জুলাই ৩১, ২০২১ ২১:৪৯ Asia/Dhaka

গত পর্বের আলোচনায় আমরা শিশু-কিশোরদের শরীর-চর্চা ও খেলাধুলার গুরুত্ব সম্পর্কে কথা বলেছিলাম।

আমরা এও জেনেছি যে বর্তমান যুগে দলবদ্ধ খেলাধুলা ও শরীর-চর্চার জায়গা-দখল-করে-নেয়া টেলিভিশন, ইন্টারনেট, মোবাইল ও কম্পিউটার গেইম ইত্যাদি শিশু-কিশোরদের শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতি সাধন করছে। এসবের চর্চা দিনকে দিন বাড়তে থাকায় পুরনো যুগের দলবদ্ধ খেলা ও শরীর-চর্চা এখন তাদের কাছে তেমন একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। তাই শিশু-কিশোররা যাতে এসব নতুন প্রযুক্তি-ভিত্তিক খেলায় খুব বেশি আসক্ত না হয় সেদিকে অভিভাবকদের লক্ষ্য রাখা উচিত।

সন্তান প্রতিপালন বা প্যারেন্টিং এমন এক শিল্প যাতে দরকার হয় সৃষ্টিশীলতা এবং সময়, অর্থ ও শক্তির যথাযথ ব্যবহার। শিশু-কিশোরদের জন্য বিনোদন ও বিশ্রামের সময়গুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো অভিভাবকদের দায়িত্ব।

টেলিভিশন ও কম্পিউটার গেইমের পেছনে অপরিকল্পিতভাবে যেন শিশু-কিশোরদের সময় ব্যয় করা না হয়। সহিংসতায় ভরা কম্পিউটার গেইম সমাজে সহিংসতা ছড়ানোর সহায়ক। আজকাল কেবল শিশু-কিশোররা নয় এমনকি বড়রাও তাদের মূল্যবান সময়ের এক বড় অংশকে অপরিকল্পিভাবে নষ্ট করছেন টেলিভিশন, ইন্টারনেট ও কম্পিউটারের পেছনে। তবে বিষয়টি শিশু-কিশোরদের মন ও শরীরের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকারক। তাই অভিভাবকরা ছাড়াও এইসব মাধ্যমের নিয়ন্ত্রক, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোকে এ বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক ও গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে হবে।

শিশুরা জন্মের পর থেকেই টেলিভিশনের মুখোমুখি হচ্ছে। তবে ছয় বছরের পর থেকে তারা টেলিভিশনের নিয়মিত দর্শক হয়ে ওঠে।  দশ বছর বয়স পর্যন্ত টেলিভিশন তাদের ওপর বিস্ময়কর ধরনের কর্তৃত্ব ও প্রভাব রেখে থাকে। অন্য কথায় শিশু-কিশোরদের সামাজিক জীবন ও ব্যক্তিগত আচরণ এবং ভবিষ্যত জীবনের ওপরও টেলিভিশনের প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক। অন্য কোনো মিডিয়া বাছাই করার ক্ষেত্রেও উৎস বা ভিত্তিমূলের কাজ করে টেলিভিশন। টেলিভিশন বয়স্কদের জন্য মূলত বিনোদনের মাধ্যম হলেও শিশু-কিশোরদের জন্য কেবলই বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটা তাদের জন্য পারিপার্শ্বিক জীবনকে বোঝার ও পর্যবেক্ষণেরও মাধ্যম।

বর্তমান যুগে টেলিভিশন থেকে শিশু-কিশোরদের পুরোপুরি দূরে রাখা সম্ভব নয়।

অবশ্য শিশু-কিশোরদের টেলিভিশন দেখার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ অভিভাবকের অন্যতম দায়িত্ব।

বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই মনে করেন তিন বছরের কম বয়সী শিশুকে কখনও কম্পিউটার গেইম ও ভিডিও গেইমের ধারেকাছেও নেয়া উচিত নয়। বরং তাদেরকে যথাসম্ভব শরীরের স্পর্শের মাধ্যমে অনুভবযোগ্য খেলনা বা বাস্তব খেলনার নানা বিনোদনে মশগুল রাখতে হবে। মোট কথা ভার্চুয়াল জগত ও ইন্টারনেট থেকে তাদের দূরে রাখতে হবে।  ৫ বছরেরও কম বয়সের শিশু যদি এসবের নাগাল পায় ও এসবে অভ্যস্ত হয় তাহলে তাদের ওপর এক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। 

এক্ষেত্রে বাবা মা বা অভিভাবকদের দায়িত্ব হল শিশু-কিশোরদেরকে তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত অনুষ্ঠানগুলো দেখতে দেয়া। কখনও কখনও অভিভাবকদের উচিত তাদের শিশু বা কিশোরদের সঙ্গে বসে ওইসব অনুষ্ঠান দেখা এবং কোনো স্পর্শকাতরতা সৃষ্টি না করেই ওইসব ভিডিও বা ফিল্মের নানা অংশের সমালোচনা করা। ফলে শিশু-কিশোররা বুঝতে পারবে যে এসব ছায়াছবি ত্রুটিমুক্ত নয় এবং এইসব গেইম বা ভিডিও'র নায়করা কল্পিত চরিত্র মাত্র ও তারা আদর্শ হতে পারে না মানুষের জন্য।

শিশু-কিশোররা কখন ও কোন্‌ সময় টেলিভিশন বা গেইম দেখতে পারবে তা ঠিক করে দেয়া অভিভাবকদের দায়িত্ব। শিশু-কিশোররা অভিভাবকদের মাধ্যমে নির্ধারিত এ সংক্রান্ত ঘরোয়া নিয়ম-কানুন মেনে চলছে কিনা ও অবসর সময়ে তারা কি করছে তাও লক্ষ্য রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন শিশু-কিশোরদেরকে বয়সের তারতম্য অনুযায়ী দৈনিক এক থেকে বড় জোর দুই ঘন্টার জন্য কার্টুন, গেইম বা ফিল্ম ও ইন্টারনেট এসব দেখার সুযোগ দেয়া যেতে পারে। তারা যদি প্রতিদিন এসব নিয়ে ৪৫ মিনিট ব্যস্ত থাকে ও এরপর শরীরকে সক্রিয় রাখার মত চলাফেরা বা শরীর চর্চা করে তাহলে তাতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু তারা যদি ঘণ্টার পর ঘণ্টা গেইম, ইন্টারনেট ও ফিল্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের এই আসক্তি দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে।  এ ধরনের আসক্তি শিশু-কিশোরদের শরীর-চর্চা ও সামাজিক যোগাযোগের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি তা তাদেরকে অনৈতিক ও সহিংস নানা বিষয়েরও মুখোমুখি করতে পারে। এ ধরনের আসিক্ত নানা অনাচার ও এমনকি পরিবারের বন্ধনকেও বিপন্ন করতে পারে।

খুব বেশি টেলিভিশন দেখা শিশুদের মধ্যে মানসিক সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে এবং তাদেরকে নানা ক্ষেত্রে উদাসীন ও সহিংস করে তুলতে পারে।  শিশু কখনও এমন অবস্থার শিকার হলে তাদেরকে পরীক্ষামূলকভাবে কিছুকাল টেলিভিশন বা ভিডিও গেইম বা কার্টুন এসব থেকে দূরে রাখতে হবে।   শিশু-কিশোরদের মিডিয়া-আসক্তি দূর করতে হলে তাকে বিকল্প কিছু চিত্তাকর্ষক ও শিক্ষণীয় নতুন নতুন খেলাধুলা, পারিবারিক  ও সামাজিক বিনোদনে মগ্ন করতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে মিডিয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরিয়ে আনতে হবে যাতে তার মূল পড়াশুনা ও অন্য জরুরি বিষয়গুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

মোট কথা মিডিয়াগুলো যেন শিশুর জন্য দানবীয় না হয়ে ওঠে এবং এর ভালো দিকগুলো থেকেই যেন শিশু-কিশোররা  যেন নিজ জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ার সুযোগ পায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে অভিভাবককে। আর এ জন্যই দরকার পরিকল্পনা, কৌশল ও নিয়ন্ত্রণ। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/৩১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ