ইরাকের সংসদে শিয়া জোটের জয়: রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় নতুন গতি
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i154210-ইরাকের_সংসদে_শিয়া_জোটের_জয়_রাজনৈতিক_স্থিতিশীলতায়_নতুন_গতি
পার্সটুডে: ইরাকের সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণার পর শিয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত “কোঅর্ডিনেশন ফ্রেমওয়ার্ক” জোট আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী সংসদের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করেছে।
(last modified 2025-11-19T14:00:41+00:00 )
নভেম্বর ১৯, ২০২৫ ১৬:৩১ Asia/Dhaka
  • ইরাকের ৩২৯ আসনের মধ্যে ১৮২ আসন পেয়েছে শিয়া জোট
    ইরাকের ৩২৯ আসনের মধ্যে ১৮২ আসন পেয়েছে শিয়া জোট

পার্সটুডে: ইরাকের সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণার পর শিয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত “কোঅর্ডিনেশন ফ্রেমওয়ার্ক” জোট আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী সংসদের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানির উপস্থিতিতে জোটের নেতাদের এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, আগামী চার বছরের জন্য এই জোট থেকেই প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করা হবে। বিশ্লেষকরা এই সিদ্ধান্তকে শিয়া ধারার রাজনৈতিক সংহতি এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে মূল্যায়ন করছেন।

ইরাকের স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, শিয়া জোটটি ৩২৯ আসনের মধ্যে ১৮২টি আসন পেয়েছে। ফলে সংসদে তাদের প্রভাব অনেক বেড়েছে এবং মন্ত্রিসভার বেশিরভাগ পদ নিয়ন্ত্রণ করাও তাদের জন্য সহজ হবে। আসন সংখ্যায় সুন্নি ও কুর্দি দলগুলো এর পরের অবস্থানে আছে।

ইরাকের ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে সুন্নি রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো থেকে সাতটি প্রধান জোট সংসদে রয়েছে, যাদের মোট আসন সংখ্যা ৬৫টি। এই মেয়াদে কুর্দিদের মোট আসন সংখ্যা ছিল ৫৯টি।

এই নির্বাচনে সবচেয়ে বড় অনুপস্থিতি ছিল মুক্তাদা আস-সাদরের দল। ২০২১ সালের নির্বাচনে ৭৩ আসন পেয়ে প্রথম হয়েও রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে তারা সংসদ থেকে সরে দাঁড়ায় এবং এবারের নির্বাচনও বর্জন করে।

শিয়া মুসলমানদের এই জয় ইরাকের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তারা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন ও সরকারের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। রাজনৈতিক দিক থেকে শিয়াদের ঐক্য দেশকে অতীতের মতো অস্থিতিশীলতার দিকে ফিরে যেতে দেবে না—এমন প্রত্যাশাও দেখা যাচ্ছে।

তবে স্থিতিশীল সরকার গঠনের জন্য সুন্নি ও কুর্দিদের সঙ্গে সহযোগিতা যেমন ছিল, তেমনি ভবিষ্যতেও প্রয়োজন হবে। প্রচলিত ক্ষমতা বণ্টনের নিয়ম—শিয়াদের প্রধানমন্ত্রী, কুর্দিদের প্রেসিডেন্ট, সুন্নিদের সংসদ স্পিকার আগের মতোই থাকবে।

ইরাকের নির্বাচনে শিয়াদের এই বিজয় দেশটির বৃহত্তর রাজনীতিতে একটি মাইলফলক, যা শিয়াদেরকে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ এবং মন্ত্রিসভা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাই দেয় না, বরং তাদের অভ্যন্তরীণ সংহতির মাধ্যমে ইরাকের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা শক্তিশালী হয়। ইরাকের ভবিষ্যত সরকারের সাফল্যও তিনটি প্রধান ধারা (শিয়া, সুন্নি ও কুর্দি)-এর সহযোগিতা এবং বিদেশি সেনা প্রত্যাহার বিষয়টি বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিচালনার উপর নির্ভর করবে।

শিয়া দলগুলোর কর্মসূচির একটি প্রধান লক্ষ্য হল ইরাক থেকে বিদেশি সেনা, বিশেষ করে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার। শিয়াদের পাশাপাশি, ইরাকে জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় ধারাগুলোও আমেরিকার সেনা প্রত্যাহারকে তাদের কর্মসূচির অগ্রাধিকার হিসেবে মনে করে। ইরাকের রাজনৈতিক ধারাগুলোর জন্য মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহার গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি স্বাধীনতা ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়, এটি অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও সরকারের বৈধতাকে প্রভাবিত করে এবং পাশাপাশি ইরাকের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।  

পার্লামেন্ট সদস্য ও রাজনৈতিক দলগুলো জোর দিয়ে বলেছে যে, ইরাকি সেনাবাহিনী ও জনপ্রতিরক্ষা বাহিনী (হাশদ আশ–শাবি) দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় পুরোপুরি সক্ষম এবং কোনও বিদেশি বাহিনীর প্রয়োজন নেই। তাই মার্কিন সেনা প্রত্যাহারকে ইরাকের রাজনৈতিক স্বাধীনতা সুদৃঢ় করার জন্য জাতীয় প্রয়োজন হিসেবে দেখা হচ্ছে।#

পার্সটুডে/এমএআর/১৯