ওবায়দুল কাদেরের অভিযোগ
'র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত'
বাংলাদেশে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকারে ক্ষমাতাসীণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক-সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দেশের এলিট ফোর্স বলে অভিহিত র্যাবের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার ব্যাপারে মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে একপেশে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন।
আজ রোববার (১২ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে ব্রিফিংকালে তিনি আরও বলেন, আমরা নিশ্চিত এ সিদ্ধান্তের গভীরে বাংলাদেশবিরোধী কিছু ব্যক্তি ও অপশক্তির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত দেশের ভেতরে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসীদের উৎসাহিত করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে কাদের বলেন, দ্বিপাক্ষিক এবং অভিন্ন ইস্যুসহ বহুপাক্ষিক ইস্যুতে দুই দেশ নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করছে। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন লগ্নে যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটি সিদ্ধান্তে আমরা বিস্মিত এবং ব্যথিত হয়েছি বলেও উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সেতুমন্ত্রী বলেন, র্যাব একটি এলিট ফোর্স হিসেবে কাজ করছে। সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদ দমনে এই বাহিনী অত্যন্ত পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে কাজ করছে। এ বাহিনীর কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় এ বাহিনীর অন্তত সাতজন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন। কোনো অভিযোগ থাকলে বাহিনী নিজে কিংবা মন্ত্রণালয় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, এ অবস্থায় ঢালাওভাবে অভিযোগ এনে একটি বাহিনীর প্রধান এবং সাবেক কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে নিষেধাজ্ঞা প্রদান অযৌক্তিক, মানবাধিকারের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের সিদ্ধান্তই এক ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আজ মানবাধিকার নিয়ে কথা বলছে, আমরা তাদের দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আগে পর্যবেক্ষণের অনুরোধ করছি। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে, যা নিয়ে মার্কিন প্রশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। সেখানে দৃশ্যমান বর্ণবাদ বিরাজ করছে বলে অনেকেই মত প্রকাশ করেছিলেন।
কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্য এবং নিপীড়ন প্রশ্নে খোদ জাতিসংঘের উদ্বেগ প্রকাশ হয়েছে জানিয়ে কাদের প্রশ্ন করে বলেন, মেক্সিকো-ইউএসএ সিমান্তে কতজন মারা গেছে? যেখানে বন্দুক হামলায় প্রতি বছর লাখো মানুষ মারা যায়, নির্বাচনে হেরে যে দেশের ক্যাপিটাল হিল দখল করতে গিয়ে পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটনা বিশ্ববাসী লক্ষ্য করেছে। বিশ্ববাসী দেখেছে মার্কিন গণতন্ত্রের স্বরূপ ও তাদের মানবাধিকারের চেহারা।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির দাবী
এদিকে, বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে র্যাব এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও তাদের সম্পদ জব্দ করার ঘোষণার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দাবী করেছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। গতরাতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্মেলনে গৃহীত এক প্রস্তাবে এই নিষেধাজ্ঞাকে বাংলাদেশের জন্য নজিরবিহীন ও চরম অবমাননাকর হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয় বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও মানবাধিকার লংঘনের ধারাবাহিক ঘটনাবলী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সার্টিফিকেটের অপেক্ষা রাখেনা।গত দুই দশক ধরে দেশের মানুষের এ সম্পর্কে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয় "বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে না" সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এই ধরনের বক্তব্য সত্যের অপলাপ।এভাবে কথা বললে সরকারের ন্যুনতম বিশ্বাসযোগ্যতা বলে আর কিছু থাকেনা।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটে বলে নিজেদের পাপ ও অপরাধ এড়িয়ে যাওয়ার কোন অবকাশ নেই।#
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার /১২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।