উত্তরের জনপদে ফের বন্যার আশঙ্কা; ডুবছে কুড়িগ্রামের চরাঞ্চল
(last modified Fri, 01 Jul 2022 10:54:48 GMT )
জুলাই ০১, ২০২২ ১৬:৫৪ Asia/Dhaka
  • কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
    কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সামলে দিয়ে উঠতে পারেনি সিলেট ও সুনামগঞ্জের মানুষ। জমে থাকা বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামলেও বসবাসের উপযোগী না হওয়ায় এখনও অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই আবারও ভরা মৌসুমের বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দ্রুত বাড়ছে নদ-নদীর পানি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী- এখনও ৯ নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে- এ পরিস্থিতি থাকবে অন্তত দুইদিন। এ কারণে আবারও বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দেশের বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা নির্ভর করছে ভারতের আবহাওয়ার ওপরে। কারণ ভারতে বৃষ্টি হলে সে পানি বাংলাদেশে ঢুকবে এবং বন্যার সৃষ্টি হবে।

পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

আজ (শুক্রবার) বন্যা পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা যমুনায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পাবে ও পদ্মায় ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি স্থিতিশীল থাকলেও এটিও আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সকল নদ-নদীর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরো বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের কুড়িগ্রাম, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত ১০৯টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৬১টি স্টেশনের। হ্রাস পেয়েছে ৪১টি স্টেশনে আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৭০টি। দেশের ৮টি স্টেশন বিপদসীমার উপরে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া জানান, বর্তমানে দেশের প্রায় সকল প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়তি। দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং এর কাছাকাছি ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে ওই সময়ে মূলত দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর (তিস্তা, আপার আত্রাই, ধরলা, দুধকুমার, আপার করোতোয়া, টাঙ্গন, পুর্নভবা ও কুলিখ) পানির সমতল দ্রুত বাড়তে পারে। এ কারণে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হতে পারে।

ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টির পর্বাভাস

শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে বর্ষণ হতে পারে। 

এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১ নম্বর নৌ হুশিয়ারী সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, ফের আতঙ্কে মানুষ

কুড়িগ্রামে সম্প্রতি বন্যা-পরবর্তী পরিস্থিতি সামলাতে পারার আগেই ফের দুধকুমার তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের বুকে আবারও ধেয়ে আসছে উজানের ঢল। চফলে প্লাবিত হচ্ছে নদীতীরবর্তী নতুন নতুন এলাকা। ডুবে যাচ্ছে বীজতলা ও ফসলের মাঠ।

আগের বন্যার ধকল না কাটতেই আবারও জেলার সব কটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরবাসীর মনে আতঙ্ক, এবার কী করবেন, কোথায় যাবেন? কীভাবে কাঠিয়ে উঠবেন সব ক্ষতি?

জানা গেছে, গত বন্যায় ডুবে যাওয়া ফসলের মাঠ ডুবে ৮০ হাজার কৃষকের প্রায় ১২৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। কৃষকের এই অপূরণীয় ক্ষতি কাটতে না কাটতে আবারও শুরু হয়েছে বন্যার বিধ্বংসী আচরণ। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এখানকার কৃষকরা।

সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রথম আলো চরের কৃষক আতাউর রহমান বলেন, গত বন্যায় পাট, সবজিখেতের ক্ষতি হয়েছে। এখন বীজতলা করেছি, সেটাও পানিতে ডুবে গেল। তিন-চার দিন যদি এই পানি থাকে, তাহলে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাবে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টির ফলে কুড়িগ্রামের নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বর্তমানে বড় কোনো ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই।

আতঙ্ক মাদারীপুরে

মাদারীপুর শহর রক্ষা বাঁধের মহিষেরচর এলাকায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে শহরবাসীর মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। দ্রুত বাধ সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাঁধ ভেঙ্গে গেলে মাদারীপুর শহর ও পাঁচখোলা ইউনিয়নের মহিষেরচর গ্রাম পুরোপুরি নদী গর্ভে চলে যাবে।

মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এবিএম মাহবুবুল আলম বলেন, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুতি রয়েছি। বাঁধ ভেঙে যাবার আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে তিনি শহরবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ