মার্চ ০১, ২০২১ ১৬:৪০ Asia/Dhaka

অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সিমেন্টের পাশাপাশি ফার্নিচার সামগ্রীও বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি শিল্প। এই শিল্পটি দ্রুত বর্ধমান শিল্পগুলির মধ্যে একটি যা বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে রাখতে পারে সৃজনশীল ভূমিকা।

বিগত দশকগুলোতে বিশ্বব্যাপী ফার্নিচার শিল্প তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে বিবেচিত হতো না। কেননা এই শিল্পটি ছিল ছোট এবং স্বল্প মুনাফার। যার ফলে এই শিল্পে বিনিয়োগের ব্যাপারেও তেমন একটা আগ্রহ ছিল না অর্থলগ্নিকারীদের মাঝে। তবে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলো বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর ফার্নিচার শিল্পে বিনিয়োগ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করার ফলে অনেকেই এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসে। ধীরে ধীরে ফার্নিচার শিল্প তাই বিশ্বের ছোট কিংবা মাঝারি মানের শিল্পের মর্যাদা পায়। সেইসঙ্গে ফার্নিচার শিল্পে কর্মসংস্থানের চমৎকার ক্ষেত্র তৈরি হয়ে ওঠায় দ্রুততার সঙ্গে এই শিল্পটি মর্যাদায় অভিষিক্ত হয় এবং অর্থনৈতিক বিবেচনায়ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে

খুব বড়সড়ো কারখানা নয় ছোট্ট কিংবা মাঝারি আকারের ফার্নিচার কারখানাগুলোই বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে এই শিল্পে। ব্রিটেনের মতো দেশে যেসব ফার্নিচার কারখানা সক্রিয় রয়েছে সেগুলোর শতকরা নব্বুইভাগ কারখানাতে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা দশ থেকে পঞ্চাশের বেশি নয়। ইতালিতেও ফার্নিচার ফ্যাক্টরিগুলো ছোটো ছোটো। ডেনমার্ক যারা কিনা সমগ্র ইউরোপের শতকরা অন্তত বিশ ভাগ ফার্নিচার সরবরাহ করে, উৎপাদনের দিক থেকে ব্রিটেনের মতোই অবস্থান তাদের। উন্নত দেশগুলিতে আসবাবপত্রের মাথাপিছু ব্যয় দুই শ তেইশ ডলার এবং বিশ্ব গড় চৌষট্টি ডলারের মতো। দুই হাজার পণর সালে বৈশ্বিক আসবাব শিল্প উৎপাদনের মূল্যমান ছিল চার শ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ছিল।

 

আসবাবপত্রের বৈচিত্র্য এবং কাঠের পণ্যের বিভিন্ন ধরণ এই বাণিজ্যটিকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। অন্যভাবে বলা যায় আসবাবপত্রের বাণিজ্যে একটা রমরমা অবস্থা তৈরি করেছে এই বৈচিত্র্য। আর বাণিজ্যিক লেনদেনের এই উচ্চ হার বা পরিমাণ থেকেই বোঝা যায় বিশ্বজুড়ে আসবাবপত্র এবং কাঠের পণ্যের বাজার কতোটা বৃহৎ। বলা হয়ে থাকে যে দুই হাজার পণর সালে বিশ্বে আসবাবপত্র বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল পণর হাজার কোটি ডলার। আসবাব পণ্যের বিশ্ব বাজারে শুধুমাত্র এশিয়ার অংশই ছিল মোট পরিমাণের ত্রিশ শতাংশ। আর ওই ত্রিশ শতাংশের পাঁচ ভাগের এক ভাগই ছিল চীনা ফার্নিচার। মেক্সিকো, জার্মানি, ইতালি এবং আমেরিকার অবস্থানও এই শিল্পে বেশ উল্লেখযোগ্য পর্যায়ের। কোনো দেশ যদি ফার্নিচারের এই বিশ্ববাজারে নিজেদের অন্তর্ভুক্তির জন্য উৎপাদন বাড়ায় তাহলে সে দেশের আসবাব পণ্য উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হবে। এই পথ ধরে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথও সুগম হবে।

ফার্নিচার শিল্প আসলে এমন একটি শিল্প যার ক্ষেত্র বেশ বিস্তৃত। বহু ধরনের আসবাবপত্র তৈরি করে ফার্নিচার-শিল্পী বা কার্পেন্টাররা। মানুষের কাজকর্মের উন্নয়ন ও সহজিকরণের লক্ষ্যে তারা চেয়ার, টেবিল, সোফা, ডাইনিং টেবিল, টি-টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, ওয়ারড্রব, বুক শেলফ, শো-কেস, ইজি চেয়ার, শোবার খাটসহ গৃহসজ্জার বিচিত্র সামগ্রীও তৈরি করে। মজার ব্যাপার হলো কালের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ফার্নিচার তৈরির ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। ইতিহাসের বিভিন্ন যুগ-পর্বের ফার্নিচারের ধরন যেমন বিচিত্র তেমনি এসব তৈরির উপাদানেও পার্থক্য চোখে পড়ার মতো। ঐতিহাসিক তথ্য-প্রমাণ ও বিভিন্ন নিদর্শন থেকে বোঝা যায় হাজার হাজার বছর ধরে মানুষেরা আসবাবপত্র নির্মাণে বিভিন্ন রকমের উপাদান ব্যবহার করেছে।

যেমন কখনও পাথর দিয়ে তৈরি করেছে প্রয়োজনীয় আসবাব। কখনও তৈরি করেছে কাঠ দিয়ে। আবার প্লাস্টিক এবং স্টিল দিয়েও ফার্নিচার তৈরি করা হয়েছে-যার প্রচলন এখনও রয়েছে। প্রস্তর লিখনসহ প্রাচীনকালের যেসব নিদর্শন ইরানের তাখতে জামশিদ বা পার্সপোলিসে পাওয়া গেছে কিংবা মিশরের পিরামিডে যেসব নিদর্শন লক্ষ্য করা গেছে সেসব থেকে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে প্রাচীনকালের আসবাব, চেয়ার ইত্যাদির ডিজাইন কেমন ছিল। পশ্চিম এশিয়ায় বিদ্যমান সবচেয়ে পুরনো চেয়ারটি ১৯৩৪ থেকে ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে আবিষ্কৃত হয়েছে। জার্মান পুরাতত্ত্ববিদ এরিখ ফ্রেডরিক স্মিথ ইরানের রাজধানী তেহরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর রেইতে অবস্থিত চেশমে-আলি টিলা অঞ্চলে খননকাজ চালিয়ে ওই নিদর্শনটি আবিষ্কার করেন। চেয়ারটি দেখতে এখনকার চেয়ারের মতো নয়। কিছুটা লম্বাটে এবং খাটিয়ার মতো। চেয়ারটিকে খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ সহস্রাব্দের মাঝামাঝি সময়ের বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।

পশ্চিম এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন চেয়ারের কথা যেটি পাওয়া গেছে ইরানের রেই শহরের চেশমে আলি এলাকায়। ওই চেয়ারটি খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ সহস্রাব্দের মাঝামাঝি সময়ের বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। মাটি, বালি এবং খড়ের মিশ্রণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে চেয়ারটি। মজবুত এবং ওজনের দিক থেকে বিবেচনা করলে সহজেই অনুমান করা যায় মানুষের ওজন ধারণ করা বা সহ্য করার মতো ক্ষমতা ছিল ওই চেয়ারের। চেয়ারের উপরিভাগ লাল রঙের। এটি এখন ইরানের জাতীয় যাদুঘরের খ্রিষ্টপূর্ব নিদর্শন বিভাগে সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও 'বনুয়ে রিসান্দে' নামে খ্যাত নতুন ইলাম যুগের ঐতিহাসিক আরেকটি চমৎকার আসবাব শিল্পের কথাও উল্লেখ করা যেতে পারে। এটিও একটি চেয়ার যার পায়াগুলো একটি সিংহের পাঞ্জার আকৃতিতে বানানো হয়েছে।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।