আগস্ট ১১, ২০২০ ১৭:০০ Asia/Dhaka

লাইফ স্টাইল বা জীবনশৈলী সমাজবিজ্ঞানের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি  সংস্কৃতিরও অংশ। মানবজীবনে এর গুরুত্বের কারণে সমাজের সব ক্ষেত্রেই তা স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারও এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে।

এর গুরুত্ব তখনি আরও স্পষ্ট হয় যখন আমরা দেখি ইউরোপ ও আমেরিকা বিশ্বের অন্যান্য দেশ বিশেষকরে ইসলামি সমাজের লাইফ স্টাইল পরিবর্তনের জন্য পূর্ব পরিকল্পনার ভিত্তিতে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা গড়ে তুলেছে। অন্যান্য মুসলিম সমাজের কথায় পরে আসি। প্রথমেই যদি ইরানকে টার্গেট করে গড়ে তোলা রেডিও ও টিভি চ্যানেলের দিকে নজর দেই তাহলেই বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।

ইরানে  ইসলামি বিপ্লব সফল হওয়ার পর পাশ্চাত্যের দেশগুলো শুধু ইরানকে টার্গেট করেই এ পর্যন্ত একশ'র বেশি রেডিও ও টিভি চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করেছে যাতে ইরানিদের সংস্কৃতির ওপর প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে তাদেরকে ইসলামি জীবন ব্যবস্থা থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া যায়। এর ফলে মানুষ ইসলামি বিপ্লব থেকেও দূরে সরে যাবে বলে তাদের ধারণা। ইরানের ইসলামি বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এমন একজন ব্যক্তিত্ব যিনি মুসলিম বিশ্বকে এ ধরণের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষায় সব সময় দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন সময় দেওয়া ভাষণে মানুষকে লাইফ স্টাইল নির্বাচনে সতর্ক হতে বলেছেন। কারণ পাশ্চাত্য এই ষড়যন্ত্রটি চালাচ্ছে ব্যাপক কৌশলে এবং ব্যাপক চিন্তা ও গবেষণার ভিত্তিতে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, ইরানে পাশ্চাত্যের জীবনপ্রণালী ছড়িয়ে দিতে পাশ্চাত্য যে চেষ্টা চালাচ্ছে তা দেশ ও জাতির নীতি-নৈতিকতা, অর্থনীতি, ধর্ম ও রাজনৈতিক অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করেছে। এখন এটা মোকাবেলায় সর্বাত্মক ও বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রেও তরুণরাই আশা-ভরসা।

দুঃখজনকভাবে উন্নত প্রযুক্তির সুবাদে গণমাধ্যমগুলো আজ আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিকতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের সহায়ক শক্তি হিসেবে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। এর ফলে আধ্যাত্মিকতাকে অস্বীকারকারী শক্তি গোটা সমাজের শিশুসহ সব শ্রেণীর মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ পাচ্ছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মতে, পাশ্চাত্য ও তাদের অনুসারীদের ক্রমবর্ধমান নৈতিক অবক্ষয় এবং নারী-পুরুষকে অন্যায় ও অনৈতিক কাজে টেনে আনতে তাদের বিরামহীন প্রচার বিশ্বের অধিকাংশ এলাকায় নীতি-নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার সংকট তৈরি করেছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে ব্যাপক সাফল্যকে অপব্যবহারের মাধ্যমে পাশ্চাত্য এ ধরনের অন্যায় তৎপরতায় নেমেছে। এ ধরণের অশুভ কাজে তারা বৈজ্ঞানিক সাফল্যকে কাজে লাগাচ্ছে যা গোটা বিশ্বের জন্যই অকল্যাণকর। এই প্রবণতা গোটা বিশ্বের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। জ্ঞান-বিজ্ঞান হচ্ছে যেকোনো দেশের সম্মান, শক্তি ও সক্ষমতা অর্জনের সবচেয়ে সুস্পষ্ট মাধ্যম। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অপর নাম হচ্ছে সক্ষমতা। পাশ্চাত্য বৈজ্ঞানিক সাফল্যের মাধ্যমে সম্পদ, প্রভাব এবং শক্তি অর্জন করেছে। নীতি-নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতায় শূন্যতা সত্ত্বেও নিজেদের লাইফ স্টাইল চাপিয়ে দিয়ে অন্য দেশগুলোর রাজনীতি এবং অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। বিশ্বের গণমাধ্যমে সাধারণত পাশ্চাত্যকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়। গণমাধ্যমের প্রচারণার কারণে বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষের মনে এমন একটা ধারণার জন্ম হয়েছে যে, সুখ-শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে পাশ্চাত্যের মতো হতে হবে, তাদের অনুসরণ করতে হবে। আসলে বাস্তবতা কী? পাশ্চাত্য কি সত্যিই মানুষের সুখ-শান্তি নিশ্চিত করতে পারে? পাশ্চাত্যের মানুষ কি সত্যিই সুখী? আমাদের নয়া ধারাবাহিকে এসব বিষয়েই বিস্তারিত আলোচনার চেষ্টা করব। আশাকরি প্রতিটি আসরে আপনাদের সঙ্গ পাব।

মার্কিন মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক এডগার শেইন মানুষের সংস্কৃতি ও এর উপাদানগুলোকে বরফের পাহাড়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এর কয়েকটি স্তর রয়েছে। এর উপরের স্তরটি সবাই দেখতে পায় এবং তা স্পষ্ট।  কিন্তু এর পেছনের রহস্য উদঘাটন করা খুবই কঠিন।

একটা সময় পর্যন্ত গোটা বিশ্বের মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্য, আচার-আচরণ, বিয়ে, পরিবার গঠনের প্রক্রিয়া, আবাসন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নিত্য দিনের জীবন প্রণালীতে আকাশ-পাতালসম পার্থক্য লক্ষ্য করা যেত না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবন-যাপনের ধরণে পরিবর্তন এসেছে। বিশেষকরে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতি এবং নানা মতবাদ সৃষ্টি হওয়ার পর এই পার্থক্য অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষকরে ঐশী ধর্মের মৌলিক নির্দেশনাগুলোকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। এই নয়া পরিস্থিতি সৃষ্টির দাবিদার হচ্ছে পাশ্চাত্যের দেশগুলো। এই নয়া পরিস্থিতিতে পাশ্চাত্যেরই অনেক সমাজবিজ্ঞানী সন্তুষ্ট নন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক মাইকেল স্নাইডার সেদেশের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ লিখেছেন। 'মার্কিন সমাজের ৬৫টি বাস্তবতা'- শীর্ষক ওই নিবন্ধে তিনি কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। সেগুলো হলো, এটা কীভাবে সম্ভব একজন স্কুলছাত্র একটি চাকু নিয়ে স্কুলে ঢুকে তার সহপাঠীদের ওপর হামলা চালাতে পারে? কী কারণে একজন নগ্ন নারী ফ্লোরিডায় ম্যাকডোনাল্ডের রেস্টুরেন্টে গিয়ে সেখানে লুটপাট চালায়? কেন একজন বাবা তার ছয় সপ্তাহ বয়সী শিশুসন্তানের কান্না থামাতে তাকে ফ্রিজে রাখার মতো পাশবিক আচরণ করে?

মাইকেল স্নাইডার তার নিবন্ধে এসব প্রশ্নের বিষয়ে নিজের মতামত দিয়ে লিখেছেন, এসবের কারণ হচ্ছে নৈতিক অবক্ষয়। কিন্তু অনেক মার্কিন নাগরিকই এসব শব্দ শুনতে রাজি নন। তারা শুধু চান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গোটা বিশ্বের আদর্শ হিসেবে তুলে ধরতে।

তিনি আরও বলেছেন, মার্কিন সমাজের ভেতরে ভেতরে পচন ধরেছে। এখনই এই প্রবণতা ঠেকানো না গেলে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে। তার নিবন্ধে পাশ্চাত্যের দেশগুলোর প্রতি সতর্কবার্তার পাশাপাশি তাদেরকে যারা অনুসরণ করছে তাদের জন্য বার্তা রয়েছে। স্নাইডার এর মাধ্যমে বুঝাতে চেয়েছেন, পাশ্চাত্য নিজেই এই জীবন ব্যবস্থা থেকে সরে আসতে বাধ্য হবে। কাজেই অন্যান্য প্রান্তের যারা এই লাইফ স্টাইল অনুসরণ ও ধারণ করার চেষ্টা করছেন তারা ভুলের মধ্যে রয়েছেন। #

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/আশরাফুর রহমান/১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ