সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ: দুর্গাপূজায় শুভেচ্ছা বার্তায় ফখরুল; কাদেরের প্রতিক্রিয়া
কোনো অশুভ শক্তি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে নস্যাৎ করতে চাইলে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বুধবার (৫ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুখে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা কুমিরের মায়াকান্না মাত্র।
এর আগে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে এক শুভেচ্ছা বার্তায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, হাজার বছর ধরে দেশে সব সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করছে। ধর্মীয় উৎসবগুলো সাম্প্রদায়িক সীমানা অতিক্রম করে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এক বৃহত্তর প্রাঙ্গণে মিলিত করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ।
মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে বিএনপির দপ্তর থেকে পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি বলেন, দুর্গাপূজার মতো বড় ধর্মীয় উৎসব দেশের জনগোষ্ঠীকে সৌহার্দ্য ও শুভেচ্ছাবোধে উদ্দীপ্ত করে।
এদিকে, আজ ভিন্ন এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন।
কাদের বলেছেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎ করে যাদের রাজনীতির যাত্রা হয়েছে, তাদের মুখে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা শোভা পায় না। দেশবাসী ভালো করেই জানে, বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটি এদেশের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ভরকেন্দ্র।
তিনি বলেন, বিএনপি যতবারই ক্ষমতায় এসেছে, ততবারই সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় পেছনের দিকে নিয়ে যায়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু অসাংবিধানিক ও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান সংবিধান সংশোধন করে রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহারের বৈধতা দিয়েছিল। সেই দলের নেতা হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুখে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা কুমিরের মায়াকান্না মাত্র।
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, অসাম্প্রদায়িকতা ও গণতন্ত্রের জন্য বিএনপি মহাসচিবের ছদ্মবেশ ধারণ দেশের জনগণের সঙ্গে এক ধরনের পরিহাস। এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। তাই গণতন্ত্র বিকাশ ও তা সমুন্নত রাখতে আওয়ামী লীগই সর্বোচ্চ কাজ করে যাচ্ছে। বিপরীতে বিএনপি কখনোই জনগণের শক্তিকে পরোয়া করে না। সবসময় অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা দখল করে রাখার বা করার অপতৎপরতা চালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। তারা ক্ষমতাসীন হয়ে সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতার টুঁটি চেপে ধরে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিল। আর আজ বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে সুগভীর ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আছে বলেই বাংলাদেশ একের পর এক উন্নয়নের মাইলফলক অর্জন করছে, বিশ্বসভায় প্রশংসিত হচ্ছে। শেখ হাসিনা আছেন বলেই দেশে গণতন্ত্রের সুবাতাস বইছে। দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে পিতা মুজিবের মতো তিনিও বদ্ধপরিকর। তাই আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, কোনও অশুভ শক্তি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে নস্যাৎ করতে চাইলে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কটূক্তি ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বেড়াডাঙ্গা থেকে স্মৃতি নামের একজন বিএনপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে রাজবাড়ী সদর থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) গভীর রাতে সোনিয়া আক্তার স্মৃতিকে আটক করা হয়। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
‘রাজবাড়ী ব্লাড ডোনার্স ক্লাব’ নামের একটি রক্তদানকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা স্মৃতি বিএনপির একজন কর্মী ও দলটির রাজনীতি সমর্থন করেন।#
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/রেজওয়ান হোসেন/৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।