আবারো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করলেন ফখরুল: কাদেরের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধান পরিবর্তন করে হলেও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ (শনিবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ওভারসিজ করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ (ওকাব) আয়োজিত ‘মিট দ্য ওকাব’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ দাবি করেন। তিনি বলেন, আজকে আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর মানুষের কোনো আস্থা নেই। এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আমাদের মুক্তি পেতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দাবি অত্যন্ত সুস্পষ্ট। এই গণবিরোধী এবং অনির্বাচিত সরকারকে অচিরেই পদত্যাগ করতে হবে। জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। ‌নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করে সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের মেন্ডেটপ্রাপ্ত পার্লামেন্ট ও সরকার গঠন করতে হবে। বর্তমান সংকট উত্তরণের এটাই একমাত্র পথ।’

দেশের নানবিধ সংকটের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এমন একটি সময় উপনীত হয়েছি যখন প্রিয় বাংলাদেশ, গভীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠী আমাদের প্রিয় রাষ্ট্র এই বাংলাদেশকে একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। যে দেশের মানুষ একান্ন বছর আগে একটি রক্তাক্ত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন ভূখণ্ড অর্জন করেছিল আজকে সেই দেশের মানুষ তাদের ন্যূনতম যে অধিকার সে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আজকে সেই দেশের মানুষ একটি শ্বাস রুদ্ধকর অবস্থায় বাস করছে।’

তিনি বলেন, ‘এই দেশের মানুষ এখন প্রকাশ্যে কথা বলতে ভয় পায়, এই দেশের সাংবাদিকেরা প্রকাশ্যে লিখতে ভয় পান, বিচারপতিরা ন্যায়বিচার করতে ভয় পান এবং সাধারণ মানুষ বাসে ট্রেনে পাবলিক প্লেসে কথা বলতে ভয় পান। অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে ভয়-ভীতির ত্রাস সৃষ্টি করেছে সমগ্র দেশে। আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য যে এই ধরনের একটি রাষ্ট্রে আমরা পরিণত হয়েছি।’

‘আমাদের দুঃখ হয়, আমরা যখন যুদ্ধ করি তখন আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম, আজকের এ অবস্থায় আসব আমরা তা চিন্তা করিনি। আজকে আওয়ামী লীগ এই রাষ্ট্রকে একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে আমাদের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। গোটা দেশে একটা ভয় ও ভীতির আবহাওয়া তৈরি করে মানুষকে শ্বাস রুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এখন যে প্রক্রিয়ায় শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তার ভিত্তি হচ্ছে বল প্রয়োগ, ভয়ের উত্থান, গুম, খুন, হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, পুলিশ হেফাজতে হত্যা, মিথ্যা মামলা এবং আপনারা শুনলে অবাক হবেন যারা রাজনৈতিক কর্মী গণতন্ত্রের জন্য লড়াই সংগ্রাম করছে এ রকম ৩৫ লক্ষ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।’

নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে: কাদের

ওদিকে, আজ রাজধানীতে পৃথক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। আর আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে তা জনগণকে সাথে নিয়ে প্রতিহত করা হবে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি’র নেতারা প্রতিনিয়ত নিরাশার গল্প শুনিয়ে জাতির সঙ্গে তামাশা করছে। তারা খুব সচেতনভাবেই এটি করছে, যাতে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে, সামাজিক শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়। একই সঙ্গে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করে সরকারবিরোধী মনোভাব তৈরির পাঁয়তারা করছে।

ওবায়দুল কাদের গতকাল প্রচারিত এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি নেতৃবৃন্দের বক্তব্যকে নির্লজ্জ মিথ্যাচার, উসকানিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যায়িত করে তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। 

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সময় আসলেই বিএনপি যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা দখলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। আগামী নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্যও তারা জনগণের সামনে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা তুলে ধরতে পারছে না। তাই বিএনপি নেতারা জাতির সামনে বিভ্রান্তিকর বক্তৃতা ও বিবৃতি প্রদান করে চলেছেন।

জনগণের আত্মবিশ্বাস ধ্বংস করা কোনো রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য হতে পারে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাবো, সামনের সংকট মোকাবিলার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার না করে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করুন। তাতে দেশের মানুষ উপকৃত হবে এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হবে।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।