মার্চ ৩০, ২০২১ ১৯:৪২ Asia/Dhaka

বর্তমানে করোনায় মৃত্যুর পাশাপাশি এ ভাইরাসের পার্শ্বপ্রভাবে আরও নানামুখী সংকট তৈরি হয়েছে মানব জীবনে। আর সেসব সংকটের কারণে মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ। অনেকে মানসিক সংকট কাটাতে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করছেন। বর্তমানে আত্মহত্যার পরিমাণ বাংলাদেশে অনেক বেড়ে গেছে। সম্প্রতি আঁচল ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে আত্মহত্যা করেছেন ১৪ হাজার ৪৩৬ জন।

আত্মহত্যা নিয়ে আলোচনায় আমাদের সঙ্গে রয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম।

সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ, উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম, যেকথা আমি শুরুতেই বলছিলাম- বর্তমানে দেশে আত্মহত্যা প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।তো এই যে মানুষ আত্মহত্যা করছেন-এই আত্মহত্যা করা বা এই প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া- এটা কি রোগ?

অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম: ধন্যবাদ আপনাকে। সুন্দর প্রশ্ন করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে আত্মহত্যার যে পরিসংখ্যান দেয়া হয় তারচেয়ে অনেক বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে এবং আত্মহত্যার চিন্তা করে থাকে। অনেকের মাথায় আত্মহত্যার চিন্তা আসে। কিন্তু ধর্মীয়সহ বিভিন্ন কারণে তারা আত্মহত্যা করে না।

হতাশার কারণে আত্মহত্যা করে থাকে অনেক মানুষ

আপনার প্রশ্ন ছিল আত্মহত্যা রোগ কি না? দেখুন, মানুষ মনের সুখে আত্মহত্যা করে না। মনের অসুখে মানুষ আত্মহত্যা করে কিংবা আত্মহত্যার করে থাকে। তবে উদাহরণ হিসেবে এটাকে জ্বরের সাথে তুলনা করা যায়। জ্বর যেমন শুধু একটা রোগ না। এটি অনেক রোগের উপসর্গ। ঠিক তেমনি আত্মহত্যাও বিভিন্ন রোগের উপসর্গ। অনেক কিছুর ফলে সৃষ্ট বিষয় সবশেষে এসে আত্মহত্যায় রূপ নেয়। ফলে এটাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বিভিন্ন রোগের উপসর্গ বলব। 

রেডিও তেহরান: অধ্যাপক তাজুল ইসলাম, অনেকে আত্মহত্যাকে সামাজিক ব্যাধিও বলে থাকেন-একে সামাজিক ব্যাধি বলা যায় কি না?

অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম: এই প্রশ্নটিও চমৎকার। দেখুন, একে সামাজিক ব্যাধি বলা যায় কি না সে প্রসঙ্গে আত্মহত্যার কারণ কিন্তু সামনে আসে। বিখ্যাত সমাজতাত্ত্বিকরা আত্মহত্যার কারণ হিসেবে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতিকেই বুঝিয়েছেন।

অর্থাৎ সমাজের ভেতর যখন বিশৃঙ্খলা এবং অসঙ্গতি দেখা দেয়, সমাজে যখন অদৃষ্টবাদিতা দেখা যায়। ভাগ্য বা নিয়তির উপর নিয়ন্ত্রণ নেই বলে সমাজে মনে করা হয় অথবা সামাজিক সমর্থন নেই বা হারিয়ে ফেলার চিন্তা করা হয় সেক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ে। এটি বিখ্যাত   গবেষণার ফল। এক্ষেত্রে তারা সাংস্কৃতিক বিষয়টিকেও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বলে মনে করেন।

আত্মহত্যা

দারিদ্র্য, যৌতুক, বেকারত্ব,কাউকে হেয় করা,তুচ্ছ কারণে অপমাণিত হওয়ার মতো ঘটনায় আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়। আর এ সবগুলোর মধ্যে সামাজিক এবং পারিবারিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। ফলে আত্মহত্যাকে সামাজিকব্যাধি না বললেও এর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের কথা অবশ্যই বলতে হবে।

রেডিও তেহরান: জ্বি, আপনি বলছিলেন, এটি সামাজিকব্যাধি না হলেও সামাজিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কথা বললেন-যেসব কারণে মানুষ আত্মহত্যা করে থাকেন।প্রচণ্ড মনস্তাত্ত্বিক চাপ সহ্য করতে না পেরে মানুষ এই পথ বেছে নেন। এমনও বলা হয়ে থাকে দুর্বল চিত্তের মানুষ-আত্মহত্যা করে থাকেন। একথাটা কি ঠিক?

Image Caption

অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম: দেখুন, একথাটাও ঠিক নয়। অনেক মনে করেন যে দুর্বলচিত্তের মানুষরাই কেবল আত্মহত্যা করে থাকেন। আমাদের সমাজের ভেতর থেকে এই ধারনাকে দূর করতে হবে। অত্যন্ত সবল ও দৃঢ়চিত্তের মানুষ,অত্যন্ত পরার্থপর এবং হৃদয়বান মানুষ, অত্যন্ত সমাজিক ও দয়াপ্রবণ মানুষও আত্মহত্যা করতে পারে। মানুষ যখন মানসিক সংকটে পড়েন- যেমন-হতাশা, উদ্বেগ। অন্যান্য রোগের কারণে মানসিক বড় ধরনের ক্ষত সৃষ্টি হওয়া থেকেও আত্মহত্যা করতে পারেন।

আবেগীয় সংকট থেকে আত্মহত্যা করতে পারে মানুষ

বিভিন্ন কারণ থেকে মানসিক রোগ হতে পারে হতে পারে মানসিক সমস্যা হতে অথবা মনোসামাজিক সমস্যা হতে পারে যেটাকে আমরা বায়ো সাইকো সোশ্যাল অ্যাসপেক্ট থেকে বিবেচনা করতে পারি। কারও মনের উপর যখন বড় ধরনের ভাঙন সৃষ্টি হয়। যখন তারঁ কাছে পৃথিবী/জগৎটাকে ভারবহ ও অসহনীয় মনে হয়। তাঁর কাছে যখন আশার আলো না থাকে এবং ভবিষ্যত তার কাছে অন্ধকার মনে হয়;সংকট সমাধানের যখন আর কোনো সম্ভাবনা দেখতে পান না তখনই কিন্তু তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। অতএব যারা বাইরে থেকে মনে করেন স্বার্থপর লোকেরা কিংবা দুর্বল মনের লোকেরাই আত্মহত্যা করে থাকেন সেই ভাবনাটি ঠিক নয়। যাঁরা এ ধরনের কথা বলছেন তারাও যদি এরকম মন কিংবা আবেগীয় পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন তখন তারা যতই সবল থাকুন না কেন তারাও কিন্তু আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারেন। একথা ঠিক নয় যে দুর্বল মনের মানুষ আত্মহত্যা করে।

তো পাঠক/শ্রোতা! আত্মহত্যার কারণ নিয়ে আগামী আসরে আমরা কথা বলব। সবাই ভালো থাকবেন এবং সুস্থ্য থাকবেন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্মশীল হবেন এই প্রত্যাশা রাখছি।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৩০

  • বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ