পদ্মা সেতুর ফলে ২১ জেলার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে: শিবচরে শেখ হাসিনা
-
কাঁঠালবাড়িতে আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পদ্মা সেতুর ফলে ২১ জেলার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে। জনতার শক্তি ছিল আমার শক্তি। আপনাদের শক্তি নিয়ে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। এ সেতু নির্মাণের মাধ্যমে আপনারা নির্দ্বিধায় পার হতে পারবেন। কারও সন্তান-পিতা হারাতে হবে না। পদ্মা নদী এখন সুন্দরভাবে পার হতে পারবেন। পদ্মা সেতুর জন্য যাঁরা জায়গা দিয়েছেন, তাদের আমরা টাকা দিয়েছি। জায়গা কিনে বাড়ি করে দিয়েছি।’
পদ্মা সেতুর মাওয়া পয়েন্টে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচনের পর আজ (শনিবার) দুপুরে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে আওয়ামী লীগের জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মাওয়া প্রান্তে উদ্বোধনের পর পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে জাজিরা প্রান্তে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি দুপুর সাড়ে ১২টার পদ্মা সেতুর ফলক ও মুর্যাল উন্মোচন করেন। এরপর জাজিরা প্রান্তে কাঁঠালবাড়ীর জনসভাস্থলে পৌঁছান তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন পদ্মা সেতু অতিক্রম করেন তখন বিমান বাহিনীর ছয়টি হেলিকপ্টার তাঁকে অভিবাদন জানায়। এরপর ওই হেলিকপ্টারগুলো কাঁঠালবাড়ী ঘাটে জনসভা মঞ্চের ওপর দিয়ে চক্কর দেয়।
কাঁঠালবাড়ীর সমাবেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা আমাদের পাশে ছিলেন, আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। বাবা-মাকে হারিয়ে আপনাদের ভালোবাসায় বেঁচে আছি। আপনাদের জন্য প্রয়োজনে জীবন দেব।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ মুক্তি পাবে, সে প্রত্যাশায় বঙ্গবন্ধু মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য দেশ স্বাধীন করেন। কিন্তু, মাত্র তিন বছর সময় পান তিনি। কিছু খুনি ১৯৭৫ সালে আমার পরিবারের লোকজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আজ আমরা মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি, খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। চিকিৎসা, শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করেছি, যে সেতুর সঙ্গে আমাদের উন্নয়ন জড়িত। সেটা নিয়ে কেন দুর্নীতি হবে। তারা টাকা দেয়নি। কিন্তু, আমার-আপনাদের সহযোগিতায় এ সেতু করতে সক্ষম হয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা জীবন দিয়ে গেছেন। জীবন দিয়ে গেছেন আমার মা-ভাইয়েরা। আমি ও আমার ছোট বোন বেঁচে আছি। এই পদ্মা সেতু করতে গিয়ে আমাদের অনেক অসম্মান করার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেক অপমান করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের উপদেষ্টা আবুল হোসেন, সচিব মোশারফ, উপদেষ্টা মশিউর রহমান, মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাদেরকে অপমান করা হয়েছে। আমার ছেলে-মেয়ে জয়-পুতুল, রেহানার ছেলে ববিসহ কত মানসিক যন্ত্রণা তারা দিয়েছে। কিন্তু, আমরা পিছু হটি নাই। আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল। আমরা এই সেতু নির্মাণ করব। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন আমরা করব। আমরা সেটা করেছি। সেই সাহস দিয়েছেন আপনারা, শক্তি দিয়েছেন আপনারা। আমি আপনাদের পাশে আছি।'
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে মাওয়া প্রান্তে ফল উন্মোচনের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি বলেন, 'বাঙালি ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে অনেক ত্যাগ-তিতীক্ষা রয়েছে। বারবার আঘাত এসেছে। বাঙালি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, উঠে দাঁড়িয়েছে। যতবারই হত্যা করো, জন্মাব আবার। দারুণ সূর্য হব। লিখব নতুন ইতিহাস।’
উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী মাওয়া পয়েন্ট থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। জাজিরার দিকে যাওয়ার পথে দুপুর ১২টা ১২ মিনিটের দিকে গাড়ি থামিয়ে নেমে যান প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতুতে দাঁড়িয়ে তিনি বিমান বাহিনীর মহড়া দেখেন। এরপর ১২টা ২৬ মিনিটের দিকে তিনি আবার গাড়িতে ওঠেন। সেখান থেকে তিনি জাজিরা প্রান্তে পৌঁছান।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৫