ইসলামের অনন্য কাণ্ডারি ইমাম মুসা কাযিম (আ)
https://parstoday.ir/bn/radio/religion_islam-i125288-ইসলামের_অনন্য_কাণ্ডারি_ইমাম_মুসা_কাযিম_(আ)
হযরত ইমাম মুসা কাযিম (আ.) ছিলেন ইসলামের অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ সময়ে প্রকৃত ইসলামের কাণ্ডারি ও আদর্শ মহামানব। মহানবীর আহলে বাইতের এই সদস্য ইমাম মুসা কাযিম (আ.)'র পবিত্র জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে মহানবী (সা) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইত বিশেষ করে ইমাম মুসা কাযিমের শানে--
(last modified 2025-07-29T12:16:04+00:00 )
জুলাই ০৮, ২০২৩ ১৬:০৬ Asia/Dhaka

হযরত ইমাম মুসা কাযিম (আ.) ছিলেন ইসলামের অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ সময়ে প্রকৃত ইসলামের কাণ্ডারি ও আদর্শ মহামানব। মহানবীর আহলে বাইতের এই সদস্য ইমাম মুসা কাযিম (আ.)'র পবিত্র জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে মহানবী (সা) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইত বিশেষ করে ইমাম মুসা কাযিমের শানে--

জানাচ্ছি অশেষ দরুদ ও সালাম এবং সবাইকে জানাচ্ছি মুবারকবাদ। ইমাম মুসা ইবনে জাফর আল কাযিম (আ.)'র জন্ম হয়েছিল ১২৭ বা ১২৮ হিজরির ২০ জিলহজ মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী ‘আবওয়া’এলাকায়। ইমাম মুসা কাযিমের মায়ের নাম ছিল হামিদা আল বারবারিয়্যাহ।

পিতা বিশ্ববিশ্রুত মনীষী হযরত ইমাম জাফর আস সাদিকের (আ.) শাহাদতের পর ২০ বছর বয়সে ঐশী ইমামত লাভ করেন মুসা কাযিম (আ.)। বাবার মত তাঁকেও বিষ প্রয়োগে শহীদ করেছিল খলিফা নামধারী তৎকালীন মুসলিম শাসক। আব্বাসীয় জালিম শাসকদের মধ্যে মনসুর, মাহদি, হাদি ও হারুন ছিল তাঁর সমসাময়িক।

রাগ নিয়ন্ত্রণে অশেষ ধৈর্যের জন্যই এই মহান ইমামকে বল হত কাযিম। তিনি ছিলেন পিতা ইমাম জাফর সাদিক (আ.)'র মতই নির্ভীক ও ন্যায়পরায়ণ এবং জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার। পিতার মহৎ গুণগুলোর সবই অর্জন করেছিলেন ইমাম মুসা কাযিম (আ.)। তাঁর ৩৫ বছরের ইমামতির জীবনের প্রায় পুরোটাই কেটেছে কারাগারে ও নির্বাসনে।

ইমাম মুসা কাযিম (আ.) আব্বাসীয় শাসকদের শত অত্যাচার ও নিপীড়ন এবং কারাদণ্ড ও নির্বাসন সত্ত্বেও ইসলামের সঠিক শিক্ষা প্রচারের আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।

এ আন্দোলনের যে বিশেষ ধারা তাঁর মহান পিতা ইমাম জাফর সাদিক (আ.) শুরু করেছিলেন তা পুত্রের প্রজ্ঞা, কৌশল ও ত্যাগ-তিতিক্ষাপূর্ণ অধ্যবসায়ের সুবাদে হয়েছিল আরও বিকশিত । বিশেষ করে পবিত্র কুরআনের প্রকৃত তাফসির ও হাদীস বর্ণনা তাঁর মাধ্যমে আরও জোরদার হয়। ইমাম তাঁর অনুসারীদেরকে জ্ঞান অর্জনের জন্য অশেষ উৎসাহ দিতেন। তিনি বলতেন, জ্ঞান মৃত আত্মাকে জীবিত করে যেমনটি বৃষ্টি জীবিত করে মৃত ভূমিকে।

আব্বাসীয় শাসকদের বিভ্রান্ত ও দুর্নীতিগ্রস্ত চাল-চলন যে ইসলামের সম্পূর্ণ বিপরীত ধারা- পিতার মতই তা তুলে ধরেছিলেন ইমাম মুসা কাযিম (আ.) । তাই আব্বাসীয় শাসকরা চাইতেন না জনগণের সঙ্গে ইমামের যোগাযোগ বৃদ্ধি পাক। তারা জনগণের ওপর নবীবংশের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকানোর জন্য যে কোনো ধরনের প্রতারণা, প্রচারণা, বর্বরতা ও নৃশংসতার আশ্রয় নিতে দ্বিধা বোধ করত না।

হযরত ইমাম মুসা কাযিম (আ.) তাঁর বন্দী অবস্থার নিকৃষ্টতম সময়েও বিচক্ষণতা, বীরত্ব এবং সংগ্রামী ও আপোষহীন মনোভাব ত্যাগ করেননি। ইমাম কাযিমের আধ্যাত্মিক খ্যাতি, জ্বালাময়ী বক্তব্য ও দৃঢ় মনোবল ছিল আব্বাসীয় শাসক হারুনের কাছে অসহনীয়। অনুসারীদের সঙ্গে তাঁর সার্বক্ষণিক যোগাযোগের কথাও হারুন গোয়েন্দা বাহিনীর মাধ্যমে জানতে পেরেছিল। হারুন বুঝতে পেরেছিল যে ইমাম যখনই উপযুক্ত সুযোগ পাবেন তখনই স্বয়ং বিপ্লব করবেন কিংবা তাঁর সঙ্গীদেরকে আন্দোলনের নির্দেশ দেবেন, ফলে তার হুকুমতের পতন হবে অনিবার্য। তাই হারুন বিষ প্রয়োগ করে আপোষহীন ৫৫ বছর বয়স্ক এই ইমামকে শহীদ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ইমাম মুসা কাযিম (আ.) -কে বসরায় ঈসা ইবনে জাফর নামক এক জল্লাদের কারাগারে এক বছর বন্দী রাখা হয়। সেখানে ইমামের উত্তম চরিত্র জাফরের ওপর এমন প্রভাব রাখে যে ওই জল্লাদ হারুনকে জানিয়ে দেয় যে: তাঁকে আমার কাছ থেকে ফিরিয়ে নাও, নতুবা আমি তাঁকে মুক্ত করে দেব। এরপর হারুনের নির্দেশে ইমাম কাযিম (আ.)-কে বাগদাদে ফাযল ইবনে রাবির কাছে কারারুদ্ধ করা হয়। এর কিছু দিন পর ফাযল ইবনে ইয়াহিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয় এই মহান ইমামকে। কয়েক দিন পর সেখান থেকেও তাঁকে পাঠানো হয় কুখ্যাত জল্লাদ সানদি ইবনে শাহাকের কারাগারে।

ইমাম কাযিম (আ.)-কে এক কারাগার থেকে বার বার অন্য কারাগারে স্থানান্তরের কারণ ছিল এটাই যে হারুন প্রতিবারই কারা প্রহরীকে নির্দেশ দিত ইমামকে গোপনে হত্যা করার। কিন্তু তাদের কেউই রাজি হয়নি এ কাজ করতে। অবশেষে সানদি ইবনে শাহাক ইমামকে বিষ প্রয়োগ করতে রাজি হয়। বিষ প্রয়োগের তিন দিন পর ১৮৩ হিজরির ২৫ রজব তিনি শাহাদত বরণ করেন।

হারুন ইমামকে শহীদ করার আগে একদল গণ্যমান্য ব্যক্তিকে কারাগারে উপস্থিত করেছিল যাতে তারা সাক্ষ্য দেয় যে ইমাম কাযিম (আ.) স্বাভাবিকভাবেই মারা গেছেন। এভাবে সে আব্বাসীয় শাসনযন্ত্রকে ইমাম (আ.) হত্যার দায়িত্বভার থেকে মুক্ত রাখতে ও ইমামের অনুসারীদের সম্ভাব্য আন্দোলন প্রতিরোধ করতে চেয়েছিল। কিন্তু ইমামের প্রজ্ঞা সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেয়। কারণ, ওই সাক্ষীরা যখন ইমামের দিকে তাকিয়েছিল তখন তিনি বিষের তীব্রতা ও বিপন্ন অবস্থা সত্ত্বেও তাদেরকে বললেন: আমাকে নয়টি বিষযুক্ত খুরমা দিয়ে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে, আগামীকাল আমার শরীর সবুজ হয়ে যাবে এবং তার পরদিন আমি ইহজগত থেকে বিদায় নেব।

ইমাম মুসা কাযিম (আ.)’র মহানুভবতা, প্রেমময় ইবাদত, নম্রতা, সহিষ্ণুতা, তত্ত্বীয় ও জ্ঞানগর্ভ বিতর্কে ইমামের ঐশী জ্ঞান এবং দানশীলতা ছিল শত্রুদের কাছেও সুবিদিত। তত্ত্বীয় ও জ্ঞানগর্ভ বিতর্কে ইমাম কাযিমের ঐশী জ্ঞান, বিস্তৃত চিন্তাশক্তি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর পরিপূর্ণ দখল ফুটে উঠত। তাঁর প্রেমময় ইবাদত ছিল সাধকদের জন্য আদর্শ। এ মহান ইমাম এত সুন্দর ও সুললিত কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করতেন যে, যে কেউ তা শুনে কেঁদে ফেলত।

শ্রোতা ভাইবোনেরা, ইমাম মুসা কাযিম (আ.)’র প্রতি অজস্র সালাম ও দরুদ পাঠিয়ে এবং সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে শেষ করব আজকের এই আলোচনা।

তবে তাঁর আগে তুলে ধরছি ইমাম মুসা কাযিম (আ.)’র ক'টি বাণী:  ১. খোদা পরিচিতির পরই আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বোত্তম পন্থা হল নামাজ, বাবা মায়ের প্রতি সদাচরণ এবং হিংসা, স্বেচ্ছাচার, অহংকার ও দাম্ভিকতা পরিহার করা। ২.বিনয়ের অর্থ হল, মানুষের সঙ্গে সেরকম আচরণ কর যেরূপ তুমি মানুষের কাছে আশা কর।৩. যদি কেউ পার্থিব জীবনের প্রতি আকৃষ্ট হয়, তবে তার হৃদয় থেকে আখিরাতের ভয় বিদায় নেয়।#

পার্সটুডে/ এমএএইচ/৩০

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন