মার্চ ০৭, ২০২১ ২০:১০ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা গিয়েছিলাম ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় ঐতিহাসিক প্রদেশ হরমুজগানের বিখ্যাত শহর বন্দর আব্বাসের পাশেই অবস্থিত দ্বীপাঞ্চলীয় আরেকটি পর্যটন শহর কেশমে। হোরমুজ প্রণালীসহ সমগ্র ইরানের বৃহত্তম দ্বীপ কেশম।

পারস্য উপসাগরের বুকে সবুজ পান্নার মতো সুন্দর এই কেশম দ্বীপ ঘুরেফিরে দেখছিলাম আমরা। সম্প্রতি এই দ্বীপটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।                 

আমরা বলেছিলাম এই দ্বীপে দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অসংখ্য বাজার, মল এবং প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে অনেক। ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, খোরবাস গুহা, চাহ্‌কুহ প্রণালী, পার্সিয়ান উপসাগরের নীল ডলফিন, স্টার্স ভ্যালি, নাজ দ্বীপপুঞ্জ এবং নামাকদন গুহা।  আরও বলেছিলাম বেশ কয়েকটি জিওসাইট নিয়ে গঠিত কেশম জিওপার্কের কথা। এই জিওপার্ক কেবল এই দ্বীপেরই সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় নয় বরং সমগ্র ইরানেও এটি অনন্য। এই জিওপার্কটি মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র জিওপার্ক যা ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড জিওপার্কসের তালিকায় নিবন্ধিত হয়েছে। এই জিওপার্ক নিয়ে আমরা আজকের আসরে কথা বলার চেষ্টা করবো।

কেশম দ্বীপের এই জিওপার্কটি এবং এর জিওসাইটগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ স্থানীয় লোকজন এবং সম্প্রদায়গুলোই করে থাকে। এর পাশাপাশি  সবুজ পরিবেশ রক্ষার জন্য যাবতীয় প্রচেষ্টা চালিয়ে কেশম জিওপার্কটির পরিচর্যা করা হয়। যার ফলে পর্যটকদের কাছে চমৎকার এই জিওপার্কটি খুবই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। কেশম দ্বীপের পশ্চিম অংশে প্রকৃতির বিস্ময়কর সৌন্দর্যের সমাহারে কেশম জিওপার্কটি তৈরি করেছে। দ্বীপের এই অংশে দুর্লভ, সুন্দর, বিরল এবং বিপন্ন গাছগাছালি, উদ্ভিদ এবং প্রাণী প্রজাতির উপস্থিতি রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে এগুলোর গুরুত্ব যেমন অপরিসীম তেমনি বৈশ্বিক মূল্যও রয়েছে ব্যাপক। ভূতত্ত্ব গবেষকদের জন্যও গবেষণার অনেক বিষয় আশয় রয়েছে, যেগুলোর প্রত্যেকটিরই অনন্য আকর্ষণ ও সৌন্দর্য রয়েছে।

কেশম ওয়ার্ল্ড জিওপার্কটি নামকদন গুহা, ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, তানদিশা উপত্যকা, সেতারেহ উপত্যকা, চককুহ স্ট্রিট, মাটির অঞ্চল, কাঁকড়া শিলা, শুর উপত্যকা, ডোকোহাক, করকুলা মাউন্টেন, কেশম ছাদ সহ বিশটিরও বেশি জিওসাইট  নিয়ে গড়ে উঠেছে। এই জিওপার্কটির অনন্য সৌন্দর্য এবং প্রকৃতির যাদুময় অনন্য রূপ উপভোগ করতে হলে আপনাকে বারবার ইরানের দক্ষিণে অবস্থিত এই সুন্দর দ্বীপ ভ্রমণ করতে হবে।

কেশম ওয়ার্ল্ড জিওপার্ক নিয়ে। আমরা  "নামকদান গুহা" দিয়েই বরং কেশমের প্রাকৃতিক বিস্ময়কর নিদর্শনগুলো পরিদর্শন করতে শুরু করি। কেশম দ্বীপে একটি লবণের পাহাড় বা সল্ট মাউন্টেন রয়েছে। এই পাহাড়টি পারস্য উপসাগরের 'সপ্ত বিস্ময়ে'র মধ্যে একটি। দূর থেকে তাকালে এই পাহাড়ের গায়ে লবণের সাদা প্রলেপরেখার উপস্থিতি অসম্ভব সুন্দর দৃশ্যের অবতারণা করে। এই লবণ পাহাড়টি দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এবং এর দক্ষিণ উপকূলের কাছাকাছি অবস্থিত। কেশম শহর থেকে নব্বুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গম্বুজ আকৃতির এই পর্বতটির উচ্চতা প্রায় দুই শ সাইত্রিশ মিটার এবং এটিই কেশম দ্বীপের সর্বোচ্চ অংশ।

কেশমের লবণ পাহাড়ের গম্বুজের মতো চূড়ার ভেতরে বেশ কয়েকটি গুহা রয়েছে। এই গুহা কমপ্লেক্সের দীর্ঘতম গুহাটির নাম নামাকদন গুহা। ফার্সি ভাষায় নামাকদন মানে হলো লবণদানি। এই নামাকদন গুহার দৈর্ঘ্য ছয় হাজার চার শ মিটার। বিশ্বের দীর্ঘতম লবণ গুহার খেতাব অর্জন করেছে এই নামাকদন গুহা। বিশেষজ্ঞদের ধারনা এই লবণ গুহাটি প্রাক-ক্যাম্ব্রিয়ান যুগ মানে প্রাচীন কাল থেকে ভূতাত্ত্বিক কালগুলির মধ্যে কোনো এক পর্যায়ে গড়ে উঠেছে। সুতরাং এই তথ্য অনুযায়ী নামাকদন গুহাটি পঞ্চাশ কোটি বছরেরও বেশি পুরানো। গুহার মধ্যে গঠিত নুনের বহু বর্ণযুক্ত স্তরগুলি কয়েক হাজার বছরের পুরানো। গুহার ভেতরে বিভিন্ন রঙের লবণের বহু স্তর দেখতে পাওয়া যায়। এগুলোর হাজার হাজার বছরের পুরোনো। এই গুহায় বেশ কয়েকটি অডিটোরিয়াম বা হল রয়েছে। প্রথম হলটি একেবারে গুহার প্রবেশদ্বারের কাছেই অবস্থিত। প্রবেশদ্বার থেকে প্রায় ছয় শ সত্তর মিটার দূরে। এখানে বলে রাখা ভালো যে এই গুহার প্রস্থ হলো আনুমানিক পাঁচ মিটার।

নামাকদন গুহার দৈর্ঘ্য প্রস্থ নিয়ে। নামাকদন গুহার ভেতরে পর্যাপ্ত আলো নেই। স্বাভাবিকভাবেই গুহার ভেতরে স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ লবণের স্ট্যাল্যাকটিসগুলো ভালোভাবে দেখা এবং এর সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য উজ্জ্বল টর্চলাইট প্রয়োজন। নামাকদন গুহার ভেতরের ছাদ বিভিন্ন আকারের মার্বেল কিংবা স্ফটিকের মতো ঝাড়বাতি দিয়ে আচ্ছাদিত হওয়ার কারণে মনোরম একটি দৃশ্য তৈরি হয়েছে। এটি চোখে না দেখলে বর্ণনা করে ফোটানো আসলে কঠিন ব্যাপার। নামাকদান পাহাড়ের ভেতরের অংশে জলের প্রবাহ রয়েছে যা পার্শ্ববর্তী লবণের সাথে মিশ্রিত হয়ে গুহা থেকে একটি ঝরনাধারার আকারে বেরিয়ে এসেছে। এই ঝরনাধারা নামাকদান পর্বতের পাদদেশে একটি প্রাকৃতিক পানির হাউজ তৈরি করেছে। এই পানির নোনতা প্রকৃতির কারণে পুকুরটিও সাদা হয়ে গেছে।

এই যে ঝরনার কথা বললাম এটি সারা বছর ধরেই প্রবাহিত হয়। পানির এই ধারাটি লবণ গুহার অভ্যন্তরের অংশগুলোতেও দেখা যায়। কখনও কখনও গুহার নুনের জল এতো আয়নার মতো স্বচ্ছ যে নিজের চিত্রও  সেই জলে প্রতিবিম্বিত হয় স্পষ্টভাবে। এই স্বচ্ছতা গুহার ভেতরের  পরিবেশকে দিয়েছে অপূর্ব সুন্দর এক চেহারা। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ০৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ