বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজ ২০২২
হারের শঙ্কায় পড়া বাংলাদেশ অবশেষে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল, ম্যাচ সেরা মিরাজ
-
বাংলাদেশকে রেকর্ডগড়া জয় উপহার দিলেন আফিফ-মিরাজ
আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজের বড় জুটির রেকর্ডে ভর করে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আফগানিস্তানকে চার উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে লিড নিয়েছে তামিম ইকবালের দল।
২০১৮ সালে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সপ্তম উইকেট জুটিতে ১২৭ রান যোগ করেছিলেন ইমরুল কায়েস ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। সেই রেকর্ড এবার ভাঙা পড়ল। আফিফ ও মিরাজ দুজনেই দুর্দান্ত ফিফটি হাঁকিয়ে খেললেন ক্যারিয়ারের সেরা ১৭৪ রানের ইনিংস। আফিফ অপরাজিত থাকেন ১১৫ বলে ৯৩ রান। তিনি মারেন ১১ চার ও ১ ছক্কা। আর মিরাজ করেন ১২০ বলে অপরাজিত ৮১ রান। তার ব্যাট থেকে আসে ৯ চার।
আজ (বুধবার) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় দুদল। প্রথমে ব্যাট করে ৪৯.১ ওভারে ২১৫ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। জবাব দিতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ও ৭ বল বাকি থাকতে ২১৯ করে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
২১৬ রানের মামুলি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেই চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। আফগান বোলিংয়ের সামনে রীতিমতো নাকাল হয়ে পড়েন সাকিব-তামিমরা। চরম বিপদের মুখে বাংলাদেশের হাল ধরেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও আফিফ হোসেন। সপ্তম উইকেটে দুজন মিলে উপহার দেন চমৎকার জুটি। এই জুটিতেই খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দারুণ জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
অবশ্য ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে অস্বস্তিতে পড়েন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। এই সুযোগ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন অতিথি বোলার ফারুকি।
১৮ রানের মধ্যে বাংলাদেশের চার টপ অর্ডারকে তুলে নেন ফারুকি। প্রথমে বিদায় করেন লিটন দাসকে। এরপর একে একে সাজঘরে ফেরান তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও ইয়াসিরকে।
চার উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া বাংলাদেশের বিপদ আরো বাড়ান মুজিব ও রশিদ। দুজন মিলে তুলে নেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহর উইকেট।
সপ্তম উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। এই জুটিতে ১৭৪ রান পায় বাংলাদেশ। এরপর এই জুটিতেই জয়ের নাগাল পেয়ে যায় বাংলাদেশ।

এর আগে টসে জিতে ব্যাট করে নির্ধারিত ৪৯.১ ওভারে ২১৫ রান গড়ে আফগানিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৭ রানের ইনিংস খেলেছেন নাজিবুল্লাহ জাদরান। ৮৪ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল চার বাউন্ডারি ও দুটি ছক্কা।
চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় আফগানিস্তান। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই আফগান শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি পেসারের বল মোকাবিলা করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। ক্যাচ হাতের মুঠোয় নিয়ে আফগান ওপেনারকে ফেরান তামিম ইকবাল। দলীয় ১১ রানে প্রথম উইকেট হারায় আফগানরা।
শুরুর ধাক্কা সামলে দ্বিতীয় উইকেটে প্রতিরোধের চেষ্টা করে আফগানিস্তান। রহমত শাহ ও ইব্রাহিম জাদরানের জমে ওঠা এ জুটি ভাঙেন শরিফুল। বাঁ-হাতি পেসারের বলে ড্রাইভ করার চেষ্টা করেন ইব্রাহিম। ঠিকঠাক পারেননি। উল্টো ক্যাচ তুলে দেন স্লিপে। সেখানে থাকা ইয়াসির বল মুঠোয় নিয়ে ফেরান তাসকিনের বলে জীবন পাওয়া ইব্রাহিমকে। ২৩ বলে ১৯ রান নিয়ে বিদায় নেন তিনি। আফগানদের দ্বিতীয় জুটি ভাঙে ৪৫ রানে।
আফগান শিবিরে তৃতীয় আঘাত হানেন তাসকিন। ডান-হাতি পেসারের দ্বিতীয় স্পেলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন থিতু হওয়া ব্যাটসম্যান রহমত শাহ। তিন বাউন্ডারিতে ৬৯ বলে ৩৪ রান করে ফেরেন তিনি।
জমে যাওয়ার আরেক ব্যাটার হাশমতউল্লাহ শাহিদিকে বোলিংয়ে এসেই ফিরিয়ে দেন মাহমুদউল্লাহ। অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারের অফ স্পিনে কাটা পড়েন আফগান অধিনায়ক। ৪৩ বলে ২৮ করে ফিরে যান শাহিদি।
২৮ ওভারে আফগানদের ৪ উইকেট নিলেও রান দেওয়ায় কিপটে ছিলেন বাংলাদেশি বোলারেরা। ২৮ ওভারে স্কোরবোর্ডে আফগানিস্তান তোলে ১০২ রান।
কিন্তু, এরপর কিছুটা ছন্দ হারান বাংলাদেশের বোলারেরা। সে সুযোগ লুফে নিয়ে রানের গতি বাড়িয়েছে আফগানিস্তান। মোহাম্মদ নবী ও নাজিবুল্লাহ জাদরানের ব্যাটে আরেকটি ভালো জুটি পায় আফগানিস্তান। এ জুটিতে তারা পায় ৬৩ রান। এরপর শেষে দিকে জাদরানের ব্যাটে চড়ে শেষ পর্যন্ত স্কোরবোর্ডে ২১৫ রান তোলে সফরকারীরা।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ৩৫ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন মুস্তাফিজ। ৫৫ রান খরচায় তাসকিন নেন দুটি উইকেট। সমান দুটি করে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান ও শরিফুল ইসলাম। মাহমুদউল্লাহর শিকার একটি। মেহেদী হাসান মিরাজ কোনো উইকেট না পেলেন ১০ ওভারে মাত্র ২৮ রান দিয়ে আফগানিস্তানের রান আটকে রাখেন। সেইসাথে বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে ৮১ রান করে দলের জয় নিশ্চিত করায় ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার পেয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
একই ভেন্যুতে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৩