পাকিস্তানের ভূমিকে ব্যবহার করে বিশ্বে যেভাবে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ছে, তা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরেছে ভারত। উরিতে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালায় ভারতীয় সেনা। যার জেরে দুইদেশের সম্পর্ক আরও তলানিতে পৌঁছায়। ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ গঠন করে মোদী সরকার। যার তীব্র প্রতিবাদ আসে ইসলামাবাদ থেকে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতেও ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতির জেরে যুদ্ধের আশঙ্কা থাকবে।

ইরান-ইসরায়েল

গাজা, সিরিয়া এবং লেবানেন ইসরায়েলবিরোধী গোষ্ঠীদেরকে সরাসরি সমর্থনের অভিযোগ ইরানের বিরুদ্ধে। যার জেরে ইরান-ইসরায়েল সহিংসতা কমার কোনও লক্ষণ দেখতে পারছেন না আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। ইরানবিরোধী কূটনৈতিক পদক্ষেপের পাশাপাশি একাধিকবার সীমান্তে ইরানের সেনাকে লক্ষ্য করে হামলায় জড়িয়েছে জেরুজালেম। ইরানকে সবচেয়ে ‘বিপজ্জনক রাষ্ট্র’ও ঘোষণা করেছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার। ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকাকেও পাশে পেয়েছে ইসরায়েল।

ইরান-আমেরিকা

পরমাণু নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত। সেখান থেকে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে পশ্চিম এশিয়া থেকে ‘আমেরিকার অস্তিত্ব মুছে’ ফেলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। ২০২০ সালের শুরুতেই সংঘর্ষে জড়িয়েছে আমেরিকা-ইরান। জানুয়ারিতে ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন ড্রোন হামলায় মৃত্যু হয় ইরানের শীর্ষ সেনাকর্মকর্তা জেনারেল কাসেম সোলাইমানির। প্রাণ হারান ইরাকের পার্লামেন্টারি বাহিনীর ডেপুটি চিফ আবু মেহদি অল মুহান্দিসও। সোলাইমানির হত্যার প্রতিশোধ নিতে মধ্যরাতে ইরাকের মার্কিন সেনা ও যৌথ বাহিনীর ব্যবহৃত দুটি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র চালায় তেহরান। তাতে কমপক্ষে ৮০ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করে ইরান।এর ফল যে ‘ভালো হবে না’, ইরানকে সেই হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

আমেরিকা-উত্তর কোরিয়া

সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর কোরিয়ার শক্তি প্রদর্শন ও পরমাণু অস্ত্রের চোখরাঙানি ভয় ধরিয়েছে বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে। এই দ্বীপরাষ্ট্রের খবর বাইরের দুনিয়ায় খুব বেশি না এলেও কিম জং উনের রাজত্বে প্রচণ্ড গতিতে শক্তিবৃদ্ধি করেছে পিয়ংইয়ং। সামরিক শক্তিতে বিশ্বের তাবড় দেশগুলোকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে তারা। ওয়াশিংটন হুঁশিয়ারি দিলে পালটা পরমাণু অস্ত্রের হুমকি দিয়েছেন কিম। এছাড়াও ক্রমাগত প্রতিবেশি দক্ষিণ কোরিয়ার উপর দাপট দেখানোর চেষ্টা থেকে বিরত হয়নি উত্তর কোরিয়া। এদিকে, সহযোগী দক্ষিণ কোরিয়া প্রায় ৫০ হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। কিমকে রুখতে ‘সঠিক সময়ে’ ব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। শক্তিশালী দুই দেশের মধ্যের পরিস্থিতি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়েছ বটেই।

চীন-আমেরিকা

গোটা দুনিয়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বেইজিংয়ের প্রতি লাগাতার উষ্মা প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন। পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথমে পণ্য শুল্ক নিয়ে চাপানউতোর এবং বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির জের-ক্রমশই ঠাণ্ডা যুদ্ধের কিনারার দিকে যাচ্ছে মার্কিন-চীন সম্পর্ক। করোনা সংক্রমণ, হংকং ইস্যু- দুইদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের পারদ যে ক্রমশই চড়ছে, তা স্বীকার করে মন্তব্য করেছে বেইজিংও। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়, ‘চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ককে ঠাণ্ডা যুদ্ধের দিকে ঠেলছে আমেরিকা।’ বিপুল শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে সংঘাত বাড়লে তা গোটা বিশ্বের জন্যই অত্যন্ত আশঙ্কার হবে বলেই মত আন্তর্জাতিক মহলের। সূত্র: এই সময়

এবার ভারতের কয়েকটি খবর তুলে ধরছি: লাদাখ ইস্যু

ফের লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনা

দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় এ সম্পর্কিত খবরে লেখা হয়েছে, লাদাখের পেট্রোলিং পয়েন্ট (পিপি) ১৪-এর কাছে ফের ভারতীয় এলাকা দখলের অভিযোগ উঠেছে চীনের বিরুদ্ধে। তবে লাদাখের স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টার ফল চীনকে ভুগতে হতে পারে বলে হুশিয়ার দিয়েছে ভারত।

ভারতের সেনা সূত্রের বরাতে শনিবার আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।খবরে বলা হয়, নতুন পরিকাঠামো তৈরি না করলেও পয়েন্ট ১৪-সহ গোটা এলাকায় চীনা সেনার উপস্থিতির কারণে পেট্রোলিং পয়েন্ট ১০, ১১, ১১-এ, ১২ এবং ১৩-এ পৌঁছাতে পারছে না ভারতীয় সেনারা। গত ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় পিপি-১৪-এ চীনা সেনা পরিকাঠামো তৈরির চেষ্টা করায় দুপক্ষে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটে। এতে ভারতের ২০ সেনা নিহত হয়। গুরুতর জখম হয় আরও ৭৬ জন ভারতীয় সেনা।

ওই ঘটনার পর চীনা বাহিনী পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৪ থেকে সরে যায়। কিন্তু গত ১০ দিনের মধ্যে সেখানে ফের ঘাঁটি গেড়েছে চীনা সেনা। সেনা সূত্রের বরাতে আননন্দবাজার পত্রিকা আরও জানায়, বর্তমানে পিপি-১৪ এর কাছে বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে ফলেছে চীনারা। যার মধ্যে পড়েছে বটল-নেক পয়েন্ট বা ওয়াই জংশন পেট্রোলিং পয়েন্ট, ভারতের মধ্যে হলেও যা বর্তমানে চীনের দখলে।

ওই ওয়াই জংশন পয়েন্ট থেকেই পিপি ১০, ১১, ১১এ, ১২ ও ১৩ যাওয়ার রাস্তা। কিন্তু চীনা সেনারা বসে থাকায় আপাতত সেই এলাকায় পৌঁছাতে পারছে না ভারতীয় সেনা। এর ফলে কয়েকশ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় নজরদারি বন্ধ রাখতে হয়েছে ভারতকে।

ওয়াই জংশন পয়েন্টটি থেকে লাদাখের ব্রুটসে ভারতীয় সেনার ছাউনি ৭ কিলোমিটার দূরে এবং ওই শহরের ওপর দিয়ে চলে গিয়েছে দারবুক-শাইয়োক-দৌলত বেগ ওল্ডি সড়ক, যা চীনের মাথাব্যথার কারণ। বছর দশেক আগেও চীনারা এক বার ব্রুটস পর্যন্ত ঢুকে আসে।

এ দিকে দুদিনের সফর শেষে দিল্লি ফিরে শুক্রবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের কাছে সীমান্ত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন সেনাপ্রধান এম এম নরবণে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে রাজনাথের।চীনে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম মিস্রি বলেন, পূর্ব লাদাখে সমস্যা মেটানোর পথ একটাই। বেইজিংকে বুঝতে হবে স্থিতাবস্থা বদলের চেষ্টা হলে তার ফলও ভুগতে হবে। ভারতীয় বাহিনীর স্বাভাবিক টহলদারির পথে বাধা দেয়া বন্ধ হলেই সমস্যা মেটানোর পথে হাঁটা সম্ভব।  

ভারতে প্রতিদিন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায় তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ১৮ হাজার ৫৫২ জন। এই বৃদ্ধির ফলে ভারতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ৮ হাজার ৯৫৩ জন।পরিসংখ্যানটা এরকম-এক থেকে দুই লাখ ১৫ দিনে, দুই থেকে ৩ লাখ ১০ দিনে। তিন থেকে চার লাখ ৮ দিনে আর সবশেষ ৪ থেকে ৫ লাখ হলো মাত্র ৬ দিনে। এ চিত্রে চিকিৎসক ও বিশেজ্ঞরা ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন। লকডাউন উঠে গেছে। সর্বত্র মানুষের ভীড়। সংক্রমণও বাড়ছে খুব দ্রুত। আর এভাবে বাড়তে থাকলে কোথায় গিয়ে থামবে সেটা বড় প্রশ্ন।দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন আজকাল  ও আনন্দবাজার পত্রিকায় এ খবর পরিবেশিত হয়েছে। এদিকে পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধায় অভিযোগ করে বলেছেন, লকডাউনের আইন ভেঙ্ কয়েকটি রাজনৈতিক দল মিটিং মিছিল করছে।

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৭
 

ট্যাগ