পুলিশ কথায় কথায় গুলি চালাচ্ছে, আন্তর্জাতিক আইন মানছে না: ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, নারায়ণগঞ্জে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হলেও তাতে আক্রমণ করা হয়েছে। পুলিশ আন্তর্জাতিক পুলিশ আইন মেনে চলছে না। তারা কথায় কথায় গুলি চালাচ্ছে।
আজ (রোববার) রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় টিকে থাকার একমাত্র মাধ্যম ভয় সৃষ্টি করা। বিরোধী দল যাতে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, সে জন্য মাঠ খালি করতে হামলা ও আক্রমণ করা হচ্ছে।
বিএনপির কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা দেখে আওয়ামী লীগ ঘাবড়ে গিয়ে বিরোধী দলের ওপর হামলা শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সরকারি দল বিএনপিকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে চায়। বিএনপিকে সেদিকে নিতে না পারায় আওয়ামী লীগ মনঃকষ্টে ভুগছে।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ২২ আগষ্ট থেকে বিএনপি আয়োজিত কর্মসূচিতে বিনা উসকানিতে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে সরকার। এখন পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির তিন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই হাজারের বেশি নেতা-কর্মী। গ্রেপ্তার হয়েছেন দু শ'র বেশি নেতা-কর্মী। সারা দেশে চার হাজারের বেশি বিএনপির নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার।
বিএনপির ১০ নেতা-কর্মীর রিমান্ড মঞ্জুর
ওদিকে, নারায়ণগঞ্জে পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের গ্রেপ্তার ১০ নেতা-কর্মীকে এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসেনের আদালতে হাজির করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে শুনানি শেষে প্রত্যেকের এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শাওন প্রধান নামের এক তরুণ নিহত হন। এ ছাড়া পথচারী, নারীসহ গুলিবিদ্ধ হন ২৬ জন। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটায় আহত হয়েছেন পুলিশের সদস্যসহ অর্ধশতাধিক মানুষ।
শাওন নিহত হওয়ার ঘটনায় তাঁর বড় ভাই মিলন হোসেনকে বাদী দেখিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আসামি করে মামলা করে পুলিশ। মিলনের পরিবারের দাবি, তাঁরা কোনো মামলা করেননি। পুলিশ সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে এ মামলা সাজিয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনার পরদিন পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা, পুলিশের কাজে বাধা, ভাঙচুর ও বিস্ফোরণের অভিযোগ এনে ৭১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুজ্জামান বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এ মামলায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এদেরকে সংঘর্ষ চলার সময় তাঁদের আটক করা হয়েছিল।
পুলিশ সুপারসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেছে বিএনপি।
পুলিশ সুপারসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
এদিকে, নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে গুলিতে যুবদল কর্মী শাওন প্রধানের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ সুপারসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী। আজ সকালে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসেনের আদালতে মামলার এ আবেদন করেন তিনি। আদালত মামলার আবেদন গ্রহণ করে পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন বাদীর আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার।
এ ছাড়া জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জন পুলিশ সদস্যকে মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।#
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।