একই দিনে মহানবীর (সা) ওফাত ও ইমাম হাসানের (আ.) শাহাদাত-বার্ষিকী
(last modified Tue, 12 Sep 2023 06:05:12 GMT )
সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩ ১২:০৫ Asia/Dhaka

ঐতিহাসিক ২৮ সফর মহানবীর (সা) ওফাত-বার্ষিকী ও তাঁর বড় নাতি হযরত ইমাম হাসানের (আ) শাহাদাত-বার্ষিকী। এ উপলক্ষে গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি সবাইকে এবং এ দুই মহামানবের প্রতি জানাচ্ছি অশেষ দরুদ ও সালাম।

সৌন্দর্যের সেরা নন্দন কাননে প্রস্ফুটিত সেরা ফুল

পরম প্রিয় প্রভুর প্রিয়তম প্রেমাস্পদ মুহাম্মাদুর রাসুল (সা)
বেহেশতি উদ্যানের অনন্য শোভা তাঁরই বংশ-কুল

যাদের নূরে স্বর্গ মর্ত উজালা প্রেম-পরশে ত্রিভুবন ব্যাকুল 

সব মাখলুকাত গ্রহতারা অণু-পরমাণু তাঁদের প্রশংসায় আকুল

পড়ে দরুদ প্রেমভরে সমস্বরে মধুর সুরে কাঁপিয়ে ইথার


আহা কি মধুর স্মরণে আনা সেইসব চির-পবিত্র নাম

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম!

প্রশান্তিময় সেইসব নাম বার বার যতই স্মরি ততই দূর হয় মনের আধার!

২৮ সফর  সৃষ্টিকুলের সবচেয়ে শোকাবহ দিন। কারণ দশম হিজরির  এই দিনে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও মানবজাতির মুক্তির শ্রেষ্ঠ দিশারী বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)। শুধু তাই নয় চল্লিশ বছর পর ৫০ হিজরির একই দিনে শাহাদত বরণ করেন মহানবীর প্রথম নাতি ও তাঁরই আদর্শের অন্যতম প্রধান সুরক্ষক হযরত ইমাম হাসান (আ)। চারিত্রিক মাধুর্য, নৈতিকতা, মানবীয় মূল্যবোধ, চিন্তাগত দূরদর্শিতা, রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক ও নৈতিক ক্ষেত্রসহ জীবনের সবক্ষেত্রে বিশ্বজনীন এবং  শ্রেষ্ঠ খোদায়ি আদর্শের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত ছিলেন মহানবী (সা)। তিনি ছিলেন শান্তি, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও মানবীয় ঐক্যের শ্রেষ্ঠ রূপকার। মানবজাতির নৈতিক উন্নয়নসহ সার্বিক উন্নয়নকে পরিপূর্ণতা দিতেই ঘটেছিল তাঁর আবির্ভাব। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড়, সফল ও প্রভাবশালী মহামানব। বিশ্বের সবচেয়ে অধঃপতিত ও পশ্চাৎপদ সমাজ থেকে সবচেয়ে উন্নত সভ্যতার উন্মেষ ঘটানোর কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তিনি।

বিশ্বনবী (সা.)'র আবির্ভাব ঘটেছিল মানব জাতির এক চরম দুঃসময়ে যখন বিশ্বজুড়ে বিরাজ করছিল হানাহানি, জাতিগত সংঘাত, কুসংস্কার, অনাচার এবং জুলুম ও বৈষম্যের দৌরাত্ম্য। নারী জাতির ছিল না কোনো সম্মান। শির্ক ও কুফরির অন্ধকারে গোটা পৃথিবী হয়ে পড়েছিল আচ্ছন্ন। কিন্তু বিশ্বনবী (সা.) তাঁর শুভ জন্মের ৪০ বছর পর নবুওতি মিশন তথা ইসলামের বৈপ্লবিক নানা বাণী নিয়ে অজ্ঞ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং সব ধরনের উন্নত নৈতিক গুণ-বিবর্জিত মূর্তি পূজারী বর্বর আরব জাতির মধ্যে এমন পরিবর্তন সৃষ্টি করেন যে তারা মানব জাতিকে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও নৈতিকতাসহ নানা ক্ষেত্রে সবচেয়ে উন্নত সভ্যতা উপহার দিতে সক্ষম হয়। 

ইসলামের দৃষ্টিতে মহান আল্লাহর পবিত্র অস্তিত্ব ছাড়া বিশ্বনবীর (সা) চেয়ে বড় ও মহীয়ান আর কিছুই নেই। বিশ্বনবীর শ্রেষ্ঠ চরিত্র ও শ্রেষ্ঠ সংগ্রামী জীবন ছাড়া শ্রেষ্ঠ ধর্ম  তথা শ্রেষ্ঠ খোদায়ী বিধান ইসলামের বাস্তবায়ন কল্পনাও করা যেত না।  পবিত্র কুরআনের ভাষায় জীবনে চলার পথ, মত ও স্বভাব বা আচরণের দিক থেকে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) ছিলেন শ্রেষ্ঠ আদর্শ বা উসওয়াতুন হাসানাহ। জীবনের সব ক্ষেত্রে এবং কখন কোথায় কী করতে হবে তা জানার শ্রেষ্ঠ উৎস হলেন মহানবী (সা)। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, আইনি ও রাষ্ট্রীয় জীবনসহ জীবনের সব ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।  কথায় ও কাজে সবক্ষেত্রে বিশ্বনবী (সা)-কে অনুসরণ করাই হবে একজন প্রকৃত মুসলমানের জন্য ঈমানের দাবি। তা না হলে আল্লাহর সর্বশেষ রাসুলের রেসালতের প্রতি বিশ্বাস রাখার দাবি করাটা হবে প্রতারণা মাত্র। 

কেউ যদি মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ হতে চান তাহলে তাঁর জন্য পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত মহান আল্লাহর যে পরামর্শটি হৃদয়ে গেঁথে নেয়া উচিত তা হল: ‘হে রাসুল! আপনি তাদের বলুন, যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার তথা আল্লাহর শেষ রাসুলের অনুসরণ কর যাতে আল্লাহও তোমাদের ভালবাসেন।’ মহানবী (সা) চেয়েছিলেন তাঁর আশপাশের সব মানুষকে তাঁরই আদর্শের ধারায় শ্রেষ্ঠ বা পূর্ণাঙ্গ মহামানব হিসেবে গড়ে তুলতে। কিন্তু সবাই তাঁর দাওয়াতকে গ্রহণ করেনি। অনেকেই মুশরিক ও কাফিরই থেকে গেছেন। কেউ কেউ নামে মুসলমান হলেও বাস্তবে  ছিলেন মুনাফিক। কিন্তু বিশ্বনবীর আহলে বাইতের সদস্যরা ছিলেন তাঁরই কাছাকাছি পর্যায়ের আদর্শ মহামানব যাঁদের নিষ্পাপ হওয়ার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে পবিত্র কুরআনেই। 
তাই মহানবীর (সা) আদর্শ ও পবিত্র কুরআনকে ভালোভাবে বুঝতে হলে জানতে হবে পবিত্র আহলে বাইতের জীবন-ধারাকে। বিশ্বনবীর আহলে বাইতের আদর্শকে ছেড়ে দেয়ার কারণেই মুসলমানদের মধ্যে নানা বিভক্তি এবং অনৈক্য সৃষ্টি হয়েছিল। (বাজনা)
 
সুরা আহজাবের ৫৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, "আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরুদ পাঠান। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম পাঠাও।"
এ থেকে বোঝা যায় মহানবী (সা.) মানব জাতির জন্য মহান আল্লাহর সবচেয়ে বড় উপহার। নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে অভ্যস্ত কোনো অমুসলিম পণ্ডিতও কখনও বিশ্বনবী (সা.)'র অতুল ব্যক্তিত্বের অনন্য প্রভাব, মহত্তম মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠ গুণগুলোর কথা অস্বীকার করতে সক্ষম নন। কারণ, মানব সভ্যতার সবচেয়ে সমৃদ্ধ পর্যায়গুলোর প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বনবী (সা.)'র অতুলনীয় মহত্ত্ব ও গুণের ছাপ স্পষ্ট। সুরা আহজাবের ৪৫ ও ৪৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,  "হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়ক ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।"

বিশ্বনবীর(সা.) মধ্যে সব নবী-রাসূল ও মহান আল্লাহর ওলিগণের গুণের সমাবেশ ঘটেছে, তিনি  উচ্চতর সেইসব গুণাবলীর পরিপূর্ণ ও পরিপক্ব সংস্করণ-যেসব গুণ যুগে যুগে নবী-রাসূল ও আউলিয়ার মধ্যে দেখা গেছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির ভাষায়, " যখন মহানবী (সা.)'র পবিত্র নাম মুখে আনি, এর অর্থ যেন হযরত ইব্রাহিম (আ.), নুহ (আ.), মুসা (আ.), হযরত ঈসা (আ.), হযরত লোকমান (আ.) এবং সব সালেহ বা সৎ ও  খ্যাতনামা মহৎ  ব্যক্তিদের ব্যক্তিত্ব  বিশ্বনবী (সা.)'র মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে সমন্বিত, প্রতিফলিত ও প্রকাশিত হয়েছে।" 

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (র) বলেছেন,
 'মহানবীর আগমনের উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেয়া। তিনি মানুষের জন্য কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করতেন ও তাদের সংশোধন করতেন এবং পবিত্র করতেন। তাদের আত্মাগুলোকে পবিত্র করতেন। মানুষের সুশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য তিনি সবার চেয়ে বেশি কষ্ট করেছেন। আর তা করেছেন মজলুম মানুষকে জালিমদের হাত থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য। তাকে কত বেশি গালি দেয়া হয়েছে ও অপবাদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারে বিরত হননি।'

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বিশ্বনবী (সা)’র আদর্শের প্রকৃত অনুসরণ সম্পর্কে বলেছেন, 
‘মহানবীর রিসালাতের লক্ষ্য ছিল মানুষের মুক্তি সাধন। ইসলাম ও মহানবীর (সা) পক্ষ থেকে মানুষের জন্য রোগমুক্তির যে প্রেসক্রিপশন রয়ে গেছে তা সব যুগে মানুষকে মুক্ত করে অজ্ঞতা থেকে। এই নির্দেশিকা দিয়ে মোকাবেলা করা যায় জুলুম, বৈষম্য, দুর্বলের ওপর সবলের শোষণ এবং অন্য সব যন্ত্রণা যার শিকার মানবজাতি সৃষ্টির শুরু থেকে এ পর্যন্ত হয়েছে ও হচ্ছে। এই নির্দেশিকা যদি বাস্তবে মেনে চলা হয় তাহলেই সুফল আসবে। ইরানের বিপ্লবী মুসলিম জাতির উত্থানের প্রেক্ষাপটে বিশ্বের মুসলমানরাও দিকে দিকে জেগে উঠে ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাগুতি ও জালিম শক্তিগুলোকে পরাজিত করে আবারও নতুন ইসলামী সভ্যতা গড়ে তুলবে সেই প্রত্যাশা নিয়ে আসুন আমরা নবীজির প্রত্যেক উম্মত নিজ নিজ শক্তি সামর্থ্যের আলোকে মহানবীর পরিপূর্ণ অনুসরণের ঈমানি ও দীনী দায়িত্ব পালনে সক্রিয় হই যাতে পরকালে মহান আল্লাহ ও তাঁর সর্বশেষ রাসুল আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হন। (আমিন)

এ পর্যায়ে আমরা কথা বলব ইমাম হাসান (আ)'র শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে। ইমাম হাসান জন্ম গ্রহণ করেছিলেন তৃতীয় হিজরির ১৫ ই রমজানে।  বিশ্বনবী (সা.) মহান আল্লাহর নির্দেশে প্রিয় প্রথম নাতীর নাম রাখেন হাসান যার অর্থ অর্থ সবচেয়ে ভাল বা উত্তম, পছন্দনীয় ইত্যাদি। ইমাম হাসান (আ.)'র সাত বছর বয়স পর্যন্ত মহানবী (সা.) বেঁচে ছিলেন। রাসূল (সা.) বহুবার প্রিয় এই নাতিকে কাঁধে নিয়ে বলেছেন, “হে প্রভু, আমি ওকে ভালবাসি, আপনিও তাঁকে ভালবাসুন।“তিনি আরও বলতেন, “যারা হাসান ও হুসাইনকে ভালবাসবে তারা আমাকেই ভালবাসল। আর যারা এ দুজনের সঙ্গে শত্রুতা করবে তারা আমাকেই তাদের শত্রু হিসেবে গণ্য করল।”বিশ্বনবী (সা.) হাসান ও হুসাইন (আ.)-কে “বেহেশতের যুবকদের নেতা”ও “মুসলিম উম্মাহর দুই সুবাসিত ফুল”বলে উল্লেখ করেছেন এবং তিনি আরও বলেছেন, “আমার এই দুই নাতি উভয়ই মুসলমানদের ইমাম বা নেতা, তা তারা তাগুতি শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াক বা না দাঁড়াক।”

বিশ্বনবী (সা.) এই দুই নাতির শৈশবে তাঁদের সঙ্গে খেলতেন, তাদের বুকে চেপে ধরতেন, চুমু খেতেন এবং তাদের ঘ্রাণ নিতেন। তারা বিশ্বনবী (সা.)’র নামাজের ইমামতির সময়ও নানার গলায় বসে পড়লে নানা সিজদা থেকে উঠতেন না যতক্ষণ না তারা নিজেরাই উঠে যেতেন। বিশ্বনবী (সা.) ইমাম হাসান ও হুসাইনকে তাঁদের শৈশবেই অনেক চুক্তিপত্রের সাক্ষী হিসেবে মনোনীত করেছেন। মহানবী (সা.) নাজরানের খ্রিস্টানদের সঙ্গে মুবাহিলার সময়- অর্থাৎ যারা সত্য ধর্মের বিরোধী তারা  আল্লাহর অভিশাপে সপরিবারে ধ্বংস হবে - যৌথভাবে এমন ঘোষণা দেয়ার  চ্যালেঞ্জ গ্রহণের পর মহান আল্লাহর নির্দেশেই সঙ্গে নিয়েছিলেন হযরত ইমাম হাসান ও হুসাইন এবং ইমাম আলী (আ.) ও ফাতিমা (সালামুল্লাহি আলাইহা)-কে। আর সে সময়ই আলী (আ.)সহ নবী-পরিবারের এই সদস্যরা যে পবিত্র সে বিষয়ে কুরআনের আয়াত নাজেল হয়েছিল। 

ইমাম হাসান (আ.) ছিলেন তাঁর নানা ও পিতার অনুসারী এবং তিনি তাঁদের মতই অত্যাচারীদের সমালোচনা করতেন ও মজলুমদের সমর্থন দিতেন। তিনি জামাল ও সিফফিন যুদ্ধে পিতার পক্ষে অংশ নিয়ে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ.) নিজের ইন্তিকালের সময় ইমাম হাসান (আ.)-কে তার খেলাফতের উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেন। বিশ্বনবী (সা.)ই তা করার জন্য ইমাম আলী (আ.)-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন নিজের জীবদ্দশায়। কিন্তু মুয়াবিয়া ইমাম হাসানের বয়সের স্বল্পতার অজুহাত দেখিয়ে তাঁর নেতৃত্ব মেনে নেয়নি। এ অবস্থায় ইমাম হাসান মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে সেনা অভিযান শুরু করলে মুয়াবিয়া বিচিত্রময় নানা  অপকৌশল প্রয়োগ করে ইমামের শিবিরে ভাঙ্গন ঘটিয়ে ও তাঁর প্রধান সেনাপতিসহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিকে মীরজাফরের মত কিনে নিলে ইমাম যুদ্ধের প্রতি জনগণের আগ্রহহীনতা দেখে মুয়াবিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ-বিরতি করতে বাধ্য হন বেশ কয়েকটি ভালো শর্তের ভিত্তিতে। কিন্তু মুয়াবিয়া গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি শর্ত পালন করেনি। 

মুয়াবিয়া ইমাম হাসানের সঙ্গে করা চুক্তি পদদলিত করে তার নাপাক ও নোংরা পুত্র ইয়াজিদের জন্যে পরবর্তী শাসন কর্তৃত্ব পাকা-পোক্ত করতে ও জনগণকে নবী-পরিবারের নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত করতে কয়েক বার ইমাম হাসানকে হত্যার চেষ্টা চালায়। অবশেষে মুয়াবিয়ার ষড়যন্ত্রে বিষ প্রয়োগের শিকার হয়ে ইমাম হাসান (আ) পঞ্চাশ হিজরির সফর মাসের আটাশ তারিখে শাহাদাতের সুধা পান করে চির-নিদ্রায় শায়িত হন। তাঁকে জান্নাতুল বাকীর কবরস্থানে দাফন করা হয়। আল্লাহর অফুরন্ত দরুদ তাঁর উপর বর্ষিত হোক।
 
কেউ কেউ মনে করেন ইমাম হুসাইন ও ইমাম হাসান দুই ভিন্ন নীতির অনুসারী ছিলেন। কিন্তু কথাটা সত্য নয়। ইমামদের কর্মপদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য থাকলেও  তাঁদের বৈশিষ্ট্যে তফাত ছিল না। মুয়াবিয়ার বাহ্যিক ধার্মিকতার কারণে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার বৈধতাকে জনগণের সামনে স্পষ্ট করা ইমাম হাসান (আ)'র জন্য বেশ কঠিন ছিল। এ কারণে আমরা দেখি ইমাম হাসানের মৃত্যুর পর মুয়াবিয়া দশ বছর জীবিত থাকলেও ইমাম হুসাইনও (আ) তার বিরুদ্ধে আন্দোলনের আহ্বান জানাননি। এর বিপরীতে ইয়াজিদের অধার্মিকতা প্রকাশ্য রূপ নেয়ায় সে সময় ইমাম হাসান জীবিত থাকলে তিনিও ইমাম হুসাইনের মতই বিদ্রোহ করতেন।–

ইমাম হাসান (আ) ছিলেন খুবই দানশীল। তিনি জীবনে তিনবার তাঁর যা কিছু ছিল, এমন কি জুতো পর্যন্ত দু’অংশে ভাগ করে আল্লাহর পথে দান করে দেন। ইমাম হাসান (আ) ছিলেন ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রতীক।  এ মহান ইমাম অজু করার সময় আল্লাহর  ভয়ে কাঁপতেন। মৃত্যু ও কিয়ামতের কথা স্মরণে আসলে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশ হয়ে পড়তেন।  তিনি পদব্রজে আবার কখনো নগ্নপদে পঁচিশ বার হজ করেছেন।– সবাইকে আবারও গভীরতম শোক ও সমবেদনা জানিয়ে শেষ করছি আজকের এই শোকানুষ্ঠান।  #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।