ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২১ ১৬:৩০ Asia/Dhaka

অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সিমেন্টের উৎপাদনের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সিমেন্টকে তাই "অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিকাশের মৌলিক উপাদান" বলে অভিহিত করা হয়।

এ কারণে শিল্পোন্নত দেশসহ পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই সিমেন্টকে একটি কৌশলগত পণ্য হিসেবে গণ্য করা হয়। বলেছিলাম যে, সিমেন্ট তৈরির মৌলিক উপাদানগুলো ইরানের অভ্যন্তরেই প্রচুর পরিমাণে মজুদ রয়েছে। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে ইরানে প্রথম সিমেন্ট কারখানা স্থাপিত হয়েছিল। পাঁচ বছর পর সিমেন্ট কারখানাটি উৎপাদনে যেতে সক্ষম হয়েছিল। তেহরানের অদূরে আনুমানিক সাত কিলোমিটার দক্ষিণে বিবি শাহরবানু নামক পাহাড়ের কাছে ইরানের প্রথম সিমেন্টের কারখানাটি গড়ে উঠেছিল।

ইরানে সিমেন্ট উৎপাদনের আট দশকেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। এই শিল্পটি এখন ইরানের অন্যতম সুপ্রতিষ্ঠিত শিল্পে পরিণত হয়েছে এমনকি ইরানের অন্যান্য অনেক শিল্প এবং পরিষেবা কেন্দ্রের সাথেও সিমেন্ট শিল্পের অপরিহার্যতা গড়ে উঠেছে। সিমেন্টের এই গুরুত্ব গঠনমূলক ও নির্মাণ কার্যক্রমে তার মৌলিক ভূমিকার কারণেই বেড়েছে। ইরানের সিমেন্ট সামগ্রী গুণগত মান বিচারে বিশ্বের সর্বোন্নত সিমেন্টের তালিকায় রয়েছে। বর্তমানে ইরানের প্রায় আশিটির মতো সিমেন্ট কারখানা সক্রিয় রয়েছে। ইরানের মাটির উপযোগী সক্ষমতা থাকার কারণে এখানকার সিমেন্ট তৈরির কারখানাগুলো জাতীয় মান সুরক্ষা করে বিভিন্ন ধরনের সিমেন্ট যেমন পোজ্জোলানী এবং ক্লিঙ্কার তৈরি করার ক্ষমতা রাখে।

ইরানে এখন তিরানব্বুইটিরও বেশি ক্লিঙ্কার বেকিং ওভেন রয়েছে যেগুলোর মধ্যে চল্লিশটিরও বেশি ওভেনের বয়স দশ বছরেরও কম। বিশ হাজারেরও বেশি জনশক্তি সরাসরি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এদের বেশিরভাগই সিমেন্ট শিল্প ক্ষেত্রে বেশ অভিজ্ঞ এবং দক্ষ। এক লাখ বিশ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এইসব ক্লিঙ্কার কারখানা। বিগত এক দশকে ইরানের সিমেন্ট শিল্পের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে যা চোখে পড়ার মতো। বছরে প্রায় পঁচাশি মিলিয়ন টন সিমেন্ট উৎপাদন হচ্ছে এখন ইরানে।

আসলে সিমেন্ট শিল্পটি ইরানে সবসময়ই উন্নয়নশীল ছিল। গেল কয়েক বছরে সিমেন্ট উৎপাদন এবং রপ্তানির দিক থেকে এই শিল্পে সক্রিয় ও তৎপর অপরাপর দেশের তুলনায় ইরান যথেষ্ট অগ্রসরমান। ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকা সত্ত্বেও সিমেন্ট শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল নিশ্চিত করার জন্য বাইরের কোনো দেশ থেকে কোনো কিছু আমদানি করার প্রয়োজন পড়ে না। এমনকি সিমেন্ট উৎপাদনের কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় মেশিনারিজসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদির ক্ষেত্রেও ইরানের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার তেমন কোনো প্রভাব পড়ে নি। ইরানি বিশেষজ্ঞরাই বিশেষ করে যারা সিমেন্ট ফ্যাক্টরির সঙ্গে জড়িত আছেন তারাই নিজেদের মেধা, প্রতিভা ও অভিজ্ঞতার আলোকে এই শিল্পের প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার শিল্পের সমস্যাগুলো সমাধান করতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।

ইরানে সিমেন্টের মূল্য কিন্তু বেশ কম। এর অবশ্য বেশ কিছু কারণও আছে। যেমন বিদ্যুতের দাম এখানে বেশ কম। সিমেন্টের কাঁচামাল এখানে পর্যাপ্ত এবং যথেষ্ট মান সম্মত। সেইসঙ্গে সিমেন্ট তৈরির কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ও মেশিনপত্রের শতকরা প্রায় আশি ভাগই ইরানের অভ্যন্তরে প্রস্তুত হবার কারণে সিমেন্টের দাম কম পড়ে। যার ফলে সিমেন্টের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাজারে ইরান সহজেই দৃঢ় অবস্থান নিতে সক্ষম হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানে উৎপন্ন সিমেন্টের একটা অংশ বিদেশেও রপ্তানি হয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবেশি দেশগুলো যেমন আফগানিস্তান, ইরাকসহ সেন্ট্রাল এশিয়ার দেশ এবং আফ্রিকার ঘানার মতো দেশগুলোতেও রপ্তানি হয়েছে প্রচুর। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের বন্দর আব্বাস পোর্টের মাধ্যমে এসব সিমেন্ট রপ্তানি করা হয়।

ইরান থেকে গত আঠারো জুনেও সিমেন্টের একটি চালান পাঠানো হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ইরানের সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশের বন্দর ও সমুদ্র সংস্থার প্রধান বেহরুজ আকায়ি ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ইরানাকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান নয় শ টন সিমেন্ট নিয়ে ইরানি জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দরে নোঙ্গর করেছে। সময় এবং খরচ কমানোর জন্য সিমেন্টগুলো সরাসরি ট্রাক থেকে জাহাজে বোঝাই করা হয়েছে। বেহরুজ আকায়ি বলেন, সিস্তান-বালুচিস্তান খনিজ সমৃদ্ধ একটি প্রদেশ এবং সেখানে অনেকগুলো উন্নতমানের সিমেন্টের কারখানা থাকার কারণে এইসব সিমেন্ট এখান থেকে থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে রপ্তানি করা সহজ হলো।

সম্প্রতি ইরানের একটি জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানি গলিত লোহায় বিদ্যমান স্ল্যাগকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে সবুজ সিমেন্ট উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। এই সবুজ সিমেন্ট পরিবশে বান্ধব। সাধারণ সিমেন্ট থৈরি করতে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা থাকে কিন্তু সবুজ সিমেন্ট তৈরিতে সেই আশঙ্কাটা তেমন একটা থাকে না। তাছাড়া সবুজ সিমেন্ট তৈরিতে বিদ্যুৎ খরচ হয় খুবই কম। সুতরাং সিমেন্ট তৈরি ও ব্যবহারে সাশ্রয়ের চিন্তা থেকে ইস্ফাহানের 'সেপাহান সিমেন্ট' নামের একটি কোম্পানির গবেষকরা এবিএস নামের একটি সিমেন্ট পণ্যের উপাদান উৎপাদন করতে সফল হয়েছেন। নতুন এই উপাদানটি আবিষ্কার করার ফলে সিমেন্ট তৈরির ভুবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ২১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ