মে ১০, ২০২১ ১৯:৫০ Asia/Dhaka

আমরা ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় ঐতিহাসিক প্রদেশগুলো সফর গত কয়েক কয়েক সপ্তা আমরা বুশেহর প্রদেশের বুশেহর শহর এবং তার আশপাশের পারস্য উপসাগরীয় নীল জলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছোঁয়ায় দীপ্ত আরও বহু নিদর্শনের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি।

হরমুজগান প্রদেশ থেকে পারস্য উপসাগরের উপকূলীয় পথ ধরে এগিয়ে যেতেই বুশেহর প্রদেশ মায়াবি হাতছানি দিয়ে ডেকেছে আমাদের। বু শেহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এই প্রদেশের মর্যাদা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।

তার পাশাপাশি এখানকার তেলের খনি এবং তেল শোধনাগারও শহরটির গুরুত্ব আগের তুলনায় অনেক বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। তাছাড়া এখন তো বিশ্ববাসী খুব ভালোভাবেই জানে যে এই বু শেহরেই রয়েছে ইরানের পারমাণবিক বিদ্যুৎ স্থাপনা। তেলের খনির সুবাদে এখানে গড়ে উঠেছে তেল, গ্যাস ও পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও। বু-শেহর শহরের সমুদ্র উপকূলবর্তী ‘রেইশহরের’ সঙ্গে আগেই পরিচিত হয়েছি আমরা। এরপর কজরুনি ইমারত নিয়ে কথা বলেছিলাম গত আসরে। এই ইমারতটি এখন নৃতত্ত্ব যাদুঘর। ভবনটি শুরুর দিকে ছিল এখানকার সিটি কর্পোরেশনের কার্যালয়। একটা সময় তাহেরি নামের এক ভদ্রলোক ভবনটি কিনে নেয় এবং ধীরে ধীরে হস্তশিল্প, পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংস্থার অধীনে চলে যায়। তারপর থেকে ভবনটি তাহেরি ভবন নামে পরিচিতি পায়। তারও পরে ভবনটি যাদুঘরের মর্যাদা পায়। উনিশ শ নিরানব্বুই খ্রিষ্টাব্দে এই যাদুঘর ভবনটিও ইরানের জাতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় নিবন্ধিত হয়। আমরা এই বু শাহরের সঙ্গে আরও বেশি পরিচিত হবার চেষ্টা করবো।

বু-শেহরে অসংখ্য ইমারত রয়েছে ঐতিহাসিক এবং দর্শনীয়। এগুলো প্রাচীনত্বের দিক থেকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি নির্মাণ শৈলীগত দিক থেকেও। বু-শেহরের তেমনি একটি ইমারতের নাম হলো ‘কোলা ফারাঙ্গি’। কাজার শাসনামলের এই ইমারতটি দুই হাজার সাত খ্রিষ্টাব্দে ইরানের জাতীয় ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এই স্থাপনাটি এখন পারস্য উপসাগরের মেরিটাইম যাদুঘর হিসেবে পরিচিত। এই যাদুঘরের বিভিন্ন শো-কেস কিংবা ডিসপ্লে রুমগুলোতে সামরিক ও নৌ সরঞ্জামাদি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে কমপাস, নৌ ক্যামেরা এবং নাইট ভিশন, ওয়্যারলেস সরঞ্জাম, সৈন্য এবং নৌবাহিনীর সদস্যের প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক সামগ্রী, তৈজসপত্র, মৃৎশিল্পের বিচিত্র নিদর্শন ইত্যাদি। আবার বিভিন্ন রকমের মানচিত্রসহ প্রত্নতাত্ত্বিক কিছু নিদর্শনও পাওয়া গেছে।                   

পার্সিয়ান উপসাগরীয় বাণিজ্য সংক্রান্ত নথি এবং পানির নীচের কিছু নিদর্শনও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে এই যাদুঘরে। বুশহর বন্দরে পরিচালিত বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোর তরল, রফতানি ও আমদানির নথি এবং নৌ প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত নথি, পাশাপাশি পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধ চলাকালীন নৌ-শহীদদের জীবনীও সংরক্ষণ করা হয়েছে যাদুঘরটিতে। সামরিক জাহাজগুলির চিকিত্সা ও স্যানিটারি সরঞ্জাম, নৌ-পথে বিপদাপদে করণীয় সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের বোর্ড, ঐতিহাসিক মানচিত্র, জাহাজে ব্যবহৃত প্রাচীন লাতিন এবং পার্সিয়ান টাইপরাইটার, বিভিন্ন শ্রেণীর পাথর, ঝিনুকের খোলস এবং সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রাণীর নিদর্শনও যাদুঘরে শোভা পাচ্ছে।

কোলা ফারাঙ্গি নৃতত্ত্ব যাদুঘরের বিভিন্ন সামগ্রির কথা বলছিলাম। যাদুঘরের বাইরের অংশেও কাজার এবং পার্সেপোলিস জাহাজসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন বিশেষ করে নৌবাহিনীতে ব্যবহৃত  যুদ্ধাস্ত্রসহ বোট এবং অন্যান্য সামগ্রী প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরগুলোর বাজারগুলো পর্যটকদের কাছে খুবই প্রিয় স্থান হিসাবে বিবেচিত হয়। কারণটা হলো পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যিক লেনদেন এবং এসব শহরের ভৌগোলিক অবস্থান। এই অঞ্চলে ভ্রমণকারীদের সহজ প্রবেশাধিকারও আরেকটি কারণ। বুশেহর প্রদেশের শপিং সেন্টারগুলি খুবই আকর্ষণীয়। পুরাতন কিংবা আধুনিক সকল বাজারই ঘুরে দেখার মতো। তাছাড়া ভ্রমণকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল আয়োজনই এখানে পরিপাটি করে করা হয়েছে।

বুশেহরের পুরাতন বাজারগুলো কাজার শাসনামলের ঐতিহ্যের প্রতীক। বুশেহরের সবচেয়ে প্রাণচঞ্চল কিংবা বলা যায় হৃদয় হিসেবে পরিচিত এসব বাজার।  এখানে প্রাত্যহিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ এই প্রদেশের সব ধরনের উপহার সামগ্রীই কিনতে পারা যাবে। এর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আমদানিকৃত পণ্যও কিনতে পারা যাবে এসব বাজারে। খোরমা খেজুর, বু-শেহরের অনন্য সাধারণ কিছু হালুয়া, হস্তশিল্প সামগ্রী ইত্যাদি এখানকার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলোতে সহজলভ্য। এর বাইরেও ক্রেতা সাধারণের চাহিদা মেটাতে বুশেহরের পুরাতন বাজারের পাশে আধুনিক বাজারও তৈরি করা হয়েছে।

বুশেহর প্রদেশে সীমিত কৃষিজম্পদের কারণে হস্তশিল্প সামগ্রী তার স্থান দখল করেছে। গ্রামবাসীদের জীবনে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গ্রামবাসীরা তাদের জীবিকা নির্বাহের একটি মাধ্যম হিসেবে সর্বদা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং পণ্য তৈরি করার চেষ্টা করেন। প্রকৃতপক্ষে তাঁত, গেলিম বুনন, মাদুর বোনার মতো হস্তশিল্প তৈরি এ অঞ্চলের মানুষের উপার্জনের অন্যতম প্রধান উপায় ছিল বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ১০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ