এপ্রিল ২৮, ২০২১ ১৮:৪৫ Asia/Dhaka

জ্বালানীর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান একটি উৎস হলো তরল গ্যাস। প্রাকৃতিক গ্যাসকে ঘনীভবনের মাধ্যমে বিশেষ পদ্ধতিতে তরল গ্যাসে পরিণত করা হয়।

ইরানে তরল গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ প্রচুর। অচিরেই তরল গ্যাস উৎপাদনের দৈনিক পরিমাণ তের লক্ষ ব্যারেলে পৌঁছে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। পেট্রোকেমিক্যাল এবং তরলিকরণ পরিশোধনাগারগুলোর অন্যতম খোরাক মানে জ্বালানি হিসেবে তরল গ্যাস অত্যন্ত উপযোগী ও সাশ্রয়ী। এর প্রায় অর্ধেকই বলা যায় 'নাফথ'। নেফথা একটি দ্রাবক এবং অন্যান্য হাইড্রোকার্বনের ডিটারজেন্টস ও রিফাইনারিগুলির উত্পাদনের কাজে ব্যবহৃত হয় এই নাফথ। রাসায়নিক এবং পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পগুলির প্রধান একটি উপাদান এই নাফথ। এটি দ্রাবক এবং পাতলা। প্লাস্টিকের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল, সিন্থেটিক ফাইবারসহ বিভিন্ন পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য উৎপাদনের জন্য ফিডস্টক হিসাবে ব্যবহার হয় নাফথ। বেশিরভাগ ইথিলিন প্লাস্টিকের যৌগও নেফথা দিয়ে তৈরি হয়।

দুই হাজার তেরো সালে বিশ্বব্যাপী সরবরাহকৃত মোট তরল গ্যাসের পরিমাণ ছিল দৈনিক সত্তর লক্ষ ব্যারেলেরও বেশি। চলতি দুই হাজার বিশ সালের মধ্যে এই সরবরাহের পরিমাণ প্রতিদিন নব্বুই লক্ষ ব্যারেলের বেশি পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্বে যে পরিমাণ তরল গ্যাস উৎপাদিত এবং সরবরাহ করা হয় ওই পরিমাণ গ্যাসের তেত্রিশ শতাংশই গ্যাস ও তেলগুলোর কূপ থেকে আসে। মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আমেরিকা-বিশ্বের এই দুটি অঞ্চলই ঘনীভূত গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহের বেশিরভাগ অংশ নিশ্চিত করে আসছে। যেমনটি আমরা বলেছি,গ্যাস কনডেন্সেটের উত্পাদন গ্যাসক্ষেত্রের বিকাশের ওপর নির্ভর করে এবং সরাসরি গ্যাস উত্পাদন বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত। ইরান বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাস মজুতের মালিক। ইরানে তেত্রিশ ট্রিলিয়ন ঘনমিটারেরও বেশি গ্যাসের মজুদ রয়েছে।

ইরানের বেশিরভাগ গ্যাস উত্পাদন দক্ষিণ পার্সের নতুন পর্যায়ের প্রকল্পগুলোর কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত। দক্ষিণ পার্স ইরানের বৃহত্তম গ্যাস ক্ষেত্র। এই গ্যাস ক্ষেত্রটি ইরানের দক্ষিণ উপকূল থেকে এক শ পাঁচ কিলোমিটার দূরে পারস্য উপসাগরে ইরান ও কাতারের মধ্যকার যৌথ সীমান্তরেখায় অবস্থিত। ইরানে গ্যাস কনডেন্সেট উত্পাদনের প্রধান উৎস হলো দক্ষিণ পার্স গ্যাস ক্ষেত্র। এই গ্যাস ক্ষেত্র নিয়ে যেসব গবেষণা ও পর্যালোচনা হয়েছে সেসব প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে যে এই ক্ষেত্রটিতে এক হাজার আট শ কোটি ব্যারেলের বেশি গ্যাস কনডেন্সেট রয়েছে।

দক্ষিণ পার্স গ্যাস ক্ষেত্রে এক হাজার আট শ কোটি ব্যারেলের বেশি গ্যাস কনডেন্সেট রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ পার্স গ্যাস ক্ষেত্রের বিভিন্ন পর্যায়ে কনডেন্সেটের  উত্পাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন দৈনিক উত্পাদনের পরিমাণ ছয় লাখ ব্যারেলের কাছাকাছি। বিশাল এই উৎপাদনের মধ্য থেকে প্রায় সাড়ে চার লাখ ব্যারেল রফতানি করা হয়। এ পর্যন্ত দক্ষিণ পার্স গ্যাস ক্ষেত্র থেকে দশ বিলিয়ন বা এক হাজার কোটি ডলার মূল্যের প্রায় বিশ কোটি ব্যারেল গ্যাস কনডেন্সেট রফতানি করা হয়েছে। ইরানি এই গ্যাস কনডেন্সেটের গ্রাহকদের বেশিরভাগই জাপানি, দক্ষিণ কোরিয়ান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের। এদের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া হল ইরানের গ্যাস কনডেন্সেটের বৃহত্তম ক্রেতা।

বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে আজকাল বলা হচ্ছে যে ইরানের গ্যাস কনডেন্সেট রফতানি কমে গেছে। এটা জ্বালানীর সর্বোত্তম ও অনুকূল ব্যবহারের লক্ষ্যে তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের যেসব কর্মকর্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকনে তাদের একটি কৌশলগত নীতি। তারা চাচ্ছেন কাঁচামাল বিক্রি করাকে নিরুৎসাহিত করতে এবং পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের বিকাশসহ পরিশোধন ক্ষমতা বাড়িয়ে ইরানেরে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য গৃহীত পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের পথ সুগম করতে। বর্তমানে যেসব  কর্মসূচি হাতে রয়েছে সেসব পরিকল্পনা অনুসারে ইরানের অভ্যন্তরে উত্পাদিত সমস্ত গ্যাসের কনডেন্সেটকে পরিশোধন করতে হবে। সেইসঙ্গে কাঁচামাল রফতানি করার পরিবর্তে এগুলোকে দেশে বিদ্যমান রিফাইনারিগুলিতে পেট্রোল, নাফথা এবং তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের মতো পণ্যে রূপান্তরিত করাও পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে।

কাঁচামাল রফতানি করার পরিবর্তে এগুলোকে দেশে বিদ্যমান রিফাইনারিগুলিতে বিভিন্ন পেট্রোলিয়াম পণ্যে রূপান্তরিত করার ব্যাপারে চলমান কর্মসূচির কথা বলছিলাম। এ ক্ষেত্রে পার্সিয়ান গালফ স্টার রিফাইনারি এবং সিরাফ রিফাইনারি কমপ্লেক্সের গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের উল্লেখ করা যেতে পারে। পার্সিয়ান গালফ স্টার রিফাইনারির দৈনিক তিন লাখ ষাট হাজার ব্যারেল পরিশোধনের ক্ষমতা রয়েছে। একইভাবে সিরাফ রিফাইনারি কমপ্লেক্স প্রতিদিন চার লাখ আশি হাজার ব্যারেল পরিশোধন করতে পারে। ইরানের সিরাফ রিফাইনারি কমপ্লেক্সের সর্বাধিক পরিশোধন প্রকল্প রয়েছে।

ইরানে গ্যাসের কনডেন্সেটের বর্তমান উত্পাদন প্রতিদিন ছয় লাখ ত্রিশ হাজার ব্যারেল। ধারণা করা হচ্ছে দু হাজার একুশ সালের মধ্যে ইরানে গ্যাস কনডেন্সেটের উত্পাদন ক্ষমতা প্রতিদিন ‌এক মিলিয়ন তিন লাখ মানে তেরো লাখ ব্যারেলে উন্নীত হয়ে যাবে।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ