কক্সবাজার সৈকতে নারী ও শিশুদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা করার সিদ্ধান্ত বাতিল
সমুদ্র সৈকতে নারী ও শিশুদের জন্য ঘোষণা করা সংরক্ষিত এলাকা চালু রাখার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। গতকাল (বুধবার) রাত সাড়ে ৯টায় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ এক সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্ত জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'জেলা প্রশাসন সম্মানিত পর্যটকদের মতামতের ওপর সবসময় শ্রদ্ধাশীল। বিভিন্ন সময়ে পর্যটকদের মধ্যে অনেকেই অনুরোধ করেছেন যে, নারী ও শিশু পর্যটকদের জন্য- যারা ইচ্ছে পোষণ করবেন, তাদের জন্য একটি এক্সক্লুসিভ জোন থাকলে ভালো হয়। সে বিবেচনায় সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে একটি পৃথক এলাকা চিহ্নিত করে নারী ও শিশুদের জন্য এক্সক্লুসিভ জোন করার উদ্যোগ নেয়। এক্সক্লুসিভ জোনে যাদের ইচ্ছা হবে যাবে, অন্য পর্যটকরা তাদের ইচ্ছেমতো ঘুরবেন। এ সংক্রান্ত সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হয়। প্রচারিত সংবাদের প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনায় বিষয়টি নিয়ে বিরূপ মতামত পাওয়া গেছে। পর্যটকদের মতামতের ওপর সবসময় জেলা প্রশাসন শ্রদ্ধাশীল। সুতরাং সম্মানিত পর্যটকদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে নারী ও শিশুদের জন্য এক্সক্লুসিভ জোন চালু রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হলো।'
গতকাল দুপুর ১২টায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে নারী ও শিশু পর্যটকদের জন্য আলাদা সংরক্ষিত এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। সংরক্ষিত এলাকা উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ।
এ সময় জেলা প্রশাসক বলেছিলেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত উপভোগ করতে এসে সাগরে নেমে গোসল করেন পর্যটকদের বড় একটি অংশ। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ একসঙ্গে গোসল করতে গিয়ে বিব্রত বোধ করেন নারীরা। তাই স্বস্তি নিয়ে গোসল করতে নারীদের জন্য এই বিশেষ জোন তৈরি করা হচ্ছে। এখন থেকে রক্ষণশীল নারী পর্যটকরা এই পয়েন্টে নেমে স্বস্তিতে গোসল করতে পারবেন। এজন্য সব সময় বিশেষ নজর রাখব আমরা।’
গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর দেশব্যাপী বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমালোচনা শুরু হয়। বেশিরভাগ মানুষ প্রশাসনের এই উদ্যোগকে হাস্যকর বলে সমালোচনা করেন। অনেকে বলেন, প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে নারীপুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল পর্যটকের জন্য সমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। তা না করে সৈকতে এমন আলাদা সংরক্ষিত এলাকা গঠন প্রশাসনের নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। এ ধরনের সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বোধনের মাত্র ৯ ঘণ্টা পর সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে প্রশাসন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন শহর কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত থেকে এক নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে গত সপ্তাহে। এরপর সেখানে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে প্রশাসন। এই অবস্থায় বুধবার বিস্তৃত সৈকতের লাবণী পয়েন্টের বালিয়াড়ির অন্তত দেড়শ মিটার এলাকায় দুই পাশে সাইনবোর্ড ও গোলাপী রঙের পতাকা লাগিয়ে চিহ্নিত করে ‘নারী ও শিশুদের’ সংরক্ষিত বিশেষ এলাকা ঘোষণা করে বলা হয়, এখানে শুধু নারী ও শিশুদের প্রবেশাধিকার থাকবে।
নারীদের জন্য তৈরি করা এই জোনে নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক নারী ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্য ও নারী বিচকর্মী নিয়োজিত থাকবেন বলে জানানো হয়। সৈকতের নির্ধারিত স্থান চিহ্নিত করে সাইবোর্ডও বসানো হয়।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৩০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।