বন্যাকবলিত এলাকায় ৭৩ জনের মৃত্যু: ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় বিশেষ টিম
বাংলাদেশে সিলেট-সুনামগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের বন্যাকবলিত এলাকায় এ পর্যন্ত পানিতে ডুবে, বজ্রপাতে এবং সর্প দংশনে ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার একদিনে মারা গেছেন ৫ জন। এ পর্যন্ত পানিতে ডুবে ৪৯ জন, বজ্রপাতে ১৪ জন, সর্প দংশনে একজন এবং বাকীরা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে সিলেট বিভাগে ৪৭ জন, রংপুর বিভাগে ৪ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২২ জন রয়েছেন।
সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম বন্যা কবলিত এলাকায় গত ১৭ই মে থেকে ২৪শে জুন পর্যন্ত এক সপ্তাহের মৃতুর এ পরিসংখ্যান জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, বন্যাকবলিত এলাকায় ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৬১৪ জন। এরমধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ২৭৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮১ জন। এরমধ্যে সিলেটে বিভাগে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২২৩ জন। এ প্রসঙ্গে জণস্বাস্থ্য আন্দোলন কর্মী ডাক্তার ফায়েজুল হাকিম রেডিও তেহরানকে বলেছেন, বন্যা দুর্গত এলেকায় সুপেয় পানির অভাব ছাড়াও দুষিত ও নোংরা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বানভাসি মানুষ। দেখা দিয়েছে নানা প্রকার চর্ম রোগ।
এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশী দুর্যোগ কবলিত সুনামগঞ্জে আজ থেকে মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে। সিলেট মেডিকেল কলেজের ইন্টার্নী চিকিৎসকট নাতাশা জুই রেডিওও তেহরানকে জানিয়েছেন, একজন চিকিৎসকের নেত্রীত্বে দুজন ইন্টার্নী এবং দুজন নার্স এক একটি টিমে পালা করে ডিউটি পালন করবে।
ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত এলাকার স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল পর্যায়ের চিকিৎসক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। বন্যা কবলিত এলাকায় চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কতিপয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়। নির্দেশনাবলী হলো- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। বন্যা কবলিত এলাকার স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়, সিভিল সার্জন কার্যালয় ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম খুলতে হবে। বন্যা কবলিত এলাকায় দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহকে একযোগে কাজ করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ কর্তৃক গঠিত কন্ট্রোল রুমের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ও সমন্বয় করে দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে।
এ ছাড়া, প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদিসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেডিকেল টিম গঠন করে সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার প্রতিটি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, অন্যান্য ওষুধ সামগ্রী মজুদ রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক সরবরাহ করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক অ্যাম্বুলেন্স (প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদিসহ) প্রস্তুত রাখতে হবে। বন্যা কবলিত এলাকায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রয়োজনে জেলা সদরে অথবা ঢাকায় প্রেরণের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যা কবলিত এলাকায় মাইকিং করে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক সতর্ক বার্তা প্রচার ও সাপে কাটা রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে।#
পার্সটুডে/ আব্দুুর রহমান খান/ বাবুল আখতার /২৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।