ইসলামের দৃষ্টিতে রোগীর যত্ন নেয়া ও দেখাশোনার গুরুত্ব (পর্ব-৩)
(last modified Wed, 16 Sep 2020 10:30:00 GMT )
সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২০ ১৬:৩০ Asia/Dhaka

ইসলাম যেমন স্বাস্থ্য সুরক্ষার নীতিমালার ওপর জোর দেয় তেমনি রোগীদের ব্যাপারেও মানবিক ও দয়ার্দ্র দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। ইসলাম রোগীদের জন্য ধর্মীয় পালন দায়িত্ব সহজ অথবা অনেক ক্ষেত্রে মাফ করে দিয়েছে।

যেমন, রোগীকে জিহাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। মহানবী (সা) রোগীদের দেখতে যাওয়ার ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন।  রোগীদের দেখতে যাওয়ার সাওয়াব সম্পর্কেও আমরা আলোচনা শুনেছি। মহানবী (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি রোগী দেখতে ঘর থেকে বের হয় তার নিজ ঘরে ফিরে আসা পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য সাত কোটি (রূপক অর্থে, বাস্তবে অনেক বেশি সংখ্যা বোঝাতে) সাওয়াব লেখা হয় এবং একই পরিমাণে তার গোনাহও মাফ করা হয় ও মর্যাদার মাত্রাও সেভাবেই বাড়ে। আর একই সংখ্যক ফেরেশতা তার কবরে থাকবে এই নেক কাজের জন্য এবং তারা কিয়ামত পর্যন্ত এই ব্যক্তির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে। 
রোগীর দোয়া দ্রুত কবুল হয় বলে হাদিসে বর্ণনা রয়েছে। রোগীদের দেখতে যাওয়ার আদব-কায়দা সম্পর্কে ইসলামের বিধান ও  কিছু পরামর্শ আমরা জেনেছি গত পর্বের আলোচনায়। আজ এ বিষয়সহ প্রাসঙ্গিক আরও কিছু দিক সম্পর্কে কথা বলব।
রোগীদের ঘৃণা করতে নেই। একটি বর্ণনায় এসেছে একবার মহানবী (সা) যখন খাচ্ছিলেন এমন সময় গুটি বসন্তে আক্রান্ত এক ব্যক্তি প্রবেশ করল সেখানে। ওই রোগী যখনই কারো পাশে বসতে চাচ্ছিল তখনই উঠে যাচ্ছিল বসে থাকা ব্যক্তিরা। এ অবস্থায় মহানবী (সা) ওই রোগীকে নিজের পাশে বসালেন।     

রোগীর চাহিদা মেটানোর পুরস্কার সম্পর্কে মহানবী (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি রোগীর চাহিদা পূরণের জন্য চেষ্টা করবে ও রোগীর চাহিদা পূরণ করবে তার সব গোনাহ এমনভাবে মাফ হয়ে যাবে যেন মায়ের পেট থেকে সদ্য-ভূমিষ্ঠ। আনসারদের একজন মহানবীকে প্রশ্ন করলেন: হে রাসুলে খোদা (সা)! যদি রোগী আত্মীয় হয় তাহলেও কি? মহানবী (সা) বললেন: সবচেয়ে বড় পুরস্কারগুলোর অধিকারী তারাই যারা নিজ পরিবারের রোগীর চাহিদা পূরণের জন্য সচেষ্ট হয়। আর যে নিজ পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত বা নষ্ট করে এবং পরিবারের সঙ্গে নিজের বন্ধনকে ছিন্ন করে আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন তথা বিচার-দিবসে সৎকর্মশীলদের জন্য নির্ধারিত পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করবেন ও তাকে ধ্বংস করবেন। ...
মহানবী (সা) আরো বলেছেন, যে কোনো রোগীর চাহিদা পূরণের জন্য সচেষ্ট হবে এবং তার এ চেষ্টা সফল হোক বা না হোক সেও সদ্য-ভূমিষ্ঠ নবজাতকের মত সব পাপ থেকে মুক্ত হবে। 
রোগীকে খাবার দেয়া:
 মহানবী (সা) বলেছেন, যে কোনো রোগীকে খাবার দেয় ও এ জন্য আগ্রহী থাকে আল্লাহ তাকে বেহেশতী ফল খাওয়াবেন। 
মহানবী (সা) আরো বলেছেন,  রোগীদেরকে ইচ্ছার প্রতিকূলে বা অরুচি থাকা সত্ত্বেও জোর করে কিছু খাইয়ে দিও না। কারণ আল্লাহ নিজেই তাদেরকে খাবার ও পানীয় দেন। 
ইমাম সাদিক (আ) বলেছেন,  রোগ ও বিপদগ্রস্তদের প্রতি বিস্ময়ের দৃষ্টি দেবে না, কারণ তা তাদের বেদনার কারণ হয়।
রোগীদের দেখতে যাওয়া হলে তা রোগীকে মানসিক প্রশান্তি দেয় এবং এতে তার মানসিক বেদনা ও ক্লান্তি-বোধ অনেক কমে যায়। রোগীদের দেখতে গেলে খালি হাতে যাওয়ার চেয়ে কিছু হাদিয়া নিয়ে যাওয়াটা বেশি প্রত্যাশিত। ইমাম জাফর সাদিক (আ) একবার কোনো এক রোগী দেখতে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়া কয়েক ব্যক্তিকে বলেছিলেন, তোমাদের কারো কাছে কি আপেল বা লেবু বা আতর কিংবা সুগন্ধি বাষ্প করার জন্য অউদ নামক সুগন্ধি গাছের কাণ্ডের টুকরো নেই? তারা বলল যে সেসব তাদের কাছে নেই। তখন ইমাম বললেন: তোমরা কি জানো না রোগী হাদিয়া পেলে প্রশান্ত হয়? 
মহানবী (সা) বলেছেন, ‘যখন রোগীর কাছে যাবে তখন তার মাথায় হাত রেখে বলবে: রাত ও দিন কিভাবে কাটিয়েছ? –এটা রোগী দেখার আদব।’ আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ) বলেছেন: সবচেয়ে বেশি সাওয়াব পান সেইসব দর্শনকারী যখন তারা রোগী দেখতে গিয়ে রোগীর কাছে কম সময় থাকেন। অবশ্য যদি রোগী নিজে বেশি সময় ধরে দর্শনার্থীদের কাছে থাকাটা পছন্দ করেন ও তাদের থাকতে বলেন তাহলে বেশি সময় ধরে রোগীর কাছে থাকা যায়। ইমাম জাফর সাদিক (আ) বলেছেন, রোগী দেখতে গিয়ে তার কাছে বড় জোর সেই সময় পর্যন্ত থাকা যায়  যে সময়ে একটি উটের দুধ একবার দোহন করা হয়। 
ইমাম জাফর সাদিক (আ) আরো বলেছেন, যখনই কোনো রোগী দেখতে যাবে তখন তার কাছ থেকে দোয়া চাবে। কারণ রোগীর দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার মতই কবুল হয়ে থাকে। #

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/১৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।