কথাবার্তা: ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড, আইনে 'মৃত্যুদণ্ড' লিখলেই সমস্যার সমাধান!
সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা! ১২ অক্টোবার সোমবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশের শিরোনাম:
- পুলিশ ফাঁড়িতে যুবকের মৃত্যু-পুলিশের দাবি গণপিটুনির চিত্র মেলেনি সিসি ক্যামেরায়-দৈনিক প্রথম আলো
- সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত মেয়র আতিকুল-দৈনিক সমকাল
- ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন-ইত্তেফাক
- কাল থেকেই ধর্ষণের নতুন আইন কার্যকর-দৈনিক যুগান্তর
- পোশাক খাতে বিপুল প্রণোদনার পরেও মজুরি পাননি ২১ হাজার কর্মী-কালের কণ্ঠ
- রোহিঙ্গারা কাল চলে গেলে ঢাকা খুশি, তারা চায় অস্ত্র বিক্রি করতে, আমরা চাই শান্তি-মানবজমিন
- ইতিহাস গড়ল আলুর মূল্য! খুচরা বাজারে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা-দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন
ভারতের শিরোনাম:
- চাষির ভাল চাই বলেই রাগ: মোদী ॥ হাথরসে চুপ কেন, প্রশ্ন বিরোধীদের-আনন্দবাজার পত্রিকা
- কর্পোরেটদের কর মকুব হচ্ছে, অথচ রাজ্য জিএসটির ক্ষতিপুরণ পাবে না কেন? প্রশ্ন রাহুলের-সংবাদ প্রতিদিন
- কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে খুশবু-আজকাল
শিরোনামের পর এবার বিশ্লেষণে যাচ্ছি
কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:
বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর:
১. প্রতারণার কারণে ভাগ্যবিড়ম্বিত ১০৪ জন প্রবাসী দুবাই থেকে বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। অত্যন্ত দুঃখজনক এই খবরটি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।প্রবাসীদের আয়ে বাংলাদেশ আজ অনেক ভালো অবস্থানে অথচ এধরনের লোকজনের ব্যাপারে এমন প্রতারণা প্রায়ই মাঝে মাঝে আমরা দেখতে পারি। কি বলবেন বিষয়টি নিয়ে?
২. ইসরাইলের কারাগারে ফিলিস্তিনের একজন বন্দী টানা ৭৭ দিন অনশন করছেন। তার অবস্থা মারাত্মক কিন্তু ইসরাইলের পক্ষ থেকে এই অনশন ভাঙানোর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। মর্মান্তিক এই বিষয়টি সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষ কি?জনাব সিরাজুল ইসলাম আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর:
রোহিঙ্গারা কাল চলে গেলে ঢাকা খুশি‘তারা চায় অস্ত্র বিক্রি করতে, আমরা চাই শান্তি-দৈনিক মানবজমিন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, মার্কিন উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হবে। বাংলাদেশের একমাত্র চাওয়া রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা।মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল, মার্কিন উপ পরারাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে ইন্দো প্যাসিফিকের সামরিক অধ্যায়ে বাংলাদেশ যুক্ত হবে কিনা, বৈঠকে এ নিয়ে কোন আলোচনা হবে কিনা?
জবাবে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, আমরা ইন্দো প্যাসিফিকের সামরিক অধ্যায়ে যুক্ত হতে আগ্রহী নই। তারা আমাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে চায়, আমরা চাই শান্তি। মন্ত্রীসভার বৈঠক থেকে নিজ দপ্তরে ফিরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ড. মোমেন।এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী ২২শে অক্টোবর আন্তর্জাতিকভাবে রোহিঙ্গা বিষয়ক একটি ভার্চ্যুয়াল সন্মেলন হতে যাচ্ছে। পশ্চিমা দুনিয়ার প্রতিনিধিরা এই সন্মেলন আয়োজন করছেন।সেখানে তাদের চাওয়া হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের টেকসই সহযোগিতা নিশ্চিত করতে দশ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের চেষ্টা।বাংলাদেশ দশ বছর মেয়াদি কোন পরিকল্পনা চায় না। ঢাকা চায় কাল রোহিঙ্গা চলে গেলে বাংলাদেশ খুশি।এছাড়াও বেইজিংয়ের উদ্যোগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে ত্রিদেশীয় একটি বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব রয়েছে। বাংলাদেশ রাজি তবে শর্ত হচ্ছে, ঐ বৈঠকে অংসান সুচির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ধর্ষণ আইনের নীতিগত অনুমোদন মন্ত্রিসভায়-প্রথম আলো/যুগান্তর/ইত্তেফাক
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।উল্লেখ্য, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। কিন্তু দেশে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনার পর ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবিতে শাহবাগ, মতিঝিলসহ রাজধানীর কয়েকটি স্থানে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আন্দোলন করছে। দেশের বিভিন্ন স্থানেও একই দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে সরকার ধর্ষণের শাস্তি বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড: কালই অধ্যাদেশ-দৈনিক প্রথম আলো
ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনের এই খসড়াটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয় বলে প্রথম আলোকে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
আইনমন্ত্রী বলেন, আগামীকাল এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। অর্থাৎ কাল থেকে এটি আইনে পরিণত হবে। এর আগে এটির আইনি যাচাই (ভেটিং) হবে। এই মুহূর্তে জাতীয় সংসদের অধিবেশন না থাকায় রাষ্ট্রপতি এটিকে অধ্যাদেশ আকারে জারি করবেন বলে আইন মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে। মন্ত্রী জানান, বিদ্যমান আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন আছে। সেটিকে এখন মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন করা হয়েছে। সম্প্রতি একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এ জন্য আইনের সংশোধন করে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার দাবি ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী কদিন আগে সাংবাদিকদের জানান, এই আইনটি সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করা হবে।
আইনে ‘মৃত্যুদণ্ড’ লিখলেই সমস্যার সমাধান-প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান তার নিবন্ধে লিখেছেন,
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৬ এবং ২০১৯ এই তিন বছরের ব্যবধানে ধর্ষণের বিচারে গতি আনতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দেন। বর্তমান সরকারের আমলে সুপ্রিম কোর্ট, পুলিশ এবং সরকারি প্রসিকিউশন ধর্ষণ দমনে কীভাবে বাস্তবে কাজ করেন, সেটি এতে ফুটে উঠেছে। ২০১৬ সালে মিলাদ হোসেন বনাম রাষ্ট্র মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ ১৮০ দিনের মধ্যে ধর্ষণ মামলার বিচার না হওয়া এবং সে কারণে কোনো জবাবদিহি না থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কিন্তু তাতে সংশ্লিষ্টরা একদমই কর্ণপাত করছেন না।
হাইকোর্ট বিভাগ ২০১৯ সালে রাহেল ওরফে রায়হান বনাম রাষ্ট্র মামলায় এসেও বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে যে দেশের বিভিন্ন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ধর্ষণ এবং ধর্ষণ–পরবর্তী হত্যা সম্পর্কিত মামলা বিচারের জন্য অপেক্ষমাণ।’ যার মধ্যে চার–পাঁচ বছরের পুরোনো মামলার সংখ্যাও ‘নেহাত কম নয়’। এসব মামলার অভিযোগ গঠনে বিলম্ব এবং ধার্য তারিখে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী উপস্থিত না হওয়া, বিরামহীনভাবে শুনানি না করা, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দুই থেকে পাঁচ মাস পরপর তারিখ নির্ধারণে হাইকোর্টের উদ্বেগ প্রকাশ পায়।
আইনের বিধান হলো, ১৮০ দিনে ধর্ষণ মামলার বিচার শেষ করতে ব্যর্থ হলে বিচারক, পুলিশ ও প্রসিকিউটর যথাক্রমে সুপ্রিম কোর্ট, আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে উপযুক্ত কারণ ব্যাখ্যা (পুলিশ ও প্রসিকিউটরের ব্যাখ্যার অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টকে দেওয়া বাধ্যতামূলক) করবেন। সংশ্লিষ্টরা ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু হাইকোর্ট দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেন, দু-একটা বিরল ব্যতিক্রম বাদে এই বিধানের আদৌ কোনো কার্যকরতা নেই বাস্তবে।
হাইকোর্ট বিভাগ এরপর বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণ ও ধর্ষণ–পরবর্তী হত্যার মতো ঘৃণ্য অপরাধের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করাই এ ধরনের অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এখানে আমরা দেখব যে হাইকোর্ট বলেননি এবং সমাজের সুচিন্তিত মত এটা নয় যে মৃত্যুদণ্ড না থাকাই ধর্ষণ বাড়ার কারণ। বরং হাইকোর্ট ২০১৬ সালে ও ২০১৯ সালে নির্দিষ্টভাবে দুটি কমিটি গঠনের উপায় বাতলে দেন। একটির দায়িত্ব ছিল সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের। অন্যটি জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।
আমাদের জানামতে, কেউ দায়িত্ব পালন করেননি। ২০১৬ সালের আদেশ ছিল, হাইকোর্ট রেজিস্ট্রার এবং আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মর্যাদার দুজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। তাঁরা ১৮০ দিনে বিচার না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে নিয়মিত রিপোর্ট দেবেন। এই কমিটি হয়নি।
২০১৯ সালে তাঁরা সাক্ষীর উপস্থিতি ও নিরাপত্তায় প্রতিটি জেলায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ও সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ও প্রসিকিউশনের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠনের আদেশ দেন। কমিটিকে প্রতি মাসে রিপোর্ট দিতে বলেন। সমন জারির পরও সাক্ষ্য দিতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, ডাক্তারদের দরকারে বেতন বন্ধের সুপারিশও তাঁরা করেছিলেন।
হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ডিসেম্বরেই বলছেন, আমাদের অভিজ্ঞতা হলো যে ধর্ষণসংক্রান্ত মামলার আসামিরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়া ও দুর্দান্ত। তারা বিভিন্ন ধরনের অপকৌশল অবলম্বন, ক্ষেত্রবিশেষে সামাজিক বিচার করে ভিকটিম পরিবারকে মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য এবং আদালতে সাক্ষ্য প্রদানে বিরত থাকতে চাপ দিয়ে থাকে। তাই হাইকোর্ট বলেন, আমাদের সুচিন্তিত অভিমত এই যে অবিলম্বে সাক্ষী সুরক্ষা আইন তৈরি হোক। সেই আইন কেউ দিচ্ছে না।
এখন সরকার একটি নতুন আইনের পথে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। সেখানে ‘মৃত্যুদণ্ড’ বিষয়টি থাকবে। সংবাদমাধ্যমে এর বড় শিরোনাম হবে। অনেকেই আশা করবেন এতে অপরাধীরা বেশি ভয় পাবে। কিন্তু বিশ্বের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিলে আমরা দেখব এভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো ধর্ষণ ঠেকানোর কথা ভাবেনি। ভেবেছে, উত্তর কোরিয়া, ইরান, মিসরের মতো অল্প কিছু দেশ। ভারত সম্প্রতি শিশু ধর্ষণের দায়ে মৃত্যুদণ্ড এনেছে। অনেকে অবশ্য বলবেন, এর একটি ধর্মাশ্রয়ী সাংস্কৃতিক অভিঘাতও আছে। শরিয়া আইনের একটি শর্ত কাগজে–কলমে আসাটাকেও একটা ‘অগ্রগতি’ হিসেবে দেখবেন অনেকে।
কিন্তু একজন ধর্ষক যখন এই জঘন্য কাজ করে, তখন কি তার মাথায় এটা থাকে যে এই কাজের জন্য তার মৃত্যুদণ্ড হবে না, হবে বড়জোর যাবজ্জীবন, তাই নো চিন্তা। তাই তারা ধর্ষণ করে। এমসি কলেজের ছাত্রলীগের ধর্ষকেরা যদি জানত তাদের মৃত্যুদণ্ড হবে, যাবজ্জীবন নয়, তাহলে তারা অপরাধ করত না? বর্তমান বাস্তবতায় ১৮০ দিনে জাতি ধর্ষকদের যাবজ্জীবন দেখে না, শাস্তি ফাঁসি হলে কি তা দেখবে?
ধর্ষণের মাধ্যমে হত্যার ঘটনায় ১৯৯৫ সালে বিএনপি বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ডের বিধান করেছিল। সেটা কি অপরাধ ঠেকিয়েছিল? ওই আইন পাঁচ বছর টিকেছিল। ২০১৫ সালে শুকুর আলীর মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছিলেন, বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ড অসাংবিধানিক। কারণ তা বিচারকের স্বাধীনতাকে হরণ করে। আশা করি সংসদ এটা মনে রাখবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে অপরাধবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে কী দেখেছেন। তাঁরা দেখেছেন, যারা ধর্ষণ করে তারা সাধারণত ভিকটিমের জানাশোনা বা পূর্বপরিচিত থাকে। এবং তারা পরস্পরকে চিনে ফেলে। এখন যদি ধর্ষণের জন্য মৃত্যুদণ্ড করা হয়, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বরং এটা নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে কি না, সেটা বিবেচ্য। কারণ সমীক্ষা বলছে, যদি অপরাধী এটা বিবেচনায় নেয় যে মেয়েটি সাক্ষী হয়ে গেল এবং সে মুখ খুলতে পারে, তখন তাকে মেরে ফেলবে।
গবেষকেরা আরও দেখেছেন, হত্যা নয়, ধর্ষণ সিরিয়াল অপরাধ। খুনের পর অপরাধীর চূড়ান্ত জিঘাংসা চরিতার্থ হয়। ধর্ষণে সেটা ঘটে না। তাই বিশ্বে সিরিয়াল সেক্স অফেন্ডারের সংখ্যা বেশি। একজন সিরিয়াল অপরাধীর মনস্তত্ত্ব হচ্ছে সে বিষয়টিকে ধর্ষণ মনে করে না। সে ভাবে যে কার্যত মেয়েটির সম্মতিতেই সে ধর্ষণ করেছে। মেয়েরা মুখে না বলে থাকে মাত্র। এ কারণে উন্নত বিশ্বে যৌন অপরাধীদের ডেটাবেইস থাকে। তারা সাজার পরে খালাস পেলেও পুলিশ এলাকাবাসীকে তার বিষয়ে সজাগ রাখে।
মন্ত্রিসভা যে সংশোধন আনছে, তা আনা ছাড়া তাদের পক্ষে দ্রুত সম্ভবত আর কিছুই করে দেখানো সম্ভব নয়। কিংবা করার সক্ষমতা নেই। এরপরও যখন অবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে, তখন তারা কী বলবে?
তবে বড় প্রশ্ন, আমরা নারীর নিরাপত্তার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছি কি না, পারব কি না, পারতে চাই কি না? যেসব ক্ষেত্রে ‘মৃত্যুদণ্ড’ রয়েছে, সেই সব অপরাধ হচ্ছে কেন? কেউ কি যুক্তি দিয়ে বলবেন, মৃত্যুদণ্ড নেই বলেই ধর্ষণ বেড়ে গেছে? বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা কোনো শিশু বা নারীর মৃত্যু ঘটলে মৃত্যুদণ্ড, দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি নষ্ট বা মুখমণ্ডল, স্তন বা যৌনাঙ্গ বিকৃত বা নষ্ট করা হলে মৃত্যুদণ্ড। পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য, মুক্তিপণ বা পাচার করলে মৃত্যুদণ্ড। ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ বা ওই ধর্ষণ–পরবর্তী অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহলে অভিযুক্ত প্রত্যেকের মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড। এটা প্রমাণিত যে এই মৃত্যুদণ্ডগুলো অপরাধ কমাতে পারেনি। দলবদ্ধ ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের মৃত্যুদণ্ড আমরা স্মরণ করতে পারি না। ধর্ষণের দায়ে ‘মৃত্যুদণ্ড’ শব্দটি আইনে নেই। এটা লিখলেই ষোলো কলা পূর্ণতা পাবে?
অস্ত্র মামলায় পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর ২০ বছর করে কারাদণ্ড-দৈনিক প্রথম আলো
অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তাঁর স্বামীকে সর্বোচ্চ ২০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার ঢাকা মহানগরের ১ নম্বর স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ এই রায় দেন।
অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯-এর ‘এ’ ধারায় দুজনকে ২০ বছর করে এবং ১৯-এর ‘এফ’ ধারায় দুজনকে ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দুটি ধারার সাজা একত্রে কার্যকর হবে।রায়ে আদালত বলেছেন, আসামিরা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও তাঁদের সজ্জন রাজনৈতিক নেতা বলা যায় না। তাঁদের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে ৫৮ লাখ টাকা পাওয়া যায়। আরও পাওয়া যায় বিদেশি পিস্তল।রায় ঘোষণা উপলক্ষে পাপিয়া ও তাঁর স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর এই মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১২ অক্টোবর তারিখ ধার্য করেছিলেন আদালত।শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চাওয়া হয়েছিল। গত ২৩ আগস্ট পাপিয়া ও তাঁর স্বামী মফিজুরের বিরুদ্ধে এই মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি পাপিয়া ও তাঁর স্বামী মফিজুর বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকার বিমানবন্দর থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এবার ভারতের কয়েকটি খবর তুলে ধরছি:
বিহারে গণধর্ষণের পর সন্তান-সহ মহিলাকে খালে ছুড়ে দিল দুষ্কৃতীরা-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা
হাথরস কাণ্ডের ক্ষত এখনও টাটকা। এর মধ্যেই ফের দলিত মহিলাকে গণধর্ষণের অভিযোগ সামনে এল। শুধু তাই নয়, অত্যাচারের পর ওই মহিলা ও তাঁর শিশু সন্তানকে দুষ্কৃতীরা খালে ছুড়ে ফেলে দেয় বলেও পুলিশ সূত্রে খবর। শেষ পর্যন্ত ওই মহিলাকে বাঁচানো গেলেও, জলে ডুবে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর জখম অবস্থায় ওই মহিলা হাসপাতালে ভর্তি। বিহারের বক্সারের এই মর্মান্তিক ঘটনাকে ঘিরে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, বক্সারের ওঝা বারাও গ্রামে ব্যাঙ্কে যাওয়ার পথে ওই মহিলাকে ঘিরে ধরে এক দল দুষ্কৃতী। তারা ওই মহিলাকে অপহরণ করে। এর পর তাঁকে ধর্ষণ করে খালে ফেলে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়।সেই সঙ্গে মহিলার ৫ বছরের সন্তানকেও জলে ফেলে দেওয়া হয়। পুলিশ আরও জানিয়েছে, মহিলার চিৎকার শুনে ছুটে আসেন আশপাশের বাসিন্দারা। তাঁরা ওই মহিলা এবং তাঁর শিশুটিকে উদ্ধার করেন। কিন্তু শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি। ওই মহিলাকে গুরুতর অবস্থায় বক্সারের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বক্সারের এক পুলিশ কর্তা বলছেন, ‘‘নির্যাতিতার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই ঘটনায় অভিযোগও দায়ের হয়েছে। শিশুটির দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ঘটনায় মোট ৭ জন জড়িত। তার মধ্যে ২ জনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। অভিযুক্তদের এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকিদের হদিশ পেতে চাইছে পুলিশ।
চাষির ভাল চাই বলেই রাগ: মোদী ॥ হাথরসে চুপ কেন, প্রশ্ন বিরোধীদের-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা
তাঁর ছ’বছরে দেশের অর্থনীতি খারাপ থেকে খারাপতর হয়েছে বলে জানিয়েছে তাঁর সরকারেরই দেওয়া নানা তথ্য। রেকর্ড বৃদ্ধি হয়েছে বেকারত্বে। তাঁর পরেও নরেন্দ্র মোদীর দাবি, তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বে গ্রাম, গরিব এবং সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকাদের জন্য তিনি আপ্রাণ লড়াই করছেন বলেই অকারণ বিরোধিতা করে তার সরকারকে নিশানা করছেন বিরোধীরা! তা করতে গিয়ে চাষিদের ‘ভাগ্য বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখা’ নয়া কৃষি আইনের বিরোধিতাও করছেন তাঁরা। রবিবার গ্রামের মানুষকে সম্পত্তি-কার্ড দেওয়ার সরকারি ভিডিয়ো-অনুষ্ঠানে এ ভাবেই বিরোধীদের নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁদের কটাক্ষ করলেন ‘মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রতিনিধি’ হিসেবে।
প্রধানমন্ত্রী হওয়া ইস্তক মোদী সাংবাদিক বৈঠক করেন না। তাঁকে প্রশ্নও করা যায় না। তার পরেও মোদী সরকারের নীতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যেমন এ দিন মোদীর দাবির পরে কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবিরের পাল্টা প্রশ্ন, এপিএমসি তুলে দেওয়া নতুন কৃষি আইনে চাষিদের ভাগ্য যদি এত ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তা হলে কেন দেশের নানা প্রান্তে তাঁরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন? তাঁদের কটাক্ষ, দরিদ্র-দলিতদের জন্য এত ভাবা মোদী কেন এখনও হাথরস প্রসঙ্গে নীরব?
কর্পোরেটদের কর মকুব হচ্ছে, অথচ রাজ্য জিএসটির ক্ষতিপুরণ পাবে না কেন? প্রশ্ন রাহুলের-দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন
গত ৫ অক্টোবর ম্যারাথন বৈঠকের পরও জিএসটির (GST) ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদ মেটেনি। আজ ফের এই সমস্যা মেটাতে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে বৈঠকে বসছে জিএসটি কাউন্সিল। সেই বৈঠকের আগেই কেন্দ্র তথা বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের বেনজির কটাক্ষে বিঁধলেন কংগ্রেস (Congress) নেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর প্রশ্ন, কেন বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা সাধারণ মানুষের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রীর কাছে বন্ধক রাখছেন?
জিএসটি ক্ষতিপূরণ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদ বহুদিনের। আসলে কেন্দ্র অনেক আগেই জানিয়েছিল, করোনা মহামারীতে জিএসটি আদায় কমে যাওয়ায় রাজ্যগুলিকে প্রাপ্য ক্ষতিপুরণের টাকা তাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। পরিবর্তে রাজ্যগুলি চাইলে কম সুদে ঋণ নিতে পারে। জিএসটি ক্ষতিপূরণের পরিবর্তে রাজ্যগুলিকে দুটি বিকল্পের কথা বলেছিল কেন্দ্র। এক, রাজ্যগুলিকে কম সুদে ৯৭ হাজার কোটি টাকা ধার দেওয়া হবে। ২০২২ সালের মধ্যে সেই ঋণ শোধ করতে হবে। ঋণশোধের অর্থ সংগ্রহ করতে অতিরিক্ত সেস বসাতে পারবে রাজ্যগুলি। দুই রাজ্যগুলি বকেয়া ২ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকাই ঋণ নিতে পারবে। এবং ধীরে ধীরে তা পরিশোধ করবে। কিন্তু প্রাপ্য টাকার পরিবর্তে ঋণের প্রস্তাব মানেনি বিরোধী রাজ্যগুলি। তাঁদের পালটা প্রস্তাব, যদি ঋণই নিতে হয়, তাহলে কেন্দ্র নিক। যদিও বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি কেন্দ্রের প্রথম প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। আর সেটা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন রাহুল (Rahul Gandhi)।
এক টুইটে কংগ্রেস নেতা বলছেন, “প্রথমে কেন্দ্র জিএসটির জন্য রাজ্যগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিল। তারপর করোনা এবং প্রধানমন্ত্রী মিলে অর্থনীতিটা শেষ করে দিল। তারপর প্রধানমন্ত্রী নিজের কর্পোরেট বন্ধুদের ১ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকার কর মকুব করলেন। নিজের জন্য ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে বিমান কিনলেন। আর এখন কেন্দ্র বলছে, তাঁদের কাছে জিএসটির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার টাকা নেই। অর্থমন্ত্রী বলছেন, ধার করো। কেন আপনাদের মুখ্যমন্ত্রীরা সাধারণ মানুষের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রীর কাছে বন্ধক রাখছেন?”
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১২
- বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।