কথাবার্তা: টাকা সাদা করার হিড়িক, ৬ মাসে ১০ হাজার কোটি টাকা 'সাদা'
শ্রোতা/পাঠক!৪ জানুয়ারি সোমবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবরের শিরোনাম:
- রাজনীতিবিদদের আদর্শ থাকা দরকার: প্রধানমন্ত্রী-ইত্তেফাক
- ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যার এক নজীরবিহীন কালো অধ্যায়-মির্জা ফখরুল–যুগান্তর
- ফিরেছে সোয়া ৩ লাখ কর্মী-শ্রমবাজার তছনছ-মানবজমিন-মানবজমিন
- জাতীয় পতাকা বিধিমালার বিধি-বিধান কঠোরভাবে অনুসরণে সতর্কতা-বাংলাদেশ প্রতিদিন
- ভারত টিকা পাচ্ছে মাত্র ২ ডলারে, আমাদের দিতে হচ্ছে সোয়া ৫ ডলার-ডা. জাফরুল্লাহ-কালের কণ্ঠ
- বাংলাদেশ ঠিকসময়েই টিকা পাবে: বেক্সিমকো-সমকাল
এবার ভারতের কয়েকটি খবরের শিরোনাম:
- চুক্তি ভিত্তিক কৃষিতে আগ্রহী নই, কৃষক বিক্ষোভের মাঝে ব্যাখ্যা রিলায়্যান্সের-আনন্দবাজার পত্রিকা
- ‘কারা বহিরাগত’, তৃণমূলকে নিশানা অনুরাগের, ‘উনি তো রাষ্ট্রমন্ত্রী’, পাল্টা সৌগত ...-আজকাল
- শ্মশানের ছাদ ভাঙার ঘটনায় বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, গাফিলতির অভিযোগে গ্রেপ্তার ৩-সংবাদ প্রতিদিন
শিরোনামের পর এবার দুটি বিষয়ের বিশ্লেষণে যাব।
কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:
১. ভারত সরকার বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন রপ্তানি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
২. গতকাল গেল ইরানের কুদস ফোর্সের সাবেক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কাসেম সোলাইমানির শাহাদাতের প্রথম বার্ষিকী। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে- ইরান সরাসরি তার শাহাদাতের প্রতিশোধ নিতে পারল না কেন? কী বলবেন আপনি?
বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর
রাজনীতিবিদদের আদর্শ থাকা দরকার: প্রধানমন্ত্রী-ইত্তেফাক

রাজনীতিবিদদের আদর্শ থাকা দরকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন সৎ পথে থাকলে সবকিছু অর্জন করা যায়। জিয়াউর রহমান ছাত্রলীগের নেতাদের প্রলোভন দেখিয়ে দলে টানার চেষ্টা করতেন, না গেলে গুম-খুন করা হতো। সোমবার ( ৪ জানুয়ারি) ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ গড়ে উঠেছিল জিয়াউর রহমান সেই আদর্শকেই ধ্বংস করেছিল।
পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়ার পর বিএনপি-জামায়াত দেশের উন্নয়নকে ধ্বংস করেছিল। এতকিছুর পরও আমরা উন্নয়নের ধারায় ফিরে আসতে পেরেছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সারাবিশ্ব বাংলাদেশকে ভিন্নভাবে দেখে। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। করোনার কারণে হয়তো আমরা একটু থমকে গেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস। দেশ বিরোধী যেকোন আন্দোলন সফল করতে সংগঠন দরকার। আর ছাত্রলীগ যেকোন আন্দোলনেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।
ছয় মাসে ১০ হাজার কোটি টাকা সাদা করেছেন ৭৬৫০ জন-দৈনিক যুগান্তর

২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৭ হাজার ৬৫০ জন প্রায় ১০ হাজার কোটি কালো টাকা সাদা করেছেন। এক্ষেত্রে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৯৬২ কোটি টাকা।সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সিনিয়র তথ্য অফিসার সৈয়দ এ মুমেন গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এবার ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে এনবিআর। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে ২০৫ জন কালো টাকা সাদা করেছেন। এনবিআর এর মাধ্যমে আয়কর পেয়েছে প্রায় ২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এছাড়া আবাসনসহ অন্যান্য খাতে আরও ৭ হাজার ৪৪৫ জন কালো টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এদের কাছ থেকে এনবিআর আয়কর পেয়েছে ৯৩৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা কর পেয়েছে।
ফিরেছে সোয়া ৩ লাখ কর্মী-শ্রমবাজার তছনছ-মানবজমিন

চট্টগ্রামের আনোয়ারার বাসিন্দা নিলয়। ২০১৩ সালে কাতার গিয়েছিলেন। কোম্পানির কাছ থেকে ছুটি নিয়ে তিনবার বাড়িতেও এসেছেন। কিন্তু গত ২রা জানুয়ারি তৃতীয়বার দেশে আসার পর আর ফেরত যেতে
পারেননি। ছুটি শেষ হলেও করোনার কবলে পড়ে দেশেই বেকার জীবন পার করছেন এই রেমিট্যান্সযোদ্ধা। ছুটির মেয়াদ শেষ হয়েছে মাস ছয়েক হলো। এ অবস্থায় গত এক বছর জমানো অর্থকড়িই ভেঙে খেয়েছেন। ইতিমধ্যে কোম্পানির পক্ষ থেকেও তাদের কাতার ফেরাতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কিন্তু করোনা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত যেতে পারেননি। নিলয় বলেন, জমানো টাকা প্রায় শেষ। এরপর কি করবো, পরিবার কীভাবে চালাবো- সেটা নিয়েই চিন্তায় আছি।
শান্তা ইসলাম। নারায়গঞ্জের এই নারীও কাতার যাওয়ার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। এ জন্য দালালকে দিতে হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। ম্যানপাওয়ার ক্লিয়ারেন্স নিয়েছেন, ভিসা পেয়েছেন, গত মার্চে ফ্লাইটের শিডিউলও নির্ধারণ হয়েছিল। কিন্তু করোনাঝড়ে সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেছে। এখন ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। উপরন্তু দালাল আরো ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছে। সেই টাকা না দিলে ফ্লাইট চালু হলেও তার যাওয়া অনিশ্চিত বলে জানান তিনি। আর না গেলে পুরো আড়াই লাখ টাকাই খোয়া যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তার। নিলয়ের মতো ছুটিতে এসে যেমন ফিরে যেতে পারেননি, তেমনি শান্তার মতো সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও আশায় প্রহর গুনছেন লাখ লাখ বিদেশগমনেচ্ছু নারী-পুরুষ।
পরিসংখ্যান বলছে, গত ১১ মাসে অর্থাৎ ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশে মোট কর্মী গেছেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮২ জন। যা তার আগের বছর ২০১৯ সালের তুলনায় ৫ লাখ ১৬ হাজার ৪৭৭ জন কম। শতকরা হিসাবে এই হার ৭১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। মার্চের পর অর্থাৎ এপ্রিল থেকে নভেম্বর- এই ৮ মাসে গেছেন মাত্র ২ হাজার ৪৬৪ জন। একই সময়ে দেশে ফেরত এসেছেন সোয়া তিন লাখের উপরে। বিপুল সংখ্যক এই কর্মী এখন দেশে বেকার জীবনযাপন করছেন। কবে শ্রমবাজার স্বাভাবিক হবে বা আদৌ হবে কিনা তা নিয়েই দুশ্চিন্তা তাদের।
‘৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যার এক নজীরবিহীন কালো অধ্যায়’-মির্জা ফখরুল-দৈনিক যুগান্তর
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ওইদিনটিকে গণতন্ত্র হত্যার এক নজীরবিহীন কালোঅধ্যায় আখ্যা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দশম সংসদ নির্বাচনে একতরফা ভোটের বিষয়টি উল্লেখ করে সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ওইদিন নির্লজ্জ একতরফা নির্বাচন করার উদ্দেশ্যই ছিল ৭৫’- এর একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত করার পথে অগ্রসর হওয়া। ৭৫’ -এর ২৫ জানুয়ারি গঠিত যে একদলীয় বাকশালী সরকার ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়, সেই ব্যর্থতার জন্য আওয়ামী লীগারদের মনোবেদনা পুঞ্জীভূত থাকে। সেই ব্যর্থতার গ্লানি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যই বর্তমান অবৈধ সরকার ভিন্ন আঙ্গিকে জনসমর্থনহীন একটি তামাশার নির্বাচনে সেই একদলীয় বাকশালের নবসংস্করণ তৈরী করেছে। সবার মতামতকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র এক ব্যক্তির ইচ্ছায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। স্ববিরোধিতার এক নিকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। যারা জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করেছিল, তারাই আজীবন ক্ষমতায় থাকার লালসায় সেই ব্যবস্থাটি সংবিধান থেকে মুছে দেয়। ]
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, গণতন্ত্রের পথচলাকে থমকে দেয়া হয়। দেশে দেশে নিষ্ঠুর একনায়কদের একদলীয় ব্যবস্থার ন্যায় নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রিত তথাকথিত হাইব্রিড গণতন্ত্রকে জেঁকে বসানো হয়েছে জনগণের কাঁধের ওপর। মূলত এটি নাৎসীবাদের বাংলাদেশী সংস্করণ।
তিনি বলেন, দেশে এক ভয়াবহ শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজমান। অবরুদ্ধ জাতির সাফোকেশন ভেন্টিলেট যাতে করা সম্ভব না হয় সেজন্য সব ছিদ্র বন্ধ করে দেয় তারা। বিরোধী কণ্ঠ, মত ও পথকে নিশ্চিহ্ন করে বেপরোয়া দেশ শাসন করতে গিয়ে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের ভুতুড়ে বিলে স্বল্প আয়ের মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। আর এসব নিয়ে যাতে কোনো প্রতিবাদ না হয় সেজন্য গণতন্ত্রকে রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে দেশের আপামর নির্যাতিত জনগণ এখন গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারের জন্য ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। জনগণের উদ্বেল অভিযাত্রা যেকোনো মূহূর্তে রাজপথে প্রবল স্রোত তৈরি করবে।
ভারতের কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:
অনিশ্চয়তা বাড়ছে, ক্ষোভও-নতুন কৃষি আইন কৃষকদের ঝুঁকি প্রসঙ্গে সম্পূর্ণ নীরব-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা

কেন্দ্রীয় সরকারের প্রবল চাপের সম্মুখীন হয়েও উত্তর-পশ্চিম ভারতের কৃষিসমাজ বিনা শর্তে নতুন কৃষি আইন অবিলম্বে প্রত্যাহার করার দাবিতে অবিচল। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে যে, এত দিন পরেও অনড় মনোভাবের কারণ কী? বিলের কোন ব্যাপারে তাঁরা ক্ষুব্ধ? কোথায় এই বিলের অসম্পূর্ণতা? আরও বড় পরিসরে প্রশ্ন হল, এই বিল এবং আন্দোলনের কি কোনও সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকবে কৃষিক্ষেত্রের উৎপাদন এবং বিনিয়োগের উপর?
এই বিল সম্পর্কিত দু’টি বিষয় সবচেয়ে বেশি চর্চিত ও বিতর্কিত। এক, এখন কৃষক উৎপাদনের আগেই তাঁর কৃষিজাত পণ্যের মূল্য এবং সরবরাহের পরিমাণ এক জন ক্রেতার (যেমন, বিভিন্ন বৃহৎ বাণিজ্যিক সংস্থা) সঙ্গে আগাম চুক্তির মাধ্যমে ঠিক করতে পারবেন। দুই, কৃষক এখন স্বাধীন ভাবে, যেখানে ইচ্ছে, উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারেন। এমনকি, চাইলে তাঁরা যেতে পারেন ভিন্ন প্রদেশের বাজারেও। অর্থাৎ, এই বিলের মূল বক্তব্য অনুসারে, উৎপাদনের আগে এবং পরে কৃষকের একটা স্বাধীনতা থাকছে কোথায়, কী ভাবে ও কতটা কৃষি পণ্য বেচতে পারবেন, তার উপর। যুক্তি বলবে, তাঁরা এই বিলের আগে যা করতে পারতেন, সেটাও যদি বজায় থাকে, তা হলে তাঁরা আরও নতুন উপায়ে ফসল বিক্রি করতে পারেন, এবং সেটা তাঁদের অনুকূলেই যাওয়ার কথা। তা হলে এত ক্ষোভ কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আগে অন্য কয়েকটা প্রশ্ন করা প্রয়োজন। যেমন, কৃষি অর্থনীতির মূল বৈশিষ্ট্য কী? কৃষিতে বিভিন্ন অংশীদারের সম্পর্কের রূপরেখাই বা কেমন? কৃষি অর্থনীতির মূল নিয়ামক এবং পরিচালক হল তার বিভিন্ন পর্যায় এবং স্তরে থাকা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, এবং তার থেকে প্রতিফলিত ব্যবসায়িক ঝুঁকি, যেটা বহন করেন এই অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত অংশীদারেরা, যাঁদের সিংহভাগ হলেন কৃষকেরা। তা ছাড়াও আছে মহাজন, আড়তদার, ব্যাঙ্ক, সরকার ইত্যাদি।
সরকার যখন কোনও নতুন নীতি প্রণয়ন করে, স্বভাবতই তার প্রভাব পড়ে প্রধান অংশীদার কৃষকদের এই ঝুঁকি বহন করার ক্ষমতার উপর। তার পর সেটা ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র সমাজে। এই ঝুঁকিকে দু’ভাগে ভাগ করে দেখা যায়— এক, ফসল তোলার আগে অর্থাৎ উৎপাদন চলাকালীন ঝুঁকি; দুই, ফসল তোলার পর, বিক্রি-বাটার সময়কার ঝুঁকি। প্রথম পর্যায়ের ঝুঁকির ভার সম্পূর্ণ বহন করতে হয় কৃষকদেরই। কারণ, জমিতে বীজ বপন, সার, কীটনাশক ও প্রযুক্তির প্রয়োগ ইত্যাদির ব্যবস্থার এবং খরচের দায় বর্তায় কষকের উপর। যদি খরা, বন্যা বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফসলের ক্ষতি হয়, তবে ঋণের উপর নির্ভরশীল বিমাহীন দরিদ্র কৃষক সর্বস্বান্ত হতে পারেন। সেই ঝুঁকির ভার পড়ে কৃষকদের জীবনের উপর। কৃষকদের আত্মহত্যার পিছনে একটা বড় কারণ এই ঝুঁকি। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে নথিভুক্ত কৃষক পরিবারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ পরিবার ছোট এবং প্রান্তিক। এঁদের আবাদযোগ্য জমির মালিকানা পরিবার পিছু দুই হেক্টরের কম। এঁদের মধ্যে ৬৮ শতাংশের জমি ১ হেক্টরের কম। এই কৃষকদের কথা মাথায় রাখলে স্পষ্ট যে, কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন কৃষি আইনগুলি অসম্পূর্ণ, কারণ তাতে প্রাক্-ফসল উৎপাদন সময়কালীন ঝুঁকি ও তার বিমা সম্পর্কে একটি কথাও নেই। এর আওতা থেকে সম্পূর্ণ বাদ গিয়েছেন দেশের কোটি কোটি স্বল্প জমির মালিক কৃষক।
চাষবাসের প্রথম পর্যায়ের উৎপাদনের অনিশ্চয়তা যদি আসে প্রকৃতির রোষ থেকে, তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের ব্যবসায়িক ঝুঁকি আসে ফসলের মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ার ভিতরকার অনিশ্চয়তার জন্য, যেটা মূলত ফসলের জোগান, চাহিদা ও বিক্রয় পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল। এই মুহূর্তে, ফসল বিক্রির জন্য এক জন কৃষকের কাছে দু’টি রাস্তা খোলা। এক, কৃষক নিজের রাজ্যে মান্ডিতে খোলা বাজারে নিলামের দর হাঁকাহাঁকির মধ্য দিয়ে উদ্বৃত্ত ফসল বিক্রি করতে পারেন। কৃষক ছাড়াও এখানে আসেন বিভিন্ন মাপের আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তাঁদের হাত ঘুরে খাদ্যপণ্য পৌঁছয় খুচরো বাজারে, গৃহস্থের হেঁশেলে। দুই, তাঁরা সরকারি প্রতিষ্ঠান ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়াকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফসল বিক্রি করতে পারেন।

খোলা বাজারে বিক্রির ঝুঁকি আছে। যদি সারা দেশে চাল, ডাল ইত্যাদির জোগান উপচে পড়ে, তা হলে খোলা বাজারে তার দাম পড়বে। উপভোক্তা উপকৃত হবেন, কিন্তু চাষি মার খাবেন। উৎপাদন কম হলে আবার ছবিটা উল্টে যাবে। অন্য দিকে, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কোনও ঝুঁকি নেই, কারণ সেখানে খাদ্যপণ্যের দাম পূর্বনির্দিষ্ট। প্রশ্ন হল, কৃষকরা কোথায় যাবেন তা হলে? এফসিআই, না মান্ডি?
কৃষক তাঁর উদ্বৃত্ত ফসলের কতটা সরকারের ঘরে, আর কতটা মান্ডিতে বিক্রি করবেন, সেটা মূলত নির্ভর করছে উদ্বৃত্ত শস্যের পরিমাণের উপর, যেটা আবার নির্ভর করছে কৃষি পরিবারের আবাদযোগ্য জমির পরিমাণের মালিকানার উপর। ভারতে আবাদযোগ্য জমির গড়পড়তা পারিবারিক মালিকানা সবচেয়ে বেশি, পঞ্জাব (২.৭২ হেক্টর), হরিয়ানা (২.০৭ হেক্টর) এবং রাজস্থানে (২.৪৩ হেক্টর)। অন্য দিকে, সবচেয়ে কম পশ্চিমবঙ্গ (০.৪৪ হেক্টর), কেরল (০.১৫ হেক্টর) ও বিহারে (০.৪৩ হেক্টর)। আবার, পঞ্জাবে ৮৯%, হরিয়ানায় ৮৫% চাল সরাসরি এফসিআই-কে বিক্রয় করা হয়। ফলে, সেখানকার কৃষকেরা মান্ডির বাজারদরের ওঠানামার অনিশ্চয়তা থেকে বহুলাংশে মুক্ত ও ঝুঁকিহীন। অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গে মোট উৎপাদনের মাত্র ৭.৩ শতাংশ চাল বিক্রি করা হয় এফসিআই-কে, বিহারে ১.৭%। অর্থাৎ, ছোট জোতের চাষ যেখানে, সেখানে উদ্বৃত্ত ফসল এত কম যে, তার বেশির ভাগটাই চলে যায় পরিবারের খাওয়া খরচায়। সেই কৃষকেরা তাঁদের উদ্বৃত্ত মান্ডিতে বিক্রি করেন মূলত আড়তদারদের মধ্যস্থতায়।
এখান থেকে আঁচ পাওয়া যাচ্ছে যে, কেন পঞ্জাব ও হরিয়ানাতে কৃষকেরা উত্তাল, কেনই বা অন্য জায়গায় (বিশেষত পূর্ব বা দক্ষিণ ভারতে) নয়। চাষির জোত যত বড়, তাঁর উদ্বৃত্ত শস্য ততটাই বেশি। আধুনিক অর্থনীতির ‘ক্ষতির প্রবণতা এড়ানোর তত্ত্ব’ অনুযায়ী বড় চাষিরা নির্দ্বিধায় বেছে নেবেন এফসিআই-এর কাছে ফসল বেচতে। কারণ, খোলা বাজারে দাম নিম্নমুখী হলে তবেই ন্যূনতম সহায়ক মূল্য কৃষকের কাছে আকর্ষক। তাই সরকার যখন আরও অনেক খোলাবাজার তৈরির কথা বলছে, পঞ্জাব, হরিয়ানার কৃষকরা দেখছেন সিঁদুরে মেঘ। তাঁদের আশঙ্কা— এফসিআই বলতে পারে যে, খোলাবাজারের সংখ্যা এখন যে হেতু অনেক, তাই সরকারি সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা কম। এতে শুধু যে কৃষকদের ঝুঁকির পরিমাণ বাড়বে তা-ই নয়, হ্রাস পাবে মান্ডির নিলামে তাঁদের দরাদরির ক্ষমতা, কারণ বিকল্প পথে বিক্রির সুযোগ কমবে।
যে সব ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য অপেক্ষাকৃত ভাবে বেশি স্থিতিশীল, অর্থনীতির তত্ত্ব বলবে, সে সব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও উৎপাদনের হার, দুই-ই বেশি হয়। গত বছর সেপ্টেম্বরের হিসেব অনুসারে, এফসিআই-এর গুদামে সাত কোটি টনেরও বেশি চাল-ডাল মজুত ছিল। এটা উত্তর-পশ্চিম ভারতের কৃষকদের দীর্ঘ দিনের বিনিয়োগের ফল, যেটা গড়ে উঠেছে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের মজবুত কাঠামো ও পরিকল্পনার জন্য। লকডাউন চলাকালীন দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তেও যে চাল-ডাল পৌঁছেছে, তার কারণ এফসিআই-এর গুদামে উপচে পড়া খাদ্যশস্য, যার উৎস মূলত পঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষিক্ষেত্র। কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগের উপর এই নতুন আইনের বিরূপ পরিণামের কথা না ভেবে কেন্দ্রীয় সরকার আগুন নিয়ে খেলছে।
দ্বিতীয় প্রসঙ্গ হল, অগ্রিম মূল্যের ভিত্তির উপর চুক্তি-চাষের গ্রাহ্যতা। এই ক্ষেত্রে কৃষকসমাজের ক্ষোভ খুবই যুক্তিসঙ্গত। যেখানেই ক্রেতা ও বিক্রেতা অগ্রিম মূল্য নির্ধারণ করে ভবিষতের অর্থনৈতিক লেনদেনের সূচনা করেন, সেখানেই এক বড় সমস্যা হচ্ছে চুক্তিখেলাপের প্রবণতা। ভবিষ্যতে, যদি খোলাবাজারে শস্যের দাম অনেকটাই কম হয় অগ্রিম চুক্তির মূল্যের থেকে, তা হলে ক্রেতার প্রবণতা থাকে বাজার থেকেই সেই পণ্য কিনে নেওয়ার। তখন চুক্তিবদ্ধ কৃষক ধনেপ্রাণে মারা পড়তে পারেন তাঁর বিক্রি না-হওয়া ফসল নিয়ে। অন্য দিকে, খোলাবাজারে দাম অপেক্ষাকৃত বেশি হলে কৃষকও চুক্তিভঙ্গ করতে পারেন। বাস্তব ক্ষেত্রে এই ধরনের খেলাপি ঘটে প্রতিনিয়তই। তাই এই ধরনের বিনিময় কার্যকর করার জন্য আইনগত এবং প্রতিষ্ঠানগত কাঠামো সুপরিকল্পিত ভাবে মজবুত করার দরকার হয়। না হলে অগ্রিম চুক্তির ব্যাপারটাই মাঠে মারা যায়। কৃষি আইন এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরব।
তাই, ফসল তোলার আগের ঝুঁকির বিমার ব্যবস্থা না করা, চুক্তি-চাষের জন্য পরিকাঠামোর অনুল্লেখ, নতুন বাজার প্রবর্তন করে সহায়ক মূল্যের রক্ষাকবচ গুটিয়ে ফেলার সন্দেহ— সব মিলিয়ে কৃষকসমাজের ক্ষোভের কারণ বোঝা যায়। আর, সরকারকে বিশ্বাস করাও তো কঠিন, তাই না?
চুক্তি ভিত্তিক কৃষিতে আগ্রহী নই, কৃষক বিক্ষোভের মাঝে ব্যাখ্যা রিলায়্যান্সের-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা
বিতর্কিত কৃষি আইনের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই তাদের। চুক্তিভিত্তিক কৃষিকাজে নেই কোনও আগ্রহও। কৃষক আন্দোলনের আঁচ গায়ে পড়তেই বিতর্কিত আইনের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার অভিযোগ ঝেড়ে ফেলল রিলায়্যান্স। তাদের পাল্টা অভিযোগ, প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাগুলি ইচ্ছাকৃত ভাবে তাদের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে। সোমবার সংস্থার তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ধরনের হিংসাত্মক ঘটনায় আনমাদের হাজার হাজার কর্মীর জীবন বিপন্ন। সংস্থার যোগাযোগ পরিকাঠামো অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু রিলায়্যান্স রিটেল লিমিটেড, রিলায়্যান্স জিয়ো ইনফিকোম অথবা রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড অতীতে কখনও কর্পোরেট বা চুক্তিভিত্তিক কৃষিকাজে হাত দেয়নি। আর এই ব্যবসায় ঢোকার কোনও ইচ্ছেও নেই। পঞ্জাব, হরিয়ানা বা দেশের অন্য কোথাও চাষের জমিও কেনেনি রিলায়্যান্স এবং তাদের ভর্তুকিপ্রাপ্ত কোনও সংস্থা। তেমন কোনও পরিকল্পনাও নেই’। ১৩০ কোটির অন্নদাতা কৃষকদের তারা অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে বলেও জানায় রিলায়্যান্স।
কেন্দ্রের ৩টি বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে রাজধানীর উপকণ্ঠে গত একমাসেরও বেশি সময় ধরে যে আন্দোলন চলছে, তাতে মুকেশ অম্বানীর রিলায়্যান্স এবং আদানি গোষ্ঠীর উপরও রাগ গিয়ে পড়েছে কৃষকদের। তাঁদের অভিযোগ, কৃষিকাজের বাণিজ্যিকীকরণ করে আদতে অম্বানী-আদানিদের সুবিধা করে দিচ্ছে মোদী সরকার, যাতে কম দামে ফসল কিনে মজুত করে বাজারে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করা যায় এবং পরে সেই ফসলই চড়া দামে বিক্রি করা যায়। ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের রক্ষা কবচের জন্য যে কারণে এত কথা বলছেন কৃষকরা।
‘রাজ্যে আইনের শাসনই নেই’, সুষ্ঠু ও অবাধ বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে সন্দেহপ্রকাশ রাজ্যপালের-দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন
রাজ্যের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাতে যেন কোনও ছেদ নেই। প্রায় রোজই দু’পক্ষ সংঘাতে জড়ান তাঁরা। সোমবার বর্ধমান সফরে গিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে আরও একবার রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankhar)।
গোটা রাজ্যজুড়ে ক্রমশ আইনের অবনতি হচ্ছে বলে বারবার অভিযোগ করেছেন রাজ্যপাল। বুধবারও রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ধনকড়। পুলিশ (Police), সরকারি কর্মী এবং আধিকারিকরা কার্যত রাজনৈতিক দলদাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এর আগেও একাধিকবার বিভিন্ন ক্ষেত্রের সরকারি আধিকারিকদের তলব করেছেন রাজ্যপাল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গরহাজির ছিল সরকারি আধিকারিকরা। সেই প্রসঙ্গও এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে তুলে ধরেন তিনি। প্রোটোকল মেনে কেউ কাজ করছে না বলেই দাবি তাঁর।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৪
- বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।