এত গুম-খুনের পরেও বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না: ফখরুল
দমন-পীড়ন আর নির্যাতন করে বিএনপিকে দমানো যাবে না বলে দৃঢ়তা ব্যক্ত করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সোমবার থেকে আবার নতুন করে গ্রাম পর্যায়ে আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের লোড শেডিংয়ের প্রতিবাদে এই আন্দোলন। মানুষ এখন রাস্তায় বেরিয়ে আসছে।'
আজ (মঙ্গলবার) সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি জানান, প্রায় প্রতিটি থানা-উপজেলাতে কিন্তু বড় বড় মিছিল হয়েছে। গতকাল লক্ষ্মীপুরে শহীদ উদ্দীন চৌধুরীর বাড়িতে আক্রমণ করেছে, বরিশালের গৌরনদীতে বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদল নেতাদের ঘর থেকে ধরে এনে মারধর করেছে, অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। ’
তিনি আরো বলেন, এত নির্যাতন, এত নিপীড়ন, এত হত্যা, এত গুম-খুনের পরেও বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। বিএনপি সেই ফিনিক্স পাখির মতো আবার ধ্বংসাবশেষ থেকে জেগে উঠছে- এটাই হচ্ছে তাদের সবচেয়ে বড় রাগের কারণ, ভয়ের কারণ।
'বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি বিদায় করতে পারলেই হত্যা, খুন-সন্ত্রাসের অবসান'
তবে, আওয়ামী লীগের নেতৃতাধীন চৌদ্দ দলের নেতারা বলেছেন, দেশ থেকে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি বিদায় করতে পারলেই কেবল হত্যা, খুন-সন্ত্রাসের অবসান ঘটবে।
আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবে জোটের শরিক সাম্যবাদী দল আয়োজিত ১৫ আগষ্ট শোক দিবসের আলোচনা সভায় চৌদ্দ দলের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার বাইরে চিকিৎসা করতে দিতে চায় না। বিরোধিতা করে। কেন? যদি তিনি বেরিয়ে আসেন তাহলে তারা সামাল দিতে পারবে না। তারেক রহমান সাহেব যদি দেশে আসেন তাহলে এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ তারা রাস্তায় বেরিয়ে আসবে- এই ভয়েই তারা সেটা করতে চায় না। আর আমরা যারা দেশে আছি আমরাও তারেক রহমান সাহেবের নির্দেশে কিন্তু এখন জেগে উঠছি। জেগে উঠতে হবে- বিকল্প নেই আমাদের কাছে। এই জেগে ওঠার মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা এই দানবকে উপড়ে ফেলে জনগণের একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। ’
গুম-খুন-নির্যাতনের শিকার পরিবারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা যদি এই সরকারকে পরিবর্তন করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি, একটা সত্যিকারের জনগণের পার্লামেন্ট আনতে পারি তাহলে আমাদের এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সকলের হত্যার বিচার করা হবে। যে সব পরিবার ভুক্তভোগী হয়েছেন অবশ্যই তাদের রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনায় পুনর্বাসনের সর্বাত্মক ব্যবস্থা করা হবে। আমরা এতটুকু বলতে পারি, আমরা আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্য দিয়ে চেষ্টা করেছি আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আমরা দলের পক্ষ থেকে বলতে চাই, আমরা নুরে আলম ও আব্দুর রহিমের পরিবারের জন্য ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তারা যেন বাকি জীবনটা চালাতে পারে তার জন্য সব রকম ব্যবস্থা আমরা করব। ’
অনুষ্ঠানে ভোলা, ফেনী, নেত্রকোনা, চট্টগ্রামের যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ১৪ জন নেতাকর্মীর পরিবারকে এককালীন ও শিক্ষাবৃত্তির আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। গত ৯ বছরে সারা দেশে গুম-খুন-নির্যাতনের শিকার ৩২৭টি পরিবারকে সহায়তা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী হেল্প লাইন।
টর্চার সেল প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, নেত্র নিউজে যে খবর বেরিয়েছে, তাদের সেই টর্চার সেল আছে। তার নাম দিয়েছে আয়নাঘর। সেই আয়নাঘরে নিয়ে যায়। যাদের মেরে ফেলতে হয় তাদের মেরে ফেলে, যাদের রেখে দিতে হয় তাদের রাখে, টর্চার করে, বছরের পর বছর তাদেরকে রাখে। যারা কয়েকজন সৌভাগ্যক্রমে বেরিয়ে যেতে পেরেছিল তারা বিদেশে চলে গেছেন, গিয়ে সেখান থেকে বলছেন যে, এ ধরনের একটা সেলে আমাদেরকে আটকিয়ে রাখা হয়েছিল।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উন্নয়ন নিয়ে এরা বড়াই করছে। দেশকে সিঙ্গাপুর বানিয়ে দিয়েছে, মালয়েশিয়া বানিয়ে দিয়েছে। মানুষের পার ক্যাপিটাল ইনকাম নাকি ২৮০০ টাকা হয়ে গেছে। আর এদিকে চা শ্রমিকরা ১২০ টাকা প্রতিদিন পায়। তারা আন্দোলন করছে, সংগ্রাম করছে। শতকরা ৪২ জন মানুষের জীবন দারিদ্যসীমার নিচে চলে গেছে, দুই বেলা খেতে পায় না। কিছুক্ষণ আগে মোবাইলে দেখলাম একজন চা শ্রমিকের নেতা বক্তৃতায় তাদের খাবারের হিসাব দিচ্ছেন। সকালে একটা রুটি চা দিয়ে ডুবিয়ে, দুপুরে রুটি এবং রাত্রে একটু ভাত আর ডাল অথবা একটু সবজি। এখনো এই ৫০ বছর স্বাধীনতার পরেও আমাদের দেশে শ্রমিকদের এই অবস্থা।’
পুলিশের বাধায় গণসংহতি আন্দোলনের সমাবেশ পণ্ড
এদিকে, পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু ও আয়নাঘরে নির্যাতনের বিচার এবং চা শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়াসহ জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানোর দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণসংহতি আন্দোলন। এসময় সচিবালয়ের সামনে জিরো পয়েন্টে গিয়ে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন তারা। পুলিশের বাধায় বিক্ষোভ পণ্ড হয়ে যায়। এসময় গণসংহতি আন্দোলনের ৫ জন কর্মী আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে গেলে পুলিশি বাধায় পড়ে। এরপর গণসংহতির নেতাকর্মীরা জিরো পয়েন্ট থেকে পুনরায় প্রেস ক্লাবের সামনে এসে মিছিল সমাপ্ত করেন।
এ সময় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, এই সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে সে রাজাকার হয়ে যায়। অথচ তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করছে। সমাবেশে বক্তারা বর্তমান সরকারকে ফ্যাসিবাদী আখ্যায়িত করে সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জনগণকে আহ্বান জানান।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।