এপ্রিল ০৮, ২০২১ ১৭:৩০ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা রাসায়নিক পণ্য সামগ্রীর ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান, অগ্রগতি ও তৎপরতা নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে ইরানের পেইন্ট, রজন এবং আঠা ও টেপ শিল্পের ব্যাপারে খানিকটা ইঙ্গিত দেওয়ার পাশাপাশি এসব ক্ষেত্রে জ্ঞান-ভিত্তিক কয়েকটি ইরানি কোম্পানির কৃতিত্ব ও অর্জনের দিকেও ইঙ্গিত করার চেষ্টা করেছি।

আশা করি আপনাদের  ভালো লেগেছে। বলেছিলাম যে রাসায়নিক পণ্য এখন আমাদের জীবনজুড়ে এতোটাই প্রভাব বিস্তার করে আছে যে খুব কম শিল্পই পাওয়া যাবে যেখানে এখন  রাসায়নিক বিভিন্ন উপাদান, কাঁচামাল কিংবা সহযোগী উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে না।

সিমেন্ট উৎপাদনের ক্ষেত্রে, মোটর লুব্রিকেন্টসের ক্ষেত্র থেকে শুরু করে আমাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণ যেমন টুথপেস্ট, শ্যাম্পু, পোশাক শিল্প, ওষুধ ও স্বাস্থ্য শিল্পেও এগুলো ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই কারণে রাসায়নিক শিল্পকে "শিল্পসমূহের শিল্প" হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। একটা সময় মানে রাসায়নিক রঙ উত্পাদনের আগে প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান যেমন মেহেদি, সাদা ফুল এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকে রঙ তৈরি করা হত। জগদ্বিখ্যাত চিত্রশিল্পীরাও তাদের প্রয়োজনীয় রঙগুলো এরকম ঐতিহ্যবাহী বা প্রচলিত উপায়েই তৈরি করে নিতেন। তারা তাদের পূর্বপুরুষদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রস্তুত করতেন তাদের ব্যবহার্য সকল রঙ। সময়ের সাথে সাথে রঙ তৈরিতে খনিজ উপাদান ব্যবহার করার প্রচলন হতে থাকে। এই খনিজ উপাদানের সঙ্গে ধীরে ধীরে জৈব রঞ্জক পিগম্যান্ট ব্যবহার করা হয়। মনে করা হয় যে বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক পেইন্টের উত্পাদন শুরু করেছিল "ড্যু পন্ট" নামের আমেরিকার এক ভদ্রলোক। আজ বিশ্বব্যাপী প্রায় চার কোটি টন পেইন্ট উত্পাদিত হয় যার আনুমানিক মূল্য বারো হাজার কোটি ডলার।

ইরানে  বাণিজ্যিকভাবে রঙ ব্যবহারের ইতিহাস এক শতাব্দীর বেশি নয়। এই এক শতাব্দির  আগে ইরানের দক্ষ বিল্ডিং পেইন্টাররা সরকারী ভবন এবং সমৃদ্ধ বাড়িঘর ইত্যাদি রঙ করার জন্য উদ্ভিদ এবং খনিজ পদার্থ ব্যবহার করত। উনিশ শ চল্লিশের দশকের শুরুতে অর্থাৎ উনিশ শ উনচল্লিশ সালে প্রথম রাসায়নিক রঙ ব্যবহারের কাজ শুরু হয়েছিল ইরানে। সেই সময় রঙের কারখানাগুলো ভেষজ তেল এবং খনিজ পাউডারের মিশ্রণ ব্যবহার করে তেল রঙ উত্পাদন করত। এই রঙ তৈরির ক্ষেত্রটিতে বেশ কয়েকটি কোম্পানি এগিয়ে আসার সাথে সাথে মূলত ইরানের পেইন্ট শিল্পের গোড়াপত্তন হয়েছিল। এই কোম্পানিগুলোই ধীরে ধীরে কাঠের বার্নিশ, শুকনো এয়ার পেইন্টস এবং শিল্প চুল্লি এবং গাড়ি মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় পেইন্টগুলো উত্পাদন করে এই রঙ শিল্পের পণ্যসামগ্রীতে বৈচিত্র্যময়তা বয়ে এনেছিল।

বর্তমান ইরানে পেইন্ট শিল্পে প্রতি বছর প্রায় এক মিলিয়ন টন উৎপাদনক্ষমতা সম্পন্ন সাড়ে তিন শ’রও বেশি রঙ তৈরির কারখানা রয়েছে যারা বিভিন্ন ধরণের রঙ যেমন শিল্পের কাজে ব্যবহৃত এবং বিল্ডিং রঙ করার কাজে ব্যবহৃত রঙ তৈরি করছে। ইরানের পেইন্ট শিল্পের মধ্যে যেগুলো রফতানি হয় সেসব পণ্যের মধ্যে বেশিরভাগই নির্মাণ এবং আলংকারিক পেইন্ট। এইসব পেইন্ট আফগানিস্তান, ইরাক, তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান এবং কাজাখস্তানের মতো দেশগুলোতে রফতানি করা হয়।

ইরানে রঙ উৎপাদন এবং বিশ্ববাজারে তার চাহিদা সম্পর্কে। এইসব অঞ্চলে ইরানের যেসব পেইন্ট সর্বাধিক পরিমাণে ব্যবহৃত হয় সেগুলো বিল্ডিং রঙ করার ক্ষেত্রেই বেশিরভাগ সম্পর্কিত। বাজারে ইরানের পেইন্ট শিল্পের বিভিন্ন পণ্যের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে বাজারের ওই চাহিদার শতকরা প্রায় পঁচিশ ভাগই কভার করে এই বিল্ডিং কোটিংয়ের সাথে সম্পর্কিত রঙ। রঙ তৈরিতে ব্যবহৃত উপকরণগুলির মধ্যে একটি খুব স্টিকি পদার্থ রয়েছে যাকে রজন বলে। দুই হাজার চৌদ্দ সালে এই রজন রপ্তানির বাজারমূল্য ছিল আট হাজার পাঁচ শ কোটি মার্কিন ডলারের মতো।

পেইন্ট শিল্পে এই রজন একটি কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিক রজন গাছপালা থেকে পাওয়া যায় এবং মানবজাতি হাজার বছর ধরে পাইন জাতীয় বিভিন্ন গাছ থেকে এই পদার্থটি সংগ্রহ করেছে। প্রাকৃতিক রজনের রঙ স্বচ্ছ থেকে গাঢ় বাদামীতেকফি কালারে পরিবর্তিত হয় এবং এর কঠোরতা ও অস্বচ্ছতাও আলাদা আলাদা হয়। এক ধরণের প্রাকৃতিক রজন হ'ল পাইন গাছের রজন যা আগে নৌকো, লাশ মমি করার কাজে, খাবারের পাত্রে এবং আরও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হত। বিশেষ করে সিলগালা করার কাজেও এই রজন ব্যবহৃত হত। এ জাতীয় রজন বার্নিশ তৈরি করতে, বিভিন্ন জিনিস পালিশ করতে, কালি, পারফিউম এবং গহনা প্রস্তুত করতেও ব্যবহৃত হত।

সময়ের বিবর্তনে প্রযুক্তির অগ্রগতি যেমন অর্জিত হয়েছে তেমনি পলিমার আবিষ্কারের সাথে সাথে গবেষকরাও সিনথেটিক রজন তৈরি করতে সফল হয়েছেন। এই অগ্রগতির পথ ধরে এগিয়েছে ইরানও। ইরানের রজন শিল্পের বিস্তীর্ণ জগতটিতে এখন এক শ বিশটি শিল্প কারখানা রয়েছে।  প্রতি বছর মোট সাত লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টনের মতো বিভিন্ন পর্যায়ের রজন উত্পাদন করে এইসব কারখানা এবং উৎপাদনের বেশিরভাগই বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।