মজলুম ইমাম মুসা কাযিম (আ) ও তাঁর অলৌকিক নানা ঘটনা
১২৫৫ চন্দ্র বছর আগে তথা খ্রিস্টিয় ৭৯৯ সনে ১৮৩ হিজরির ২৫ ই রজব বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য এবং হযরত ইমাম জাফর আস সাদিক্বের (আ.) সন্তান ইমাম মুসা কাযিম (আ.) শাহাদাত বরণ করেন। ইরানসহ বিশ্বব্যাপী পালিত হয়েছে তাঁর শাহাদাত বার্ষিকী।
এ উপলক্ষ্যে আমরা সবাইকে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা এবং পেশ করছি বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)’র এই পবিত্র বংশধরের শানে অশেষ দরুদ ও সালাম।
ইমাম মুসা ইবনে জাফর আল কাযিম (আ.)'র জন্ম নিয়েছিলেন ১২৮ হিজরির ৭ ই সফর তথা খ্রিস্টিয় ৭৪৫ সনের দশই নভেম্বর মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী ‘আবওয়া’এলাকায়। কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম মুসা কাযিমের মায়ের নাম ছিল হামিদা আল বারবারিয়্যাহ।
পিতা ইমাম জাফর আস সাদিক্বের (আ.) শাহাদতের পর ২০ বছর বয়সে ঐশী ইমামত লাভ করেন মুসা কাযিম (আ.)। পিতার মত তাঁকেও বিষ প্রয়োগে শহীদ করেছিল খলিফা নামধারী ততকালীন মুসলিম শাসক। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর (১৮৩ হিজরি) । আব্বাসীয় জালিম শাসকদের মধ্যে মনসুর, মাহদি, হাদি ও হারুন ছিল তাঁর সমসাময়িক। অশেষ ধৈর্য ও ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের গুণের জন্য এই মহান ইমামকে বলা হত কাযিম।
তিনি ছিলেন পিতা ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.)'র মতই নির্ভীক ও ন্যায়পরায়ণ এবং জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার। পিতার মহৎ গুণগুলোর সবই অর্জন করেছিলেন ইমাম মুসা কাযিম (আ.)। তাঁর ৩৫ বছরের ইমামতির জীবনের প্রায় পুরোটাই কেটেছে কারাগারে ও নির্বাসনে।
ইমাম মুসা কাযিম (আ.) আব্বাসীয় শাসকদের শত অত্যাচার ও নিপীড়ন এবং কারাদণ্ড ও নির্বাসন সত্ত্বেও ইসলামের সঠিক শিক্ষা প্রচারের আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।
বাগদাদের উপকণ্ঠে তাঁর সুদৃশ্য মাজার আজ কোটি কোটি আহলে-বাইত প্রেমিকের জিয়ারতগাহ। অথচ জালিম আব্বাসিয় শাসকদের কবরেরও কোনো চিহ্ন নেই তাদের প্রাসাদগুলো তো থাক দূরের কথা।
হযরত ইমাম মুসা কাযিম (আ.) ছিলেন এমন একজন ব্যক্তিত্ব যিনি ছিলেন আল্লাহর শীর্ষস্থানীয় বন্ধু, মানবজাতির জন্য খোদায়ী ধর্ম ও সত্যের প্রকাশ, বিশ্বজুড়ে অজ্ঞতা ও নৈরাজ্যের কালো আঁধারে আল্লাহর নূরের প্রতিফলন এবং মানবজাতিকে সুপথ দেখানোর মিশনে ছিলেন ত্রুটি-বিহীন ও নিবেদিত-প্রাণ। তিনি আল্লাহর পথে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সংগ্রাম উপহার দিয়েছেন এবং এই পথে অসংখ্য বাধা-বিঘ্ন আর জুলুমের শিকার হয়ে শাহাদত বরণ করেছেন।
ইমাম মুসা কাযিম (আ.) ছিলেন ইসলামের অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ সময়ে প্রকৃত ইসলামের প্রদীপকে জিইয়ে রাখার ও আরো বিকশিত করার অন্যতম কাণ্ডারি। বিশ্বনবী (সা.)'র আহলে বাইতের এই সদস্য ছিলেন অজস্র মহত গুণের আধার এবং যোগ্য মু'মিন গড়ে তোলার অনন্য এক শিক্ষক।
ইমাম মুসা কাযিম (আ.)’র মহানুভবতা, প্রেমময় ইবাদত, নম্রতা, সহিষ্ণুতা, তত্ত্বীয় ও জ্ঞানগর্ভ বিতর্কে তাঁর ঐশী জ্ঞান এবং দানশীলতা ছিল শত্রুদের কাছেও সুবিদিত। তত্ত্বীয় ও জ্ঞানগর্ভ বিতর্কে ইমামের ঐশী জ্ঞান, বিস্তৃত চিন্তাশক্তি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর পরিপূর্ণ দখল ফুটে উঠত। তিনি যে কোনো প্রশ্নের সঠিক, পরিপূর্ণ এবং প্রশ্নকারীর বোধগম্যতার আলোকে জবাব দিতেন। আসলে রাসূল (সা.)'র জ্ঞানের দরজাগুলো আমিরুল মু'মিনিন (আলী-আ.)'র সামনে খুলে গিয়েছিল এবং সেই ঐশী জ্ঞান প্রত্যেক ইমামের মাধ্যমে পরবর্তী ইমামের কাছে পৌঁছেছে।
এ আন্দোলনের যে বিশেষ ধারা তাঁর মহান পিতা ইমাম জাফর সাদিক (আ.) শুরু করেছিলেন তা আরও বিকশিত হয়েছিল পুত্রের প্রজ্ঞা, কৌশল ও ত্যাগ-তিতিক্ষাপূর্ণ অধ্যবসায়ের সুবাদে। বিশেষ করে পবিত্র কুরআনের প্রকৃত তাফসির ও হাদীস বর্ণনা তাঁর মাধ্যমে আরও বিকশিত হয়।ইমাম তাঁর অনুসারীদেরকে জ্ঞান অর্জনের জন্য অশেষ অনুপ্রেরণা যোগাতেন। তিনি বলতেন, জ্ঞান মৃত আত্মাকে জীবিত করে যেমনটি বৃষ্টি জীবিত করে মৃত ভূমিকে।
ইমাম মুসা কাযিম (আ.) বিভ্রান্ত ব্যক্তিদের সঙ্গ ত্যাগ করতে নিজ অনুসারীদের তাগিদ দিতেন। মানুষ কখনও বিভ্রান্ত ব্যক্তির কুপ্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারে না এবং যখন মন্দ ব্যক্তির ওপর আল্লাহর শাস্তি নাজেল হয় তখন তার সঙ্গে থাকা সত ব্যক্তিও সেই শাস্তি এড়াতে পারে না বলে এই মহান ইমাম উল্লেখ করেছেন।
আব্বাসীয় শাসকদের বিভ্রান্ত ও দুর্নীতিগ্রস্ত চাল-চলন যে ইসলামের সম্পূর্ণ বিপরীত ধারা পিতার মতই তা তুলে ধরেছিলেন ইমাম মুসা কাযিম (আ.) । তাই আব্বাসীয় শাসকরা চাইতেন না জনগণের সঙ্গে ইমামের যোগাযোগ বৃদ্ধি পাক। তারা জনগণের ওপর নবী বংশের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকানোর জন্য যে কোনো ধরনের প্রতারণ, প্রচারণা, বর্বরতা ও নৃশংসতার আশ্রয় নিতে দ্বিধা বোধ করত না। এমনকি বিশ্বনবী (সা.)'র আহলে বাইত এবং তাঁদের অনুসারীদের ওপর জুলুম ও নৃশংস আচরণের ক্ষেত্রে আব্বাসীয়রা উমাইয়াদের চেয়েও বেশি অগ্রসর হয়েছিল, যদিও তাদের নেতৃত্বে সংঘটিত উমাইয়া বিরোধী আন্দোলন জন-সমর্থন পেয়েছিল এই প্রতিশ্রুতির কারণে যে ইসলামী খেলাফতে সমাসীন করা হবে বিশ্বনবী (সা.)'র আহলে বাইতকে। কিন্তু তারা সেই ওয়াদা লঙ্ঘন করে নিজেরাই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে। আব্বাসীয়রা ইমাম জাফর সাদিক ও ইমাম মুসা কাযিম (আ.) সহ নবী বংশের বেশ কয়েকজন ইমামকে শহীদ করেছিল।
হযরত ইমাম মুসা কাযিম (আ.) তাঁর বন্দী অবস্থার নিকৃষ্টতম সময়েও বিচক্ষণতা, বীরত্ব এবং সংগ্রামী ও আপোষহীন মনোভাব ত্যাগ করেননি।
ইমাম এক চিঠিতে হারুনের কাছে লিখেছিলেন: এমন কোনো দিন নেই যে আমি কষ্টে কাটাইনি অথচ এমন কোনো দিন নেই যে তুমি সুখ-স্বচ্ছন্দে কাটাওনি। কিন্তু, ওই দিন পর্যন্ত আরাম আয়েশে লিপ্ত থাক যেদিন আমরা উভয়ই এমন এক জগতে পদার্পণ করব যার কোনো শেষ নেই এবং ওই দিন অত্যাচারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।ইমামের আধ্যাত্মিক খ্যাতি, জ্বালাময়ী বক্তব্য ও দৃঢ় মনোবল ছিল আব্বাসীয় শাসক হারুনের কাছে অসহনীয়।
ইমাম মুসা ইবনে জাফর (আ.)’র অনুসারীদের সঙ্গে তাঁর সার্বক্ষণিক যোগাযোগের কথাও হারুন তার গোয়েন্দা বাহিনীর মাধ্যমে জানতে পেরেছিল। হারুন এটাও বুঝতে পেরেছিল যে ইমাম যখনই উপযুক্ত সুযোগ পাবেন তখনই স্বয়ং বিপ্লব করবেন কিংবা তাঁর সঙ্গীদেরকে আন্দোলনের নির্দেশ দেবেন, ফলে তার হুকুমতের পতন হবে অনিবার্য। তাই হারুন বিষ প্রয়োগ করে আপোষহীন ৫৫ বছর বয়স্ক এই ইমামকে শহীদ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
হারুন খেলাফতকে রাজতন্ত্রে পরিণত করা ও জনগণের সম্পদ লুটের জন্য লজ্জিত ছিল না। উপরন্তু সে জনগণকে ধোঁকা দেয়ার জন্য বিশ্বনবী (সা.)’র রওজায় গিয়ে রাসূল (সা.)-কে উদ্দেশ করে বলে: হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সন্তান মুসা ইবনে জাফরের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি আন্তরিকভাবে তাঁকে বন্দী করতে চাইনি। বরং আপনার উম্মতের মধ্যে যুদ্ধ ও বিরোধ সৃষ্টি হবে এ ভয়েই আমি এ কাজ করেছি।
হারুন ইমামকে শহীদ করার আগে একদল গণ্যমান্য ব্যক্তিকে কারাগারে উপস্থিত করেছিল যাতে তারা সাক্ষ্য দেয় যে ইমাম কাযিম (আ.) স্বাভাবিকভাবেই মারা গেছেন। এভাবে সে আব্বাসীয় শাসনযন্ত্রকে ইমাম (আ.)কে হত্যার দায়িত্বভার থেকে মুক্ত রাখতে ও ইমামের অনুসারীদের সম্ভাব্য আন্দোলন প্রতিরোধ করতে চেয়েছিল। কিন্তু ইমামের প্রজ্ঞা সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেয়। কারণ, ওই সাক্ষীরা যখন ইমামের দিকে তাকিয়েছিল তখন তিনি বিষের তীব্রতা ও বিপন্ন অবস্থা সত্ত্বেও তাদেরকে বললেন: আমাকে নয়টি বিষযুক্ত খুরমা দিয়ে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে, আগামীকাল আমার শরীর সবুজ হয়ে যাবে এবং তার পরদিন আমি ইহজগত থেকে বিদায় নেব। পরদিন ঠিকই ইমামের পবিত্র শরীর সবুজ হয়ে যায় এবং পরের দিন তিনি শাহাদত বরণ করেন।
এবারে আমরা এই নিষ্পাপ বা মাসুম ইমামের জীবনের কয়েকটি মু'জেজা তুলে ধরছি:
একবার এক বিধবা মারা গেলে তার শিশুরা যখন কাঁদতে থাকে তখন এই মহান ইমাম আল্লাহর কাছে প্রার্থণার মাধ্যম ওই বিধবাকে জীবিত করেন।
ইমাম মুসা কাযিম (আ.)-কে বিভিন্ন সময়ে নানা কারাগারে রাখা হয়েছিল। যেমন ইমামকে বসরায় ঈসা ইবনে জাফর নামক এক জল্লাদের কারাগারে এক বছর বন্দী রাখা হয়। সেখানে ইমামের ইবাদত-বন্দেগি ও উত্তম চরিত্র জাফরের ওপর এমন প্রভাব রাখে যে ওই জল্লাদ হারুনের কাছে এক লিখিত বার্তায় জানিয়ে দেয় যে: তাঁকে আমার কাছ থেকে ফিরিয়ে নাও, নতুবা আমি তাঁকে মুক্ত করে দেব। এরপর হারুনের নির্দেশে ইমাম মুসা ইবনে জাফর (আ.)-কে বাগদাদে ফাযল ইবনে রাবির কাছে কারারুদ্ধ করা হয়। এর কিছু দিন পর ফাযল ইবনে ইয়াহিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয় এই মহান ইমামকে। কয়েক দিন পর সেখান থেকেও তাঁকে পাঠানো হয় কুখ্যাত ইহুদি জল্লাদ সানদি ইবনে শাহাকের কারাগারে।
ইমাম কাযিম (আ.)-কে এক কারাগার থেকে বার বার অন্য কারাগারে স্থানান্তরের কারণ ছিল এটাই যে হারুন প্রতিবারই কারা প্রহরীকে নির্দেশ দিত ইমামকে গোপনে হত্যা করার। কিন্তু তাদের কেউই রাজি হয়নি এ কাজ করতে। অবশেষে সানদি ইমামকে বিষ প্রয়োগ করতে রাজি হয়।
যাই হোক ইমামের কারারক্ষী মুসাইব বলেছে:
"শাহাদতের তিন দিন আগে ইমাম আমাকে ডাকিয়ে এনে বলেন: আমি আজ রাতে মদীনা যাব যাতে আমার পুত্র আলীর ( ইমাম আলী ইবনে মুসা রেজা-আ.) কাছে ইমামতের এবং আমার পর আমার খলিফা ও ওয়াসির দায়িত্ব অর্পণ করতে পারি। আমি বললাম: এতসব প্রহরী বা কারারক্ষী, তালা ও শেকল (যা দিয়ে ইমামকে বেঁধে রাখা হয়েছিল) থাকার পরও কি আপনি আশা করেন যে এখান থেকে আপনাকে বের হতে দেয়ার সুযোগ করে দেব!!!?
ইমাম বললেন: হে মুসাইব, তুমি কি মনে কর আমাদের ঐশী বা খোদায়ী শক্তি কম?আমি বললাম: না, হে আমার মাওলা বা নেতা। ইমাম বললেন: তাহলে কী? বললাম, দোয়া করুন যাতে আমার ঈমান আরো শক্তিশালী হয়। ইমাম বললেন: হে আল্লাহ! তাকে দৃঢ়চিত্ত রাখ।
এরপর তিনি বললেন: আমি ঠিক সেই 'ইসমে আযমে ইলাহি' দিয়ে- যা দিয়ে আসফ বিন বারখিয়া (হযরত সুলায়মান-আ'র মন্ত্রী) বিলকিসের (সাবার রানী) প্রাসাদকে চোখের এক পলক ফেলার সময়ের মধ্যেই ইয়েমেন থেকে ফিলিস্তিনে নিয়ে এসেছিল- আল্লাহকে ডাকব ও মদীনায় যাব।হঠাত দেখলাম যে ইমাম একটি দোয়া পড়লেন ও অদৃশ্য হয়ে গেলেন। আর কিছুক্ষণ পর ফিরে এলেন এবং নিজের হাতেই কারাগারের শেকলগুলো দিয়ে নিজের পা মুবারক বাঁধলেন।
এরপর ইমাম মুসা কাযিম (আ.) বললেন: আমি তিন দিন পর দুনিয়া থেকে বিদায় (শহীদ) হব।
আমি কাঁদতে লাগলাম। আর ইমাম বললেন: কেঁদো না, জেনে রাখ, আমার পর আমার ছেলে আলী ইবনে মুসা রেজা (আ.) তোমার ইমাম বা নেতা। ঠিক তিন দিন পরই তিনি শহীদ হয়েছিলেন। (বিহারুল আনোয়ার, খণ্ড-৪৮, পৃ-২২৪)
গাভী জীবিত করলেন ইমাম মুসা কাযিম (আ.)
আলী বিন মুগিরা বলেছেন, ইমাম মুসা কাযিমের (আ.)'র সঙ্গে মিনায় যাচ্ছিলাম। পথে দেখলাম এক মহিলা ও তার ছোট ছেলে বেশ ব্যাকুল হয়ে কাঁদছে?ইমাম প্রশ্ন করলেন: কেন কাঁদছ?ওই নারী ইমামকে চিনত না। সে বলল: আমার ও আমার এই ইয়াতিম সন্তানের একমাত্র পুঁজি ছিল এই গাভীটি। তার দুধ দিয়ে আমরা জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন গাভীটি মরে যাওয়ায় আমরা উপায়হীন হয়ে পড়লাম। ইমাম বললেন: তোমরা কি চাও এই গাভীটিকে আমি জীবিত করি? সে বলল: হ্যাঁ, হ্যাঁ।
ইমাম এক কোনায় গিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়লেন এবং নামাজ শেষে আকাশের দিকে হাত তুলে দোয়া করলেন। এরপর তিনি মৃত গাভীর কাছে এসে তার শরীরের এক পাশে আঘাত করলেন। হঠাত গাভীটি জীবিত হয়ে উঠে দাঁড়াল।ওই নারী এই দৃশ্য দেখে চিতকার করে বলে উঠলো: দেখে যাও, কাবার প্রভুর শপথ, ইনি হচ্ছেন ঈসা ইবনে মরিয়ম! লোকের ভিড় জমে গেল এবং তারা গাভীটি দেখতে ও ওই নারীর কথা শুনতে লাগল। ইমাম (আ.) মানুষের ভিড়ের মধ্যে ঢুকে নিজেকে আড়াল করে নেন এবং নিজের পথে চলতে থাকেন। (বাসায়ের আদ দারজাত, পৃ-৫৫ এবং বিহারুল আনোয়ার, খণ্ড-৪৮)
বিশ্বনবী (সা.)'র আহলে বাইতভুক্ত নিষ্পাপ ইমামগণ সব জীবন্ত প্রাণীর ভাষা ও বক্তব্য বোঝেন এবং তা তাঁদের খোদায়ী ইমামতের অন্যতম প্রমাণ। (অর্থাত যার এই ক্ষমতা নেই তিনি ঐশী ইমাম নন।)আবু বাসির ইমাম মুসা কাযিম (আ.)-কে প্রশ্ন করেন: ঐশী ইমামকে চেনার উপায় কি কি? ইমাম বললেন: সত্যিকারের ইমামের প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য হল পূর্ববর্তী ইমাম তাঁকে ইমাম হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেবেন, যেমনটি রাসূল (সা.) আলী ইবনে আবি তালিবকে মুসলমানদের ইমাম হিসেবে ঘোষণা করে গেছেন।
দ্বিতীয় লক্ষণ হল, তাঁকে তথা ইমামকে যে প্রশ্নই করা হোক না কেন, তিনি তার জবাব দেবেন এবং কোনো বিষয়েই তিনি অজ্ঞ বা বেখবর নন। তৃতীয় লক্ষণ হল ইমাম কখনও সত্যের প্রতিরক্ষায় নীরব থাকবেন না। তিনি ভবিষ্যত ঘটনাবলী সম্পর্কে খবর দেন এবং সব ভাষাতেই কথা বলেন। এরপর ইমাম মুসা কাযিম (আ.) বললেন: এখন তোমাকে একটি লক্ষণ দেখাব যাতে তোমার হৃদয় নিশ্চিত হয়।
ঠিক সে সময় খোরাসান অঞ্চলের এক ব্যক্তি ইমামের কাছে আসেন এবং ইমামের সঙ্গে আরবীতে কথা বলতে থাকেন। কিন্তু ইমাম ফার্সিতে জবাব দিলেন। খোরাসানের লোকটি তখন বললেন: আমি ভেবেছিলাম যে আপনি ফার্সি ভাষা বুঝবেন না।
ইমাম বললেন: সুবাহান আল্লাহ! যদি তোমার প্রশ্নের জবাব তোমার ভাষাতেই দিতে না পারি তাহলে তোমার চেয়ে আমার শ্রেষ্ঠত্ব থাকলো কোথায়?
এরপর তিনি বললেন: 'ইমাম হচ্ছেন তিনি যার কাছে কোনো ব্যক্তির ভাষাই গোপন বা আড়াল নয়। তিনি প্রত্যেক ব্যক্তি ও জীবিত বস্তুর কথা বোঝেন। এইসব বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমেই ইমামকে চেনা যায় এবং যাদের এইসব বৈশিষ্ট্য নেই তারা ইমাম নন।'
ইমাম মুসা কাযিমের কয়েকটি উপদেশ:
১. খোদা পরিচিতির পরই আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বোত্তম পন্থা হল নামাজ, বাবা মায়ের প্রতি সদাচরণ এবং হিংসা, স্বেচ্ছাচার, অহংকার ও দাম্ভিকতা পরিহার করা।
২.বিনয়ের অর্থ হল, মানুষের সঙ্গে সেরকম আচরণ কর যেরূপ তুমি মানুষের কাছে আশা কর।৩. যদি কেউ পার্থিব জীবনের প্রতি আকৃষ্ট হয়, তবে তার হৃদয় থেকে আখিরাতের ভয় বিদায় নেয়।#
পার্সটুডে/মু.আ.হুসাইন/২৪