মার্চ ০৩, ২০২১ ২০:০০ Asia/Dhaka

বিশাল একটি দেশ ইরান। এ দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্য,পুরাতত্ত্ব আর সংস্কৃতির বিচিত্র সমৃদ্ধ উপাদান। গত আসরে আমরা গিয়েছিলাম ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় ঐতিহাসিক প্রদেশ হরমুজগানের বিখ্যাত শহর বন্দর আব্বাসের দিকে।

অতিথিপরায়নতার জন্য নামকরা এবং দর্শনীয় এই শহরটি ইরানের একটি পর্যটন এলাকাও বটে। হরমুজগান প্রদেশের কেন্দ্রীয় শহর হলো বান্দর আব্বাস। এটি ইরানের বৃহত্তম বন্দর এবং ইরানের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর।

গত আসরে আমরা বন্দর আব্বাসের ঐতিহ্যবাহী কিছু নিদর্শন ও স্থাপনার  পরিচিত হবার চেষ্টা করেছি। আমাদের ভ্রমণের ধারাবাহিকতায় আজ আমরা যাবো এই প্রদেশেরই দ্বীপাঞ্চলীয় আরেকটি পর্যটন শহর কেশমে। হরমুজ প্রণালীসহ সমগ্র ইরানের বৃহত্তম দ্বীপ কেশম। পারস্য উপসাগরের বুকে সবুজ পান্নার মতো সুন্দর এই কেশম দ্বীপ ঘুরেফিরে দেখতে নিশ্চয়ই খারাপ লাগবে না আপনাদের। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে এই দ্বীপটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই দ্বীপে দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অসংখ্য বাজার, মল এবং প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে অনেক। ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, খোরবাস গুহা, চাহ্‌কুহ প্রণালী, পার্সিয়ান উপসাগরের নীল ডলফিন, স্টার্চ ভ্যালি, ন্যাজ দ্বীপপুঞ্জ এবং নামাকদন গুহা।

ইরানের ঐতিহাসিক কেশম দ্বীপ

 

বলেছি যে কেশম পার্সিয়ান উপসাগরের সবুজ পান্না কিংবা উজ্জ্বল মুক্তো হিসেবে পরিচিত। প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা এই দ্বীপটি এটি ইরানের বৃহত্তম দ্বীপ। পার্সিয়ান উপসাগরের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ হলো "বাহরাইন"। এই বাহরাইনের অন্তত আড়াই গুণ বড় কেশম দ্বীপ। পার্সিয়ান উপসাগর থেকে বিস্তীর্ণ ওমান সাগরের দিকে যাওয়ার সময় বাম দিকে দৃষ্টি দিলে ডলফিনের মতো সুন্দর এই দ্বীপটি দেখতে পাওয়া যাবে। কেশম দ্বীপটিতে রয়েছে অনন্য সাধারণ জিওপার্ক। রয়েছে ইপিজেড বা মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল। পাশাপাশি ঐতিহাসিক ও আকর্ষণীয় কিছু নিদর্শন। তাছাড়া সমুদ্র সৈকত তো রয়েছেই। চমৎকার সব বিনোদন  বা অবকাশ যাপনকেন্দ্রের সুবাদে এই কেশম দ্বীপ ইরানের পর্যটনকেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে। পার্সিয়ান উপসাগরের বুকে গড়ে ওঠার কারণে এবং নিম্ন অক্ষাংশের কাছাকাছি ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কেশম দ্বীপটি শীতকালীন অন্যতম সেরা ভ্রমণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

পর্যটকদের ভাষ্য অনুযায়ী এই দ্বীপে তারা শীতকালে বসন্তের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। কেশম দ্বীপটির দূরত্ব বান্দর আব্বাস শহর থেকে প্রায় বিশ কিলোমিটারের মতো। মোটামুটি দূরত্বের স্বল্পতার কারণে বেশিরভাগ যাত্রীই পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে জলপথকেই বেছে নেয়। কেননা এখানে ছোটো ছোটো যাত্রীবাহী লঞ্চ সার্ভিস রয়েছে। যাত্রী বহন করা ছাড়াও এই লঞ্চগুলো যাত্রীদের গাড়িগুলোও বহন করে দ্বীপে নিয়ে যায়। চমৎকার এই সুযোগটির কারণে বহু লোক গাড়ি নিয়েই কেশম দ্বীপ ভ্রমণ করেন। দক্ষিণ ইরানসহ অন্যান্য দ্বীপপুঞ্জের বন্দর ও উপকূলে বসবাসকারী লোকজনের মতো কেশমের অধিবাসীদেরও প্রধান ভাষা ফার্সি। তবে তারা বন্দরের উপভাষাতেও কথা বলে। তাদের উপভাষাটি অবশ্য এই দ্বীপ ভ্রমণকারী ফার্সি ভাষা জানা সকল মানুষের কাছে তো স্বাভাবিকভাবেই বোধগম্য। এমনকি যারা এখানে ভ্রমণ করতে আসেন তাারও সহজেই উপলব্ধি করতে পারেন।

বিরতির পর আবারও স্বাগত আপনাদের ইরান ভ্রমণ অনুষ্ঠানের আজকের আয়োজনে। কেশম নিয়ে কথা হচ্ছিল বিরতির আগে। এই শহরটি দ্বীপের একেবারে পূর্বতম এলাকায় অবস্থিত। যদিও পুরো দ্বীপের তুলনায় এই শহরের কোনও জ্যামিতিক কেন্দ্র নেই, তবে এর গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অবস্থান এবং দীর্ঘ ঐতিহাসিক পটভূমির কারণে ইরানের অন্যতম বৈচিত্র্যময় এবং আকর্ষণীয় শহর হয়ে উঠেছে এই কেশম। কেশম দ্বীপ ও শহর ছিল আফ্রিকা, সৌদি আরব এবং ইউরোপের সাথে ইরানের সংযোগ সৃষ্টির প্রধান মাধ্যম। এই কারণে কেশেমে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য অনেক বেশি লক্ষ্য করা যায়। দীর্ঘকাল ধরেই কেশম খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কেশম দ্বীপই প্রধান দ্বীপ যেখানে মানব বসতি গড়ে উঠেছে অন্যান্য দ্বীপের তুলনায় অনেক আগে থেকে এবং বৃহৎ আকারে। কেশম মুক্ত বাণিজ্য ও শিল্প অঞ্চল। উন্নয়নের মূল কেন্দ্র হিসাবে কেশম শহরকে নির্বাচন করার ফলেও এই শহরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।

কেশম ইরানে ইকোট্যুরিজমের অন্যতম প্রধান সম্ভাবনাময় একটি অঞ্চল হবার কারণে পর্যটনের দিক থেকে তুলনামূলকভাবে গুরুত্বের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এই দ্বীপের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। কেশম দ্বীপের শপিং মলগুলোকে বিভিন্ন দেশ থেকে বিচিত্র পণ্য আমদানি করে সুসজ্জিত ও সমৃদ্ধ করা হয়েছে। এই দ্বীপে বাণিজ্যের জন্য একটি উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়ে গেছে। এ কারণে যারা শপিংয়ের অভিপ্রায় নিয়ে দ্বীপ ভ্রমণে যান কেশম সারা বছর ধরেই সেসব পর্যটককে স্বাগত জানায়। এমনকি পর্যটকরা যাদের দ্বীপ ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য ব্যবসা নয়  তারাও দ্বীপের বিভিন্ন বাজারের সৌন্দর্য ও পণ্য সামগ্রীর সমৃদ্ধি দেখে বাজারের প্রতি আকৃষ্ট হন। কেশম দ্বীপে অসংখ্য শপিংমল ছাড়াও বড় বড় অনেক রেস্তোঁরাও রয়েছে। এসব রেস্তোরায় বিভিন্ন ধরণের ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নেয়ার পাশাপাশি মাছসহ বিচিত্র সামুদ্রিক খাবারের স্বাদও উপভোগ করা যায়।

কেশমে রয়েছে 'লাফত' নামে একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক গ্রাম। এই গ্রামটির বিশেষত্ব হলো বাড়ির উঠোন এবং বায়ু সঞ্চালন ব্যবস্থা। গ্রামটির এই অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে বন্দরের নামও হয়ে গেছে বায়ু সঞ্চালন ব্যবস্থা বন্দর। এ ছাড়াও এখানে রয়েছে এছাড়াও নাদেরি ক্যাসল দুর্গ, পর্তুগিজ দুর্গ, ম্যাডন ডোম এবং হাজার হাজার বছরের পুরানো শিলালিপি।

বেশ কয়েকটি জিওসাইট নিয়ে গঠিত কেশম জিওপার্ক কেবল এই দ্বীপেরই সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় নয় বরং সমগ্র ইরানেও এটি অনন্য। এই জিওপার্কটি মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র জিওপার্ক যা ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড জিওপার্কসের তালিকায় নিবন্ধিত হয়েছে। চাহকুহ, খোরবাস গুহা, নামাকদান গুহা, ন্যাজ দ্বীপপুঞ্জ এবং কেশম জিওপার্কের মন্দিরের ডুমুর গাছ ইত্যাদি। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ০৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ