জুলাই ১৬, ২০২১ ১৭:৪১ Asia/Dhaka

বিশ্ব-জগতে আমাদের অবস্থানকে বুঝতে হলে তার আগে খানিকটা বুঝতে হবে মহান আল্লাহর নামগুলোর অর্থ ও তাৎপর্য। মহান আল্লাহর আসমাউল হুসনার অন্তর্ভুক্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হল হাফিয।

এ নামের অর্থ হল সব সময়ে রক্ষাকারী বা সদা-সংরক্ষক। এই গুণের কারণে মহান আল্লাহ যতদিন তার যে কোনো সৃষ্টির টিকে থাকার বিষয়টিকে কল্যাণকর বলে মনে করবেন ততদিন তিনি ওই সৃষ্টিকে ধ্বংস ও ক্ষয়িষ্ণুতার হাত থেকে রক্ষা করতে থাকেন। মহান আল্লাহর হাফিয নাম পবিত্র কুরআনে তিনবার এসেছে। এ শব্দের উৎস হল হিফ্‌য্‌। আমরা বাংলা ভাষায়ও আমানত ও জানমালের সংরক্ষণ বা সুরক্ষার ক্ষেত্রে হেফাযত শব্দ ব্যবহার করে থাকি। গোপন তথ্য বা রহস্য গোপন রাখার ক্ষেত্রেও এ শব্দের ব্যবহার রয়েছে। কোনো বিষয় স্মৃতিতে ধরে রাখা বা মুখস্থ রাখা- যেমন, বই মুখস্থ রাখার ক্ষেত্রেও হিফ্‌য্‌ শব্দের ব্যবহার দেখা যায়।  কিন্তু এ শব্দ যখন মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় তখন এর অর্থ হল মহান আল্লাহ আকাশ ও জমিনের বস্তুগত ও অবস্তুগত এবং আধ্যাত্মিক সব বিষয়ের সংরক্ষক ও যত্নকারী। আর তার এই গুণ সব সময়ের জন্যই বজায় থাকে।

 সৃষ্টিকুলের সব কিছুই অস্তিত্ব লাভ থেকে শুরু করে এর ক্রমবিকাশ ও টিকে থাকা অব্যাহত রাখতে শত ধরনের প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক ঘটনার মোকাবেলায় মহান আল্লাহর হেফাজতের মুখাপেক্ষী। মহান আল্লাহই নানা ধরনের ফসল ও শস্যকে কীট-পতঙ্গ ও পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করেন।  আকাশ থেকে জমিনে বৃষ্টির একটি ফোটাও পড়ে না মহান আল্লাহর নিয়োজিত ফেরেশতার মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত সুরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত। মানুষকেও নানা বিপদ-আপদ,  ধ্বংসযজ্ঞ ও রোগ-বালাই এবং হুমকি থেকে রক্ষা করার কাজে মশগুল থাকেন মহান আল্লাহর নিয়োজিত বিপুল সংখ্যক ফেরেশতা। বাড়ন্ত ও চঞ্চল শিশুকেও নানা বিপদ থেকে রক্ষা করেন মহান আল্লাহর নিয়োজিত ফেরেশতারা। কারণ বাবা-মা নানা ব্যস্ততার কারণে  সব সময় শিশুর প্রতি মনোযোগী ও যত্নশীল হতে পারেন না। মানুষ যেসব জায়গায় বসবাস করে সেসবের অনেক স্থানেই থাকে সাপ, জোঁক ও বিচ্ছুর মত বিপজ্জনক ও হিংস্র নানা প্রাণী। কিন্তু সেসব মানুষের খুব কমই ক্ষতি করতে পারে মহান আল্লাহর দেয়া সুরক্ষার কারণেই! এভাবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে মহান আল্লাহর নিয়োজিত ফেরেশতাকুল। পবিত্র কুরআনের সুরা আনআমের ৬১ নম্বর আয়াতে এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেছেন:

তিনিই নিজ বান্দাদের উপর পরিপূর্ণ কর্তৃত্ব রাখেন। তিনি তোমাদের কাছে পাঠান রক্ষণাবেক্ষণকারী। এমন কি, যখন তোমাদের কারও মৃত্যু আসে তখন আমার প্রেরিত ফেরেশতারা তার আত্মা হস্তগত করে নেয়। তারা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কখনও অবহেলা করে না। -সুরা রাআদের ১১ নম্বর আয়াতেও মহান আল্লাহ বলছেন:

তাঁর পক্ষ থেকে অনুসরণকারী কর্মী তথা ফেরেশতারা রয়েছে তাদের অগ্রে এবং পশ্চাতে, আল্লাহর নির্দেশে তারা অনিবার্য নয় এমন বিপদ-আপদ থেকে ওদের হেফাজত করে।

আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ) বলেছেন: এমন কোনো মানুষ নেই যার সঙ্গে তার সুরক্ষায় নিয়োজিত ফেরেশতারা থাকে না। ফলে তারা কুয়ায় পড়ে যায় না, অথবা দেয়াল তাদের মাথার ওপর ভেঙ্গে পড়ে না কিংবা অন্য কোনো বিপদ তার ঘটে না। কিন্তু যখন তার জন্য নির্ধারিত মৃত্যুর সময় এসে যায় তখন ওই ফেরেশতারা তাকে ঘটনাপ্রবাহের ওপর ছেড়ে দেয়।

মহান আল্লাহ হযরত মুসার (আ) কাছে নাজিল করেছিলেন ধর্মগ্রন্থ তাওরাত। এ ধর্মগ্রন্থের সুরক্ষার দায়িত্ব তিনি অর্পণ করেন মুসা নবীর উম্মত তথা ইহুদিদের ওপর। কিন্তু তারা এই ধর্মগ্রন্থকে অবিকৃত রাখতে পারেনি।  আর মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)'র কাছে পবিত্র কুরআন নাজিল করে মহান আল্লাহ এ মহাগ্রন্থ সংরক্ষণের দায়িত্ব নিজেই গ্রহণ করেন। সুরা হিয্‌র-এর ৯ নম্বর আয়াতে এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয়ই আমরাই এই স্মরণ তথা কুরআন নাজিল করেছি এবং নিঃসন্দেহে আমরাই তা রক্ষা করব। -এ আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট পবিত্র কুরআনে কেউ কোনো ধরনের পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা বিকৃতি ঘটাতে পারেনি এবং পারবেওনা কখনও।

মানুষের ভালো ও মন্দ কাজ লিখে রেখে যারা রেকর্ড করেন তাদেরকেও হাফিজ বলে উল্লেখ করেছেন মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে।  সুরা শূরার ৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে নির্বাচন করেছে আল্লাহ তাদের ওপর হাফিয তথা তিনি তাদের আমলগুলো রেকর্ড করেন ও তাদের ওপর শাস্তি কার্যকর করবেন।  -এটা স্পষ্ট মহান আল্লাহ তার জ্ঞান ও ক্ষমতার মাধ্যমে যেমন হেফাজতের কাজ করেন তেমনি বিশেষ ধরনের ফেরেশতাদের দিয়েও সুরক্ষার কাজ করেন।

মানুষ যদি মহান আল্লাহর হাফিয নামের রঙে রঙিন হতে চায় তাহলে সর্বপ্রথম তাকে নিজ আত্মার ব্যাপারেই রক্ষণশীল ও যত্নশীল হতে হবে এবং পাপের স্পর্শ থেকে আত্মাকে পবিত্র করতে হবে। আমাদের আত্মা হল মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া আমানত। তাই এর সুরক্ষা জরুরি।  আমলনামা লেখায় নিয়োজিত ফেরেশতাদের কথা মনে রেখে আমাদের উচিত আমাদের ধর্ম, বংশধর, জীবন, বিবেক-বুদ্ধি ও ধন-সম্পদকে ইসলামী বিধানের আলোকে সংরক্ষণ করা। আমাদের উচিত বিশ্বস্ত আমানতদার হওয়া। কুরআনে ইউসুফ নবীর ঘটনায়ও দেখা যায় তিনি মিশরের ধন-ভাণ্ডারের হাফিয তথা দেশটির সম্পদের ও জনগণের রুটি-রুজির সুরক্ষক  হয়েছিলেন। একদল আধ্যাত্মবাদী আলেমের মতে মানুষের মধ্যে যখন মহান আল্লাহর হাফিয নামের প্রভাব পড়ে তখন তারা জনগণকে একত্ববাদের দিকে পরিচালনা করেন ও তাদেরকে নানা দিক থেকে সুরক্ষা দেন এবং জনগণ এই মহান ব্যক্তিদের কথা, ক্ষমতা ও হাতের দিক থেকেও সব সময় নিরাপদ থাকেন।#

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ১৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।