প্রধানমন্ত্রীর কোনো কথা বিশ্বাস করি না: মির্জা ফখরুল
বাম গণতান্ত্রিক দলের ডাকা ২৫ আগস্টের হরতালে বিএনপি’র সমর্থন
আগামী ২৫ আগস্ট বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা হরতালে সমর্থন জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। আজ (বুধবার) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সমর্থনের কথা জানান।
জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধিসহ দেশে নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করছেন, দেশের জনগণ বর্তমান সরকারের দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়। সরকার লুটপাট, দুর্নীতি, অর্থপাচার আর অপশাসন দেশটাকে সত্যিকার অর্থেই অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকেই বাকশালীরা ধ্বংসের শেষ প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। বাগাড়ম্বর আর কাল্পনিক উন্নয়নের গল্প দেশের জনগণ আর শুনতে চায় না।
এই অবস্থার পরিবর্তনে ‘রাজপথে’ আন্দোলন’ সংগঠিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই দুর্নীতিবাজ সরকারের জনগণের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তারা জনগণের কল্যাণের তোয়াক্কা না করে নিদারুণভাবে নিষ্ঠুর ও নির্দয় হয়ে পড়েছে। আসুন ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে বিদায় করি।
গত ৬ আগস্ট জ্বালানি তেলের (ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন, পেট্রল) দাম গড়ে ৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এর মধ্যে গণপরিবহন ও কৃষি খাতে বহুল ব্যবহূত ডিজেলের মূল্য ৪২.৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। কেরোসিন ও ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪, অকটেনের দাম লিটারে ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ আর পেট্রোলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপরে নির্যাতন করা হবে না, আন্দোলন দমন করা হবে না- প্রধানমন্ত্রীর এহেন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা কখনই উনার (প্রধানমন্ত্রী) কোনো কথায় বিশ্বাস করি না। এটা একটা কারণে যে, তারা যা বলে তা করে না। আমরা বলেছি তাদের সমস্ত কথা-বার্তায় সমস্ত প্রতারকের ভূমিকা পালন করে ওরা।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের কিছু সুবিধাভোগী দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী চক্রের হাতে দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা জিম্মি হয়ে আছে। এ সরকারের জনগণের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নেই বলে তারা জনগণের কল্যাণের তোয়াক্কা না করে নিদারুণভাবে নিষ্ঠুর ও নির্দয় হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরাচারী সরকারকে রাজপথের গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশে সত্যিকার অর্থে জনমানুষের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব।
তিনি ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস ও ২০২২ সালের আগস্ট মাসের বাজার দর উল্লেখ করে বলেন, টিসিবির বাজারদর অনুযায়ী বিএনপির সময় ২০০৬ সালে মোটা চাল ছিল ১৭ টাকা কেজি, যা বর্তমানে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। সরু চাল ছিল ২৪ টাকা, বর্তমানে ৬৪ থেকে ৮৫ টাকা। পেঁয়াজ ছিল ৮ থেকে ২০ টাকা কেজি, বর্তমানে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। সয়াবিন তেল ৪৪ টাকা ছিল, বর্তমানে ১৮৫ থেকে ১৯০। গরুর মাংস ছিল ১৫০ টাকা কেজি, এখন ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা। খাসির মাংস বিএনপির সময় ছিল ২৩০ টাকা কেজি, বর্তমানে ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকা। ইলিশ মাছ বড় সাইজ প্রতি কেজি ২৮০ টাকা ছিল, এখন ৬০০ থেকে ১৪০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি ছিল ৫৫ টাকা কেজি, বর্তমানে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। দেশি মুরগি ১৮০ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে ৫০০ থেকে ৫৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আটার (প্যাকেট) কেজি ছিল ২০ টাকা, বর্তমানে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম ছিল ১১ টাকা। বর্তমানে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। আলুর কেজি ছিল ৬ টাকা, বর্তমানে ২৬ থেকে ৩০টাকা। লবণ ১৮ টাকা ছিল, এখন ৩০ থেকে ৩৫টাকা। চিনি ছিল ৩৭ টাকা, বর্তমানে ৮৮ থেকে ৯০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি সুযোগ নিয়েছে: বাণিজ্যমন্ত্রী
এদিকে, আজ সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি স্বীজার করেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি সুযোগ নিয়েছে।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে সুযোগ কেউ কেউ নিয়েছে। যে পরিমাণ বাড়ার কথা, তার থেকে অনেক বেশি সুযোগ নিয়েছে- এটা সত্যি কথা। আমরা চেষ্টা করছি। আমাদেরকে একটু সময় দেন।
জ্বালানি তেলের কর প্রত্যাহার করে মূল্য পুনঃসমন্বয় করুন: এফবিসিসিআই
ওদিকে, দেশের অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক রাখতে ও জনস্বার্থে জ্বালানি তেলের জন্য কর প্রত্যাহার করে মূল্য পুনঃসমন্বয় করার বিষয়ে দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেয়া এক চিঠিতে এই দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক করোনা মহামারীর ধকল সামলে পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় রয়েছে দেশের অর্থনীতি। কিন্তু এরই মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম ও জাহাজ পরিবহন ভাড়া প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচও ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জ্বালানি তেলের এ মূল্যবৃদ্ধির হার জাতীয় অর্থনীতিতে আরও চাপ সৃষ্টি করবে উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। বলা হয়, এতে উৎপাদন ও ব্যবসা খরচ আরেক দফা বেড়ে যাবে, পণ্য পরিবহনে বাড়তি খরচ বহন করতে হবে। এ বছর বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি কম হওয়ার ফসল উৎপাদন অব্যাহত রাখতে কৃষকদের বাড়তি সেচের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
সরকাবি হিসাব মতে, দেশের মোট জ্বালানি তেলের ৬৩ শতাংশ ব্যবহার করে পরিবহন খাত। প্রায় ১৬ শতাংশ ব্যবহৃত হয় কৃষি খাতে। শিল্প খাত ৭ ও বিদ্যুৎ খাত ব্যবহার করে ১০ শতাংশ।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।