জুন ০১, ২০২১ ১৯:৩৪ Asia/Dhaka

গত আসরের সূচনাতেই আমরা গাব্বেহর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করেছি।

আপনারা নিশ্চয়ই জানেন এখন যে, গাব্বেহ হ'ল এক ধরণের হাতে বোণা কার্পেট। বুশেহর প্রদেশের অন্যতম প্রধান হস্তশিল্প এই গাব্বেহ। এগুলো সাধারণত গেনাভেহ এবং দাশ্তেস্তান নামের গ্রামীণ অঞ্চলে বোণা হয়। গাব্বেহ এই বু-শেহর প্রদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রফতানি পণ্য। গাব্বেহ দুই ধরণের আছে। বু-শেহরের গাব্বেহগুলোতে ব্যবহৃত নকশায় সৃজনশীলতা, রুচি, এবং চারপাশের জীবন, পরিবেশ ও প্রকৃতির চিত্র ফুটিয়ে তোলার একটা ঐতিহ্য রয়েছে। এগুলো দীর্ঘদিনের জীবন বোধ ও অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ এখানকার স্থানীয় শিল্পীদেরই চিন্তার ফসল। যাই হোক আজ আমরা যাবো এখানকার তাঙ্গেস্তান এলাকার দিকে। সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান, স্থাপনাসহ অন্যান্য নিদর্শনের সঙ্গে পরিচিত হবার চেষ্টা করবো।

বুশেহর প্রদেশে পর্যটনের জন্য রয়েছে বিচিত্র আকর্ষণ। প্রাকৃতিক দিক থেকে যেমন তেমনি ঐতিহাসিক দিক থেকেও। গেনাভেহ, দেইলাম, দেইর, কাঙ্গন এবং বোরজজন, খোর্মুজ, দাস্তেস্তান এবং তাঙ্গেস্তান প্রভৃতি শহর ও বন্দরের প্রত্যেকটিই অনন্য প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক বিচিত্র বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ। মূল্যবান ‌ও ঐতিহাসিক এইসব নজিরবিহীন নিদর্শন দেখতে ও উপভোগ করতে সর্বদাই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। তবে  ইরানের শীত ঋতু জুড়ে ইরানের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা স্থানীয় পর্যটকদের বেশি বেশি স্বাগত জানায় এইসব শহর, বন্দর, নগর। সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা তাঙ্গেস্তানের দিকে যাত্রা করবো সবার আগে। এই তাঙ্গেস্তানের নাম সংগ্রাম ও প্রতিরোধের সাথে জড়িয়ে আছে। এই বুশেহরের গর্ব জাতীয় বীরের শিরস্ত্রাণ অর্জন করেছেন রাইসালি দেলোয়ারি।

এটা জেনে রাখা ভাল যে তাঙ্গেস্তান শহর বুশেহর প্রদেশের অন্যতম নামকরা ও সমৃদ্ধ পর্যটন শহর। বুশেহর প্রদেশের এই তাঙ্গেস্তানেই সবচেয়ে বেশি পর্যটকের আনাগোণা ঘটে। কারণ এর উপকূল এবং উপকূলীয় বনাঞ্চল। একইভাবে এখানকার সমতলভূমি আবার পার্বত্য অঞ্চলও যথেষ্ট দৃষ্টি মনোহর। ঐতিহাসিক আকর্ষণগুলোর পাশাপাশি এইসব প্রাকৃতিক আকর্ষণ এই এলাকার প্রতি পর্যটকদের  ভালো লাগার মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

তাঙ্গেস্তান ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম আমরা। এবারে এই প্রদেশের অন্য একটি বন্দর নগরীর দিকে যাবো। এই বন্দর নগরীটির নাম হলো দেলোয়ার। বুশেহর শহর থেকে দেইর বন্দরের দিকে যাত্রা করলে আনুমানিক চল্লিশ কিলোমিটার গেলেই দেলোয়ার বন্দর নগরীতে পৌঁছে যাওয়া যাবে। অভিধানে দেলোয়ার অর্থ হলো সাহসী। ইরানের ইতিহাসে এই দেলোয়ারের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। এই দেলোয়ার ইরানের ভাগ্য নির্ধারণী বহু ঘটনা দুর্ঘটনার সাক্ষী। এই শহরের পশ্চিমে রয়েছে পারস্য উপসাগর আর পূর্বে রয়েছে জাগরোস পর্বতমালা। দেলোয়ারের দক্ষিণ-পূর্বদিকে রয়েছে রাইস আলী দেলোয়ারির বাড়ি ও যাদুঘর।

তাঙ্গেস্তানি যোদ্ধা রাইসআলি দেলোয়ারীর নাম বুশেহরের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনাকালে পারস্য উপসাগরে যখন ঔপনিবেশিক বাহিনীর উপস্থিতি ছিল সে সময় তিনি এবং তার সঙ্গি-সাথীরা স্বদেশ রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রামে অবর্তীর্ণ হয়েছিলেন। রাইস আলী দেলোয়ারি মাত্র চব্বিশ বছর বয়সেই ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্রোহে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯১৫ সালের আগস্ট মাসে কোনোরকম সতর্কতা কিংবা যুদ্ধের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ব্রিটিশ সেনারা বুশেহরে প্রবেশ করেছিল। প্রকৃতপক্ষে, পার্সিয়ান উপসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ দখলের পরে আসে বুশেহর শহর দখলের পালা। এই বুশেহর শহর ছিল বাণিজ্যিক লেনদেন এবং পণ্য রফতানি ও আমদানির জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তাঙ্গেস্তান এলাকার আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষেরা যখন জানতে পারলো ঔপনিবেশবাদিরা বুশেহর দখল করতে আসছে তখন তারা রাইস আলি দেলোয়ারির নেতৃত্বে ব্রিটিশ উনিবেশবাদী শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দখলদারী পদক্ষেপের পথে মারাত্মক দেয়াল তৈরি করে। রাইসআলি দেলোয়ারি অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন এবং ব্যাপক বীরত্ব প্রদর্শন করে শেষ পর্যন্ত শাহাদাতবরণ করেন। এই যে দেলোয়ারি যাদুঘর, এটি আসলে ছিল রাইসআলি দেলোয়ারীর বাসভবন। ইরানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার সংস্থা এই মহাবীরের স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাঁর বাসভবনটিকে জাতীয় নৃতত্ত্ব যাদুঘরে পরিণত করে। এই যাদুঘর এখন গ্রামীণ ঐতিহ্য বিষয়ক বিচিত্র সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়েছে।

উনিশ শ সাত খ্রিষ্টাব্দে অর্থাৎ কাজার শাসনামলে এই যাদুঘর ভবনটির ব্যাপক সংস্কার করা হয়।  প্রায় তিন হাজার সাত শ পঞ্চাশ বর্গমিটার আয়তনের এই ভবনটিতে রয়েছে তেইশটি কক্ষ। খোলামেলা আঙিনার চারপাশের এইসব কক্ষ একটির সঙ্গে একটি লাগোয়া। গ্রিলযুক্ত জানালার গ্লাস এবং পুরো ভবনে অসংখ্য জানালার অস্তিত্ব যাদুঘরটিকে আরও বেশি দর্শনীয় করে তুলেছে। এই যে ভবনের মাঝখানে খোলা আঙিনার কথা বললাম সেখানে বেশ কিছু গাছগাছালিও রয়েছে যা পুরো প্রাকৃতিক পরিবেশকে উপভোগ্য করে তুলেছে।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ০১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ