রংধনু আসর: নিজের কাজ নিজে করার গুরুত্ব
রংধনু আসরের কাছের ও দূরের শিশু-কিশোর বন্ধুরা, কেমন আছ তোমরা? আশা করি যে যেখানে আছো ভালো ও সুস্থ আছো। রংধনুর আজকের আসরে তোমাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশিদ এবং আমি আকতার জাহান।
খ) বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই জানে যে, পরিশ্রম তথা কাজ ছাড়া জীবনে কেউ সফল হতে পারে না। আর তাইতো ইসলাম ধর্মে কাজের ওপর বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কেবল পড়াশোনা করলেই চলবে না, নিজের অন্য যেসব কাজ আছে সেগুলোও সাধ্যানুযায়ী করতে হবে। কারণ আমাদের প্রিয় নবী (সা.) এবং নবী বংশের মহান ইমামগণ নিজেদের কাজ নিজেরাই করে গেছেন। রাসূলেখোদা বলেছেন, 'নিজের কাজে কখনো অপরের সাহায্য নেয়া উচিত নয়। আর কারো ভরসা করাও ঠিক নয়।'
ক) নিজের কাজ নিজে করার ব্যাপারে রাসূল (সা.) যেমন গুরুত্ব দিয়েছেন, তেমনি নিজে তা করিয়ে দেখিয়ে গেছেন। বন্ধুরা, রংধনু আসরে আজকের আসরে আমরা সম্পর্কে কয়েকটি ঐতিহাসিক ঘটনা শোনাব। এরপর থাকবে একটি গান। আর সবশেষে থাকবে বাংলাদেশের এক নতুন বন্ধুর সাক্ষাৎকার। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানটিও তৈরি করেছেন আশরাফুর রহমান।
খ) একবার এক সফরে বের হয়ে গন্তব্যে পৌঁছার পর রাসূলে (সা.) ও তাঁর সাহাবীরা নিজ নিজ বাহন থেকে নেমে পড়লেন। নিজেদের মালপত্র নামিয়ে রাখলেন নির্ধারিত স্থানে। তারপর সকলে মিলে ঠিক করলেন যে, একটি দুম্বা জবাই করে খাবার তৈরি করা হবে।
ক) একজন সাহাবী বললেন, দুম্বা জবাই করার দায়িত্ব আমার। আরেকজন বললেন, দুম্বার চামড়া ছাড়ানো ও গোশত কাটার দায়িত্ব আমি নিলাম। তৃতীয়জন বললেন, গোশত রান্না করার দায়িত্ব আমার।
খ) এভাবে সাহাবীরা নিজ নিজ দায়িত্ব ভাগ করে নিলেন। এসময় রাসূল (সা.) বললেন, "কাঠ কুড়িয়ে আনার দায়িত্ব আমার।"
ক) রাসূলের কথা শুনে এক সাহাবী বলে উঠলেন, 'হে আল্লাহর রাসূল ! আমরা উপস্থিত থাকতে আপনি কষ্ট করবেন কেন? আপনি বিশ্রাম নিন। আমরা আনন্দের সাথে সমস্ত কাজ ঠিকঠাকমত সেরে নেব।
খ) সাহাবীদের কথা শুনে রাসূলেখোদা বললেন, "আমি জানি এ কাজ তোমরা করে নিতে পারবে। কিন্তু মহান আল্লাহ সে বান্দাকে কখনোই ভালোবাসেন না, যে বন্ধুদের মাঝে নিজেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম মনে করে।"
ক) এ কথা বলে তিনি বনের দিকে চলে গেলেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যে জ্বালানি কাঠ ও খড়-কুটো নিয়ে ফিরে এলেন।
খ) আরেকদিনের ঘটনা। রাসূল (সা.) এর কাফেলাটি অনেকক্ষণ যাবত পথ চলার কারণে সবার চেহারায় ক্লান্তির ছাপ দেখা যাচ্ছিল। বহনকারী পশুগুলোও ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। এসময় কাফেলাটি এমন একটি স্থানে পৌঁছল যেখানে কিছু পানি ছিল। কাফেলা থেমে গেলে রাসূলেখোদা উটের পিঠ থেকে নিচে নেমে এলেন। এরপর সবাইকে নিয়ে তিনি পানির দিকে পা বাড়ালেন ওজু করার জন্য। কিন্তু কয়েক ধাপ চলার পর কাউকে কিছু না বলে আবার নিজের উটের দিকে ফিরে এলেন।
ক) রাসুলুল্লাহর সাহাবী ও সাথীরা আশ্চর্য হয়ে পরস্পর বলাবলি করতে লাগলেন যে, মনে হয় যাত্রাবিরতির জন্য এ স্থানটি নবীজীর পছন্দ হয়নি। এখনই হয়তো তিনি রওনা হবার নির্দেশ দেবেন।
খ) কাফেলার সবাই যখন রাসূলের নতুন নির্দেশ শোনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন তখন দেখা গেল, মহানবী উটের কোমর বাঁধার রশি হাতে নিলেন এবং উটের কোমর বাধতে শুরু করলেন। তাড়াতাড়ি বাঁধার কাজ শেষ করে তিনি আবার পানির দিকে গেলেন ওজু করতে।
ক) এ সময় চারদিক থেকে সাহাবীরা এসে বললেন, “হে আল্লাহ রাসূল! আপনি এ কাজের জন্য আমাদেরকে কেন হুকুম দিলেন না? আপনি কেন কাজটি করতে গেলেন? আমরা তো গর্বের সাথে এ কাজটি করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম।”
খ) নবীজী তাদের প্রশ্নের জবাবে বললেন, "নিজের কাজে কখনো অপরের সাহায্য নেয়া উচিত নয়। কার কারো ভরসা করাও ঠিক নয়। সে কাজ যত ছোট কিংবা যত বড়ই হোক না কেন।"
ক) রাসূলের এমন জবাব শুনে সাহাবীরা বিস্মিত হয়ে গেলেন।
খ) বন্ধুরা, এবার আমরা রাসূলেখোদার বংশধর বা আহলে বাইতের ইমামদের জীবন থেকে নেয়া দুটি ঘটনা শোনাব। আহলে বাইতের ৮ম ব্যক্তিত্ব- ইমাম জাফর সাদেক (আ.) একদিন শ্রমিকের পোশাক পড়ে হাতে বেলচা নিয়ে জমিতে কাজ করছিলেন। অনেকক্ষণ ধরে কাজ করার কারণে তাঁর সারা শরীর ঘামে ভিজে চপচপ করছিল।
ক) এমন সময় আবু আমর শাইবানী নামের এক ব্যক্তি সেখানে এসে উপস্থিত হলো। সে দেখতে পেল, ইমামের দেহ থেকে টপটপ করে ঘাম ঝরছে। সে ভাবল, হয়তো শ্রমিক না পাওয়ায় ইমাম নিজেই নিজের ক্ষেতের কাজ করছেন।
খ) লোকটি ইমামের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, “হে ইমাম, আপনি তো ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। আপনার বেলচাটা আমাকে দিন। বাকী কাজটুকু আমিই করব।”
ক) জবাবে ইমাম বললেন, “না না, তা কী করে হয়! আসলে আমার দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে, মানুষ রোজগারের জন্য নিজে পরিশ্রম করুক এবং রুটি-রুজি অর্জনের জন্য রোদের প্রখরতা সহ্য করুক।”
খ) বন্ধুরা, ইমাম জাফর সাদেকের পর এবার আমার তাঁর পুত্র ইমাম মুসা কাযেম (আ.)-এর একটি ঘটনা শোনাচ্ছি।
ক) ইমাম মুসা কাযেম (আ.) একদিন প্রচণ্ড রোদের মধ্যে নিজের জমিতে কাজ করছিলেন। এমন সময় আলী ইবনে আবী হামযা নামক এক ব্যক্তি ইমামের কাছে এসে বলল, “হে ইমাম! আপনার জন্য আমার জীবন উৎসর্গিত হোক। আপনি এ কাজটি অন্য লোককে দিয়ে করাচ্ছেন না কেন?”
খ) ইমাম বললেন, “আমি আমার কাজ অন্যকে দিয়ে করাবো কেন? তোমার জানা উচিত, আমার চেয়ে উত্তম লোকেরাও এ ধরনের কাজ নিজেরাই করেছেন।”
ক) লোকটি বলল, আপনি কাদের কথা বলছেন?
খ) ইমাম মুসা কাযেম বললেন, “হযরত রাসূলে আকরাম (সা.), আমীরুল মোমেনীন হযরত আলী (আ.) এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের সবাই এ জাতীয় কাজকর্ম নিজেরাই করে গেছেন। মূলত ক্ষেত-খামারে কাজ করা আল্লাহর নবী-রাসূল, তাঁদের প্রতিনিধি ও উত্তরসূরীদের সুন্নত।”
ক) বন্ধুরা, নিজের কাজ নিজে করার গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে কয়েকটি সত্য ঘটনা শুনলে। অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে তোমাদের জন্য রয়েছে একটি গান। গানের কথা লিখেছেন সাঈদ ওসমান, সুর করেছেন মুহাম্মদ বদরুজ্জামান। আর গেয়েছে শিশুশিল্পী ফজলে এলাহি সাকিব, রিফাত ও সিফাত।
খ) কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর ছোট্টবন্ধুদের কণ্ঠে হামদটি শুনলে। বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে তোমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো বাংলাদেশের এক নতুন বন্ধুকে। ওর নাম রাহেলা মোর্শেদী চৌধুরী।

ক) তো রংধনু আসরে অংশ নেয়ার জন্য রাহেলা মোর্শেদী চৌধুরী তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
খ) আর শিশু-কিশোরবন্ধুরা, তোমরা ভালো ও সুস্থ থেকো আবারো এ কামনা করে গুটিয়ে নিচ্ছি রংধনুর আজকের আসর।
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।