বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে মারমুখী অবস্থানে আ. লীগ: ফখরুল-কাদের যা বললেন
(last modified Mon, 29 Aug 2022 11:55:10 GMT )
আগস্ট ২৯, ২০২২ ১৭:৫৫ Asia/Dhaka

সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, দেশে  বিরোধীদের সভা-সমাবেশসহ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে না; হয়রানি বা গ্রেফতার করা হবে না। কিন্তু বাস্তবে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিকে  মাঠে দাঁড়াতে দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ২২ আগস্ট থেকে ঢাকার বাইরে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত টানা সাত দিনই বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মারমুখী অবস্থানে দেখা গেছে।

এই কয়েক দিনে বিভিন্ন স্থানে বিএনপির ১৯টি কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আটটি স্থানে বিএনপি নেতাদের বাড়িঘরে হামলা হয়েছে। দলীয় কার্যালয়ে হামলা হয়েছে চারটি স্থানে। দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণার কারণে আটটি উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ছয়টি স্থানে বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেয় পুলিশ।

গতকালও দুটি জেলায় বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছেন সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা। এর মধ্যে নরসিংদীর মনোহরদীতে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের হামলার পাশাপাশি পুলিশও গুলি ছুড়েছে। এতে ২৭ নেতা-কর্মী রাবার বুলেটবিদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ (সোমবার) নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, চলমান আন্দোলনে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে আওয়ামী লীগ দমন-পীড়ন চালাচ্ছে।

জ্বালানি তেল, দ্রব্যমূল্য ও পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি এবং ভোলায় দুই নেতার নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে সারাদেশে ২২ আগস্ট থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি চলছে বিএনপির। এ কর্মসূচি আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই কর্মসূচি জনগণের মধ্যে অভূতপূর্ব সাড়া জাগিয়েছে। কর্তৃত্ববাদী সরকারের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে এর প্রতিবাদ জানাতে বিএনপির ডাকে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে।’

রোববার যশোর জেলায় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের ওপর আওয়ামী লীগের কর্মীরা হামলা করেছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। এছাড়াও জেলা বিএনপি’র দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। জেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দের বাড়িতে বাড়িতে হামলা চলছে।’

বিভিন্ন জেলায়ও দলের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হামলা করছে। তারা এতটুকুও চিন্তা করছে না যে, এটা সারাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে।’

এছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনা, হবিগঞ্জ, ফেনী, টাঙ্গাইল, সাতক্ষীরা, ঠাকুরগাঁও, পটুয়াখালী, নরসিংদী, বরিশাল, ভোলা, কুষ্টিয়া নোয়াখালী, নাটোর, মুন্সীগঞ্জ, জামালপুর, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইত্যাদি জেলায় বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সরকারি দলের হামলার বর্ণনা তুলে ধরেন দলটির মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে মোট গ্রেফতার হয়েছেন ৬০ জনের অধিক নেতাকর্মী। হামলায় আহত হয়েছেন ৭৭৫ জনের বেশি।’

ওবায়দুল কাদের

বিএনপি গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত: কাদের 

তবে, এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক-সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ বলেছেন, 'বিএনপি সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে একটি সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সারাদেশে আন্দোলনের নামে বিএনপি সশস্ত্র মহড়া দিয়ে যাচ্ছে।’

আজ এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির রাজনীতিই হলো ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, হত্যা ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা।

তিনি বলেন, ‘অন্ধকারে অপশক্তি বিএনপি সরকারে থাকা অবস্থায় যেমন রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সৃষ্টি করেছিল, তেমনি বিরোধীদলে থেকে আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে শত শত নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।’

সভা-সমাবেশের সুযোগ দেওয়া উচিত: মাহবুব উল্লাহ

ওদিকে, বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ আজ একটি জাতীয় দৈনিকে স্বনামে প্রকাশিত এক নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, বিরোধী দলগুলো অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম করছে। মানুষের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ তৈরি করা, গণসংযোগ করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে সভা-সমাবেশ। এই সুযোগটা তাদের দেওয়া উচিত। আর যদি এভাবে বিরোধীদের ওপর হামলা চলতে থাকে, এরপরও যদি তারা মাঠে দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে মানুষের সহানুভূতি আরও বেড়ে যাবে। যদি চাপের মুখে বিরোধীরা রণে ভঙ্গে দেয়, তাহলে মানুষের আস্থার জায়গা সংকুচিত হবে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যা, তাতে এখন সহিষ্ণুতার খুব প্রয়োজন। এর জন্য সরকারের সদিচ্ছা খুবই দরকার। এর ব্যত্যয় দেশের ভবিষ্যতের জন্য আশঙ্কাজনক। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ