কথাবার্তা: বেগমগঞ্জের ঘটনায় ক্ষুব্ধ সারাদেশ, ধর্ষণপ্রবণতা বাড়াচ্ছে মাদক ও পর্নোগ্রাফি
সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: ৬ অক্টোবর মঙ্গলবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি।
বাংলাদেশের শিরোনাম :
- ধর্ষণ প্রবণতা বাড়াচ্ছে মাদক ও পর্নোগ্রাফি-দৈনিক ইত্তেফাক
- মেডিকেল ডেন্টালের প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মাস্টার মাইন্ড গ্রেফতার-দৈনিক যুগান্তর
- মতামত-একের পর এক ধর্ষণ, ক্ষমতার উৎস কোথায়–প্রথম আলো
- সিলেটে ধর্ষণ মামলায় চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল ছাত্রলীগ কর্মী নিজু-বাংলাদেশ প্রতিদিন
- নারী অধিকার নেত্রীরা কোথায় , নানা প্রশ্ন-দৈনিক মানবজমিন
- ধর্ষকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-কালের কণ্ঠ
- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভাগ্নিকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ-সমকাল
ভারতের শিরোনাম:
- হাথরস কাণ্ডে আদালতের নজরদারিতে তদন্তের দাবি, মামলা শুনবে সুপ্রিম কোর্ট-আনন্দবাজার পত্রিকা
- হাথরাস কাণ্ডে সরকারকে কটাক্ষ রাষ্ট্রসংঘের আধিকারিকের! পালটা ‘সংযত’ হতে বলল কেন্দ্র -দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন
- ‘হিংসার আগাম খবর’ পেয়েই মাঝরাতে দাহ, হাথরস নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বলল যোগী সরকার -দৈনিক আজকাল
পাঠক/শ্রোতা! এবারে চলুন, বাছাইকৃত কয়েকটি খবরের বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
ধর্ষণপ্রবণতা বাড়াচ্ছে মাদক ও পর্নোগ্রাফি-দৈনিক ইত্তেফাক
ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনে রেকর্ড হতে চলেছে দেশে। হঠাত্ যেন মানুষের পাশবিক প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। একের পর এক ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও কোনোভাবেই যেন এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। কর্মক্ষেত্রে, চলন্ত বাসে, এমনকি নিজের ঘরে পর্যন্ত নেই নিরাপত্তা।
মনোবিজ্ঞানিরা বলেন, অতৃপ্ত যৌন আকাঙ্খা, দেয়ালে নগ্ন পোস্টার, যৌন উত্তেজক অবৈধ বইয়ের রমরমা ব্যবসা, অশ্লীল ছায়াছবি প্রদর্শন, ব্লু-ফিল্ম, চলচ্চিত্রে নারীকে ধর্ষণের দৃশ্যের মাধ্যমে সমাজে ধর্ষণ করার উত্সাহ যোগান, নারীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার, ইন্টারনেটে অশ্লীল সাইটগুলো উম্মুক্ত করে দেওয়া, প্রেমে ব্যর্থতা, ১৮ প্লাস চ্যানেলে নীল ছবি প্রদর্শন, যৌন উত্তেজক মাদক ইয়াবার বহুল প্রসার ইত্যাদি কারণে দিন দিন ধর্ষণ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ধর্ষণ মহামারী রূপ নেবে। নারীর প্রতি একের পর এক সহিংস ঘটনার পেছনে আরেকটি বড় কারণ হিসেবে কেউ কেউ বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে দায়ী করেছেন।
চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এমএন হুদা জানান, প্রায় ঘরে ইয়াবাসহ মাদক সেবন ও বিক্রি হচ্ছে। মাদক সাময়িক যৌন উত্তেজনা ঘটায়। আচরণে পরিবর্তন করে। তখন মানুষ নরপশু হয়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়। তবে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক সাময়িক যৌন উত্তেজনা বাড়ালেও দীর্ঘস্থায়ীভাবে যৌনক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। তিনি আরো বলেন, ধর্ষণের ঘটনা বাড়ার আরেকটি কারণ হলো পর্ণোগ্রাফি। শিশুদের কাছে এখন অত্যাধুনিক মোবাইল ফোন। তারা সহজেই পর্ণোসাইটে যেতে পারছে। শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য পর্ণোসাইটগুলো বন্ধ করা উচিত।
প্রখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মুহিত কামাল বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে এখন মানুষ ঘরে থাকে এবং পর্ণোগ্রাফি দেখে। এতে অনেক পুরুষ যৌন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও ক্লাস বন্ধ, তারাও পর্ণোগ্রাফি দেখে। ২০ হাজারের উপরে পর্ণোসাইট আছে। এছাড়া মাদকের কারণে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। তিনি বলেন, মাদকাসক্ত ও ধর্ষকের বিচারের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার আরেকটি কারণ। তিনি আরো বলেন, অ্যালকোহল ও ইয়াবা আসক্তরা বিকারগ্রস্ত হয়ে যায়। অনেকে যৌন সম্পর্ক করতে করতে নারীকে গলাটিপে হত্যা করে ফেলে।
সম্প্রতি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং সেটার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এসব ঘটনার পেছনে ত্রুটিপূর্ণ পারিবারিক শিক্ষা, নারীকে হীন করে দেখার সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং দীর্ঘদিন ধরেই বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভিডিও চিত্রে দুর্বৃত্ত যাদের দেখা গেছে, তাদের বেশিরভাগের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে বলে অনুমান করা হচ্ছে। কৈশোর থেকে সদ্য তারুণ্যে পা দেয়া এই বয়সটিতে ক্ষমতা প্রদর্শনের এক ধরণের মানসিকতা কাজ করে বলে জানান মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির যে জোয়ার উঠেছে সেটার কোন নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি না থাকায় কিশোর ও তরুণরা নৈতিক শিক্ষা থেকে ক্রমশ ছিটকে পড়ছে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইম্যান এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক বলেন, ধর্ষণের জন্য শুধুমাত্র দু’একটি কারণ দায়ী নয়, কারণ হিসেব করতে গেলে বহুমাত্রিক কারণ আমরা খুজে পাবো। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, নারীর জন্য তৈরী হওয়া নীতিমালা, গতানুগতিক চিন্তাধারা, দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা বিচারহীনতা ও বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা, পর্ণোগ্রাফির ছড়াছড়ি ইত্যাদি ধর্ষণের কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। নারী সুরক্ষার আইন ও নীতিমালার বিষয়ে তিনি বলেন, কাগজে-কলমে নারীর সুরক্ষার জন্য আইন ও নীতিমালার দিক থেকে আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় সবার চাইতে এগিয়ে আছি, এটি আমাদের গর্বের জায়গা। কিন্তু এসব নীতিমালা ও আইনের বাস্তবিক প্রয়োগ প্রকৃতপক্ষে হচ্ছে না। যাদের শাস্তি পাওয়া উচিত, যেভাবে শাস্তি পাওয়া উচিত তারা সেভাবে শাস্তির মুখোমুখি হয়নি। ফলে মানুষের মাঝে ধর্ষণের পর শাস্তি ভীতি থাকে না।
ধর্ষণের ঘটনা যখন ঘটে তখন আশপাশের মানুষ তা প্রতিহত করতে পারে কিনা এমন প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেন, মানুষ চাইলে প্রতিহত করতে পারে। কিন্তু তারা মনে করে এ ধরনের ঘটনায় জড়িয়ে পুলিশি ঝামেলায় কেউ পড়তে চায় না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সব ধরনের আইন আছে। কিন্তু তার প্রয়োগ নেই। রাজনৈতিক প্রভাব, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ইত্যাদির কারণে এসব আইনের প্রয়োগ সম্ভব হয় না।
ধর্ষণবিরোধী মিছিলে পুলিশের বাধা-দৈনিক যুগান্তর
ধর্ষণের বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীদের কালো পতাকা মিছিলে পুলিশ বাধা দিয়েছে। এ সময় ধস্তাধস্তিতে কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’-এই ব্যানারে মিছিল বের হয়। পরে মিছিলটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে যাত্রা করে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে আসলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে মিছিল। এর প্রতিবাদে ঘটনাস্থলে বসে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। এসময় ‘ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই,’ ‘যে রাষ্ট্র ধর্ষণ পোষে, সেই রাষ্ট্র চাই না’, ‘আমার বোনকে ধর্ষণ কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘ধর্ষকের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’- ইত্যাদি স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে ওই এলাকা। প্রায় আধা ঘণ্টা সেখানে অবস্থান শেষে মিছিলকারীরা আবার শাহবাগে চলে যান।
৯ মাসে ধর্ষণের শিকার ৯৭৫ জন-দৈনিক ইত্তেফাক
গণধর্ষণ ও ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের শীর্ষ স্থানীয় নারী অধিকার সংগঠনগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, দেশে চলতি বছর প্রথম ৯ মাসে ৯৭৫ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ২০৮ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। সংগঠনগুলোর পক্ষ হতে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
দৈনিকটির অন্য একটি খবরে লেখা হয়েছে, নোয়াখালির ঘটনায় বিক্ষুব্ধ সারাদেশ।
অপরাধী যত বড় নেতাই হোক, বিচারের আওতায় আনা হবে: কাদের-দৈনিক প্রথম আলো
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ধর্ষণ একটা সামাজিক ব্যাধি। এটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। অপরাধী যত বড় নেতাই হোক, তাকে বিচারের আওতায় আনা হবে। এটাকে রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে ভিন্ন খাতে নিলে সুষ্ঠু বিচার বাধাগ্রস্ত হবে। দুর্বৃত্তের কোনো দলীয় পরিচয় নেই।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সম্প্রতি ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। তবে সরকার কাউকেই ছাড় দিচ্ছে না। অপরাধী যত বড় নেতা কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তিই হোক না কেন, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, কন্যাশিশু নির্যাতন কেন বন্ধ হচ্ছে না?’ এক অনলাইন সভায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরাকে এই প্রশ্ন করে এক শিশু।
মেডিকেল ও ডেন্টালের প্রশ্নপত্র ফাঁসের হোতা গ্রেপ্তার-দৈনিক ইত্তেফাকের খবর
মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের মূলহোতা আবদুস সালামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যুরোর মেশিনম্যান। সোমবার রাতে ছদ্মবেশে থাকা আবদুস সালামকে রাজধানীর বনশ্রীর জি ব্লকের একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির সাইবার পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুল আলম এসব তথ্য জানান।
স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যুরোর এই কর্মচারী সকল সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বের করে তারই খালাতো ভাই অন্যতম মাস্টারমাইন্ড জসিম উদ্দিন মুন্নুকে তা সরবরাহ করতেন। এরপর জসিম তা ছড়িয়ে দিতো তার বিভিন্ন সহযোগীর কাছে।
জসিমকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আব্দুস সালাম-ই প্রশ্নফাঁসের মূলহোতা। মূলত তার হাত ধরেই প্রশ্নফাঁসের প্রক্রিয়ার শুরু। আর প্রশ্নফাঁসের এই প্রক্রিয়ায় পাঁচ-ছয়জন অসাধু চিকিৎসক এবং তিন-চারটি কোচিং সেন্টারও জড়িত।
সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের এই মূলহোতাকে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এবার ভারতের কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:
হাথরাস কাণ্ডে সরকারকে কটাক্ষ রাষ্ট্রসংঘের আধিকারিকের! পালটা ‘সংযত’ হতে বলল কেন্দ্র-দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন
হাথরাস (Hathras Gang Rape), বলরামপুরের ঘটনা দেশে নারী নিরাপত্তার বাস্তব ছবিটা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ এবং নৃশংসতা এবার আন্তর্জাতিক ফোরামেও অস্বস্তি বাড়াল ভারতের। হাথরাস এবং বলরামপুরের ঘটনা জাতীয় রাজনীতির গণ্ডি পেরিয়ে আকর্ষণ করেছে রাষ্ট্রসংঘের (United Nations) দৃষ্টিও। খোদ রাষ্ট্রসংঘের রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর এই দুই ঘটনার উদাহরণ টেনে ভারতে নারী নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে,”হাথরাস এবং বলরামপুরের ঘটনা আরও একবার মনে করিয়ে দিল ভারতে মহিলারা এখনও পিছিয়ে। আর লিঙ্গবৈষম্যের ভিত্তিতে হিংসার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা তাঁদেরই বেশি।”
রাষ্ট্রসংঘের আধিকারিকের এই মন্তব্য যে আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্বল করবে না, তা চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়। আর সেটা বুঝতে পেরেই সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রসংঘের আধিকারিকের এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে ভারত। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব (Anurag Srivastava) সাফ জানিয়ে দিয়েছেন,”রাষ্ট্রসংঘের রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা নিয়ে কিছু অযাচিত মন্তব্য করেছেন। তাঁর জানা উচিত, সরকার এই ধরনের ঘটনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। আর এই ধরনের ইস্যুতে বাইরের কোনও এজেন্সির কাছে কোনও মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।”
হাথরাসে ধর্ষণই হয়নি! পুলিশের দাবিতেই সিলমোহর দিল চূড়ান্ত ফরেনসিক রিপোর্ট-দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন
হাথরাসে (Hathras) দলিত তরুণীর ধর্ষণই হয়নি। চূড়ান্ত ফরেনসিক রিপোর্টেও (Forensic Report) এমনটাই দাবি করা হল। বলা হল, নির্যাতিতার গোপনাঙ্গে ‘পেনিট্রেশন’-এর কোনও চিহ্ন নেই। মেলেনি বীর্যও। উত্তরপ্রদেশে পুলিশের দাবিতেই কার্যত সিলমোহর দিল এই রিপোর্ট। তবে এই রিপোর্ট নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
একাধিক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী আগ্রার ফরেনসিক ল্যাবের চূড়ান্ত রিপোর্টে বলা হয়, “নির্যাতিতার গোপনাঙ্গে পেনিট্রেশনের কোনও চিহ্ন মেলেনি। তবে শারীরিক নিগ্রহের প্রমাণ রয়েছে। ঘাড়ে ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে।” ফরেনসিক নমুনায় বীর্যের অস্তিত্ব পাওযা যায়নি বলেও জানানো হয়েছে।তাঁদের তরফে এই রিপোর্ট সাদাবাদ পুলিশ স্টেশনের সার্কেল অফিসারকে পাঠানো হয়েছে। এই রিপোর্টই আদালতে পেশ করা হবে। যদিও প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, যৌনাঙ্গে পেনিট্রেশনের চিহ্ন রয়েছে। কিন্তু মাত্র ১০ দিনের মাথায় চূড়ান্ত রিপোর্ট সম্পূর্ণ বদলে গেল! উল্লেখ্য, ময়নাতদন্তে রিপোর্টেও বলা হয়েছিল নির্যাতিতার ভিসেরায় বীর্যের উপস্থিতি ছিল না।
প্রসঙ্গত, ময়নাতদন্তের রিপোর্টকে হাতিয়ার করে উত্তরপ্রদেশের এক বর্ষীয়ান পুলিশ আধিকারিক প্রশান্ত কুমার দাবি করেছিলেন, দলিত তরুণীর ধর্ষণই হয়নি। জাতপাতের রাজনীতি করার জন্যই কেউ কেউ তথ্যবিকৃতি করছে।
‘হিংসার আগাম খবর’ পেয়েই মাঝরাতে দাহ, হাথরস নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বলল যোগী সরকার-দৈনিক আজকাল
পরিবারকে ঘরে আটকে মাঝরাতেই পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল হাথরসের নির্যাতিতার দেহ। সেই নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে যোগী সরকার এবং উত্তরপ্রদশের পুলিশ। এবার এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জবাবদিহি করল উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার। জানাল, তরুণীর দাহ ঘিরে পরের দিন হিংসা ছড়াতে পারে বলে আগাম হুঁশিয়ারি দিয়েছিল গোয়েন্দারা। রাজ্যের ‘আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সমস্যা হতে পারে।সেসব এড়াতেই রাত আড়াইটায় ক্ষেতের মধ্যে দাহ করা হয় ১৯ বছরের তরুণীর দেহ।
বুধবার সকালে ছিল বাবরি–কাণ্ডের রায়। সেই নিয়ে আগে থেকেই গোটা উত্তরপ্রদেশে সতর্কতা জারি ছিল। সে যুক্তিও হলফনামায় তুলে ধরেছে রাজ্য সরকার।
হাথরস কাণ্ডে আদালতের নজরদারিতে তদন্তের দাবি, মামলা শুনবে সুপ্রিম কোর্ট-দৈনিক আনন্দবাজার
হাথরস গণধর্ষণ-খুন কাণ্ডে চাপে পড়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। কিন্তু আন্দোলনকারী বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলির বক্তব্য, সেটাই যথেষ্ট নয়। সিবিআই তদন্ত হোক সুপ্রিম কোর্টের কোনও বিচারপতির নজরদারিতে। আজ, মঙ্গলবার এই মামলা শুনবে শীর্ষ আদালত। শুনানি হবে প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের বেঞ্চে। অন্য দিকে জাতি হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে মোট ১৯টি এফআইআর দায়ের করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এই সব প্রতিবাদ-বিক্ষোভকারীদের অর্থসংস্থানের উৎস খুঁজতে তদন্তে নামছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
ধাক্কা সহ্য করে নেব, রক্ষা করব দেশ’, যোগীর পুলিশকে বার্তা রাহুলের-দৈনিক আনন্দবাজার
হাথরসের নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পথে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ গলাধাক্কা দিয়েছিল তাঁকে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী মঙ্গলবার পঞ্জাবে সেই প্রসঙ্গ তুললেন। বুঝিয়ে দিলেন, যোগী আদিত্যনাথ সরকারের পুলিশের ওই আচরণ তিনি ধর্তব্যের মধ্যেই আনছেন না। রাহুলের কথায়, ‘‘যদি আমাকে ধাক্কা দেওয়া হয় তাতে কী-ই বা হয়েছে, আমাদের কাজ দেশকে রক্ষা করা।’’
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৬
- বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।