জুলাই ০৫, ২০২১ ১৫:২৭ Asia/Dhaka

শিশুদের সুস্বাস্থ্য ও আনন্দময় পরিবেশ তাদের শিক্ষণ এবং উন্নয়নের জন্য খুবই জরুরি। তাই খেলাধুলা তাদের নোদন, শিক্ষা ও সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো মাধ্যম। বর্তমান যুগে শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলেন শিশুদের প্রতি দিন অন্তত তিন ঘণ্টা শারীরিক সক্রিয়তা বজায় রাখতে হবে।

অথবা প্রতি এক ঘণ্টার মধ্যে ১৫ মিনিট শারীরিক তৎপরতা চালাতে হবে তাদেরকে। 
ইসলাম ধর্ম শিশুদের শরীরকে সুস্থ ও মনকে প্রফুল্ল রাখার ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দেয় যাতে তারা সৌভাগ্যময় জীবন গড়তে পারে। আর খেলাধুলা এ লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। খেলাধুলা শিশু ও কিশোরদের আনন্দ দেয়ার পাশাপাশি তাদেরকে মানসিক শক্তিও যোগায় এবং তাদেরকে নানা ধরনের রোগ, জড়তা ও শোক আর পশ্চাদকামিতা থেকেও রক্ষ করে।  ইসলাম ধর্ম শিশু কিশোরদের খেলাধুলার ওপর বেশ গুরুত্ব দিয়েছে।
মহানবী (সা) বলেছেন, বাবার ওপর সন্তানের অন্যতম অধিকার হল তাকে লেখাপড়া, সাঁতার ও তির-নিক্ষেপ শেখানো এবং তাকে সুখাদ্য ও হালাল খাদ্য ছাড়া অন্য কোনো খাদ্য না খাওয়ানো। 
যাদের শরীর সুস্থ থাকে না তাদের মনও প্রফুল্ল থাকে না। ফলে তাদের বিচার-বুদ্ধিও ভালোভাবে কাজ করে না। বলা হয় সুস্থ শরীরেই সুস্থ বুদ্ধি থাকে। আবার মন ভালো না থাকলে শরীরও ভালো থাকে না। তাই এ দুইয়েরই সুস্থতা বা অসুস্থতা পরস্পরের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। যেসব শিশু-কিশোর বা ব্যক্তি শারীরিক দিক থেকে অলস ও শরীরকে নড়াচড়া বা শরীর চর্চা থেকে দূরে থাকে তারা অতিরিক্ত মাত্রায় মুটিয়ে যায় ও বাড়তি মেদ-চর্বির অধিকারী হয়ে মানসিক প্রশান্তি ও আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়। এই শ্রেণীর মানুষ খিটমিটে মেজাজ ও অসুস্থ চিন্তার অধিকারী হয় এবং কলহপ্রিয় হয়ে পড়ে। মহানবী (সা) খেলাধুলা ও চিত্ত-বিনোদনকে গুরুত্ব দিতেন যাতে ইসলাম ধর্মে শুষ্কতা ও  হিংস্রতা স্থান করে না নেয়।
শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা ও শরীর-চর্চা হতে হবে এমন যাতে তা সুস্থতার পাশাপাশি তাদের জন্য চিত্ত-বিনোদনেরও মাধ্যম হয়। দুই বছর বয়স হওয়ার আগে শিশুরা কোনো শ্রমসাধ্য ব্যায়াম ও কাজ করার শক্তি অর্জন করে না। তাই দুই বছর বয়স হওয়ার আগে শিশুদের জন্য সর্বোত্তম ব্যায়াম হচ্ছে তাদেরকে একটি বল দিয়ে খেলতে দেয়া ও হাটার সুযোগ দেয়ার মত খুব সহজ খেলার ব্যবস্থা করা। আর দুই বছর বয়সের চেয়ে বড় হতে থাকার পর শিশুর অভিভাবকরা তাকে নানা ধরনের জ্ঞান শেখানোর ব্যবস্থা করতে পারেন।

শিশুদের জন্য শরীর চর্চা শুরুর সবচেয়ে ভালো বয়স হল ছয় থেকে সাত বছর বয়স। এর আগে শিশুদের শরীর চর্চার মধ্যে খেলাধুলার উপাদান থাকা উচিত যাতে শরীর চর্চাকে ক্লান্তিকর বা কষ্টকর কিছু মনে না হয়। শিশুদের জন্য এ ধরনের শরীর চর্চা হওয়া উচিত বহু ধরনের যাতে বিচিত্রময় পন্থায় শিশুদের শরীর-চর্চা বা ব্যায়াম হয়ে যায়। শিশুদের এসব শরীর চর্চার পদ্ধতিগুলো হতে হবে তাদের বয়স ও শরীরের ক্ষমতার উপযোগী যাতে শিশুরা নিজ থেকেই এসব শরীর চর্চাকে গুরুত্ব দেয় এবং এসব খেলা ধুলা বা শরীর চর্চা তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া কাজ বলে মনে না হয়। 
বয়সের আলোকে কোন্ ধরনের খেলা শিশুর জন্য সবচেয়ে ভালো সে বিষয়ে অভিভাবকদের ধারণা থাকা উচিত। শিশু বিষয়ক কোনো কোনো গবেষকের মতে ছয় বছর বয়সের বড় শিশুদের দৈনিক অন্তত এক ঘণ্টা বা কারো কারো মতে তারও বেশি সময় শরীর চর্চা করতে হবে। অবশ্য এই শরীর চর্চা যে একটানা এক ঘণ্টা হতে হবে তা নয়। শরীর চর্চা ও খেলাধুলা অসুস্থতা ও অলসতা দূর করে এবং সামাজিক ও ব্যক্তিগত দায়িত্ব পালনসহ নানা তৎপরতার জন্য মানুষকে উপযুক্ত করে তোলে।  শিশু ও কিশোরদের আচার আচরণের ওপরও এর প্রভাব রয়েছে। 
কোনো কোনো খেলাধুলা এমনই যে সেসব খেলাধুলা শিশু-কিশোরদের শরীরের সুরক্ষার পাশাপাশি তাদের মধ্যে বীরত্ব, দয়া, ক্ষমাশীলতা, মহানুভবতা, দৃঢ়তা, সাহসিকতা, ত্যাগ, জুলুমের বিরোধিতা ও মজলুমের প্রতি মমত্ববোধের চেতনা সৃষ্টি করে।   যেসব মানুষ শারীরিক সক্রিয়তার উপযোগী কাজকর্ম ও খেলাধুলা বা শরীর চর্চায় নিয়োজিত থাকেন তারা তুলনামূলকভাবে এক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় ও অলস ব্যক্তিদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচেন ও  বেশি সুস্থ দেহ আর মনের অধিকারী হন। 
দলবদ্ধ খেলাধুলা শিশু কিশোরদের মধ্যে সামাজিক চেতনা জোরদার করে এবং কঠিন কাজ ও চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় অধ্যবসায় আর প্রতিরোধের চেতনা জাগিয়ে তোলে। হাডুডু এ ধরনের একটি খেলা যা শরীর চর্চার পাশাপাশি সামাজিক চেতনাগুলো জোরদার করে। দলবদ্ধ খেলা শিশু কিশোরকে সামাজিক বিষয়ে ব্যক্তি-কেন্দ্রিকতা পরিহারের শিক্ষা দেয়।  
সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পিত খেলাধুলা শিশুর হাড়সহ নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে যথাযথ মাত্রায় পরিপক্বতা লাভে সহায়তা করে এবং তাদেরকে বাড়তি ওজন ও হৃদরোগের সহায়ক পরিবেশ থেকে দূরে রাখে।  চিকিৎসকরা বলে থাকেন যেসব ব্যক্তি শৈশব ও কৈশোরে খেলাধুলা ও শরীর চর্চা করেনি তারা মধ্য-বয়সে হাড়ের নানা রোগের শিকার হতে পারে। 
খেলাধুলা ও শরীর চর্চা শিশু কিশোরদের শরীরের নানা অংশে রক্ত-প্রবাহকে সচল রাখে। ফলে তাদের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বাভাবিক ও সুস্থ থাকে। শৈশব ও কৈশোরে খেলাধুলা ও শরীর চর্চায় অভ্যস্ত ব্যক্তিরা মধ্য বয়সে ও এমনকি বৃদ্ধ বয়সেও তা অব্যাহত রাখাতে পারেন সহজেই এবং এর ফলে তারা দেহ ও মনকে সতেজ রাখতে সক্ষম হন। তাই খেলাধুলা ও শরীর চর্চাকে শৈশব থেকেই গুরুত্ব দেয়া উচিত সৌভাগ্যময় জীবন গড়ার স্বার্থেই। 
বর্তমান যুগে টেলিভিশন, ইন্টারনেট, মোবাইল ও কম্পিউটার গেইম ইত্যাদি শিশু-কিশোরদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাই শিশু-কিশোররা যাতে এতে খুব বেশি আসক্ত না হয় সেদিকে অভিভাবকদের লক্ষ্য রাখতে হবে। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/০৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ