ডিসেম্বর ০৯, ২০২০ ২০:০০ Asia/Dhaka

কিছু কিছু গোসফান্দ আছে যেগুলোর লেজ নেই। লেজের জায়গায় বল বা বড় টিউমারের মতো চর্বির চাক থাকে। ওই চর্বির বলটিকেই দোম্বে বলে। সে থেকেই এর নাম দুম্বা। তবে দুই প্রজাতির দুম্বাই আছে ইরানে। চর্বির বলযুক্ত দুম্বা এবং চর্বির বলহীন ছাগলের লেজের মতো ছোট্ট লেজময় দুম্বা।

এ জাতীয় দুম্বার মাংসের গুণগত মান অনেক বেশি। দুম্বার পর ছাগল প্রতিপালন নিয়েও কথা বলেছি আমরা। ইরানের পশুপালন শিল্পে ছাগলের অবস্থান উল্লেখ করার মতো। ইরানে এক প্রকারের ছাগল আছে যেগুলো বিশাল বিশাল শিং রয়েছে। এই জাতীয় ছাগল ইতিহাস বিখ্যাত। কারণ ইরানের প্রাচীন ইতিহাস এবং প্রস্তর লিখন শিল্পে এ জাতীয় ছাগলের  অঙ্কিত ছবি প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়। কোর্ক এবং কোর্ক রাইনি জাতের ছাগল প্রচুর রয়েছে ইরানে। যাই হোক আজকের আসরে আমরা গরু,ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি পশুর দুধ এবং দুধ থেকে তৈরি বিভিন্ন পণ্য নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো।

প্রোটিন মানব দেহের প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু এবঙ কৃষি ও খাদ্য সংস্থা ফাওয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী একজন মানুষের দৈনন্দিন প্রোটিন চাহিদার শতকরা পঞ্চাশ ভাগ মানে অর্ধেক পূরণ করা উচিত পশুর মাংস, দুধ বা দুগ্ধজাত বিভিন্ন প্রকারের প্রোটিন থেকে। দুধ এবং দুধ দিয়ে তৈরি অন্যান্য সামগ্রী পশুজাত গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিনের উৎস এবং এগুলোর মূল্যও তুলনামূলকভাবে কম। উন্নত দেশগুলোতে যাদের আয় উপার্জন বেশি তাদের ডায়েট খাবারের শতকরা পঁচাশি ভাগ ক্যালসিয়ামের চাহিদা এই দুধ কিংবা দুধ থেকে তৈরি অন্যান্য পণ্য থেকেই নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রতি লক্ষ্য রেখে জীবন মানের উন্নয়নের জন্য বিশেষজ্ঞরা চিন্তাভাবনা করে বলছেন বিশ্বব্যাপী দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য দিয়ে প্রোটিন চাহিদা মেটানোর ওপর আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ কারণেই ফাওয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত তিন দশকে দুধের উৎপাদন বিভিন্ন দেশে অর্ধেকেরও বেশি বেড়েছে।

১৯৮৩ সালে যেখানে বছরে দুগ্ধজাত পণ্য সামগ্রি উৎপাদনের পরিমাণ ছিল পঞ্চাশ কোটি টনের মতো সেখানে ২০১৩ সালে উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাতাত্তর কোটি টনের মতো। ফাওয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, ইউরোপীয় দেশগুলো, কিরঘিজিস্তান এবং পাকিস্তানের জনগণ বছরে মাথাপিছু এক শ পঞ্চাশ কিলোগ্রাম দুধ ব্যবহার করে। পশ্চিম এশিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চলে, উত্তর ও দক্ষিণ আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকার দেশসমূহ এবং ক্যারাবিয়ান সাগর উপকূলীয় দেশগুলোতে ত্রিশ থেকে দেড় শ কিলোগ্রাম, দক্ষিণ এশিয়া, সেন্ট্রাল আফ্রিকা এবং পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে ত্রিশ কিলোগ্রামের কম পরিমাণ দুধ ব্যবহার করা হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানব দেহের প্রয়োজনীয় প্রোটিন চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন গৃহপালিত পশুর দুধ ব্যবহারের পরিমাণ নিয়ে কথা বলছিলাম আমরা। ইতোমধ্যে আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার পরিসংখ্যান আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি ফাওয়ের রিপোর্টের ভিত্তিতে। এবারে আমেরিকার দিকে নজর দেওয়া যাক। আমেরিকার মতো দেশগুলোতে বৃহৎ প্রাণিসম্পদ ইউনিট তৈরি করে শিল্পজাতভাবে দুধ উত্পাদন করা হয়। কিন্তু ভারতের মতো দেশগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় গ্রামে গ্রামে মানুষেরা নিজেদের মতো করে ছোট ছোট পরিসরে গরুর খামার করে কিংবা দুয়েকটি গরু লালন পালন করেও দুধের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। যেটুকু দুধ এভাবে উৎপাদিত হয় তাও পুরোটা পরিবারে ব্যবহার করা হয় না। অর্ধেকের মতো নিজেরা ব্যবহার করে। ফ্রান্সের মতো ইউরোপের দেশগুলোতে উৎপাদিত দুধের শতকরা ত্রিশ ভাগ দুধ আসে দুধের ছাগল প্রতিপালন ইউনিট থেকে।

একটা বিষয় উল্লেখযোগ্য যে, হালকা এবং ভারী পশুর দুধে ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ অসঙ্গতিপূর্ণ মানে কম-বেশি হবার কারণে দুম্বা এবং ছাগলের দুধের পুষ্টিমানেও গুণগত পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে ছাগলের দুধে খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রয়েছে ওষুধি গুণও। গরুর দুধে ল্যাকটোজের পরিমাণ অনেক বেশি থাকায় পেটে অনেক সময় সমস্যার সৃষ্টি হয়। কিন্তু দুম্বা কিংবা ছাগলের দুধে এই সমস্যাটা নেই। পেটের অ্যালার্জি কিংবা অন্যান্য সমস্যার একটা প্রধান কারণই হলো গরুর দুধ। অপরদিকে ছাগল বা দুম্বার দুধ খেলে পেটের সমস্যা তো হয়ই না বরং সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা করে।

দুধ এবং দুধ থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন পণ্য ব্যবহারের প্রবণতা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারও দুধ উৎপাদন ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। সরকারগুলো দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন শিল্পে ব্যাপক প্রণোদনা দিচ্ছে। যারা এ ক্ষেত্রে বৃহৎ পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে বিশেষ দুধের পশুপালন, দুধ উৎপাদন এবং দুধ থেকে তৈরি বিভিন্ন রকমের পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার তাদের সহায়তায় বিভিন্ন রকমের সুযোগ সুবিধা দিযে যাচ্ছে। সরকারি এই সুযোগ সুবিধা বা প্রণোদনা পেয়ে বিভিন্ন কোম্পানি দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে এগিয়ে আসার কারণে ভোক্তারা তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী মূল্যে এসব পণ্য পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতির মধ্যে ভোক্তাদের জন্য বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহারের জন্য স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে দুধ সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ করাও লক্ষ্য করার মতো। ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।