আগস্ট ১৪, ২০২১ ১৫:৪৬ Asia/Dhaka

গত পর্বে আমরা শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা প্রসঙ্গে ভিডিও গেম বা কম্পিউটার গেমের ইতিবাচক ও ক্ষতিকর নানা দিক সম্পর্কে কথা বলেছি। আজ আমরা আদর্শ মানুষ বা সন্তান গড়ার ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের নজরদারির গুরুত্ব সম্পর্কে কথা বলব।

ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তান-সন্ততি হল বাবা-মায়ের কাছে খোদায়ি আমানত। তাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেয়াসহ সৌভাগ্যের পথ দেখিয়ে দেয়া এবং নানা ধরনের নিরাপত্তা দেয়া বাবা-মায়ের দায়িত্ব। পবিত্র কুরআনের সুরা তাহরিমের ষষ্ঠ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, হে মুমিনরা! তোমরা নিজেকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর,- এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয় পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে রক্ষা করতে বলা বলতে এখানে তাদেরকে সঠিক পথের শিক্ষা দেয়া ও সব ধরনের বিচ্যুতি ও অশালীনতা থেকে রক্ষা করাকে বোঝানো হয়েছে।  সুস্থ ও পবিত্র পরিবারে সন্তানের প্রশিক্ষণে সঠিক নীতিমালা মেনে চলা হয়। এ ধরনের পরিবারে বাবা-মা সন্তানের ওপর কখনও প্রত্যক্ষ ও কখনওবা পরোক্ষ নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ রাখেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ তাদের চিন্তার স্বাধীনতার কোনো ক্ষতি করে না।

অন্য কথায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিশেষ করে সন্তানদের সঙ্গে বাবা-মায়ের সম্পর্ক হতে হবে ভারসাম্যপূর্ণ। যেসব ক্ষেত্রে কড়া নিয়ন্ত্রণ বা কঠোর আচরণের দরকার নেই সেসব ক্ষেত্রেও কঠোর আচরণ করা হলে তা সন্তানের উন্নতির ব্যাঘাত ঘটাবে এবং এর ফলে তারা কখনওবা পূর্ণতার পথে না গিয়ে বিচ্যুতও হতে পারে। আবার সন্তানদেরকে লাগামহীন স্বাধীনতাও দেয়া উচিত নয়।  শিশু ও কিশোর সন্তানদেরকে যা-খুশি তা করার স্বাধীনতা দিলে তারা বিপথে চলে যেতে পারে। আবার তাদের সঙ্গে অত্যন্ত কঠোর বা স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ করা হলে তখন তারা বাবা-মায়ের মোকাবেলায় বিদ্রোহী হয়ে উঠবে। সন্তানদের মানসিক কাঠামোর দিকে নজর রেখে সময়োপযোগী নজরদারি ও যত্নশীলতার মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ ও দয়ার্দ্র পরিবেশেই তাদেরকে সুশিক্ষিত করা সম্ভব।

শিশু-কিশোরদের জন্য এমনসব শিক্ষণীয় খেলা বাছাই করা উচিত যাতে এসব খেলার কারণে তাদের শরীর ও মন ভালো থাকার পাশাপাশি তারা অনেক শিক্ষণীয় বিষয়ও আয়ত্ত্ব করতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে নানা ধরনের খেলার মধ্যে কোনো বিশেষ খেলা তাদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়। কারণ তা করা হলে ওই শিশু-কিশোর সন্তান শিগগিরই আত্মবিশ্বাস হারাতে থাকবে। তাই তাদের জন্য খেলনা বা খেলাধুলা বাছাই করার ক্ষেত্রে পছন্দের স্বাধীনতা দেয়া উচিত। শিশু-কিশোরদের পছন্দের খেলাধুলায় বাবা-মায়েরাও শরিক হতে পারেন বা কখনও কখনও তাদেরও শরিক হওয়া উচিত।

মহানবীর (সা) মায়ের জীবনী থেকে জানা যায়, হযরত আমেনা যখন তাঁর সাত বছর বয়স্ক শিশু সন্তান মুহাম্মাদকে নিয়ে নিজের স্বামী হযরত আবদুল্লাহর কবর জিয়ারত করতে মদিনায় আসেন তখন তিনি শিশু মুহাম্মাদকে মাত্র একবার তাঁর বাবার কবর জিয়ারত করতে আনেন।  অন্য সময়গুলোতে তিনি শিশু মুহাম্মাদকে স্বাধীনভাবে রেখেছেন। ফলে তিনি নানার বাড়িতে মামার সন্তানদের সঙ্গে খেলাধুলা করতেন এবং সেখানকার মাঠ ও প্রান্তরসহ প্রাকৃতিক পরিবেশে বিচরণ করে আনন্দ পেতেন।

ইন্টারনেটে খেলাধুলার জগত আজকাল অত্যন্ত বিপজ্জনক। নানা ধরনের ভিডিও গেম ও কম্পিউটার গেম সম্পর্কে বাবা-মাকে ধারণা রাখতে হবে। কোন্‌ খেলাগুলো বিপজ্জনক ও কোন্‌ কোন্ খেলার বিশেষ কিছু দিক ভালো ও অন্য দিকগুলো বিপজ্জনক-এসব সম্পর্কে আগেই বাবা-মাকে জানতে হবে এবং এরই আলোকে শিশু-কিশোরদের এ সংক্রান্ত খেলাধুলার ওপর নজরদারি করতে হবে। তা না হলে শিশু-কিশোররা বাবা-মায়ের কথাকে গুরুত্ব দিবে না। এটা মনে রাখা দরকার সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো ইন্টারনেটের নানা মাধ্যম ও কম্পিউটার গেমের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালানোর চেষ্টা করছে।

শিশু-কিশোররা মোবাইল, ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটার যা-ই ব্যবহার করুক না কেন তা যেন ঘরের প্রকাশ্য স্থানে রেখে ব্যবহার করে সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে বাবা-মাকে। অশালীন ও অনৈতিক দৃশ্যের ব্যাপারে তাদেরকে খুব যত্ন সহকারে ও স্নেহভরে সতর্ক করতে হবে এবং এসবের মন্দ পরিণতি বা  ধ্বংসাত্মক পরিণাম তাদেরকে বোঝাতে হবে খুব সুন্দর ও কার্যকর যুক্তি দেখিয়ে। এক্ষেত্রে বাবা-মায়ের কর্কশ ও রুক্ষ আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তাতে ছেলেমেয়েরা বেপরোয়া হয়ে উঠবে।

কম্পিউটার বা মোবাইলে যাতে কোনো অশালীন দৃশ্য না আসে সে ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা বা পাসওয়ার্ডের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। যেসব গেম বা ভিডিও শিশু-কিশোরদের উপযোগী নয় এবং যা কেবল প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সেসব থেকে শিশু কিশোরদের দূরে রাখতে হবে।  কোনো ধরনের কম্পিউটার গেমে যাতে শিশু-কিশোররা আসক্ত হয়ে না পড়ে সে জন্য তাদেরকে আকর্ষণীয় অন্য কোনো বিনোদনের দিকে বা শরীর চর্চামূলক খেলার দিকে আকৃষ্ট করাও বাবা-মায়ের দায়িত্ব।

শিশু-কিশোরদেরকে কম্পিউটার বা ইন্টারনেট জগতের নানা ক্ষতিকর দিক থেকে মুক্ত রাখার অন্যতম কৌশল হল তাদের গেমে বাবা-মায়েদেরও শরিক হওয়া। এতে শিশু-কিশোররা যেমন একদিকে বাবা-মাকে খেলার সঙ্গী হিসেবে পেয়ে আনন্দ অনুভব করবে তেমনি তারা কোনো অনুপযুক্ত আইটেমে প্রবেশ করছে কিনা সেটাও দেখার তথা নজরদারির সুযোগ থাকবে বাবা-মায়ের জন্য। মনোবিশেষজ্ঞরা বলেন, বাবা-মা যখন শিশু-কিশোরদের খেলায় অংশ নিবেন তখন তারাও শিশুসুলভ বা কৈশোরসুলভ মন নিয়েই যেন তাদের সঙ্গী হন যাতে কোমলমতি শিশুরা বাবা-মাকে খেলার সঙ্গী হিসেবে পেতে বা ভাবতে অস্বস্তি অনুভব না করে।

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে শিশু-কিশোরদেরকে সঠিকভাবে প্রতিপালনের ও সুশিক্ষিত করার সুযোগ দিন।(আমিন)।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ