জানুয়ারি ১৮, ২০২১ ১৩:২০ Asia/Dhaka

শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত। তাই তাদের উন্নত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ও সুশিক্ষিত করতে দরকার সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত শিক্ষা আর প্রশিক্ষণ। পূর্ণাঙ্গ ও শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম জীবনের সব ক্ষেত্রের মত এক্ষেত্রেও দিয়েছে জরুরি দিক-নির্দেশনা। একজন দার্শনিককে প্রশ্ন করা হয়েছিল মানুষের প্রশিক্ষণ কখন থেকে শুরু করা উচিত? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, শিশুর জন্মের বিশ বছর আগে। আর এতেও যদি লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব না হয় তাহলে বুঝতে হবে যে আরো আগে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করতে হবে।

মহান আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন সবচেয়ে সুন্দর আকৃতি। মাতৃগর্ভ থেকেই সে পেয়েছে মস্তিস্ক, বুদ্ধিমত্তা, চোখ, নাক, কান, হাত-পা, অনুভূতি ইত্যাদি। যে করুণাময় আল্লাহ এতকিছু দিলেন তিনি মানুষের শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক উন্নতির কোনো ব্যবস্থা করেননি-এটা কি হতে পারে?  সন্তানের স্বভাব ও অনুভূতির ওপর বাবা-মায়ের অভ্যাস ও আচরণের অনেক প্রভাব পড়ে। তাই সুসন্তান গড়ে তোলার জন্য আগে দরকার উন্নত নৈতিক চরিত্রের বাবা ও মা গড়ে তোলা। 

বাবা ও মায়ের ঝোঁক-প্রবণতা ও অভ্যাস এবং গর্ভধারনের সময়ে মায়ের মানসিক অবস্থাও শিশুর মানসিকতার ওপর প্রভাব ফেলে।   

সন্তানের অধিকার প্রসঙ্গে মহানবীর পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য ইমাম সাজ্জাদ (আ) বলেছেন, সন্তানের অধিকার প্রসঙ্গে জেনে রাখ যে সে তোমার থেকে এসেছে এবং এ বিশ্বের ভালো ও মন্দের ক্ষেত্রে সে তোমার সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই অভিভাবক হিসেবে তোমার দায়িত্ব হল সন্তানকে সুশিক্ষা দেয়া বা সঠিক শিক্ষাগুলো ও কল্যাণকর বিষয়গুলো শেখানো। আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরতে সন্তানের গাইড হতে হবে তোমাকে। আল্লাহর আনুগত্যের ক্ষেত্রে তাকে সহায়তা দেয়ার দায়িত্বও তোমার নিজের। এইসব দায়িত্ব পালন করলে তুমি পুরস্কৃত হবে। আর এসব দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে শাস্তি পাবে। তাই সন্তানের পার্থিব বিষয়ে এমন সচেষ্ট হও যে তুমি যেন একটি শিল্পকর্ম বা ফল তৈরি করেছ এবং এখন তাকে সুন্দর সাজে সজ্জিত করছ। তার আখেরাতের বিষয়েও এমন সচেষ্ট হও যাতে মহান প্রতিপালকের কাছে লজ্জিত হতে না হয়।

মুসলিম মা ও শিশু

মহানবী (সা) এবং তাঁর পবিত্র আহলে বাইত-এর জীবনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় তাঁরা শিশুর শিক্ষাদানের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন স্ত্রী নির্বাচন ও বিয়ের সময় থেকেই। স্ত্রী নির্বাচনের মাধ্যমে পরিবার গঠন ও শিক্ষা কার্যক্রমের প্রাথমিক পর্ব গড়ে ওঠে। শিশুর সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিকাশ ও প্রশিক্ষণ ঘটে পরিবারে। আর এই পরিবারের প্রধান স্তম্ভ হল বাবা ও মা তথা স্বামী-স্ত্রী। স্বামী ও স্ত্রী যদি চিন্তাগত দিক থেকে ও মানসিক দিক থেকে সুস্থ এবং সুশিক্ষিত হন তাহলে সন্তানের সুশিক্ষা পাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়টিও হয় সুনিশ্চিত। মহানবী (সা) বলেছেন, ইসলামের পর সবচেয়ে বড় নেয়ামত হল ভালো  ও যোগ্য স্ত্রী। আর তা জীবনের বৃহত্তম নেয়ামত।

এটা স্পষ্ট যে, মহানবীর বর্ণিত ওই লক্ষ্য অর্জনের জন্য দরকার সঠিক ও যথাযোগ্য মানদন্ড ও জীবন-যাপন পদ্ধতি। স্ত্রী ও স্বামী উভয়ই যদি খোদাভীরু হন এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস একই ধরনের হয় তাহলে সন্তানকে ধার্মিক ও সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলা সহজ হয়। আর এ জন্যই সচ্চরিত্রবান নারী পুরুষদের উচিত জীবন-সঙ্গীও যেন তাদের মতই পবিত্র হয় এবং এই নীতির আলোকেই বিয়ের বর-কনে বাছাই করা উচিত।

মহানবী (সা) বলেছেন, সমমানের বা যোগ্য পুরুষের কাছে তোমাদের কন্যাকে বিয়ে দাও ও তোমাদের পুত্রদের জন্যও সমমানের কন্যা বেছে নাও এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য উপযুক্ত নারী বাছাই করবে। সন্তানকে কোন্‌ বংশের মধ্যে পাঠাচ্ছ তা লক্ষ্য রাখবে। কারণ পারিবারিক ঐতিহ্য সন্তানের ওপর প্রভাব ফেলে। 

বিয়ের পাত্র-পাত্রী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনেকেই কেবল সামাজিক প্রতিপত্তি, ধন-সম্পদ ও পদ-মর্যাদা ও বাহ্যিক শারীরিক সৌন্দর্যকে গুরুত্ব দেন যা ঠিক নয়। বরং ধর্মীয়, মানসিক ও সাংস্কৃতিক অভিন্নতাকে এক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর দৃষ্টিতে বিয়ের বর-কনে বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জরুরি বৈশিষ্টগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত ধার্মিকতা ও খোদাভীরুতার বিষয়টিকে। আর সংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়গুলোকে যেমন, সম্পদ, বাসস্থান-এসব মহান আল্লাহই যুগিয়ে দেবেন। খোদাভীরুতা বা ধার্মিকতার ক্ষেত্রে হবু স্বামী বা স্ত্রী একে-অপরের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। বিয়ের পর স্বামীকে সচেষ্ট হতে হবে স্ত্রীর সমপর্যায়ের ধার্মিক হতে বা স্ত্রীকে সচেষ্ট হতে হবে স্বামীর পর্যায়ের ধার্মিক হতে। 

একজন মুসলমান ব্যক্তির উচিত নয় ইসলামের বাইরের কোনো ধর্মের ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। কারণ এ ধরনের বিয়ে সুখময় হয় না। সন্তানের ধর্ম-বিশ্বাস ও প্রশিক্ষণ এতে মারাত্মক বিপর্যয়ের শিকার হতে পারে। স্বামী যদি মুসলমান ও স্ত্রী যদি মূর্তিপূজারী হয় তাহলে এই ঘরের সন্তান-সন্ততি অমুসলিম হতে পারে বা তাদের ভালো মুসলমান হওয়ার সম্ভাবনা হবে খুবই ক্ষীণ। এর বিপরীত বিন্যাসের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।#

পার্সটুডে/মু. আমির হোসেন/আশরাফুর রহমান/১৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ