গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়েছি- ফখরুল : বিএনপি অলিগলিও খুঁজে পাবে না- কাদের
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, "আমাদের অগণিত নেতাকর্মী যাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে, তাদের মামলা প্রত্যাহার করে দেশে একটা সুস্থ সমাজ এবং সুস্থ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব- এই শপথ আমরা নিয়েছি।"
আজ (শুক্রবার) সকালে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর ৫৩তম জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর বনানীতে কবরে শ্রদ্ধা জানানো শেষে তিনি বলেছেন, হাসিনা সরকার রাষ্ট্রপরিচালনায় সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের দুর্নীতি আকাশচুম্বী। জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে, বিদ্যুতের লোডশেডিং, পানির দাম বেড়েছে, তেল-চাল-ডালের দাম বেড়েছে।
রাজপথে বিএনপিকে মোকাবিলা করা হবে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ওটা তাদের পুরোনো কথা। বারবার তারা এসব কথা বলেছেন এবং পরাজিত হয়েছেন।
এদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি পরিকল্পিতভাবে অপরাজনীতির মাধ্যমে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। আওয়ামী লীগ কর্মীরা মাঠে নামলে রাজপথ নয়, বিএনপি অলিগলিও খুঁজে পাবে না। জনগণের প্রতি আস্থাহীন এক রাজনৈতিক দল বিএনপি। তাদের রাজনৈতিক মেরুদণ্ড অত্যন্ত ভঙ্গুর।
আজ (শুক্রবার) সকালে নিজ বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায় কিন্তু নির্বাচনে যেতে ভয় পায়। বিএনপি পরিকল্পিতভাবে অপরাজনীতির মাধ্যমে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় বলেও মন্তব্য করেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এর আগে গতকাল নয়া পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকার পতনের দাবিতে আগামীতে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে দলের নেতাকর্মী ও সমমনা দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি বলেছেন, সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের বিচার বিভাগকে এই সরকার দলীয়করণ করেছে। এই দেশের সংবিধানকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছিল আমাদের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চারটা নির্বাচন হয়েছে। প্রত্যেকটি নির্বাচনই অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে তারা বাতিল করেছে। সেই দিন থেকেই এই দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা তারা ধ্বংস করে দিয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল শেখ হাসিনা সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই মুহূর্তে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নতুন নির্বাচন দিয়ে সংসদ গঠন করতে হবে।
অপরদিকে, নবগঠিত বিরোধী রাজনৈতিক জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ জ্বালানি তেলের দাম ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত আর একটি সমাবেশ থেকে গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকার হঠানোর ডাক দিয়ে পাড়ায় পাড়ায় আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন।
‘ফ্যাসিবাদ হটাও, শাসন ব্যবস্থা বদলাও এবং জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি রুখে দাঁড়াও’ শীর্ষক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)’র সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য শতকরা ৫০ ভাগ বৃদ্ধি করেছে সরকার। বিশ্বের কোথাও ৫০ ভাগ দাম বৃদ্ধির নজির নেই। অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন যে তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গরিব মানুষের কষ্ট হয়। এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে হবে। আমাদের এ আন্দোলন কোনো ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের আন্দোলন বিদ্যমান ব্যবস্থার বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের কোনো নেতার অতীতে আপস করার কোনো ইতিহাস নেই। আমাদের লড়াই গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই, আমাদের এই লড়াইয়ে জিততে হবে। এই সরকারকে হটাতে হবে। এই সরকারের লোকদের বলবো, আপনারা কীভাবে দেশ ছেড়ে পালাবেন সেই চিন্তা করুন।
আ স ম রব আরও বলেন, আমাদের আজকের এই লড়াইয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সরকার বলেছে, মরে গেলেও ক্ষমতা ছাড়বে না। আর আমাদের জীবন থাকতে কখনো আপস করবো না। মরতে হলে মরবো, স্বৈরাচারকে নামিয়ে তারপরে মরবো। আমাদের এই আন্দোলন সাত দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। রাস্তায় গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, গণতন্ত্র মঞ্চ নিয়ে সরকারের ভয় শুরু হয়েছে। ভয় পাওয়ার কারণ হলো, গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলবে। আমরা শুরু থেকেই বলছি, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আর না হলে কঠিন থেকে কঠিনতর আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে হটানো হবে।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এখন যারা ক্ষমতায় আছে তারা চোর, ডাকাত ও লুটেরা। আমরা দেশকে, দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য সরকারকে হটাতে চাই। আমরা শুধু সরকারের পদত্যাগই চাই না। আমরা চাই এদেশের গঠনমূলক পরিবর্তন।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১২